কোন এক কাকডাকা ভোরে অন্ধকারের বুক ছিঁড়ে ফোটে উঠা আলোর হাত ধরে আমি হেঁটে গিয়েছিলাম প্রসন্ন পৃথিবীর পথ ধরে,একটি সূর্য আমায় ডেকেছিল বলে। জাতীয় সংসদে 'সংরক্ষিত মহিলা আসন'-এর সংখ্যাটা যখন ৩০ ছিল, ঐ সাংসদদেরকে তখন '৩০ সেট অলঙ্কার' বলা হতো। অলঙ্কার পরে বসে থাকা আর হাঁ-ভোট না-ভোট দেয়া ছাড়া সংসদে কোনো কাজ তখনও তাদের ছিল না, সংখ্যাটা বেড়ে ৫০ হবার পরেও এখনও তাদের সুনির্দিষ্ট কাজ নেই। এসব আসনে রাজনৈতিক দলগুলো বেছে বেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যুদ্ধংদেহী-ভয়ালদর্শন-উদ্ধত-গোঁয়ার-মেধাশূন্য-লাগামহীন-শিষ্টাচারজ্ঞানহীন নারীদেরকেই বসায়। নির্বাচিত সাংসদেরা জনগণের ভোট পেয়ে ম্যানডেট নিয়ে সংসদে আসেন, জনগণের কাজে তাদেরকে জবাবদিহি করতে হয়; অনির্বাচিত সাংসদেরা ভোট পেয়ে ম্যানডেট নিয়ে আসেন না, তাদের সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকাও নেই, নেত্রী ছাড়া কারোর কাছে তাদেরকে জবাবদিহিও করতে হয় না; ফলে নেত্রী ও নেতার স্তুতি গাওয়াই হয়ে পড়ে তখন এই সাংসদদের একমেবাদ্বিতীয়ম কাজ! এসব সাংসদকে কখনও কোনো বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য প্রদান করতেও দেখা যায়নি, রাষ্ট্রপতির ভাষণ কিংবা বাজেটের ওপর দিকনির্দেশনামূলক তথ্যবহুল-তত্ত্ববহুল কোনো বক্তব্য দিতেও দেখা যায়নি।
বরং তাদেরকে দেখা গেছে সংসদের বাইরে ও ভেতরে অসভ্যতা-অশ্লীলতা-অশালীনতার পসরা সাজাতে! সংরক্ষিত মহিলা আসনে যোগ্য সাংসদ যে একেবারেই নেই, তা নয়। বর্তমান স্পিকার অ্যাডভোকেট শিরিন শারমিন চৌধুরীও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ; অবশ্য তার শিক্ষাগত যোগ্যতার খতিয়ান বাংলাদেশের ইতিহাসের যেকোনো রাজনীতিকের চেয়ে সমৃদ্ধতর। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদদের মধ্যে তিনি নিছক ব্যতিক্রম। নারীরা সংসদে এক সময়ে বড় দাগে পিছিয়ে ছিলেন। নির্বাচিত হয়ে সংসদে আসাটা বাংলাদেশের নারীদের জন্য এক সময়ে কঠিনই ছিল।
কিন্তু এখন সেই দিন পালটে গেছে। বর্তমান সংসদেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নির্বাচিত নারী সাংসদ রয়েছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, একাধিক মন্ত্রী নারী; তাদের যোগ্যতা নিয়ে কখনও বিতর্কের জন্ম হয়নি। সাধারণ আসনে নির্বাচিত নারী সাংসদদের যোগ্যতাও যেমন প্রশ্নাতীত, তারা সংসদে অশ্রাব্য-অশালীন ভাষাও ব্যবহার করেন না, সাধারণ আসনে নারীদের নির্বাচিত হয়ে আসা এখন কঠিনও কিছু না। অর্থাত্ বাংলাদেশের সংসদে এখন 'সংরক্ষিত মহিলা আসন' নামক বস্তুটির উপযোগিতা ফুরিয়ে গেছে।
'সংরক্ষিত মহিলা আসন' এখন যেমন একটি কৌতুকের নাম, যোগ্যতাসম্পন্ন নারীদের জন্য এটি তেমনি বিব্রতকর ও অপমানজনকও বটে। এখন সংসদ ও সংবিধান থেকে 'সংরক্ষিত মহিলা আসন' প্রথাটি তুলে দিয়ে সাধারণ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নারীদেরকে উত্সাহিত করা উচিত কিনা সেটা ভাবার সময় এসে গেছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।