আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অহঙ্কার পতন ডেকে আনবে : সংসদে এমপিদের হুশিয়ারি

অহঙ্কার সরকারের পতন ডেকে আনতে পারে বলে হুশিয়ার করে দিয়েছেন মহাজোট সরকারের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) মইন উদ্দিন খান বাদল। রোববার জাতীয় সংসদে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ক্ষমতা তাদের হঠাৎ করে অহংকারী করে তুলেছে। এই কারণে তাদের পতন ডেকে আনতে পারে। মহাজোটের আরেক শরিক দল জাতীয় পার্টির নূর ই হাসনা লিলি চৌধুরী শেয়ার বাজারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আগামী নির্বাচনে এর জন্য সরকারকে চড়া মাশুল দিতে হবে। বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে শাসক দল আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা বাজেটের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।

তারা বলেন, বিশ্ব মন্দার মধ্যেও দেশের অর্থনীতি সঠিক পথেই চলছে। দেশের মানুষ আগের চাইতে এখন অনেক ভালো আছে। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিসহ বিরোধী দলের তীব্র সমালোচনাও করেন বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে। তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) একে খন্দকার, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, জাহিদ মালেক, রওশান জাহান সাথী, শহীদুজ্জামান সরকার, ডা. মো. আমানুল্লাহ, অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, আকরাম হোসেন চৌধুরী, হাবিবুর রহমান মোল্লা, মততাজ বেগম, তাজুল ইসলাম, একেএম ফজলুল হক, জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন, বেবী মওদুদ, দবিরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, জাফর ইসলাম সিদ্দিকী, আনিছুল ইসলাম ম-ল, বেগম নূর ই হাসনা লিলি চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) মইন উদ্দিন খান বাদল প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন। আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশের গণমাধ্যম পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা ভোগ করছে।

ইতোমধ্যে তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তথ্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। বর্তমান সরকার সাংবাদিকদের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে অতীতে কোনো সরকার তা দেয়নি। বিরোধী দলের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির বিরোধিতা করেছিলেন। এখন তিনিই এই দাবি করছেন।

বিরোধীদলীয় নেত্রীর উদ্দেশে আবুল কালাম আজাদ বলেন, তার (খালেদা জিয়া) মুখে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা শোভা পায় না। তিনি সেসময় ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের দুঃখ-কষ্ট তিনি বুঝবেন না। আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, ক্ষমতায় থেকে খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতা করেছেন।

এখন ক্ষমতা হারিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এদেশের মানুষ তার কথায় বিভ্রান্ত হবে না। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক চরম সঙ্কট, বিএনপি জামায়াত এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সমস্যার বোঝা নিয়ে আমাদের সরকার যাত্রা শুরু করেছিল। বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনার মাধ্যমে দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে গেছে। দেশের মানুষ এর সুফলও ভোগ করছে।

প্রস্তাবিত বাজেট ২০২১ সালের রূপকল্প বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। বিরোধী দলের বর্তমান দাবি এবং অতীতের বক্তব্যেও দ্বৈততা উপস্থাপন করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ২০০৫ সালে বলেছিল_ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়া তো দূরের কথা বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবে না। ২০০৮ সালে জনগণ বিএনপিকে ২৯টা আসন দিয়েছে। এবার বিএনপি বলছে- আওয়ামী লীগ নাকি আগামী নির্বাচনে ১০টি সিটও পাবে না। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, ভোট দেবে জনগণ।

আপনাকে কে উল্টাপাল্টা বলার অধিকার দিয়েছে? তিনি বলেন, একটা অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিকভাকে স্বীকৃত নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আপনাদের যদি জনগণের প্রতি বিশ্বাস থাকে তাহলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন। এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) একে খন্দকার বলেন, অর্থনীতি সঠিক পথেই চলছে। দেশের মানুষ আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো আছে। তিনি বলেন, বিরোধী দল অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে।

তা না হলে দেশ আরো এগিয়ে যেত। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাজেট আলোচনায় বিরোধী দল নেই। তারা বেতনভাতা রক্ষায় সংসদে আসেন। জনগণের কথা বলতে আসেন না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ইতিহাস নিয়ে মিথ্যাচার করছেন।

তার ইতিহাস নিয়ে কথা বলার কোনো অধিকার নেই। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, জিয়াউর রহমান তার অধীনে যুদ্ধ করেছেন। তিনি নির্বাচনের আগে প্রত্যেক সংসদ সদস্যদের অনুকূলে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এই টাকা বরাদ্দ দিলে আমরা আমাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারব। মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, দেশের আইন, থানা ও পুলিশ বিত্তশালীনির্ভর হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য আইন অধরা।

পুলিশ বিত্তের মোহে জড়িয়ে পড়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেদার রাজনীতি করছে। কিন্তু আমরা যারা রাজনীতিবিদ তারা কিছু বলতে পারছি না। জ্বালানি বিষয়ে বলতে গিয়ে জাসদ নেতা বলেন, সরকারের কাছে অনুনয় বিনয় করে বলছি সব জ্বালানি জাতীয় গ্রিডে নিয়ে আসুন। নিজেদের কাছে জ্বালানি রেখে ফকির সাজার মানে হয় না।

সমুদ্রের অপার সম্ভাবনা সত্ত্বেও তা বিদেশি কোম্পানি কনকো-ফিলিপ, চীন কিংবা ভারতের কাছে ছেড়ে না দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কেন রেখে যাচ্ছেন না। আপনারা (সরকার) কেন আন্তর্জাতিক সংঘর্ষের (কনফ্লিক্ট) দিকে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, এদেশের বড় বড় প-িতরা উড়াল সেতু ও পাতাল সেতু নিয়ে হইচই করছে। কিন্তু দেশের ফুটপাত পরিষ্কার করতে পারেন না। দেশের স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের প্রয়োজন নেই।

বৃক্ষ আচ্ছাদিত ফুটপাত তৈরি করুন। বিভিন্ন এলাকায় বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠনের দাবি করে এই মহাজোট নেতা বলেন, বাড়ির মালিকদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। আইন আছে কিন্তু কেউ মানে না। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ তৈরি করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়ন কাজ নিয়ে ভুল তথ্য দিয়েছেন দাবি করে মইন উদ্দিন খান বাদল বলেন, বাজেটে ভুল তথ্য দেয়া ঠিক নয়।

বাজেট বক্তৃতায় ৫৪ পাতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় ৫টি ওভারব্রিজের কাজ চলছে। অথচ চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে মাত্র একটি ওভারব্রিজের কাজ খুব ধীরগতিতে চলছে। ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এদেশে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শক্ত হাতে জঙ্গিবাদ দমন করেছেন। সন্ত্রাস নির্মূল করেছেন।

সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছেন। বিরোধী দল এই বিচার বানচালের অপচেষ্টা করছে। দেশকে পিছিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। বেগম নূর ই হাসনা লিলি চৌধুরী বলেন, দেশকে আরো এগিয়ে নিতে হবে।

অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে হবে। তিনি বলেন, অর্থনীতি সচল থাকলে দেশ সচল থাকবে। শেয়ারবাজারে যা হচ্ছে তা দুঃখজনক। আগামী নির্বাচনে এ জন্য সরকারকে চড়া মাশুল দিতে হবে। জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন বলেন, গার্মেন্ট শিল্প ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে।

শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, প্রেসক্লাব ও পাঁচতারা হোটেলের উঁচু তলাতে বসে বাজেটের কিছুই বোঝা যাবে না। বাজেটকে বুঝতে হলে রংপুর কিংবা নওগাঁও যেতে হবে। তিনি বলেন, বিরোধী দল সংসদ বাদ দিয়ে রাজপথে নেমেছে। আপনারা (বিরোধী দল) রাজপথে থাকুন, ওটাই আপনাদের স্থায়ী ঠিকানা হবে। আর আমরা সংসদে আছি সংসদে থাকতে চাই।

বেবী মওদুদ বলেন, আওয়ামী লীগের বাজেট তো বড় হবেই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ জনগণের কথা ভেবেই বাজেট প্রণয়ন করে। অপরদিকে তারা (বিরোধীদল) ক্ষমতায় থাকতে লুটপাটের বাজেট দিয়েছে। জঙ্গিবাদের সৃষ্টি করেছে। বিরোধী দল বলে মানুষ কষ্টে আছে।

অথচ বাস্তবে দেখি রিকশাওয়ালারাও এখন ভালো আছে। নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। তিনি অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিতে চান, দেন। তবে শতকরা ১০ ভাগ নয়, ৩০/৪০/৫০ ভাগ করারোপ করেন। কথা বলার জন্য করারোপ না করে মোবাইল কোম্পানির ওপর করারোপ করেন।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.