আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তাবলীগ জামাত



আমার এক শ্রদ্ধাভাজন আত্মীয় তাবলীগ জামাত এর ব্যপারে ভীষন নারাজ এবং যেখানে যে তাবলীগ বিরোধী পোস্ট আছে সব ক্রমাগত ফেসবুক এ পোস্ট করছেন। ব্যবসায়িক ব্যস্ততায় ইদানিং ব্লগ লেখার সময়ই পাই না। লেখাটা পড়ে অনেক ব্যস্ততার মাঝেও অনেক দিন পর সামহোয়্যার ইন এ ব্লগ লিখতে বসলাম। তার সর্বশেষ পোস্ট টি ছিল সামহোয়্যার ইন ব্লগ এর একটি লিংক যেখানে লেখক লিখেছেন : (১) "যে ছেলেটাই একবার তাবলীগে যাবে তার জন্যে কোরআন হাদিস অধ্যয়ন সারা জীবনের জন্যে নিযিদ্ধ করে দিবে। তারা বলে, দেখ তুমি যদি কোরআন হাদিস পড় তাহলে তুমি গোমড়া হয়ে যাবে" নাউজুবিল্লাহ।

আজ প্রায় ১৫ বছর ধরে এসবের মাঝে বাস করেও কোথাও ত এই কথা শুনিনি। তাবলীগের রুটিনের মধ্যেই আছে প্রতিদিন কোরান,হাদিস পড়ার। কম খাওয়া কম ঘুমানো, বেশী ইবাদাতের জন্যই বেশী তাগিদ দেয় ওরা। (২) আলেমদের কার কি ভুল আছে সেগুলো ধরতে উনারা খুব পটু। অবশ্য উনাদের মতে এইসব বড় বড় আলেমরা কোন আলেমই না।

তাবলীগ জামাতের যে ছেলেটা বা লোকটা কোনদিন জাকির নায়েকের কোন লেকচার শুনেনি এমনকি জাকির নায়েককে কোনদিন দেখেনি পর্যন্ত সেও বলবে, জাকির নায়েক সে তো একটা ভ্রান্ত। ওর মাঝে কোন সুন্নত নাই। ওই বেটা প্যান্ট শার্ট ও টাই পড়ে। ওই বেটা একটা গোমড়া। এইডা ডাহা মিথ্যা।

আলেমরা যখন তাবলীগে যায়, ওদেরকে খুবই সম্মানের সাথে দেখা হয়। ওদের কাছ হতে শিখতে চায়। আমার নিজের দেখা। তাবলিগ একটি বড় দল... এখানে শিক্ষিত অশিক্ষিত সব ধরনের লোকই আছে। তাবলীগে হয়তো কোন এক অশিক্ষিত লোক যোগ দিল... যার এলেম সম্পকে ভাল ধারনা ই নেই... সে হয়তো এই ধরনের ২/১ টা কথা বলে ফেলল... তার মানে কি তাবলিগের সবা্ই এই রকম কথা বলে? অথচ আপনি অভিযোগ কিন্তু তাবলিগ জামাত বা দলের প্রতি।

অথচ বক্তব্য টা দলের ২/১ জন অশিক্ষতি লোকের... যা দল কখনই সাপোর্ট করে না....আপনি দয়া করে বলবেন কি তাবলিগের কোন মুরুব্বী কবে কোথায় এই কথা গুলো বলেছিল? (৩) উনারা মাওলানা মওদুদি (রঃ) কে দেখতে পারেন না এবং উনার বইকে অস্পৃশ্য মনে করেন। মওদুদী সম্পর্কে বা কোন আলেম সম্পর্কেই তাবলীগে কোন খারাপ কথা কোনদিন বলেনা। মওদুদিরে নিয়া তাবলীগের কোন মাথা ব্যাথা নাই। তার বিরুদ্বে কিছু বলতেও শুনি নাই কখনো। এবার নিজের জীবনে তাবলীগ এর সুফল বলি : আমার তাবলীগ এর প্রথম দাওয়াত পেয়েছিলাম আমার বাল্যবন্ধু উবায়দুল হাসান লোধী'র কাছ থেকে।

এরপর আমি যখন নটরডেম কলেজে পরতাম তখন থাকতাম কাজী আলাউদ্দীন রোড এ আমার নানাবাড়ীতে। নানাবাড়ীর পাশের মসজিদ এর ফাজায়েলে আমাল এর তালিম এ বসে দ্বিতীয়বার তাবলীগ এর দাওয়াত পা্ই। অনেকে বলে ফাজায়েলে আমালে অনেক দূর্বল হাদীস আছে। ওলামা একরাম এর সহবতে গিয়ে জেনেছি এগুলো সবই ফাজায়েল এর হাদীস অর্থাৎ উৎসাহব্যন্জক হাদীস। কোথাও কোন আক্বীদাগত বা মাসালা মাসা্য়েল বিষয়ক হাদীস ফাজায়েল এ আমাল এ বর্ণিত হয়নি।

ফাজায়েল এ আমাল এর তালিম এ বসে লাখো মুসলমান দ্বীন মানার ও ইসলাম এর জীবন চেতনায় উৎসাহিত হচ্ছে। মানুষকে ভাল কাজে উৎসাহিত করতে তো ইশপের গল্প ও ঘৃণিত নয়, আর এখানে তো হাদীস পড়া হচ্ছে যা হাদীসের কিতাব থেকেই সংকলিত। এমন হাদীস যাতে কোন আমলের পদ্ধতি নয় বরং লাভ বলা হচ্ছে। লাভের হাদীস মানুষকে আমলে উৎসাহিত করে। নিজের জীবন থেকে আমি এর সত্যতা পাই।

আমি একসময় নামাজ পড়তাম না। কোরআন পড়তাম না। ইসলাম এর অন্য রোকন গুলো (হজ্ব, যাকাত) তো অনেক পরের কথা। তাবলীগ করার পর থেকে আল্লাহ পাক এর রহমতে গত ১৫ বছরে আমার নামাজ ক্বাজা হ্য় নাই। অতীতের উমরে ক্বাজা গুলো আলহামদুলিল্লাহ আদায় হয়েছে।

ফরজ হজ্ব আল্লাহ পাক আদায় করিয়েছেন, যাকাত হিসাব করে নিয়মিত দেওয়ার তৌফিক আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। একসময় জিন্স এর প্যান্ট আর লেদার জ্যাকেট আমার প্রিয় পোষাক ছিল, এখন সুন্নতী পোষাক পরিধান করি। একসময় ক্লিনশেভ থাকতাম এখন একমুষ্ঠি দাড়ি রাখি। প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াত না করলে আমার অস্বস্তি লাগে। আমার একমাত্র ছেলেকে আমি ডাক্তার ইন্জিনিয়ার বানানোর স্বপ্ন না দেখে হাফেজ আলেম বানানোর স্বপ্ন দেখি।

এজন্য তাকে আমি মাদ্রাসায় ভর্তি করেছি। (এর অর্থ এই নয় আমি ডাক্তার ইন্জিনিয়ার বানানোকে খারাপ বলছি। সমাজে সকল শ্রেনী ও পেশার মানুষের প্রয়োজন আছে। ) সবশেষে বলি তাবলীগ আপনি করুন বা না করুন তাবলীগ এর বদনাম করতে হলে ভেতরে ঢুকে জেনে বুঝে করুন।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.