আমি জানি আমি জানি না বিদেশী কবি ।
ঢাকায় জাতীয় কবিতা পরিষদের আমন্ত্রণে-‘মানবিকতার জন্য কবিতা’ উৎসবে যোগ দিতে এসেছিলেন কলকাতা থেকে-সুনীল,সমরেন্দ্রসহ অনেক কবি । অন্য অনেকের সাথে তারাও মঞ্চে উপবিষ্ট । কবিতা পড়া হচ্ছে একের পর এক। দর্শক ধরে রাখতে ঘোষক একটু পর পরই ঘোষণা দিচ্ছেন,- ‘এর পরই আমাদের বিদেশী অতিথিরা কবিতা পড়বেন-আপনারা ধৈর্য ধরে বসুন’ -ইত্যাদি।
বেশ কয়েকবারই এমন ঘোষণার পর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হঠাৎ দাঁড়িয়ে মাইকের সামনে এসে বললেন-‘আমি যতবার শুনছি বিদেশী কবি, বিদেশী অতিথি বলে সম্বোধন করছেন, ততবার বুকে যেন হাতুড়ির মত ঘা লাগছে । এই দেশে কি সত্যি আমি বিদেশী ? হয়তো তাই ,বাস্তবতা তাই বলে । কিন্তু এই আমি, যার জন্ম এই দেশেরই মাটিতে, মাদারিপুরে । জন্মকাল থেকে বহুদিন কেটেছে এই দেশেরই জলহাওয়ায়,আমার বহু লেখা এই দেশেরই পটভুমিকায়, এই দেশেরই স্মৃতির মায়ায় গড়ে ওঠা- সেই আমিও বিদেশী ? হয়তো তাই,-কিন্তু শুনতে কষ্ট লাগে- বিদেশী না বলে যদি প্রতিবেশী বলেন, তবে সেই কষ্ট কিছুটা অন্ততঃ সহা হবে,কম কষ্টের হবে। আমি তাই দাবী করছি এখন থেকে আমাদের বিদেশী না বলে প্রতিবেশী বলা হোক ।
’
বলা বাহুল্য ঘোষকের ঘোষণা এরপর বদলে যায় । যদিও শ্রোতাদের আকর্ষণ করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল, বিদেশী বলার পেছনে-কে না জানে দেশের চাইতে বিদেশিদের প্রতি আমাদের আগ্রহের কথা । তবে দেশ আর বিদেশ অবশ্যই ঠিকঠাক চিনতে হবে।
সুনীলের একটি দেশাত্মবোধক একটি কবিতার কিয়দংশ--
যদি নির্বাসন দাও। ।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
যদি নির্বাসন দাও,আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো!
বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ
নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ
প্রান্তরে দিগন্ত নির্নিমেষ-
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি
যদি নির্বাসন দাও,আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো ।
---------
কুয়াশার মধ্যে এক শিশু যায় ভোরের স্কুলে
নিথর দিঘির পাড়ে বসে আছে বক
আমি কি ভুলেছি সব
স্মৃতি,তুমি এত প্রতারক ?
আমি কি দেখিনি কোন মন্থর বিকেলে
শিমূল তুলোর ওড়াউড়ি ?
মোষের ঘাড়ের মত পরিশ্রমী মানুষের পাশে
শিউলি ফুলের মত বালিকার হাসি
নিইনি কি খেজুর রসের ঘ্রাণ
শুনিনি কি দুপুরে চিলের
তীক্ষ্ণ স্বর ?
বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ……..
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি
যদি নির্বাসন দাও,আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরি ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো । *
* কবিতাটির সাথে উক্ত ঘটনার কোনই যোগসূত্র নেই । সম্পূর্ণ দেশপ্রেমমূলক এই
কবিতাটির পটভূমি আরও ব্যপক,দেশ ও বৃহত্তর জনমানুষের সাথে ব্যক্তির এলিয়েনেশন,
সমাজবিচ্ছিন্নতার- দোটানার- দ্বন্দের,—আবার দেশকে তীব্রভাবে ভালোবাসার ,- যদি আমি ঠিক বুঝে থাকি । সম্পুর্ণ কবিতাটি সুনীল-শক্তির যৌথ কাব্যগ্রন্থ- ‘যুগলবন্দী’তে মিলবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।