আমার সম্পর্কে বলার মতো কিছু নেই।
কমিউনিস্ট পার্টি কি ও কেন
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি একটি কমিউনিস্ট পার্টি। আমাদের ওয়ার্কার্স পার্টিতে নতুন কর্মী আসছে অবিরত। তাদের ব্যবহারিক জ্ঞান বাড়ছে কাজের মধ্য দিয়ে। তাদের রাজনৈতিক চেতনা ক্রমাগত বাড়ানো, মার্কসবাদী সাহিত্য ও মৌল পাঠক্রম নিয়মিত পড়ার উপযোগী করে তোলা পার্টি নেতৃত্বের নিয়মিত কাজ।
এর মধ্য দিয়ে কর্মীরা যোগ্য ও দক্ষ সংগঠক হয়ে ওঠেন। তত্ত্বকে দৈনন্দিন ব্যবহারিক কাজে প্রয়োগ করেন আবার ব্যবহারিক কাজের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে তত্ত্বগত জ্ঞানকে উন্নত, শানিত ও বাস্তব উপযোগী করে তোলেন। এটা একটা অবিরাম প্রক্রিয়া, বেঁচে থাকার প্রত্যেকটি দিনই একজন কমিউনিস্টকে এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। না হলে রাজনৈতিক কর্মী হয়েও তিনি নিছক কাজের যন্ত্রে পরিণত হন। হয়ত ভাল সংগঠক থেকে যান কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্বদানে ব্যর্থ হন।
তাতে সামগ্রিকভাবে কমিউনিস্ট পার্টি ও তার পরিচালিত আন্দোলন সংগঠন আরও ভাল হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
পার্টিতে যারা নতুন কর্মী আসছেন শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক থেকে তাদের তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমতঃ যারা উচ্চশিক্ষিত, দ্বিতীয়তঃ শিক্ষার মান সাধারণ এবং তৃতীয়তঃ অল্পকিছু শিক্ষা আছে বা নিরক্ষর।
এখনকার সময়ে যারা উচ্চশিক্ষিত শিক্ষা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যই তাদের প্রায় বাইরের বই ও তত্ত্বের সুযোগ থেকে বঞ্চিত রাখে। রাজনৈতিক শিক্ষা তাদের ক্ষেত্রেও প্রয়োজন।
অন্য দুটি ভাগের জন্য তো বটেই। বিশেষ করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগের কর্মীদের জন্য আমাদের পাঠ্য পুস্তক দরকার। আগে সোভিয়েত দেশ থেকে এ-সব পাওয়া যেত। এখন পরিস্থিতি পালটে গেছে। তাই আমাদেরই একাজ করতে হবে।
কাজ শুরু হয়ে গেছে।
যারা পার্টির মধ্যে এসেছেন তাঁদের কাছে কমিউনিস্ট পার্টি কী বলার দরকার কেন?
কমিউনিস্ট পার্টি কী, কেমন তার কাজের ধারা – এসব আলোচনা আমাদের পার্টির গঠনতন্ত্রে আছে। আর কমিউনিস্ট পার্টিটা কেন সেটা আন্দাজ করতে গেলে যে ছোট্ট বইটা উল্টোতে-পাল্টাতে হয় সেটা হল আমাদের পার্টির কর্মসূচী। আমরা আলোচনা করছি যাতে ঐ বইগুলো পড়তে, বুঝতে একটু সুবিধা হয়।
আমাদের পার্টির কাজের ক্ষেত্রটা হয়ে গেছে একটার পর একটা নির্বাচনে অংশগ্রহণ।
আমরা নির্বাচন করতে করতে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছি। এর একটা ভালো ফল হল আমরা মানুষের কাছে যাচ্ছি। কিন্তু এর একটা অসুবিধাও আছে। আমরাও নির্বাচনে যাই, অন্য পাঁচটা দলও নির্বাচনে যায়। এই অন্য পাঁচটা দলের সঙ্গে আমাদের নির্বাচন করার কোনো তফাৎ আছে কি? আমাদের পার্টিও কি আর পাঁচটা পার্টির মতোই আরেকটা পার্টি? আমাদের পার্টির সঙ্গে অন্যান্য পার্টির তফাৎ কোথায়? আমরা মিছিল করি, অন্যরাও করে।
আমরা ধর্মঘট করি, অন্যরাও করে। তাহলে, অন্যদের সঙ্গে আমাদের তফাৎ আছে কিনা সেটা একটু বলার দরকার আছে।
আমাদের পার্টি তো অবশ্যই আলাদা পার্টি। যেমন – বিএনপি-জামায়াত যেসব দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলে আমরা তা বলি না। বিএনপি-জামায়াত যা করে আমাদের পার্টি তা করে না।
এই তফাৎটা আছে বলেই নির্বাচনের সময় লড়াই হয়। কিন্তু তফাৎ কি শুধু এই যে ওরা এক ধরনের কাজ করে আর আমরা আরেক ধরনের কাজ করি? অনেকে, এমন কি আমাদের বহু কমরেডও, মনে করেন আসলে সব পার্টিই একরকম। এরাও সরকার, মিউনিসিপ্যালিটি, পঞ্চায়েত দখল করতে চায় আর ওরাও তাই চায়। বোঝানো হয় কাগজে – অন্যদের মধ্যে যেমন দুর্নীতি আছে, কমিউনিস্টদের মধ্যেও আছে। এরাও ক্ষমতায় গেলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে।
এই সব কারণে আমাদের পার্টি সম্পর্কে ধারণা – অপরিষ্কার হয়ে গেছে। সেই অপরিষ্কার ধারনাটিকে পরিষ্কার করার জন্য আমরা আমাদের পার্টিকে কিভাবে দেখি সেই আলোচনা করতে চাই। অন্যান্য পার্টির সঙ্গে আমাদের পার্টির বনেদী তফাৎ হলো আমাদের পার্টি বলে না ১৪ দল গড়ার মধ্যে দিয়ে আমাদের কাজ শেষ। কিংবা আমরা একথাও বলিনা দেশের দুটো কারখানা তৈরী করে বা বিদ্যুতের জোগান একটু বাড়িয়ে দিয়েই আমাদের দায়িত্ব শেষ। আজকে খালেদা বক্তৃতা দিয়েছেন “আমাদের লক্ষ্য আমাদের দেশের আর্থিক উন্নতি”।
আর্থিক উন্নতি আমাদের পার্টিও চায়। কিন্তু অন্য পার্টিগুলোর থেকে আমাদের মৌলিক পার্থক্য হলো আমাদের পার্টি মনে করে সমস্ত উন্নয়নই আমরা যেখানে শেষ পর্যন্ত পৌঁছতে চাই সেখানে পৌঁছনোর এক একটা সিঁড়ির ধাপ। যে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারলে আমরা শেষ পর্যন্ত কমিউনিস্ট হিসাবে নিজেদের ব্যর্থ মনে করবো সেটা হল একদম নতুন ধরনের একটা সমাজ। অন্য দলগুলি বর্তমান সমাজটাকেই বজায় রাখতে চায়। এই সমাজটাকে বজায় রেখে যেটুকু উন্নতি সম্ভব অন্য দলগুলির লক্ষ্য শুধু সেটুকু উন্নতি করা।
কিন্তু আমরা চাই এমন একটা সমাজ যে সমাজ বর্তমান সমাজের সমস্ত কাদা থেকে মুক্ত।
আমরা শেষ পর্যন্ত যেখানে যেতে চাই, অর্থাৎ আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো সাম্যবাদী সমাজে উত্তরণ। সাম্যবাদী সমাজ বলতে কী বুঝবো? সাম্যবাদী সমাজ শুধু মানুষের চোখের জল মোছানোর বন্দোবস্ত নয়। এটা এমন একটা সমাজ যে সমাজের আজকের সমাজের সমস্ত রীতিনীতিগুলো আমূল পালটে যাবে। কি পাল্টাবো? যেমন আজকের সমাজে মানুষকে যদি কাজ করতে হয় তার জন্য একটা দাম দিয়ে হয়।
এক মধ্যে একটা বেচা কেনার সম্পর্ক থাকে। আমি কারখানায় ৮ ঘন্টা কাজ করলে আমাদের একটা মজুরি দেওয়া হবে। অর্থাৎ, আমি আমাদের বেচবো তার বদলে ৮ ঘন্টার মজুরি পাবো। আমরা যে সমাজে পৌঁছতে চাই, সেই সাম্যবাদী সমাজে এ জিনিস থাকবে না। অবাক লাগে এরকম একটা সমাজ হয় না কি যেখানে দোকানপাট নেই, যেখানে আমি নিজেকে বিক্রি করে মজুরি পাই না, আর সেই মজুরি নিয়ে দোকানে গিয়ে আমার দরকারী জিনিসপত্র কিনি না? – একথার অর্থ হলো সাম্যবাদী সমাজে এত অঢেল উৎপাদন হবে যে মানুষের সকল চাহিদা মেটানো যাবে আর যেহেতু চাহিদা মেটানো যাবে তাই মানুষ কাজ করবে কাজের আনন্দে কিংবা উৎয়াদনের মাধ্যমে অপরকে সাহায্য করার জন্য, নিজের জন্য নয়।
এই সাম্যবাদী সমাজের আরও কিছু নতুনত্ব আছে। যেমন যারা এখনকার সমাজে ভাল থাকে, যাতে ভাল থাকতে পারে সেইজন্য যারা খারাপ থাকে তাদের বুঝিয়ে এবং শক্তি ব্যবহার করে দাবিয়ে রাখার জন্য একটা বন্দোবস্ত করে। এই বন্দোবস্তটাকে বলা হয় রাষ্ট্র – আইন, জেল, পুলিশ, মিলিটারী আর তার সঙ্গে – মনকে দাবিয়ে রাখার জন্য শিক্ষা, সংস্কৃতিকে ব্যবহার করার বন্দোবস্তটার নামই হলো রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রটার আর প্রয়োজন হবে না সাম্যবাদী সমাজে। এক দল, অধিকাংশকে খারাপ রেখে, কিছু লোক ভাল থাকার নামই তো শোষণ, এই শোষণ যদি না দরকার হয় তাহলে রাষ্ট্রেরই বা দরকার কী?
এই সাম্যবাদী সমাজে আরও নতুনত্ব হলো যে রাষ্ট্রই যদি না থাকে তাহলে সমাজে রাষ্ট্রনীতি বা রাজনীতি তারও স্থান থাকবে না।
আর যদি রাজনীতি না থাকে তো রাজনৈতিক দলেরও প্রয়োজন হবে না। এমন একটা সমাজ যেখানে শোষণ নেই, রাষ্ট্র নেই, রাজনীতি নেই, এমনকি রাজনৈতিক দল – কমিউনিস্ট পার্টিও নেই।
আর কোন দল এমন কথা বলতে পারে যে আমরা লড়ছি এমন একটা সমাজের জন্য যেখানে আমাদের পার্টিটাও থাকবে না?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।