চট্টগ্রাম কলেজে পড়াকালীন শিবিরের সেই রকম রূপ দেখেছিলাম। তাই দাড়িওয়ালা দেখলেই শিবির মনে হতো। (তবে এখন মডার্ণ শিবিরও দেখা যায়। )
১
তাই দাড়িওয়ালা কাউকে দেখলে মনে মনে একটা আতংক কাজ করতো।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে হলে উঠলাম।
হলের মসজিদে নামাজ পড়তে যেতাম। চুপি চুপি এক কোনায় গিয়ে নামাজ পড়তাম। হঠাৎ দেখি কিছু দাড়িওয়ালা বড়ভাই আমাকে ঘিরে ধরলো। আমার কুশলাদি জিজ্ঞাসা করা শুরু করলো। আমি মনে করেছিলাম, তারা শিবির, ভয়ে ভয়ে জবাব দিয়ে পালালাম।
আমার সেই ভুল ভাঙলো আরো ২ মাস পরে। তখন বুঝলাম, সব দাড়িওয়ালাই শিবির নয়।
২
তারপর থেকে পারতপক্ষে হলের মসজিদে যেতাম না। রুমেই নামাজ পড়তাম। কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয়।
তাবলিগের সবাই লাইন ধরে রাইন্ড দিতো বের হতো আসরের নামাজের পর। হয়ত আমি রুমে আছি, এমন সময় রুমে ঢুকে যেত, নানা কুশলাদি জিজ্ঞাসা করা। দাঁত কিড়মিড় করে হ্যা, না জবাব দিয়ে যেতাম।
৩
ধীরে ধীরে একটু চালাক হওয়া শুরু করলাম। তাবলীগ আসছে, এটা টের পেলে কাথামুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম।
অনেক সময় জানালা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে বাইরে দরজাতে তালা লাগিয়ে দিতাম।
আমার রুমমেট ছিলো কয়েকজন বড়ভাই। তাদেরও ধরলো তাবলীগে। একদিন আমি হঠাৎ করে বাইরে থেকে এসেই ঘুমিয়ে পড়লাম (দেখানো ঘুম), আর বড়ভাইকে ধরলো এক বড় হুজুর, যিনি ভারতের আলীগড় মাদ্রাসা থেকে এসেছেন। বড়ভাই রাগে গজ গজ করতে করতে বয়ান শুনলাম।
হুজুরগণ যখন চলে গেল, আমি ঘুম থেকে উঠে গেলাম, আর বড়ভাই আমাকে বললো, ''মিয়া, তুমি একটিং করছো, এটা আমাকেও জানাতে, তাহলে আমিও ঘুমাতাম''
৪
তাবলীগ থেকে বাচার জন্য হলের আর এক বড়ভাই ভালো একটা বুদ্ধি দিয়েছিলো। তিনি খালি তাবলীগের হুজুরদের থেকে টাকা ধার চাইতেন। তারা প্রথম প্রথম ২-১শ টাকা ধার দিতো, পরে বড়ভাইটাকে দেখলে তাবলীগের ভাইরা নিজেরাই পালাতো।
৫
তবে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কয়েকজন ভালো সহপাঠী পেয়েছিলাম, যারা সবাই তাবলীগ করতো। একবার টার্ম ফাইনাল চলছে, এর মধ্যেও দেখলাম, সহপাঠী ৩ দিনের চিল্লাতে গেল।
৬
আমাদের বাসার ২জন দাড়োয়ান/কেয়ারটেকার আছে যারা ২ জনই হিন্দু। সেদিন বিকালবেলা বাসার ঢুকার সময় দেখলাম, ১০-১২ জন একটা বড় দল তাদের হেদায়েত করছে, কিন্তু তারা যে হিন্দু সেটা জানতো না। দাড়োয়ান ২টাও হা, হু করে যাচ্ছিলো।
৭
সিলেট থেকে একবার ঢাকায় ট্রেনে আসার জন্য টিকেট কাটতে স্টেশনে গেলাম। দেখলাম ১৫-১৬ জনের একটা বড় দল, যারা টঙীতে যাবেন ট্রেনে করে।
(তখন ইজতেমা শুরু হয় নাই, ডিসেম্বর মাসে)। কিন্তু টিকেট কাউন্টার থেকে বলা হলো, ট্রেন থামবে এয়ারপোর্ট স্টেশনে, টঙীতে নয়। তখন তাবলীগের সর্দার বললো, আমরা সবাই দোয়া করতে থাকি, যাতে ট্রেনটা টঙীতে থামে।
৮
আমার এক ভাগ্নে তুমুল তাবলীগি। জিপিএ ৫.০০ পেয়ে এসএসসি পাশ করে কলেজে উঠার পর তাবলীগে যোগ দিলো।
এই বার এইচ এস সির পালা। কিন্তু টেস্ট পরীক্ষার পরে সে সারা দিন মসজিদে বয়ান করে বেড়ায়, দিনে পাঁচবার নামাজ পড়তে পাঁচবার মসজিতে যায়, কিন্তু শুধু নামাজ পড়ে চলে আসলে সমস্যা হতো না, এক এক বার নামাজ পড়তে গেলে ২ ঘন্টায়ও বাসায় আসে না।
ঈশার নামাজ পড়ে বাসার এসে ভাত খেয়ে ঘুম, কারণ সকালে ফজরের আগে উঠা লাগবে, তারপর ফজরের নামাজ পড়ে এসে আবার ঘুম, ৮টা বাজে ঘুম থেকে উঠে হালকা পড়ালেখা। আবার মসজিদ, বাসা, বয়ান, তাফসির, কিন্তু নিজের পড়ালেখাটা করছে না ঠিক মতো। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে, সে বলে, আল্লাহ তার সাথে আছেন।
তাকে বল্লাম, তোমার পরীক্ষার খাতায় তো তোমাকে লিখতে হবে, তুমি ঠিকমতো না পড়লে লিখবে কি?
তখন সে বলল, '' আপাতত আমাকে কিছু বলবেন না, পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেলেই তো হলো''
তাবলীগের উপর ওভার কনফিডেন্স তাকে শেষ করেছে। সে পরীক্ষায় পেয়েছলো ৩.৪০
সবশেষে বলে রাখি, আমি আস্তিক, নিয়মিত নামাজ কালাম পড়ার চেষ্টা করি। (তবে মাঝে মাঝে শয়তান বড়ই ডিস্টার্ব করে। ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।