আমি সত্যের এবং সুন্দরের পুজারী। কজন মানুষের সাথে হাসিমুখে মিষ্টি ভাষায় যারা কথা বলে তাদের প্রতি আমার অপরিসীম শ্রদ্ধা । আর যারা নিজেদের অনেক বড় ভাবে, তাদের প্রতি আমার রয়েছে করুণা । যেটা আমার কাছে ভুল মনে হয় , তার তাত্ক্ষণিক যুক্তিসম্মত প্রতিবাদ করতে আমার ব অনেক দিন পর নিজের মত প্রকাশের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম বাংলা ব্লগে ফিরে আসলাম। আসলে আসতে এক প্রকার বাধ্য হলাম।
যারা মায়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ভুমিকা নিয়ে দেশের ভেতর থেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, তাদের কাছে আমার কিছু প্রশ্ন আছেঃ
১) আপনারা কি জানেন,
১৯৮২ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ২ লাখ মতান্তরে ৩ লাখ রোহিঙ্গা আছে ?
১৯৭৮ সালে দাঙ্গার পর প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের দেশে আসে। এর পর দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে ১৬ মাসের মাঝে সবাইকে আবার তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয় ।
এরপর ১৯৮২ সালে মায়ানমারের সরকার এমন ভাবে নাগরিকত্ব আইন করে, রোহিঙ্গারা আর তাদের নিজেদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পায় না। অনেকেই চলে আসে বাংলাদেশে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ! না, বাংলাদেশ এদের ফেরত দেয় নাই। এদের আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ।
এরপর থেকে এখন পর্যন্ত বারংবার মায়ানমার কে বাংলাদেশ অনুরোধ করে চলেছে যেন সে তার দেশের নাগরিক দের ফেরত নেয়। কিন্তু তারা কর্ণপাত করে না। ফলাফল বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত বহন করে চলেছে প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গাকে। এদের আশ্রয়, চিকিতসা, খাদ্য এসব কাজে আন্তর্জাতিক এনজিও বা সংস্থা গুলো কিছু কাজ করলেও বাংলাদেশ সরকার কে ই অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। যে দেশের নিজে নাগরিক অনেকে ই ভাত নাই বলে আত্মহত্যা করে, সে দেশ আরেক দেশের ৩ লাখ মানুষ কে খাওয়া, চিকিতসা, আশ্রয় দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে !
২) আপনারা কি জানেন, যে এবারের দাঙ্গায় আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলো মায়ানমার সরকারকে অত্যাচার বন্ধ করতে না বলে বাংলাদেশ কে তার বর্ডার খুলে রাখতে বলছে অনন্তকালের জন্য ?
এটা কি স্বাভাবিক মনে হয় আপনাদের কাছে ?
আমাদের দেশে তো প্রায় ই আগুন লাগে, বস্তির শত শত ঘর পুড়ে যায়।
তখন এলাকা বাসী হিসেবে আমরা কি করি ? আগুন নিভাতে সাহায্য করি, আর যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেই চেষ্টা করি নাকি, আগুন বন্ধ করার চেষ্টা না করে নিজেদের ঘরে আশ্রয়হীন্ দের আশ্রয় দেই ?
কেন দেই না ! কারণ আমার যা আয়, তা দিয়ে আমি আমার পরিবারের সদস্য দের ই খাওয়া জুটাতে পারি না, এখন অন্য আরো এক বা দুই জন মানুষ কে সারাজীবন পালা তো সম্ভব না। ১ মাস হলেও হত ! কিন্তু সারাজীবন !
৩) আপনারা কি জানেন, যে এবারের দাঙ্গায় রোহিঙ্গাদের ঢুকতে না দিলেও আহতদের সরকার নিজের টাকায় হাসপাতালে চিকিতসা করাচ্ছে ? মায়ানমার থেকে পালিয়া তারা কিন্তু থাইল্যান্ড এও যায়। শুনেছেন কি ব্যাংকক বীচে মায়ানমারের শরণার্থীদের চাবুক দিয়ে পিটানোর কথা ? বেশি খুঁজতে হবে না, গুগল মামাকে নক করলেই পেয়ে যাবেন । বাংলাদেশের কোন বাহিনী বা সরকার কিন্তু এতটা নির্মম হতে পারে না।
৪) আপনারা কি জানেন, যেসমস্ত রোহিঙ্গা ৩০ বছর ধরে এদেশে আছে, তারা সীমান্তে নাসাকা বাহিনীর চর হিসেবে কাজ করে ? যেটা স্পষ্ট হয়ে উঠে ২০০৮-২০০৯ সালের বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার যখন প্রায় যুদ্ধের মুখোমুখি পৌঁছে যায় ? কক্সবাজার/ চট্টগ্রাম এলাকায় এ ২লাখ/৩ লাখ রোহিঙ্গাদের অনেকেই নাকি, ড্রাগ, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, বেশ্যাবৃত্তি র সাথেও জড়িত হয়ে গেছে, আরো ২ লাখ আসলে যে কক্সবাজার/ চট্টগ্রাম, / সেন্টমার্টিন তো স্বাধীন রোহিঙ্গাস্থান করে দেয়ার আন্তর্জাতিক প্রেশার আসবে ?
৫) মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কথা বলছেন ? ১৯৭১ সালে ভারত ১ কোটি শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল, এটা যেমন সত্য, তেমনি যুদ্ধের পরপর ই সবাইকে বাংলাদেশে ফেরত ও পাঠিয়েছিল কিন্তু।
পক্ষান্তরে প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছে ৩০ বছর ধরে !!
৬) নোবেল জয়ী নেত্রী অং সান সুচি এ সময়ে ইউরোপ ভ্রমণ নিয়ে ব্যস্ত ? হাহাহা। যে নেত্রী নোবেল নিতে ও দেরি করতে পারেন, তাঁর কাছে জাতিগত দাঙ্গা কিছু ই না ? মায়ানমারের সমস্যা বাংলাদেশের দায় ???
এবার কিছু মতামত চাই, ধরে নিলাম, আমাদের সরকার ভুল ই করছে। আশ্রয় প্রার্থীদের অবশ্য ই আশ্রয় দেয়া উচিত। না হয় সারা জীবনের জন্য ই আরো ২ লাখ, মোট ৫ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া হলো।
এরপর,
১) ওদের কি নাগরিকত্ব দেয়া উচিত ?
২) ওদের জন্য কি চাকুরী/ শিক্ষাক্ষেত্রে ৭-১০% কোটা রাখা উচিত ?
৩) ঢাকা সহ সমস্ত দেশে কি ওদের ফ্ল্যাট/ জমি দেয়া উচিত ? সেই পরিমাণ ফাঁকা জায়গা কি আমাদের আছে ? কোথায় ? যদি জায়গা না পাওয়া যায়, তাহলে কি যারা তাদের কে জায়গা দিতে চান একটা ফর্মে আবেদন করতে পারেন না ? যাতে তাদের পরিবারের কাছে একটা করে রোহিঙ্গা পরিবারের দায়িত্ব গুছিয়ে দেয়া যায় ???
৪) ওদের যাতে খাওয়ার / চিকিতসার কোন সমস্যা না হয়, সেজন্য কি আমাদের উচিত রেশন কার্ড এর ব্যবস্থা করে দেয়া ! কারণ নিজের দেশের মানুষ কে খাওয়াতে না পারলে কোন সমস্যা নেই, কিন্তু রিফিউজিদের খাওয়া না দিলে , কিন্তু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা গুলো টাকা না দিলেও স্টার্ভেশনে রাখার অভিযোগ করবে।
বিশ্বাস না হলে গুগল এ সার্চ করুন, অলরেডি দেখতে পাবেন, আন্তর্জাওতিক সংস্থার কোন একজন ডিরেক্টর ইতিমধ্যে বলে ফেলেছেন ২ লাখ রোহিঙ্গার সাথে বাংলাদেশ সরকার এর ব্যবহার ভালো না। অথচ বাংলাদেশ সরকার কিন্তু বারংবার বলছে যে, আমরা আর পারছি না ! আমাদের নিজেদের সমস্যা অনেক। আমরা অন্য দেশের সমস্যা নিতে রাজি না।
৫) পৃথিবীতে তো বেশ ধনী কিছু দেশ আছে, যেমন তেল সমৃদ্ধ দেশ গুলা, আমরা তো ৩ লাখ রোহিঙ্গাকে প্রতিপালন করেই চলেছি। বাকি ২ লাখ কে না হয় আরো ২ মাস দেয়া গেল।
এরপর কি সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত আমীরের দেশ গুলা এদের নিতে রাজি হবে ? এরা না নিলেও চীন, বা ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ড ? মানবতার খাতিরে অবশ্য ই আমাদের এগোতে হবে। কিন্তু তার মানে এই না যে নিজেদের দেশের নাগরিক দের অধিকার ক্ষুণ হওয়ার ও ঝুঁকি থাকবে ! আর তাই বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ, যে প্রচন্ড চাপের মুখে এদের প্রবেশাধিকার দিলেও, তা যেন মাত্র ১ মাসের বেশি না হয়, আর পুশ ব্যাক করার সময় যেন বাকি ৩ লাখ কে ও করে দেয়া হয়। নাসাকা বাহিনী বা বি এস এফ যদি সীমান্তে অমানুষের মত আচরন করে, তাহলে বিজিবিকে ও সীমান্তে অমানুষ ই হতে হবে।
The Bangladesh Government has to be cruel only to be kind.
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।