মুন রিভার ...
বর্ষা অনুভুতির আগের অনুভুতি...
দিলু রোডে পার্থদার স্টুডিওতে বসে আছি। পার্থ'দা ঠা ঠা করে হাসছে আর আমার মস্তিষ্কের ত্রিসীমার অযুত বিলিয়ন রাডারের বাইরে দিয়ে যাওয়া চাটঁগা ভাষায় ফোনে কথা বলছে। দুপুর বেলা। রোদ চোখে মুখে স্টুডিওতে ঢুকে পার্থ'দার কথা শুনতে শুনতে মোবাইল বের করে মেসেজ অপশন এ যাই। আমি তখন সেই সুখী কৃষক যার ফসল মওসুমে দু' হাত ভরে ফলন হচ্ছে ।
শব্দপাখির দল নিয়ত ওড়াওড়ি করছে চারপাশে। আমি জ্যাম এ বসে লিখি, বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়েই শব্দপাখির সাথে সখ্যতায় মেতে উঠি। আমি তখন আক্ষরিক অর্থেই সুখী নাগরিক কৃষক।
এসব ভাবতে ভাবতে বাইরের দিকে তাকাই। চমকে উঠি।
দুপুর হুট করে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। মেঘের হু হু করা মন খারাপ। আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখি। বৃষ্টি শুরু হয়। ফোঁটা ফোঁটা থেকে অঝোর ধারায়।
খুব কাছেই একটা উচুঁ দেয়ালে বৃষ্টি ফোঁটাগুলো সশব্দে পড়ে আর চারপাশে কুয়াশা হয়ে যায়। ধোয়াঁ ধোঁয়া অদ্ভুত এক অপার্থিবতা ... আমি তাকিয়ে থাকতে থাকতে শব্দ খুঁজে পাই। কল্পনায় কৃষ্ণচূড়ার গাঢ় লাল রঙ দেখি। শব্দপাখিরা দৃশ্যকল্প আঁকতে শুরু করে...
বৃষ্টি গুলো দেয়াল ছুঁয়ে ধোঁয়া হয়ে যায়...
ফিরতি পথে জ্যাম আমার বন্ধু প্রতিদিন। প্রবল শত্রুতা শেষে আমি পরাজিত হাসিমুখে বন্ধু ভেবে নেই জ্যামকে।
এক চিলতে সবুজ পার্ক সি এন জি তে বসে আমি খুঁজে পাই পরের ভার্স-টা। বাসায় ফিরি। রাত নিশ্চুপ হয়ে যেতেই বাকি শব্দদের তালাশ করি। আশাবাদী শব্দপাখিরা এবারও হতাশ করে না। মন ভালো করা চার লাইন দিয়ে অন্য কারো স্বপ্নের দৃশ্যকল্প ভাবনায় জানলা দিয়ে উড়ে চলে যায়।
বৈশাখ এর এক গভীর রাতে আমার বর্ষা অনুভূতি লেখা শেষ হয়ে যায়।
সুর সাহসী মন, ভাবনা অযতন...
এ মাইনর ধরে গিটার বাজাচ্ছিলাম একদিন। প্লাকিং শুরু করতেই মন বিষন্ন এক পরিবেশ। খুব শখ, গিটার শিখবো। (ভাবছি এই শরৎকাল থেকে শুরু করবো গিটার শেখা আর ছবি আঁকা।
) এ মাইনর ধরে অপরিপক্ক আঙ্গুল চলে ডি মাইনর, তারপর জি হয়ে ই মেজর-এ। একটা বিষন্ন সার্কেল ধরে আমি টুংটাং করতে থাকি অনেকক্ষন ধরে, কেন করছি, কি করতে যাচ্ছি, কিছুই জানিনা তখন। ক'দিন ধরে খুব ভাবছিলাম বর্ষা অনুভূতি লিরিকটা নিয়ে। ইশ! আমি যদি টিউন করতে পারতাম।
এ মাইনর।
গুনগুন শুরু করি। বর্ষা অনুভুতি -র প্রথম কয়েক লাইন। তারপর সার্কেলটা ধরে পুরো গান গাইতে থাকি। একদম ইন্সট্যান্ট একটা সুর এসে যায়। আমি অবাক হবারও সময় পাইনা।
তার আগেই দেখি কখন যেনো ল্যাপটপ এ সুর টা রেকর্ড করে ফেলেছি। শুনতে যেয়ে গুম মেরে যাই নিজের ভিতর! সর্বনাশ! শুনতে ভালো লাগছে!
তারমানে আসলে কিছু হয় নাই!
স্টুডিয়ো, রেকর্ডিং আর বর্ষা অনুভূতির অপার্থিব আনন্দ...
সামির এর সাথে পরিচয় লন্ডনে। কথায় কথায় জানতে পারি ওর ইচ্ছে অডিও ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লিট করে দেশে ফিরবে। একসাথে কাজ করার কথা বলে সামির। আমি কিছু বলি না, হাসি।
সামির এর সাথে দেশে ফিরে দেখা হয় আবার। স্টুডিও সেট আপ দিয়ে ফেলেছে। আমিও ততদিনে লন্ডনের তীব্র মন খারাপ করা শীত এর সাথে কোনোভাবেই বন্ধুতা করতে না পেরে দেশে ফিরে এসেছি। সামির এর স্টুডিওতে যাই। প্রথমবারের মত মাইক্রোফোনের সামনে দাড়াই।
অন হতেই 'বর্ষা অনুভুতি' শুধু গিটার এ রেকর্ড করে ফেলি। স্টুডিও-র সবাই বেশ পছন্দও করে।
তারপর অনেকগুলো রাত-দিন চলে যায়। গানটা নিয়ে বন্ধু রিঙ্কির সাথে বসি। চা -সিগার আড্ডায় নানা তর্ক শেষে ঠিক করি রাসেলকে ডাকবো কম্পোজিশন এর জন্য।
রাসেল অসাধারণ একোস্টিক ক্লাসিক্যাল গিটার প্লেয়িং করে। সবচেয়ে বড় কথা হলো গান নিয়ে ওর সাথে আমার টেস্ট প্রায় মিলে যায়। রাসেল এসে গানটা শোনে। কিছুদিন পরেই দারুন একটা কম্পোজিশন করে নিয়ে আসে। গানে তখন পারকিউশনটা ছিলো না।
শুধু নাইলন স্ট্রিং এর গিটার। 'বর্ষা অনুভুতি' জেগে ওঠে। গানটা রেকর্ডিং হয়ে গেলে সেই ভার্শন-টা শেয়ার করি আমার খুব প্রিয় ইনসমনিয়াক ক্লাব মেম্বারদের সাথে। সবাই পজিটিভ ফিড ব্যাক দেয়। আমি অবাক হই, খুশী তো বটেই।
তার কিছু পরে রাসেল রি এরেঞ্জ করে গানটা। শেকার ইনসার্ট করে, দারুন মানানসই ব্যাকআপ ভয়েস দেয়। এবার রেকর্ডিং হয় আমাদের আর এক বন্ধু রানা-র স্টুডিয়োতে।
বর্ষা অনুভূতি-র জার্নি শেষ হয়। বর্ষা অনুভুতি গান হয়ে যায়।
বর্ষা অনুভূতি
কথা ও সুরঃ রানা
কম্পোজিশনঃ রাসেল
বৃষ্টিগুলো দেয়াল ছুঁয়ে ধোঁয়া হয়ে যায়
কৃষ্ণচূড়া বৃষ্টি ভেজে,লাল রঙ মন গাঢ়
অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে,অচীন সুদুর মেঘে
পাহাড় ও কি উদাস তখন,মনটা উদাস তারও!
সকল পাখী গাছের ছায়ায়,একটা ভেজে জলে
সেই পাখীটার দৃষ্টি আকুল,সুদুরচারী চোখ
আমারও খুব ইচ্ছে করে মেঘমল্লার ছুঁয়ে
বৃষ্টি ভেজা সেই পাখীটার সাথে সখ্য হোক!
দীঘল কালো চুলের সিথি,বাতাস চৌ্রাসিয়া
মুহুর্ত টা যাক ছুঁয়ে যাক গন্ধ সোঁদা মাটি
বৃষ্টি ভেজা গাছগুলো সব আনন্দ উত্থান
বৃষ্টি ধোঁয়া সবুজ পাতা,বর্ষা অনুভুতি। ।
ও মেঘবতী মেয়ে, তুই অপরুপ...
রোদ হয়ে ছুঁই এর গল্প-অনু গল্প। কিছু লিখবো বলে আলগোছে রোদ হয়ে ছুঁই লিখে রাখা। তারপর লিরিকটার কথা ভুলে যাওয়া।
যথারীতি সামির এর স্টুডিও। একদিন রিঙ্কি এসে বললো, 'দোস্ত আর কি গান বানালি ?' বর্ষা অনুভূতির পর আমি তখনও নতুন সুর খুঁজে পাইনি । রিঙ্কির কথা শুনে গিটার হাতে নেই। ডি মেজর ধরে বাজাতে শুরু করি। খুব আশ্চর্যের ব্যপার হলো, রোদ হয়ে ছুঁই এর সুর ঠিক ঠিক পাঁচ মিনিটে হয়ে যায়।
শেষ করেই ডেমো ভয়েস দিয়ে রেকর্ডিং করে রাখি। না হয় নির্ঘাত ভুলে যাবো পরে। রেকর্ডিং শেষে রিঙ্কি গম্ভীর মুখে জানায়, ' ভালো হইসে। ' আমি হেসে ফেলি। রোদ হয়ে ছুঁই বড় অযতনে বেড়ে ওঠে।
বাসার পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয় জনের মত অনাদরে।
রাসেল কম্পোজিশন করে দেয়। খানিকটা রেগে স্টাইলে। ভায়োলা ফ্লেভারে কি-বোর্ড বাজিয়ে দেয় রানা। আমি সুর শেষ করে অবাক অবাক চোখে ভয়েস দেই।
কাছের মানুষদের শোনাই। তারপর চুপচাপ ভুলে যাই আবার।
অনেকদিন পর রোদ হয়ে ছুঁই-র ডেমো ভয়েস দেই কল্যানপুরে, রানার স্টুডিয়োতে। মজার ব্যপার হলো সামির এর স্টুডিয়োতে অনেকগুলো ফাইনাল ভয়েস দেয়া হলেও বর্ষা অনুভুতি আর রোদ হয়ে ছুঁই- দুটো গানেরই ডেমো ভয়েসটাই শেষ পর্যন্ত ফাইনাল হয়ে পোঁছে যায় সি ডি কভারের সবুজ তেপান্তরে।
সবার পথা ছায়াতরু থাকুক, সবুজের চাষ হোক সবার অন্তরে...
রোদ হয়ে ছুঁই
কথা ও সুরঃ রানা
কম্পোজিশনঃ রাসেল
রোদ হয়ে ছুঁই
বৃষ্টি নামাই
মেঘ হয়ে মেঘবতী
তোর কাছে যাই
রোদ হয়ে ছুঁই
দুপুর উদাস
তোর পথে ছায়াতরু
সবুজের চাষ
বৃষ্টি নামাই
তোর প্রিয় খুব
পরিযায়ী পাখীগুলো
ভিজছে ভিজুক
ও মেঘবতী মেয়ে
তুই অপরুপ
শাল পিয়ালের বনে
জোছনা জ্বলুক
ও মেঘবতী মেয়ে তুই অপরুপ
নস্টালজিক আর ওয়েভ... বর্ষা অনুভূতিতে
পরের ৫ মাসে আরো গোটা তিনেক, (আমি যখন স্বপ্ন দেখি, পোড়া শহর, গুচ্ছ ঘাসের সবুজ আকাশ নীল) সবশুদ্ধ ৫ টা গানের কথা সুর আর কম্পোজিশন রেডি হয়ে যায়।
এবার কম্পোজিশন করে দেয় বনি। দুইটা গানের সুর করে দেয় অমিত, একটা করি আমি একটা করে বনি। গানগুলোর ডেমো ভয়েস রেকর্ডিং করে ব্যান্ডের নামটা ঠিক করে ফেলি -নস্টালজিক। অনেক নাম খুঁজে ফিরে এই নামটাই মনে ধরে। (ব্লগার নস্টালজিক আশা করি কিছু মনে করবেন না।
)
একদিন রিঙ্কি জানায় নস্টালজিকের দুইটা বৃষ্টির গান লাগবে। এই শ্রাবণে এইচ পি-র মনসুন অফারের সাথে একটা অ্যালবাম ফ্রি গিফট হিসেবে যাবে। বৃষ্টির গান সব। ওদের ব্যান্ড ওয়েভ ৪ টা গান কমপ্লিট করেছে। আমি 'বর্ষা অনুভূতি' আর 'রোদ হয়ে ছুঁই' দিয়ে দেই।
গ্রে-র খুব কাছের ছোটো ভাই সাগরকে বলতেই দুর্দান্ত একটা কাভার ডিজাইন করে দেয়। অ্যালবামের টাইটেল ঠিক হয় নস্টালজিকের গান বর্ষা অনুভূতি দিয়ে। আমি মনে মনে বলি ধরণী দ্বীধা হও।
তারপর মামুনের মিক্স মাস্টারিং শেষে ওয়েভ আর নস্টালজিকের ৬ টা গান একদম রেডি টু লিসেন হয়ে যায়।
বর্ষা অনুভূতির ওয়েবসাইট গান ডাউনলোড করতে পারবেন এখানে
বর্ষা অনুভূতি এলবামের গান শুনতে পাবেন এখানে
বর্ষা অনুভূতি
রোদ হয়ে ছুঁই
অফটপিকঃ
শুক্রবার, ১৩ জুলাই, সবাইকে আমন্ত্রণ জানাই বসুন্ধরা শপিং মলের ফুড কোর্টের ক্যাপরিকর্ন-এ।
দুপুর ৩ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত আড্ডা, গান আর আড্ডা।
আমি খুব আগ্রহ নিয়ে সবাইকে সি ডি টা গিফট করতে চাই। বর্ষা অনুভুতির আনন্দ সবার সাথে ভাগাভাগি করে নিতে চাই।
সবার মন ভালো থাকুক। বর্ষা অনুভুতিতে থাকুক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।