ভোরে সংবাদপত্রের গাড়ি আসার আগেই কিশোরগঞ্জ শহরের রথখোলা এলাকায় রোজ দেখা মেলে হকার আলী ভাইয়ের। মুখভর্তি দাড়ি-গোঁফের সঙ্গে প্রাণখোলা হাসির আলী ভাইকে খুব সহজেই আলাদা করা যায়। পত্রিকা বোঝাই একটি কালো ঝোলা কাঁধে বয়ে তিনি পার করে দিয়েছেন চার দশকেরও বেশি সময়। শতবর্ষী এ মানুষটি টগবগে তরুণের মতোই ৪১ বছর ধরে পায়ে হেঁেট নিয়মিত পত্রিকা ফেরি করে চলেছেন। খবরের বোঝা হাতে কালের অনেক উত্থান-পতনের নীরব সাক্ষী তিনি।
নিরন্তর এ কাজে ছুটে চলাই যেন তার জীবনের ছন্দ। আলী ভাইয়ের পূর্ণ নাম মো. আলী হোসেন। শহরের তারাপাশা এলাকার ছোট্ট একটি বাসায় স্ত্রী, এক মেয়ে ও দুই নাতিকে নিয়ে তার পাঁচ সদস্যের পরিবার। কৃষক বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনে শুরু করেন পান-বিড়ির দোকান। মুক্তিযুদ্ধের পর তার দোকানের লাইসেন্স বাতিল হয়ে গেলে যোগ দেন পত্রিকা বিক্রির কাজে।
সে সময় এ পেশায় লোকজন কম থাকায় প্রতিদিন প্রায় ২ শতাধিক কপি পত্রিকা বিক্রি করতে পারতেন তিনি। এ থেকে ভালই আয় হতো তার। এরপর থেকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সদাচরণ, একাগ্রতা ও আন্তরিকতায় এজেন্ট-হকার-পাঠক সবার মাঝে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন প্রিয় ‘আলী ভাই’ হিসেবে। কাজের আয় থেকেই তিনি এরই মধ্যে তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এ কাজের প্রতি একটা অদ্ভূত মায়া পড়ে গেছে তার। যে কারণে বয়স বাড়লেও কাজটা ছাড়তে ইচ্ছা করে না। স্থানীয় সংবাদপত্র এজেন্ট পত্রিকা ঘর থেকে দৈনিক প্রায় দুই শ’ কপি পত্রিকা নিয়ে বিক্রি করছেন। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় পত্রিকা বিক্রির আয়ে চলতে এখন কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। পত্রিকা ঘরের স্বত্বাধিকারী এমএ সাদেক মুকুল জানান, হকার আলী ভাই প্রায় ২২ বছর ধরে তাদের এজেন্সি থেকে পত্রিকা নিয়ে বিক্রি করছেন।
তার দৈনন্দিন লেনদেন থেকে শুরু করে আচার-আচরণ খুব ভাল। তিনি কেবল হকার হিসেবে নয়, ব্যক্তি হিসেবেও একজন আদর্শ মানুষ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।