বিশ্বটাকে সুন্দর করে সাজানোর জন্যই এত কথা বলি.. । আমাদের দেশের অধিকাংশ আইন এসেছে ব্রিটিশ আইন থেকে। অশ্লীলতার আইন তার ব্যতিক্রম নয়। ১৭১৭ সালের আগে ইংল্যাণ্ডে অশ্লীলতার বিচার হত ধর্মীয় আদালতে। কোনো বই অশ্লীল - সেটা ঠিক করতো ইংল্যাণ্ডের চার্চ।
১৭১৭ সাল থেকে স্থির হয় যে অশ্লীলতার বিচার হবে সাধারণ আদালতে। ১৮৬৮ সালে হিকলিনস মামলায় অশ্লীলতার যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, মোটামুটি ভাবে তারই উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে অশ্লীলতা আইনগুলি রচিত।
অশ্লীলতা বলতে আমরা কি বুঝি-
শ্লীলতা অশ্লীলতা অনেকটাই ব্যক্তি-নির্ভর। একজনের কাছে যা অশ্লীল, আরেকজনের কাছে তা নাও হতে পারে। এবং আইন অনুযায়ী এর সঠিক সংজ্ঞা পাওয়া যায় না।
কামপ্রবৃত্তিকে আকৃষ্ট করে, অথবা যার ফল, যদি সামগ্রিক ভাবে বিচার করা যায়, লোকের মনকে কলুষিত (deprave) ও নৈতিক ভাবে অধঃপাতিত (corrupt) করতে পারে - সেটি হবে দণ্ডনীয় অপরাধ।
বাংলা একাডেমির অভিধান থেকে অশ্লীলতার সংজ্ঞায় বলা হয়, কুৎসিত, জগন্য। কুরুযিপূর্ণ কোন কিছু।
বাংলাদেশ পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ধারা ২৯২ এ বলা হয়েছে-
কোনো অশ্লীল বই, পুস্তিকা, কাগজ, অঙ্কন, ছবি, মূর্তি বা অন্য কোনো অশ্লীল জিনিস বিক্রি, ভাড়া দেওয়া, প্রদর্শন বা বিতরণ করার উদ্দেশ্যে বানানো; অথবা উপরোক্ত অশ্লীল জিনিসগুলি বিক্রি, ভাড়া দেওয়া, বিতরণ বা প্রদর্শন করা, অথবা সেগুলি নিজের কাছে রাখা হল দণ্ডনীয় অপরাধ।
উপরোক্ত যে কোনো উদ্দেশ্যে কোনো অশ্লীল বস্তু আমদানী বা রপ্তানী করা; নিজের সে উদ্দেশ্য না থাকলেও সেই উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহৃত হতে পারে যদি জানা থাকে - সেটাও দণ্ডনীয় অপরাধ।
নিজের জ্ঞাতসারে অশ্লীল বস্তু সংক্রান্ত ব্যবসায় অংশ নিলে বা সেই ব্যবসার লভ্যাংশ গ্রহণ করলে - সেটিও হবে দণ্ডনীয়।
এই ধারা অনুসারে অবৈধ কোনো কাজে যুক্ত লোকের খবর কাউকে জানালে বা তার জন্য বিজ্ঞাপন দিলে - সেটাও অপরাধ বলে গণ্য করা হবে।
তবে আইনে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে, প্রকৃতই ধর্মীয় উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত বা ব্যবহৃত কোন পুস্তক বা লেখা বা চিত্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
সাধারণ ভাবে বলতে পারি, যা মনকে দূষিত করে তা অশ্লীল। বিতর্কিত পুস্তক বা প্রকাশ যাদের হাতে পড়ার কথা তারা যদি এমন বয়সের বা অবস্থায় হয় যে, তাদের মন উত্তেজনাকর কোন কিছুর প্রভাবে হঠাৎ আকৃষ্ট হয় এবং উক্ত পুস্তক বা প্রকাশনার মধ্যে যদি এমন কিছু থাকে যা উক্ত মনগুলিকে নিচের দিকে টানে বা দূষিত করে তোলে, তবে তা অশ্লীল বলে গণ্য হবে।
বাংলাদেশ দন্ডবিধি,১৮৬০ এর ধারা-২৯২,২৯৩,২৯৪ অনুযায়ী
অশ্লীল পুস্তক, চিত্রকর্ম বিক্রয় তথা,অল্প বয়স্ক ব্যক্তির নিকট বিক্রয় সহ অশ্লীল গান ও কার্য্য দন্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত হবে আমাদের দেশে।
তবে গানে অশ্লীলতা হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য সম্পূর্ণ গানটি বিবেচনায় আনতে হবে।
একই সাথে দন্ডবিধির ৫০৯ ধারায় বলা আছে, কোন নারীর শালীনতার অমর্যাদার অভিপ্রায়ে কোন মন্তব্য, অঙ্গভঙ্গি বা কাজ দন্ডনীয় অপরাধ। যাকে আমরা ইভটিজিং বলে থাকি।
অশ্লীলতা নতুন ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যম বা সাইবার স্পেসের মাধ্যমে।
বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সালে পাশে করেছে তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইন।
'ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অশ্লিল বা নোংড়া কোন কিছু প্রকাশ বা সংযুক্তি করলে, যার মাধ্যমে কোন ধর্মীয় অনুভুতি ও সমাজে আঘাত করে বা কোন ব্যক্তির ক্ষতি সাধনের ঝোঁক পাকায় বা দুর্নীতির স্বীকার হয় সেই প্রকাশনি দেখানো, শোনানো বা পড়ানোর মাধ্যমে যা অপরাধ বলে গণ্য হবে। ''
যার সবোর্চ্চ শাস্তি ১০ বছর কারাদন্ড ও ১ কোটি টাকা জরিমানা।
-আইসিটি আইন,২০০৬ ধারা৫৭(১,২)অনুযায়ী।
স্থানকাল পাত্র ভেদে শ্লীল-অশ্লীল তারতম্য হয়।
তারতম্য বা শ্রেণীভাগ যা-ই থাক অশ্লীলতার সামাজিক ক্ষতি নিয়ে কোনো মতপার্থক্য নেই। অশ্লীলতা বলতে সরকারের নীতিনির্ধারকরা বাণিজ্যিক উদ্দেশে তৈরি অশ্লীল সংলাপ, প্রকাশনা, নৃত্য, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন চলচ্চিত্র বা ভিডিওচিত্র বা স্থিরচিত্রকে চিহ্নিত করেছেন। সেই অনুযায়ী পর্নগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১১ করা হয়েছে। সেই সাথে নৈতিক শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে সমাজ থেকে নোংড়া সব কিছু নিমূল করা উচিত।
সিনেমা বা টিভি পর্দায় অশ্লীলতা রোধে সরকার সিনেমাটোগ্রাফী আইনের কথা ভাবতে পারে।
তবে সব কিছুর আগে বিদ্যমান আইনের সঠিক বাস্তবায়ন প্রয়োজন। একের পর এক আইন করা হয়কিন্তু তা শুধু মৃত আইনের পাল্লা ভারী করছে। বিদ্যমান আইনের সঠিক প্রয়োগ পারে এই সামাজিক নৈতিক অবক্ষয় রোধে অবদান রাখতে।
আমাদের দেশে নারীকে পণ্য হিসেবে অনেক বিজ্ঞাপন ও মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়। যাতে নারী-পুরুষের সমতা নারীদের নিজ হাতে লুন্ঠিত হয়।
ও তাদের অশ্লীল ভাবে উপস্থাপন করা হয়।
তা রোধে করা যেতে পারে- নারীর অশোভন উপস্থাপন (নিরোধ) আইন।
সর্বোপরি সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষা পারে এই ধরনের সামাজিক অপরাধ তথা অন্যায় থেকে দুরে রাখতে। কারণ এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তরুণ ও শিশুরা।
তথ্য সংগ্রহ-
১. বাংলা অভিধান।
২. দন্ডবিধি, ১৮৬০
৩. আইসিটি আইন, ২০০৬ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।