আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! মামুনের বিস্তৃত হাসি দেখে মনে হল ঘটনা কিছু আছে । তা না হলে তো ও আমাকে এই দুপুর বেলা আসতে বলবে না । আমি দরজা দিয়ে না ঢুকেই বললাম
-আন্টি বাসায় নাই ।
টম এন্ড জেরীর টম যখন কোন কিছুতে খুশি হয়ে মাথা দুপাশে নাড়ে, মামুন ঠিক ঐ ভাবে এদিক ওদিক মাথা নাড়লো ।
-তুই বাসায় মেয়ে নিয়ে এসেছিস?
মামুন এবার উপর নিচে মাথা নাড়ল ।
তার মানে নিয়ে এসেছে ।
মামুনের সব কিছু আমার ভাল লাগে কেবল | এই মেয়ে আসক্তিটা আমার ভাল লাগে না মোটেও । সুযোগ পেলেই ও বাসায় মেয়ে নিয়ে আসে । নিজের গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আসলে অন্য কথা ছিল । একেবারে প্রসটিটিউট ।
আমি বললাম
-আমি যাই ।
-আরে শোন না ? মামুন আমার হাট ধরে টান দিল । বলল
-আমি জানি তোর সাথে নিশির প্রবলেম চলছে । এই জন্য তোকে দেকেছি । নিশির উপর রাগটা তুই এই মেয়েটার উপর ঝাড় ।
দেখবি মজা পাবি ।
আমি কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকি মামুনের দিকে । অবাক হই ওর লজিক দেখে ।
মামুন আবার বলে বলে
-আরে একবার দেখ । যদি ভাল না লাগে বাদ ।
আর এই মেয়েটা অন্য গুলার মত না । মেয়েটা একটা কলেজে পড়ে । পেশাদার না । কেবল খরচ চালানোর জন্য এসব করে । দেখ মজা লাগবে ।
মামুন আমাকে প্রায় জোর করেই ঘরে ঢুকিয়ে দিল ।
আমি ঘরে ঢুকে মোটামুটি একটু ধাক্কার মত খেলাম । মেয়েটা খাটের উপর শুয়ে আছে । মোটামুটি বেআবরু অবস্থায় । আমাকে ঘরে ঢুকতে দেখে একটু চমকালো ।
উঠে গিয়ে নিজে কে খানিকটা ঢাকার চেষ্টা করলো ।
হঠাৎ মেয়েটর চোখের সাথে চোখ পড়ল । আমি আবার চমকালাম । মেয়েটার চোখটা কেমন যেন । ঠিক কলগার্লদএর মত না ।
মামুনের সাথে থেকে থেকে আমাকে বেশ কিছু কলগার্ল দেখার সৌভাগ্য হয়েছে । ঐ মেয়ে গুলার চোখ একটুও সুন্দর হয় না । কেমন একটা কুৎসিত ভাব থাকে । দেখলেই কেমন যে করে । কিন্তু এই মেয়েটার চোখ একদম এরকম না ।
কেমন একটা বিষন্ন ভাব আছে । কেমন একটা মোলায়েম ভাব আছে ।
আমি যেভাবে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি, মেয়েটাও ঠিক একই ভাবে তাকিয়ে আছে । মেয়েটা একসময় চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল
-আমি একটু ক্লান্ত । আপনি কি একটু পরে......
আমি ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম ।
ছিঃ কি কাজ করতে যাচ্ছিলাম আমি ???
মামুন বলল
-কি হল মামা? পছন্দ হয় নাই ?
-তুই না আর বদলাবি না । নিজে তো পাপ করবি আামকে দিয়েও পাপ করাবি । এসব কাজ আমাকে দিয়ে হবে না ।
মামুন হাসলো । বলল
-জানিস অপু এই জন্য তোকে আমার এতো পছন্দ ।
আমি জানি তোকে দিয়ে এমন কাজ হবে না । না হলে এমন মাল হাতে কাছে পেয়ে কেউ ছেড়ে দেয় ??
আমি রাস্তার নেমে এলাম । মনটা কেবল বিষন্নই রইল ।
বার বার কেবল ঐ মেয়েটার বিষন্ন চোখ আমার চোখে পড়ল । আহারে বেচারী ।
বেচে থাকার জন্য কত কিছুই না করতে হচ্ছে । কত নোংরা কজ করতে হচ্ছে !
মেয়েটার কথা আমি হয়তো ভুলেই যেতাম কিন্তু মেয়েটার সাথে আমার আবার দেখা হয়ে গেল । আমাদের ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে বসে চা খচ্ছিলাম । মেজাজটা খানিকটা খারাপ ছিল । একটু আগে দেখলাম নিশি এমনের সাথে কোথায় যেন গেল ।
আমি জানি আমাকে জ্বালানোর জন্য ও এমন টা করছে । করুক । এই বার আমি আর ছাড় দিবো না । দেখি জল কত দুর গড়ায় । এমন সময় পেছন থেকে মিষ্টি একটা কন্ঠ বলল
-অপু ভাই, ভাল আছেন ?
আমি তাকিয়ে দেখি মেয়েটা দাড়িয়ে আছে ।
আজ মেয়েটাকে কেমন সুন্দর লাগছে । বলতে গেলে অন্য রকম । সেদিন যে ভাবে দেখিলাম আজ দেখলাম অন্য ভাবে ।
হালকা নীল রংয়ের সেলোয়ার কামিজে মেয়েটাক সুন্দরই লাগছে ।
আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পাছিলাম না ।
মেয়েটি আবার বলল
-ভাল আছেন?
বলে টেবিলের আর একটু কাছে চলে এল ।
-আমি বসবো একটু ?
মেয়েটি আমার অনুমুতির অপেক্ষার দাড়িয়ে রইল ।
-বস । এখানে?
মেয়েটি বসল । বলল
-এই এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম ।
যাওয়ার সময় আপনাকে দেখলাম । মনে হল একটু কথা বলে যাই ! আপনি রাগ করেন নি তো?
-না রাগ করার কি আছে ?
-না, অনেকে আবার রাগ করে । তারা ঠিক আমাকে মানুষ বলে ভাবে না তো । কেবল ভোগ পন্য মনে করে ।
আমি কি বলবো ঠিক বুঝলাম না ।
মেয়েটি আবার বলল
-আপনি ঐদিন চলে যাওয়ায় আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম । প্রথমে ভাবলাম .......
মেয়েটা একটু চুপ করলো । আসলে নোংরা কথা গুলো হয়তো বলতে চাইছিল না । তার পর বলল
-তারপর আপনার বন্ধুর কাছ থেকে আপনার কথা শুনলাম ।
-কি শুনলে?
-শুনলাম যে আপনি খুব ভাল ছেলে ।
কখনও খারাপ কাজ করেন না ।
মেয়েটা চুপ করে গেল । আমিও কোন কথা খুজে পেলাম না । তারপর মনে হল আরে মেয়েটা তো আমার নাম জানে । নিশ্চই মামুন বলেছে ।
কিন্তু মেয়েটার নাম টো জানা হলা না । বললাম
-আরে তোমার নামটাই টো জানা হল না ? কি নাম তোমার?
মেয়েটা কেমন যেন হাসল । বলল
-আজকাল কেউ আর আমার নাম জিজ্ঞেস করে না । অনেকদিন পর আপনি জিজ্ঞেস করলেন । ভাল লাগলো ।
আমার নাম লাবলী । বাবার রবি ঠাকুরের শেষের কবিতা খুব পছন্দ ছিল । তাই আমার নাম রেখেছিল লাবন্য । সেখান থেকে লাবনী । আচ্ছা আমি যাই অপু ভাই ।
ভাল থাকবেন ।
মেয়েটি উঠে পড়ল । যেতে গিয়ে আামর ঘুরে তাকিয়ে বলল
-আপনার মত মানুষ ঢাকা শহরে আছে আামর জানা ছিল না । জেনে ভাল লাগছে যে এই শহরে অন্তত একটা মানুষ আছে, যার কাছে আমি পন্য না । একজান মানুষ !
লাবনী চলে গেল ।
আ্মি মেয়েটা দিকে তাকিয়ে রইলাম । ক্যান্টিনের দরজার কাছে গিয়ে লাবনী ফিরে তাকালো । তারপর হাত নাড়ল ।
তারপর তেকে লাবনীর সাথে আমার প্রায়ই দেখা হতে লাগলো । বেশির ভাগ সময়ই আমাদএর ভার্সিটি আসে পাশে ।
প্রথম প্রথম ভাবলাম হয়তো এমনিতেই দেখা হয়ে যাচ্ছে । কিন্তু পরে বুঝলাম যে মেয়েটা চাচ্ছে যে আমার সাথে তার দেখা হোক । আমি সরাসরি একদিন জানতে চাইলাম ওর কাছে ।
লাবলী কিছুক্ষন চুপ করে থেকে মাথা নেড়ে আমার কথার সম্মতি জানাল । আমি বললাম
-কারন টা বলবে
-না ।
-কেন?
-কারনট আআমি বলতে পারবো না । তবে আপনি যদি না চান তাহলে আমি আর আসবো না ।
-আমি তো এমন কথা বলি নি । কেবল কারনটা জানতে চাইছি ।
-লাবলী কেমন ঝাপছা চোখে আামর দিকে তাকালো ।
ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমার বুকের মধ্যে কমন করে উঠল । এ কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টি ।
আমি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম লাবলীর দিকে !
মেয়েটা তো .......!!
এসব আমি কি ভাবছি !! এটা হতে পারে না । এটাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না । কঠিন কিছু বলতে হবে ।
কিন্তু আমার কিছু বলতে হল না । নিশিকে আসতে দেখলাম ।
নিশির সাথে সমস্যা মিটে গেছে । আমাদের টেবিলের সামনে এসে বলল
-তুমি এখানে?? আর তোমাকে কত জায়গায় খুজলাম । চল আমার সাথে ।
নিশিকে বললাম
-নিশি, এ হচ্ছে লাবনী ।
নিশি লাবনীর দিকে তাকিয়ে হাসলো ।
তারপর লাবনীকে বললাম
-এ নিশি । আমার গার্লফ্রেন্ড ।
লাবনী একটু যেন চমকালো ।
তারপর বলল
-আচ্ছা অপু ভাই আমি তাহলে যাই ।
আামকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে লাবনী উঠেগেল । দরজার কাছে গিয়ে আবার ফিরে তাকাল আমার দিকে । সেই ঘোর লাগানো ঝাপসা দৃষ্টি চোখ । আমার কেন জানি ঐ দৃষ্টিটা বুকে বিধেই রইল ।
ভুলতে পারলাম না কিছুতেই ।
তারপর বেশ কিছুদিন লাবনীর কোন দেখা নাই । মামুনের কাছে খোজ নিলাম । মামুনও কিছু বলতে পারলো না ।
দেখা হল আরো কয়েক দিন পর ।
ঐদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল । আমি রিক্সা নিয়ে হলের দিকে যাচ্ছিলাম । দেখলাম একয়া মেয়ে বড় কড়ই গাছ টার নিচে দারিয়ে আছে একা । কেমন যেন পরিচিত মনে হল । আরো একটু কাছে যেতেই চিনতে পারলাম যে লাবনী ।
আমি ওকে রিক্সার তুলে নিলাম । বললাম
-এখানে কি করছো
-আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম ।
-মানে?
-মানে, আপনাকে কেন জানি খুব দেখতে ইচ্ছা করছিল ।
কথাবার্তার লাইন অন্য দিকে চলে যাচ্ছিল দেখে আমি বললাম
-তোমার কি খবর ?
লাবনি হাসল ।
দুজনেই যেন কেমন চুপ হয়ে গেলাম ।
অনেকক্ষন পর লাবনী বলল
-আপনাকে কাছে একটা জিনিস চাইবো অপু ভাই?
-কি?
-আমার হাতটা একটু ধরবেন ? মাত্র একটাবার !
লাবনীর কন্ঠে কি ছিল আমমি জানি না । কিন্তু আমি ওর হাতটা ধরলাম।
লাবনী হু হু করে কেঁদে দিল । কাঁদতে কাঁদতেই বলল
-আমার জীবনে কেবল এই একটি স্বপ্নই ছিল । একটা মানুষ থাকবে যে আমাকে ভালবাসবে ।
প্রান দিয়ে ভালবাসবে । কিন্তু এমন কেউ আামর জন্য তৈরি হয় নি । আামর মত মানুষ দের জন্য এমন কেউ থাকে না ।
খনিকক্ষন চুপ করে থেকে আবার বলল
-অপু, আমার দেহের সব কিছুই কেমন অপবিত্র হয়ে গেছে । কিন্তু আমি এখনও আমার ঠোট দিয়ে কাউকে চুম খাইনি ।
কাউ কে না !
লাবনী কি বলতে চাইল আমি ঠিক বুঝতে পারলাম ।
কিন্তু সব কিছু প্রশ্রয় দেওয়ার কোন মানে হয় না । মেয়েটি একটি কলগার্ল । সোজা বাংলায়.......। কথাটা মনে আসতেই মনে হল আমি কি করছি ? কেন করছি ?
একটা পতিতার সাথে বসে আছি ।
একই রিক্সায় চড়তেছি !!
আমি আমার হাত লাবনীর হাত থেকে সরিয়ে নিলাম ।
চারিদিকে বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে । পর্দা দিয়েও পানি আটকানো যাচ্ছে না । দুজনেই ভিজে গিয়েছি । লাবনীর পুরো মুখ দিয়ে পানি ঝরছে ।
কিন্তু তবুও আমি ওর চোখে পানি ঠিকই চিনতে পারলাম ।
লাবনী আর থাকলো না । বৃষ্টির মধ্যেই নেমে গেল ।
আমার কেন জানি কষ্ট হতে লাগল মেয়েটার জন্য । একজন কলগার্লের জন্য আমার কষ্ট হতে লাগল .....।
আশ্চর্য......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।