সম্ভবতএটাই শেষ পর্ব। তবে আপনারা চাইলে বা সুযোগ হলে আরো জোক্স পাবেন।
১।
কমুনিস্ট প্রোডাকশান কি এতই খারাপ!
দেশলাই ফ্যাক্টরির ডিরেক্টর বিশেষ পুরস্কার পেলেন । কারণটা কি ? কারণ হল প্রতিবিপ্লবীরা সামরিক বিমান বন্দরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিতে চেয়েছিল ।
তাদের কাছে ছিল ওই ফ্যাক্টরির দেশলাই । অনেক চেষ্টা করেও তারা সেই দেশলাই দিয়ে আগুন জ্বালাতে পারেনি !
২।
যৌথ খামার পরিদর্শনে বেরিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ক্রুশ্চেভ । ইচ্ছে খামারের অন্দরমহলটা নিজের চোখে দেখবেন । তাই বিশাল নিরাপত্তা বাহিনীকে বাইরে রেখে খামরের এক কর্মীর সঙ্গে ঘুরে ঘুরে দেখছেন ।
হঠাৎ ম্যানহোলের মুখ খোলা এক সার পচানোর গর্তে পড়ে গেলেন তিনি । খামারের কর্মী কোনও রকমে তাঁকে টেনে তুললেন । মোটামুটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ক্রুশ্চেভ সেই কর্মীকে চুপিচুপি বললেন:
-- দ্যাখো, আমি যে গর্তে পড়ে গিয়েছিলাম, সেটা কাউকে বোলো না । দারুন লজ্জার ব্যাপার হবে সেটা ।
-- তা বলব না কমরেড ক্রুশ্চেভ ।
কিন্তু আপনিও ভুলেও কাউকে বলবেন না যে আমিই আপনাকে গর্ত থেকে তুলে বাঁচিয়েছি । তাহলে, আমাকে আর আস্ত রাখবে না কেউ !
৩।
টিওডর ড্রাইজার ছিলেন সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী আমেরিকান লেখক । জিনিয়াস, টাইটান, ফিন্যান্সিস্ট, আমেরিকা ট্রাজেডি ইত্যাদি বেশ কয়েকটি বই তিনি লিখেছিলেন । সোভিয়েত ইউনিয়নে তাঁর প্রায় সব বই-ই অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল ।
তাঁর সম্পর্কে রসিকতা করে বলা হয় :
প্রশ্ন : টিওডর ড্রাইজার কী করে কমিউনিস্ট হলেন ?
উত্তর : তিনি প্রথমে হতে চেয়েছিলেন জিনিয়াস, কিন্তু তত মগজ ছিল না তাঁর মাথায় ; পরে তিনি হতে চাইলেন টাইটান, কিন্তু তাঁর শরীরে ছিল না তত শক্তি, ভাবলেন ফিন্যান্সিস্ট হবেন, কিন্তু টাকায় কুলোল না ; পরে তাঁর জীবনে ঘটল আমেরিকান ট্রাজেডি , ফলে তিনি হয়ে গেলেন কমিউনিস্ট !
৪।
ইতিহাস প্রসিদ্ধ আলেকজান্ডার, জুলিয়াস সিজার এবং নেপোলিয়ন মস্কোর রেড স্কোয়ারে দেখছেন সোভিয়েত সশস্ত্র বাহিনীর শোভাযাত্রা ।
আলেকজান্ডার বললেন :
-- এরকম সোভিয়েত ট্যাঙ্ক আমার থাকলে কেউ দাঁড়াতেই পারত না গ্রিক বাহিনীর সামনে ।
জুলিয়াস সিজার বললেন :
--আমার কাছে সোভিয়েত বোমারু বিমান থাকলে গোটা দুনিয়া জয় করে নিতাম আমি ।
-- আর আমার কাছে যদি একটি পত্রিকা থাকত প্রাভদার মতো , বললেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, তাহলে ওয়াটারলুতে আমার পরাজয়ের কথা বিশ্ব আজও জানতে পারত না ।
৫।
রাজনৈতিক প্রোপাগন্ডার সমাবেশ । আবেগমথিত কন্ঠে বক্তা আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন :
-- কমরেড, সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা নিউট্রন বোমা মেরে আমাদের উড়িয়ে দেবে বলে হুমকি দিচ্ছে । কমরেড, আপনারা জানেন, নিউট্রন বোমা বিস্ফোরিত হলে সব মানুষ মারা যাবে, কিন্তু আস্ত থাকবে ঘরবাড়ি, দোকানপাট - বাকি সব কিছুই । তাই, কমরেড....
শ্রোতাদের মধ্য থেকে একজন উঠে চেঁচিয়ে প্রশ্ন করলেন :
-- কিন্তু কমরেড আপনি কি বলতে পারেন, আমাদের দেশে ঠিক কোন ধরনের বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে, যার ফলে আমরা সবাই আস্ত আছি, অথচ দোকানপাট থেকে সব কিছু উধাও ?
৬।
বুড়ো বলশেভিক বলছেন সমবয়সী প্রতিবেশীকে :
কমিউনিজম পর্যন্ত আমরা বেঁচে থাকতে পারব না । কিন্তু দুঃখ হয় ছেলে-মেয়ে, নাতি নাতনিদের জন্য !
৭।
সোভিয়েত দেশ ছেড়ে আমেরিকায় গিয়ে বসবাস করছিলেন এক ভদ্রলোক । সেখানে জমজমাট ব্যবসা করে একদিন রীতিমতো কোটিপতি হয়ে গেলেন তিনি । বয়সও হয়েছিল ।
দুঃখের বিষয়, আমেরিকা যাওয়ার সময় তাঁর পরিবারের সকলকে নিয়ে যেতে পারেননি । বিশষ করে ছোট নাতির জন্য তাঁর মন কেমন করত । ইতিমধ্যে ছোট শিশুটি যুবক হয়েছে । বৃদ্ধ কোটিপতি চিঠি লিখলেন নাতিকে -- যেভাবে পারো এখানে চলে এসো । এখানে আমাকে দেখাশোনা করার কেউ নেই ।
শরীরও বেশ খারাপ । তাছাড়া কোটি কোটি ডলারের এত বড় সম্পত্তির ভার তো তোমাকেই নিতে হবে, ইত্যাদি ।
যথারীতি কেজিবির হাতে পড়ল সেই চিঠি । নাতির ডাক পড়ল কেজিবি অফিসে । বাঘা অফিসাররা নাতিকে বললেন, ‘আপনার দাদুকে চিঠি লিখে বলে দিন ব্যবসাপত্র গুটিয়ে টাকা-পয়সা সব এখানকার ব্যাঙ্কে ট্রান্সফার করে দিতে ।
তারপর তিনি এখানেই চলে আসুন । তাঁর যাতে এখানে কোনও অসুবিধে না হয় তার ব্যবস্থা রাষ্ট্রই করবে । ’
নাতি উত্তর দিলেন, আপনারা, মশাই গোড়াতেই ভুল করছেন । দাদুর শরীর খারাপ হয়েছে ঠিকই । কিন্তু মাথাটা খারাপ হয় নি !
৮।
দুই কয়েদির কথোপকথন :
-- আপনাকে ক’বছরের জেল দিয়েছে ?
-- কুড়ি বছরের ।
-- কারন কী ?
-- এমনি । কোনও কারন ছাড়াই ।
-- মিথ্যে কথা । কারণ ছাড়া হলে তো দশ বছরের জেল হয় ।
৯।
শ্রমদিবসের প্যারেডে হাজিরা দেওয়ার জন্য রাবিনোভিচকে ডাকা হয়েছে কারখানার পার্টি শাখায় । তাঁকে বলা হল :
-- এই কারখানার সবচেয়ে প্রবীণ শ্রমিক হিসেবে আপনাকে কমরেড চেরনেনকোর প্রতিকৃতি বহনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে ।
প্রতিবাদ জানিয়ে রাবিনোভিচ বললেন :
-- না কমরেড আমাকে এই দায়িত্ব দেবেন না । লেনিনের প্রতিকৃতি নিয়ে প্যারেডে গিয়েছি , লেনিন মারা গেছেন ।
গিয়েছি স্তালিনের ছবি নিয়ে, মারা গেছেন স্তালিনও । ক্রুশ্চেভের প্রতিকৃতি নিয়ে গিয়েছি, তিনিও গেছেন পরলোক । ব্রেঝনেভের ছবি নিয়েছি, তিনিও বিদায় নিয়েছেন পৃথিবী থেকে । আর এই তো ক’দিন আগে বহন করেছি আন্দ্রোপভের প্রতিকৃতি । তিনিও আজ আর এই ধরাধামে নেই ।
পাশ থেকে এক শ্রমিক প্রস্তাব দিলেন :
-- শুধু চেরনেনকোর প্রতিকৃতিই নয়, রাবিনোভিচকে কমিউনিজমের লাল পতাকাও বইতে দেওয়া হোক ।
১০।
কমিউনিস্ট পার্টির তাত্ত্বিক নেতা শ্রমিকদের ক্লাস নিচ্ছেন :
-- আপনারা নিশ্চই এতদিনে জেনে গেছেন যে কমিউনিজম ইতিমধ্যে দিগন্তে পৌছে গেছে ।
-- দিগন্ত মানে কী, কমরেড ?
-- দিগন্ত হল একটা কাল্পনিক রেখা, যেখানে ভূমি মিশে যায় আকাশের সঙ্গে । আর দিগন্তের দিকে যত এগোনো যাবে, তত বেশি তা দূরে সরে যেতে থাকে ।
১১।
জাদুঘরে স্তালিনের মায়ের প্রতিকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে একটি লোক খুব বিমর্ষ ভাবে মাথা ঝাঁকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল :
-- কী সুন্দরী মহিলা । কিন্তু কেন যে সময়মতো অ্যাবরশান করাননি !
১২।
মানুষের সুখের রকমফের :
কাজের শেষে ঘরে ফির এল জার্মান । বউ তাকে খেতে দিল ঝলসানো মাংস আর বিয়ার ।
ডিনার করে সে শুয়ে পড়ল বউকে জড়িয়ে ধরে । তারা সুখী ।
কাজকর্ম সেরে ইংরেজ ফিরে এল সন্ধ্যাবেলায় । স্ত্রীর সঙ্গে ডিনার করে কুকুরকে নিয়ে একটু বেড়াতে বেরোল সে । তারপর ফিরে এসে বউকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল সে ।
তারা সুখী ।
হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে বাড়ি ফিরল ফরাসি । বউকে ঘরে পেল না । এক বোতল শ্যাম্পেন নিয়ে সে চলল প্রেমিকার কাছে । তারা সুখী ।
কাজের শেষে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার মিটিঙে বাধ্যতামূলক হাজিরা দিয়ে বাড়ি ফিরল রুশ দম্পতি -- ইভানভ আর ইভানভা । বেশ একচোট ঝগড়া হল দু’জনের মধ্যে । ডিনারের প্রশ্নই ওঠে না । কারণ ঘরে খাওয়ার মতো কিছু নেই । তাই পরস্পরের দিকে পিঠ ফিরিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল তারা ।
মাঝরাতে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ ।
-- কে ?
-- আমরা কেজিবি থেকে আসছি । দরজা খুলুন ।
দরজা খুলতে জনাদশেক লোক ঢুকল । নেতা গোছের একজন প্রশ্ন করল :
-- আপনারা পেত্রোভ আর পেত্রোভা তো ? গ্রেপ্তার করা হল আপনাদের ।
-- ভুল করছেন । আমরা পেত্রোভ আর পেত্রোভা নই, আমরা ইভানভ আর ইভানভা । পেত্রোভরা থাকেন উপরের ফ্ল্যাটে ।
দুঃখিত বলে কেজিবির লোকজন চলে গেল । একটু পরে ইভানভ আর ইভানভা জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখল পেত্রোভ ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে কেজিবি ।
গাড়ির দরজা বন্ধ হতেই শুয়ে পড়ল ইভানভ আর ইভানভা ।
তারা সুখী !
১৩।
স্থানীয় সংবাদপত্রের এক সম্পাদক তাঁর সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করেছিলেন, সুপ্রিম সোভিয়েতের নেতারা বদ্ধ পাগল । স্তালিনের হুকুমে কেজিবির লোকেরা সম্পাদককে ধরে নিয়ে যায় এবং অবিলম্বে তাঁর মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছিল ।
আমেরিকায় বেড়াতে গিয়ে এক সোভিয়েত নাগরিক তাঁর মার্কিন বন্ধুকে এই কাহিনীটি বলেছিলেন ।
তাজ্জব হয়ে মার্কিন বন্ধু বললেন :
-- এ তো ভয়ঙ্কর ব্যাপার ! এত তুচ্ছ কারনে মৃত্যুদন্ড ?
সোভিয়েত দেশের মানুষটি উত্তেজিত হয়ে বললেন :
-- তুচ্ছ কারন বলছেন এটাকে ? জানেন ওই সম্পাদক আসলে রাষ্ট্রের গুপ্তকথা ফাঁস করে দিয়েছিলেন ।
স্টেট সিক্রেট ফাঁসের এই অভিনব আখ্যান শুনে মার্কিন বন্ধু গভীর দুঃখের সাথে মাথা নেড়ে বলেছিলেন :
-- যাই বলুন, আমাদের দেশে সকলেরই সব কিছু বলার স্বাধীনতা আছে । নিজস্ব মত প্রকাশের অধিকার এতটুকু খর্ব করা হয় নি আমেরিকায় । ইচ্ছে করলেই আমি হোয়াইট হাউসের সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে পারি - আইজেন হাওয়ার নিপাত যাক ।
সোভিয়েত নাগরিক অবাক হয়ে বললেন :
এতে এত গর্ব করার কি আছে ? আমিও তো যখন তখন মস্কোর রেড স্কোয়ারে দাঁড়িয়ে বলতে পারি - আইজেন হাওয়ার নিপাত যাক !
১৪।
এক রাজনৈতিক কৌতুক রচয়িতাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ক্রুশ্চেভের কাছে । ক্রেমলিনে ক্রুশ্চেভের খাস মহল দেখে সে ত হতবাক । বিড়বিড় করে সে বলল
-- কি দারুন সব আসবাবপত্র ! কি দামী দামী কার্পেট ! পর্দা !
ধৃত লোকটিকে আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে ক্রুশ্চেভ বললেন
-- অচিরেই আমাদের দেশের প্রত্যেকের ঘরে ঘরে এসব থাকবে ।
-- কমরেড ক্রুশ্চেভ । কৌতুক রচয়িতা এবার জোর গলায় প্রতিবাদ জানাল, এটা ঠিক হচ্ছে না ।
হয় শুধু আপনি কৌতুক বলবেন, নয় তো শুধু আমি !
১৫।
নৌবাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চেকোস্লোভাকিয়া । সোভিয়েত উপদেষ্টার কাছে এ ব্যাপারে পরামর্শ চাইতেই তিনি প্রশ্ন করলেন :
-- নৌ-বাহিনীর কি দরকার আপনাদের ? আপনাদের তো সমুদ্রই নেই ।
-- তাতে কি ? চেক কতৃপক্ষের তুখোড় জবাব, আপনাদের দেশে আইন ও বিচার মন্ত্রনালয় কেন আছে তা নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলেছি কখনও ?
১৬।
সাংবাদিক পদপ্রার্থীর ইন্টারভিউ নেওয়া হচ্ছে ।
প্রশ্ন হল :
-- বিপর্যয় এবং দুঃখজনক ঘটনার মধ্যে পার্থক্য কি ?
উত্তর : ধরুন আপনি নতুন স্যুট পরে বেরিয়েছেন রাস্তায় । হঠাৎ চলন্ত গাড়ি আপনার ধোপদুরস্ত পোশাকে এক রাশ কাদা ছিটিয়ে দিল । এটা দুঃখজনক ঘটনা, কিন্তু বিপর্যয় নয় । আবার ধরুন, সোভিয়েত সরকারের সব সদস্যকে নিয়ে একটি বিমান ভেঙে পড়ল সাইবেরিয়ার তুষারঢাকা অঞ্চলে । এটি বিপর্যয়, কিন্তু দুঃখজনক ঘটনা নয় !
আগের পোস্ট গুলো দেখতে পারেনঃ
কমিউনিস্ট জোক্স কালেকশান -১
কমিউনিস্ট জোক্স কালেকশান -২
কমিউনিস্ট জোক্স কালেকশান -৩
কমিউনিস্ট জোক্স কালেকশান -৪ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।