আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবির জন্মদিন ও প্রজাপতির ডানা / টোকন ঠাকুর

কবির জন্মদিন ও প্রজাপতির ডানা টোকন ঠাকুর ‘শরীর ও মনের উপর চাপ না দিয়ে যতটুকু লেখা যায়, ততটুকুই লেখো’ এই কথা বললেন নির্মলেন্দু গুণ। অবশ্য লেখার মূল প্ররোচক ফারুক আহমেদ। ফারুকের বক্তব্য, ‘গুণ দা ৬৮ তে পা দিচ্ছেন, একটা গদ্য লেখা দেন। ’ বললাম, ‘ঠিকাছে। ’ ফারুক তখন গুণ দা’র কামরাঙ্গীর বাসায়।

ফ‍ারুকের ফোন গেল গুণ দা’র হাতে। গুণ দা বললেন, ‘শোনো, বেশি বড় লেখা দিও না। শরীর ও মনের উপর চাপ না দিয়ে যতটুকু লেখা যায়, লিখতে পারো। ’ এই হচ্ছে বৃত্তান্ত। কবি নির্লেন্দু গুণ ৬৮-তে প‍া দিচ্ছেন।

কিন্তু যদি ৬৮ সংখ্যাটি উল্টে গিয়ে ভুল করে ছাপা হয়, তাহলে এবছরই গুণ দার বয়স হবে ৮৬। ছিয়াশি? বাংলাদেশের আধুনিক কবিদের ভুবনে সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণ। নির্মলেন্দু গুণের জীবন এক মিথ। নানান মানুষের মুখে মুখে গল্প হয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়ায় কবির জীবনী। গুণদার কবিত‍াও মুখস্ত হাজার মানুষের মস্তিষ্কে।

যেমন বিপ্লবের সপক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি কবিতা লিখেছেন, লিখেছেন প্রেমের প্রতি পক্ষপাত দেখিয়েও। বিরহও তাকে কাবু করেছে ভয়ানক। শোষণপীড়িত সমাজ ভেঙে, আরেকটু উন্নত সমাজ বাস্তবতার আকাঙ্খা নেতৃত্ব দিয়েছে তার কবিতাকে। তার কবিতা নারীর কাছে নত হতে চেয়েছে, হয়েছেও। সেই কবি, নির্মলেন্দু গুণ পা দিচ্ছেন ৬৮-তে।

তবে পা ৬৮-তে দিলেও, মন ‍দিয়ে রেখেছেন তরুণ কবির চরিত্রে, এটা তার সাফল্য। সাফল্য কে না ভালোবাসে? বাংলা ভাষার সীমানা যতদূর বিস্তৃত আজ, কবি নির্মলেন্দু গুণ সেই বিস্তৃতিও ডিঙিয়ে গিয়েছেন। অন্য ভাষাতেও তার কবিতা অনূদিত। তার মন অনূদিত। তার শরীর অনূদিত।

সত্যি কি পুরুষ কবির মন-শরীর অনুবাদযোগ্য? আমি মনে করি, অনুবাদকদের তুলনায় এই প্রশ্নের যথার্থ উত্তর জানে নারী। কোন নারী? সে উত্তর জানেন শুধু কবি। কবির সঙ্গে দেখা হলেই প্রশ্নিব তাকে। কিন্তু কবে, কোথায়, কখন দেখা হবে নির্মলেন্দু গুণের সাথে? গত বেশ কয়েকবছর ধরে গুণ দা’র সঙ্গে আমার প্রায় প্রত্যেকদিনই দেখা হচ্ছে, আড্ডা হচ্ছে, গল্প-সল্প হচ্ছে। কিন্তু দিনে দেখা হচ্ছে না।

দেখা হচ্ছে রাত ৯টা ১০টার পর, ঢাকার হাতিরপুল-কাঁটাবন এলাকায়। দিনে ঘরেই থাকি, আমি ঘর থেকে বের হই রাতে, ৮/৯ টার পর। সেসময় গুণ দাও আসেন। হাস্যলাস্র আড্ড‍া হয়। রাত ১১ বা ১২ টার দিকে গুণ দা চলে যান।

আমিও বাসায় ফিরি। এভাবেই চলছে, গত কয়েকবছর। গুণ দাকে উৎসর্গ করেছি আমার কবিতার বই ‘তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ’ গুণ দার একটা বইয়েরও উৎসর্গ পত্রে ছাপা হয়েছে আমার নাম। সম্ভবত, পরস্পর একটা বন্ধুত্ব ফিল করি।

বর্ষীয়ান, শ্রদ্ধাভাজন এই কবির সঙ্গে রচিত বন্ধুত্ব আমি বয়ে নিয়ে যাব, এ অভিপ্রায় আমার। কারণ, গুণদার সঙ্গ মারাত্মক ভালো লাগে। ভালো লাগ‍া কে না পেতে চায়? একদা আমিই তো কবি নির্মলেন্দু গুণের একটার পর একটা কবিতার বই গিলে খেয়েছি। সেই ঝিনাইদহে বসে, খুলনায় বসে, যশোরে বসে এবং ঢাকাতে এসেও। কিছুদিন আগে আমি একটা লিফট দুর্ঘটনায় পড়েছিলাম।

এক বিল্ডিংয়ের পাঁচতলা থেকে লিফট ছিঁড়ে পড়ল পাতালে। তারপর আমি হাসপাতালে। হাসপাতাল থেকে সিকি শতাংশ সাময়িক পঙ্গু দশায় আমাকে কারা যেন ‍নিয়ে গেল এক গার্হস্থ্য স্যানাটোরিয়ামে। সেখানে শুশ্রুষার খবরদারিতে ব্যস্ত এক নার্স। সেই অবস্থায় গুণ দার সাথে ফোনালাপ হল।

গুণ দা সম্ভবত তখন একটি অনুষ্ঠানে ফরিদপুর বা রাজবাড়িতে অবস্থান করছেন। লিফট ছিঁড়ে পড়ে আমার পঙ্গু দশার বিবরণ শুনে কবি বললেন, ‘তোমার দিকে নার্সের মনোযোগ কী পরিমাণ?’ ‘মনে হচ্ছে পঁচাশিভাগ। ’ গুণ দা বললেন, ‘হাঁটতে পারতেছ?’ ‘নার্সের সহযোগিতায় পারতিছি, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ’ ‘তাহলে আরো কিছুদিন সেবাযত্ন নাও, পারলে সহজে ভালো হয়ো না। দরকার হলে তোমার ভাঙা পা ভালো হয়ে গেলেও, ল্যাঙচায়ে ল্যাঙচায়ে হাঁটবা।

যুবতী নার্স যেহেতু যত্নবতী, হুট করে ভালো হবার দরকার কি?’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাকে ভালো হতেই হলো। নার্সের ছায়া থেকে বেরুতে হলো। এদিকে আমাদের বন্ধু মৃগাঙ্ক সিংহ থেকে ‍দীর্ঘদিন প্রবাসী। কখনো নিউইয়র্ক, কখনো প‌্যারিস। মৃগাঙ্ক গুণ দা’র মহাভক্ত।

একবার, হয়তো ২০০২ এর দিকে, মৃগাঙ্ক ঢাকায় ফিরে বলল, দূরদেশে বসে লেখা ওর কবিতাগুলো ‍দিয়ে একটা বই প্রকাশ করবে। মৃগাঙ্ক প্রবাসী হবার আগে যখন ঢাকায় ছিল, গল্প লিখত। গল্পের বইও বেরিয়েছিল ২/৩টা। এবার কবিতা! আর কবিতার বইয়ের নামই হচ্ছে, ‘নির্মলেন্দু গুণ। ’ আমাকে সেই ‘নির্মলেন্দু গুণ’বইয়ের ভূমিকা লিখে দেবার অনুরোধ করল মৃগাঙ্ক।

১০ লাইনের ভূমিকা। বইয়ের ব্যাক কভারে ‘নির্মলেন্দু গুণ’ শীর্ষক সে-ভূমিকা ছাপা হলো। বইটির প্রচ্ছদ করেছিলেন শিল্পী মাসুক হেলাল। তবে ১০ লাইনের ভূমিকা লেখার জন্য মৃগাঙ্ক আমকে দিল দশ হাজার টাকা, ইউএস থেকে আনা ঘোলাপানিভর্তি একটা কাচের বোতল এবং ২০০১-এর বার্ষিক প্লেবয় বর্ষপূর্তির সংখ্যা। প্লেবয় ঐ সংখ্যার মূল্য ছিল ১০০ ডলার।

যাই হোক, ‘নির্মলেন্দু গুণ’ নামের কবিতার বইটি বেরিয়ে গেল। এখন দরকার বইটির প্রকাশনা উৎসব। কথা হচ্ছে, কোথায়, কখন, কারা কারা মিলে করবে এই উৎসব? সংকট উত্তরণে আমার প্রস্তাব গৃহীত হলো। যেহেতু মৃগাঙ্কের কবিতার বইয়ের নাম ‘নির্মলেন্দু গুণ’ তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, বইটার প্রকাশনা উৎসব হবে নির্মলেন্দু গুণের প্রথম তারুণ্যের কবিবন্ধু আবুল হাসানের বাসায়। শুনেছি এবং পুস্তকে পড়েছি আবুল হাসান আর নির্মলেন্দু গুণ ছিলেন বিশশতকের মধ্যসত্তুর দশকের শহর ঢাকার বোহেমিয়ান দ্য গ্রেট।

কিন্তু ২০০২ সালে এসে আমরা আবুল হাসানের বাসা খুঁজে না পেয়ে একরাতে চলে গেলাম বনানী কবরস্থানে। এক কপি ‘নির্মলেন্দু গুণ’, ঐ সেই ইউএস থেকে আনা ঘোলাপানির কাচের বোতল, পর্যাপ্ত সিগারেট, ম্যাচবাক্সসহ আমরা চার বন্ধু রাত ২টার দিকে গিয়ে পৌঁছুলাম বনানীর কবরস্থানের গেটে। মৃগাঙ্ক সিংহ, মারজুক রাসেল, আলফ্রেড খোকন আর আমিসহ ৪ জন যখন কবরস্থানের গেটম্যানকে বলি, ‘দরজা খুলে দেন। ’ কবরগাহের দারোয়ান বলেন, ‘এতরাতে কবর জিয়ারত করবেন? কার কবর?’ আমরা বলেছি ‘বন্ধুর কবর’। কবরস্থানের নৈশপ্রররহরীর মন সদয় হয়।

আমরা ঢুকে পড়ি বনানীর মৃত মানুষের মহল্লায়। রাতের নিরবতায় শুনশান কবরপাড়া। আমরা ৪ জন আর ঐ নৈশপ্রহরী ছাড়া জীবিত কেউ নেই বনানীতে। খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে যাই তরূণ কবি আবুল হাসানের কবর। হাসান মাত্র ২৮ বছর বেঁচে ছিলেন।

১৯৭৫ এর ২৬ নভেম্বর মারা যান ঢাকার পিজি হাসপাতালে। হাসান গুণ দা’র বন্ধু। আবুল হাসান আমাদেরও বন্ধু। তাই আমরা ৪ বন্ধু হাসানের কবরের মধ্যে গিয়ে বসি। যৎসামান্য চাঁদের আলো আর কবরখানার নিয়ন আলোয় আমরা ৪ জন ‘নির্মলেন্দু গুণ’ কাব্যগ্রন্থ থেকে ১টি করে কবিতা পড়ি কবরের মাটিতে বসে।

প্রকাশনা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা এভাবেই শুরু, একই সঙ্গে সেই মার্কিন বোতলের ছিপি খোলা হয়। তখন ঢাকায় সদ্য মোবাইল ফোন আমাদের হাতে পৌঁছেছে। আমার ফোন থেকে রাত সেই রাত সাড়ে তিনটায়, মৃত্যুর ২৭ বছর পর আবুল হাসানের কবরের মধ্যে বসে ফোন দিলাম গুণ দা’কে। গুণ দা তখন থাকতেন আজিমপুরে। সেখানেও আছে এক মস্ত কবরখানা।

গুণ দা থাকতেন কবরখানার পাশে। গুণ দা’র ঘুমভাঙা কণ্ঠস্বর শুনতে পাই, ‘হ্যালো?’ ‘গুণ দা, আমি টোকন। মৃগাঙ্ক, মারজুক, আর খোকনও আছে। ’ ‘কোথায় তোমরা, এতরাতে?’ ‘আমরা বনানীতে। আবুল হাসানের কবরের উপর।

নির্মলেন্দু গুণের প্রকাশনা উৎসব করতিছি। গুণ দা ঘুম জড়ানো কণ্ঠস্বরে কথা বলছিলেন তখন, ‘তা করো। কিন্তু আমারে এতরাতে ঘুম ভাঙাইলা ক্যান?’ বলেছি, ‘গুণ দা, মৃগাঙ্ক যে পানি আনছে, আমার‍া সে পানি খাচ্ছি। আপনারে দলে পাইলে ভালো হতো। ’ গুণ দা বললেন, ‘আমি এখন আজিমপুর থেকে বনানী যাব কিভাবে, এতরাতে?’ ‘আচ্ছা, দেখতিছি।

’ বলেই ফোন কেটে দিয়ে ম‍ৃগাঙ্ককে বললাম, ‘মৃগাঙ্ক, তুমি তোমার গাড়ি নিয়ে এখন আজিমপুরে যাও। গুণ দা’রে নিয়ে আসো। পূর্ণ হোক বাসনা। ’ মৃগাঙ্ক হাসানের কবরের মধ্যে তখন প্রায় শুয়ে পড়েছে। বলল, ‘আমি এখন গাড়ি চালাতে পারব না।

’ আসলে আমরা তখন আমেরিকান পানির সঙ্গে বাংলাদেশি পানি না মিশিয়েই চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এক্কেবারে র’। সো, সবারই ধরে বসেছে। ধরেছেন হাসান, ধরেছেন গুণ। ধরেছে বাংলা কবিতা।

হাসানের কবর দেয়া হয়েছে ১৯৭৫ এ। আর আমরা ২০০২ তে বসে আছি সেই চার দেয়ালে বাঁধানো কবরের মধ্যে। তাছাড়া জীবিত হাসানকে তো আমারা ৪ বন্ধু কেউ-ই দেখিনি। তাই একটা প্রকাশনা উৎসবের উপলক্ষকে কেন্দ্র করে রাতের বেলায় আবুল হাসানকে দেখতে আসা। ধীরে, রাত প্রায় ভোর।

কবররখানার নৈশপ্রহরী এসে দাঁড়ান, বলেন ‘জিয়ারত কি শেষ?’ বলেছি, ‘শেষ। ’ কিন্তু সহজে শেষ হয় না। শুরু বা শেষ শুধু উপলক্ষ এনে দেয়। উপলক্ষও সহজে আসে না, আবার উপলক্ষ এসে বসে থাকে। টোকা মারে দরজায়।

খোঁচা মারে মনে। ওহ! উপলক্ষ কী সুইট! উপলক্ষের বাতাবরণে কত কিছু হয়ে যায়। এই যে আজ কবি নির্মলেন্দু গুণের জন্মদিন, এটাও একটা উপলক্ষ। এ উপলক্ষেই মনে করা গেল হারিয়ে যাওয়া একটি রাত, কাচের বোতল, ঘোলা পানি, বন্ধুত্বের জোশ উন্মাদনা। গত মার্চের ২৭ তারিখে রাজশাহীতে দেখা পেলাম নির্মলেন্দু গুণের।

রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার কবি আসাদ মান্নানের আমন্ত্রণে ঢাকা থেকে আরও অনেকে গিয়েছিলেন। সৈয়দ শামসুল হক, আবুবকর সিদ্দিক, অসীম সাহা, হায়াৎ সাইফ, মাকিদ হায়দার, নাসির আহমেদ, শিহাব সরকারসহ আরো বেশ কজন। রাজশাহী সার্কিট হাউজে ছিলাম আমরা। অনুষ্ঠান শেষে সবাই ২৭ মার্চ রাতেই ঢাকা চলে এলেন। থেকে গেলাম আমি আর গুণ দা।

আমরা রাজশাহীতে থেকে এসেছি আরো ত্রিশ ঘণ্টা বেশি । কেন থেকে গেছিলাম গুণ দা আর আমি? সে বড় মনোস্তাত্বিক, সে বড় মনোজাগতিক। সে বড় অন্তর্গত-রক্তাক্ত অধ্যায়। পরদিন দুপুরে, সরকারের অতিরিক্ত সচিব কবি আসাদ মান্নানের বাসায় যখন আমলাতন্ত্রের রান্নাবান্না খাচ্ছিলাম, গুণ দা বললেন, ‘রাজশাহীতে এক ধরনের মিষ্টি আছে। এখনো কি পাওয়া যায়?’ সেখানে উপস্থিত রাজশাহীর সর্বজন শ্রদ্ধেয় কবি রুহুল আমিন প্রামাণিক বললেন, ‘কোন জাতীয়?’ গুণ দা বললেন, ‘নারী জাতীয়।

’ হয়তো তা 'নারী জাতীয়' ধ্বনিমাত্র, আদতে 'নীরা জাতীয়'। আমরা বুঝলাম, সেই মিষ্টিতে বেদনা আছে। বিরহ আছে। ব্যথা আছে। ফলে, দীর্ঘ পঁচিশ বছর পর নির্মলেন্দু গুণ রাজশাহীতে এসেছেন।

আমরা স্মরণ করতে পারি, নীরা লাহিড়ীর পৈতৃক ভিটা এই রাজশাহীতেই এবং বিগত, দীর্ঘ পঁচিশ বছরে নির্মলেন্দু গুণ দীর্ঘ একা থেকে আরো একা হয়ে উঠেছেন, নীরাহীন। ঠিক, নারীহীন কী? প্রশ্নে প্রশ্ন বাড়ে, উত্তরও বাড়ে। যাক গে। সে-সব অন্য গল্প। আজ জন্মদিনের আসরে সে-সব নাই বা তুললাম।

কী লাভ, কবির ভাষায়, বেদনা, হৃদয় খুঁড়ে? অথচ এক প্রজাপতি তার ডানায় আমাকে আঘাত করেছে গতকালই, মানে ২৭ মার্চ, ২০১২, রাজশাহী সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণের পুষ্পকাননে। সেই প্রজাপতির প্রচুর ফটোগ্রাফি করেছি সেদিন আমি। গুণ দাও ছবি তুলেছেন। সভ্যতার আড়ালে-আবডালে সেই প্রজাপতিকে আমি খুঁজে ফিরছি। কিছুতেই বিস্মরণে যায় না সে।

ঢাকায় ফিরে তাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখে ছেপে দিয়েছি প্রথম আলোতে। যথারীতি সেই কবিতার মধ্যেও ঢুকে পড়েছেন কবি, বারহাট্টার কাশবন নিকেতনের রবীন্দ্রনাথ তথা নির্মলেন্দু গুণ। এখন মাঝেমধ্যেই গুণ দা’র সঙ্গে আমার শলাপরামর্শ হচ্ছে, কিভাবে খুঁজে পাব সেই প্রজাপতিকে, যার ডানার আঘাতে আমি আঘাতপ্রাপ্ত! যার ডানার রঙে আমি আরক্তিম, বিভোর! গুণ দাও আমাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন, কারণ, গুণ দা ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন। বোঝারই কথা। কবি তো।

ঈশ্বর! ঈশ্বর না বুঝলে কেমনে হবে?প্রজাপতি, আমি বিস্মরণে যাইনি তোমাকে। প্রজাপতি, আমি দেখেছি, পড়েছি, তোমার চোখ। তোমার চোখে তুমুল আগুন, তোমার চোখে পদ্মাশহর কাঁপিয়ে দেওয়া রোদ-পদ্য লেখা, সেই পদ্য পড়েই আমি খুন_ আমাকে দেখেই ধরে ফেলেছেন নির্মলেন্দু গুণ... কবির জন্মদিন। এটা উপলক্ষ। এই উপলক্ষের বাতাবরণে বলি, ও কিশোরী প্রজাপতি, তোমাকে আমার ভালোবাসা দিচ্ছি।

তুমি যেখানেই থাকো, আজ যতদূরেই থাকো, জেগে থাকো। তুমি জেগে থাকবে এই জন্যে যে, আমার ছন্নছাড়া মনের সব সমুদ্র, সমস্ত সুবাতাস বরাদ্দ করেছি তোমার জন্যে। প্রজাপতি, তুমি আমার ভালোবাসা নাও। আমাকে একটু হালকা হতে দাও। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম /২১ জুন, ২০১২ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.