ভালোবাসি পৃথিবী, পৃথিবীর মানুষ এবং সৃষ্টিকর্তাকে।
স্বামী: আসসালামুালইকুম।
স্ত্রী: ওয়ালাইকুমআসসালাম, কেমন আছ?
স্বামী: আলহামদুলিল্লাহ, ভাল। তবে পুরো পুরি ভাল আছি বললে ভুল হবে।
তুমি কেমন আছ?
স্ত্রী: আলহামদুলিল্লাহ আমি ভাল।
কিন্তু তুমি কেন পুরো পুরি ভাল নেই?
স্বামী: তোমার কাছ থেকে অনেক দুরে, আবার তুমি আমাকে অনেক কষ্ট করে সময় দিচ্ছ, এই সব কিছুর মধ্যে কি ভাবে ভাল থাকি বল?
স্ত্রী: আমার কষ্ট হলেও আমিতো লিখছি তাই না.....
স্বামী : তোমার ইচ্ছে না থাকলে, না লিখলেও পার.... আমি চাইনা তোমার ভাল সময়টা নষ্ট হোক।
স্ত্রী: সত্যি তুমি আমার ভাল চাও?
স্বামী: ভাল না চাইলে-তো বলতাম, তোমার ভাল সময় নষ্ট করে আমার সাথে লেখ।
স্ত্রী: আমিতো বলিনি ভাল সময় নষ্ট হচ্ছে।
স্বামী: কি বলেছ?
স্ত্রী: ভাল... সেটা অন্য রকম ও তো হতে পারে।
স্বামী: ওকে.. কথা হচ্ছে তুমি যে ভাবে সুখী থাকতে পার, নোপরবলেম।
স্ত্রী: আমিতো চাই তোমার পাশে থাকতে, সেটা কি এই জীবনে হবে বল?
স্বামী: আল্লাহই ভাল জানে। তবে সত্যি সেটা চাও তুমি? সেটা কি শুধু শারীরিক সম্পর্কের জন্যে নাকি?
স্ত্রী: আল্লাহর কাছেতো প্রার্থনা করি যেন জীবনের সবটুকু তুমি আমার পাশে থাক।
স্বামী: তাহলে প্রার্থনাও কর...কি জন্যে কেন?
স্ত্রী: শারীরিক সম্পর্কের জন্যে, ভালবাসার জন্যে, ভাল থাকার জন্যে।
স্বামী: এতকিছু কি আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব হবে? শারীরিক সম্পর্ক না হয় তোমার জন্যে জোর করে করলাম, ভালবাসা ভাল থাকা কি সম্ভব হবে?
স্ত্রী: জোর করে দিবে কেন?
স্বামী: জোর না করে কি ভাবে দিব বল?
স্ত্রী: আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর। আল্লাহই সুযোগ করে দিবেন।
স্বামী: আমরা দুই জনেইতো প্রার্থনা করছি, কিন্তু সমস্যারতো সমাধান কি হচ্ছে?
মনে হয়না, গড়া সম্পর্ক মেরামতের অভাবে আস্তে আস্তে নষ্ট হচ্ছে?
স্ত্রী: আল্লাহ অবশ্যই বান্দার প্রার্থনা শুনবেন।
স্বামী: খাছ দিলে আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ শুনবেনা কেন? চাওয়ার মধ্যে নিশ্চয় গলদ আছে...হয়তো আমার না হয় তোমার।
স্ত্রী: ধৈর্য ধরলে আল্লাহ দিবে... এই চার বছর দেয়নি নিশ্চয় আগামীতে দিবে।
স্বামী: চার বছর দেয় নাই, কথাটা আমি বলবো সঠিক না... হয়তো তোমার ধারণা থেকে তোমার কাছে সঠিক মনে হতে পারে।
স্ত্রী: চার বছরে তুমি আমাকে সময় দিয়েছ ছয় মাস, ৪৮ মাসে ৪২ মাসতো একা ছিলাম?
স্বামী: শারীরিক সম্পর্কের কথা বলতে পার ছয় মাস..... বাকি সব তুমি যে বলেছ ,ভালবাসা, ভাল থাকা ।
স্ত্রী: কাছে থেকে ভালবাসা এবং ভাল থাকার যে আনন্দ, দুরে থেকে ভালবাসা আর ভাল থাকার সেই আনন্দের মধ্যে অনেক পার্থক্য।
স্বামী: হমম সেটাতো অবশ্যই... কিন্তু শারীরিক সম্পর্কের আনন্দ দুই জনের এক রকম হলেও, ভালবাসা, ভাল লাগা আর ভাল থাকা কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন। প্রথমটি ছাড়া বাকি সুখ গুলো তোমাকে কি কখনো আমি দিতে পেরেছি নাকি পারবো?
স্ত্রী: বোকার মত কি বলছ! ভালবাসা না থাকলে কি শারীরিক সম্পর্ক হয়?
স্বামী: ভালবাসা, ভাল থাকা তোমার মত করে আমার কাছ থেকে কখনো দেওয়া সম্ভব হয়েছে নাকি কখনো হবে?
স্ত্রী: যাকে ভালবাসা যায়না, তার সাথে কি শারীরিক সম্পর্ক করা যায়?
স্বামী: আমার ভাল লাগা আমার ভালবাসা আর তোমার ভাল লাগা তোমার ভালবাসার মধ্যে.. আমার মনে হয় পার্থক্য অনেক। শুধু শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুখী হলে কি এই জীবনকে সুখী বলা যাবে?
স্ত্রী: দুই জনের ভালবাসা ভাল লাগা পার্থক্য হল কেন? আর যদি পার্থক্যই হয় তাহলে সংসার টিকে আছে কি ভাবে বল।
স্বামী: পৃথিবীতে মানুষের চেহারার যেমন মিল পাওয়া কঠিন তেমনি মানুষের মনের মিল পাওয়াও আমি বলবো কঠিন।
তোমার কি চোখে পড়েনা তোমার আমার চাওয়া গুলোতে অনেক ভিন্নতা আছে?
স্ত্রী: আমি যখন তোমাকে কাছে পেতে চাইছি, তুমি এখন তাই এইসব কথা বলছ।
স্বামী: কি সব কথা আমি বলছি?
স্ত্রী: এতক্ষণ যে সব উদাহরণ দিয়েছ।
স্বামী: কোন উদাহরণটা তুমি পাশে থাকতে চাও বলাতে আমি বলেছি?
স্ত্রী: এখন যা যা দিয়েছ।
স্বামী: লেখ কি কি দিয়েছি?
স্ত্রী: শারীরিক সম্পর্ক ছাড়া ভাল লাগা ভালবাসা ভিন্ন যে বলছ।
স্বামী: আচ্ছা শুন, আমি যদি সব সময় তোমাকে বকা দিয়ে থাকি বা সব সময় তোমার পথের কাটা হই বা তোমার কোন কোন ভালোলাগার কাজ গুলো যদি আমার পছন্দ না হয়, তোমার কি আমাকে ভাল লাগবে, তুমি কি তখন আমাকে ভালবাসবে?
স্ত্রী: না।
স্বামী: তাহলে আমার কথাই ঠিক।
স্ত্রী: তুমি কি বলতে চাও , আমি তোমাকে সব সময় বকা দেই, তাই তুমি আমাকে ভালবাসতে পার না.... মানে তুমি বোঝাচ্ছ তুমি আমাকে ভালবাস না?
স্বামী: তুমি কখন আমাকে বকা দিয়েছ, এই রকম কাজ কি কখনো করেছ?
স্ত্রী: না।
স্বামী: তবে সরাসরি অর্থাৎ সামনা সামনি কোন দিন বকা দাওনাই আমি হলপ করে বলতে পারবো..
স্ত্রী: তুমি আমাকে ভালবাস না?
স্বামী: কিন্তু মনে মনে কি তুমি কখনো আমার ব্যবহারে বা কোন নিষেধের জন্যে বকা দাওনাই, সেটা কি তুমি হলপ করে বলতে পারবে?
স্ত্রী: হা হয়েছে, সেই রকমতো তোমারও হয়েছে।
স্বামী : আমি হয়তো কখনো কখনো সরাসরি তোমাকে বকেছি বা আমার মত বা ভাল লাগার বিষয় মেনে নিতে চাপ দিয়েছি। তখনই তুমি বিরক্ত হয়েছ তাই না?
স্ত্রী: কিন্তু আমিতো সেটা পারিনা সরাসরি বলতে।
স্বামী: সরাসরি আর মনে মনের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই।
স্ত্রী: তুমি আমাকে বকলে আমি বিরক্ত হব না! প্রথমে বিরক্ত হব... তারপরে না হয়তো বুঝবো কেন তুমি আমাকে বকেছ।
স্বামী: তোমার চাওয়া গুলোর উপর চাপ দেওয়ায় হয়তো কখনো তুমি তোমার পছন্দ সই কাজটি না করতে পেরে আমাকে মনে মনে বকা দিয়েছ এবং আমার উপর বিরক্ত হয়েছ।
কিন্তু বিরক্ত হওয়ার পরে বুঝতে পেরেছ, যদি সত্যি এই রকম হত তাহলে-তো পৃথিবীর মধ্যে সুখী মানুষ হিসেবে গ্রিনেজ বুকে আমার নাম থাকতো।
নাম না থাকার পিছনে কারণ কি এই নয় যে, আমার অপছন্দের কাজ গুলো আমার অনিচ্ছা সর্তেও তুমি করেছ?
স্ত্রী: স্বাধীন ভাবে চলার অধিকার কি আমার নেই?
স্বামী: অবশ্যই আছে।
আমি কি তার জন্যে প্রতিবাদ করতেছি?
স্ত্রী: প্রতিবাদ না শুধু তুমি-তো বুঝাতে চাচ্ছ আমাকে তুমি ভালই বাস না।
স্বামী: আমিতো তোমাকে বুঝাতে চাচ্ছি.... তুমি আমাকে ভালবাসতে চাও, কিন্তু তোমার মত করে।
আমি যখন তোমার পছন্দের কিন্তু আমার অপছন্দের কাজ গুলো করতে তোমাকে বিরত রাখতে চাই, তখন তুমি আমার উপর বিরক্ত হও এবং মনে মনে আমাকে বকা দাও, তখন তুমি চাইলেও আমাকে ভালবাসতে পার না।
স্ত্রী: তুমি বলতে চাচ্ছ যে সব সময় যাকে বকা দেই , তাকে ভালবাসা যায়? এই খানে তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছ, আমি তোমাকে ভালবাসিনা নাকি তুমি আমাকে ভালবাস না?
স্বামী: আমি বুঝাতে চাচ্ছি তুমি আমাকে আই লাভ ইউ বল, আমিও তোমাকে বলি। কিন্তু সত্যিকারে আমরা এক জন আরেক জনকে কতটুকু ভালবাসি বা আমাদের এক জন আরেক জনকে কত টুকু ভাল লাগে?
স্ত্রী: তুমি আগে বল....
স্বামী: আমারতো মনেহয় আমি মাঝে মাঝে তোমার পথের কাটা হয়ে যাই.. তখন তুমি আমাকে মনে মনে বকা দাও... এবং তোমার পক্ষে আমাকে ভালবাসা বা ভাল লাগা সম্ভব হয় না।
স্ত্রী: আমারওত মনে হয় মাঝে মাঝে আমি তোমার কথা শুনি না দেখে আমাকে তুমি বকা দাও এবং তোমার পক্ষেও আমাকে ভাল লাগা বা ভালবাসা সম্ভব হয় না।
স্বামী: একদম বেঠিক কিছু বলনি।
স্ত্রী: তাহলে-তো আজকের রাত স্মরণীয় রাত, আমার স্বামী আমাকে ভালবাসেনা সে কথা জানার রাত, কি সত্যি বলছি না?
স্বামী: তোমার স্বামী তোমাকে ভালবসেনা এই ভাবে বললে ভুল হবে... বলতে পার তুমি যেমন তোমার স্বামীকে ভালবাসতে পারনা, তোমার স্বামীও তাই।
স্ত্রী: তাহলে আমরা দুই জন দুই জনকেই ভালবাসতে পারি না, এখন কি করা উচিৎ।
স্বামী: সত্যি বলতে মানুষের ভাল লাগা গুলো কখনো এক রকম হয় না।
তাই নির্দিষ্ট একটা সীমানা থাকা চাই। আমাদের আদালত গুলোতে বিচারকরা যেমন নিজ ইচ্ছা মত রায় দিতে পারে না, দেখতে হয় সংবিধান এবং আইনে কি নির্দেশ দেওয়া আছে ঐ হিসেবে রায় দিয়ে থাকে। ঠিক আমরা যেহেতু মুসলিম সেহেতু আল্লাহ আমাদের জীবন চালানোর জন্যে যে জীবন ব্যবস্থা দিয়েছেন তার অমান্য করা আমাদের ঠিক নয়। আমাদের দুই জনের চাওয়া পাওয়া গুলোর সীমা আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থার সীমার অতিক্রম করা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারি তাহলে মনে হয় আমাদের দুই জনের চাওয়া পাওয়া গুলোর মধ্যে মিল খুঁজে পাবো। এবং আমরা সত্যি সুখী হতে পারবো।
স্ত্রী : আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থা মেনে চললে, আল্লাহও আমাদের প্রার্থনা কবুল করবেন। ইনশাল্লাহ আমরা সুখী হতে পারবো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।