আমি ফিফা চেয়ারম্যান হতে চাই। চেয়ারম্যান হলে আমার নাম হবে জন ফু সোহেল
ডিরেক্ট সেলিং ব্যবসা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। গত এক দশকে বাংলাদেশসহ এশিয়া মহাদেশেও এর ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। ১২৫ টিরও বেশি দেশে প্রায় ১২ হাজারের বেশি কোম্পানি ডিরেক্ট সেলিং ব্যবসা করছে। সারাবিশ্বে প্রতি সপ্তাহে এ ব্যবসায় জড়িত হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ।
সূত্র জানায়, কোনো মাধ্যম ছাড়া সরাসরি এ ব্যবসার জন্য পৃথিবীর অর্ধশতাধিক দেশে ডিরেক্ট সেলিং আইন রয়েছে। এছাড়া বেশকিছু দেশে সাধারণ আইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে ডিরেক্ট সেলিং ব্যবসা। এছাড়া ডিরেক্ট সেলিং আইন প্রণয়ন অনেক দেশে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশেও ডিরেক্ট সেলিং ব্যবসার জনপ্রিয়তাকে সামনে রেখে সরকার একটি আইন করতে যাচ্ছে বলে প্রস্তাবিত ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য, ওয়ার্ল্ড ফেডারেল অব ডিরেক্ট সেলিং অ্যাসোসিয়েশনসহ ডিরেক্ট সেলিং বিশেযজ্ঞদের গবেষণাপত্র সূত্রে এ সকল তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণেই এই ডিরেক্ট সেলিংয়ের উদ্ভব হয়েছে। মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্যই পণ্যের মূল্য বেড়ে যায়, যার দায় টানতে হয় ভোক্তাদেরকেই।
মাল্টিলেভেল মর্কেটিংয়ের উদ্ভাবক ছিলেন ড. কার্ল রেইন বোর্গ। ১৯৪০-৪১ সালে তিনি সর্বপ্রথম এই পদ্ধতিতে কৃত্রিম ভিটামিন বিপণন শুরু করেন। প্রাকৃতিক সার প্রয়োগে উৎপাদিত শাকসবজি থেকে এই ভিটামিন প্রস্তুত করা হতো।
১৯৫৮ সালে আমেরিকান পার্লামেন্টে ১০ ভোট বেশি পেয়ে ফ্রাঞ্চাইজের পাশাপাশি এমএলএম পদ্ধতিটি বৈধতার স্বীকৃতি পায় এবং এ বছরেই রিচ ডিভস এবং জে ভেন এন্ডেল দুজন এমএলএম এক্সপার্ট করপোরেশন গড়ে তোলেন যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় এমএলএম কোম্পানি।
এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডিরেক্ট সেলিং ব্যবসার প্রসার ঘটে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ডিরেক্ট সেলিং ব্যবসার জন্য আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এর জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে ও পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তৈরি হয় ডিরেক্ট সেলিং আইন। এই পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে ডিরেক্ট মেইল, ক্যাটালগ, টেলিমার্কেটিং, ইন্টারএক্টিভ টিভি, ওয়েবসাইড এবং মোবাইল ডিভাইস ইত্যাদি।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে এক যুগ ধরে এমএলএম ব্যবসা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি-২০০০ লিঃ-এর সঙ্গে প্রায় সাড়ে ৪ মিলিয়ন (৪৫ লাখ) মানুষ জড়িত। তবে অন্যান্য দেশের মতো এখানেও ডিরেক্ট সেলিং ব্যবসা বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস চলছে।
সর্বশেষ তথ্যমতে, সরকার ওইসব যড়যন্ত্রে কর্ণপাত না করে দ্রুতই একটি ডিরেক্ট সেলিং নীতিমালা করতে যাচ্ছে। যা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ৭ জুন তার বাজেট বক্তব্যে বলেছেন।
ওয়ার্ল্ড ফেডারেল অব ডিরেক্ট সেলিং অ্যাসোসিয়েশনের সূত্রে জানা যায়, ১৯৯২ সালে হাঙ্গেরিতে যখন এমওয়ে করপোরেশন নেটওয়ার্ক ব্যবসায় সূচনা করে তখন প্রথম তিন সপ্তাহের মধ্যে ৫০ হাজার ক্রেতা পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে যোগদান করেন। সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাপী প্রতি সপ্তাহে এ ব্যবসায়ে জড়িত হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার জন যা প্রতিদিন গড়ে দাঁড়ায় ২১ হাজার ৪০০ জনে। বর্তমানে সারাবিশ্বে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ লোক এই এমএলএম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত_ যা প্রতি বছর ১০% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নেটওয়ার্ক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশ
১৯৯০ সালের পর থেকে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও পূর্ব ইউরোপে বিস্তার লাভ করে। এশিয়ায় সর্বপ্রথম জাপান এই নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয় ১৯৬৩ সালে।
১৯৮০ সালে জাপানে ডিরেক্ট সেলিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। ২০০১ সালে কমার্শিয়াল ট্রানজেকশন আইনের অধীনে ডোর টু ডোর সেলস আইন পাস করে সে দেশের সরকার। থাইল্যান্ড সরকার ২০০২ সালে সেলস অ্যান্ড ডিরেক্ট সেলিং অ্যাক্ট বিই ২৫৪৫ আইন পাস করে।
১৯৭২ সালে মালয়েশিয়ায় এ পদ্ধতির সূচনা ঘটে এবং সেদেশে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে ১ হাজারটিরও বেশি কোম্পানি। ১৯৯৩ সালে এ দেশের প্রশাসন এমএলএমের ওপর নীতিমালা প্রণয়ন করেন যা ডিরেক্ট সেলস-১৯৯৩ (অপ.-৫০০) নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত।
সূত্র জানায়, শুধুমাত্র ডিরেক্ট সেলিংয়ের জন্য মালয়েশিয়াতে পৃথক একটি মন্ত্রণালয় রয়েছে।
১৯৯৭ সালে ভারতে সর্বপ্রথম এ পদ্ধতির সূূচনা ঘটে। বর্তমানে ভারতে ৮০টির মতো কোম্পানি কাজ করছে। ভারতের আইনের কাঠামোর মধ্যে ডিরেক্ট সেলিং বৈধভাবে ব্যবসা করছে। ২০১১ সালের ৫ জুন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব ডিরেক্ট সেলিং অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা সে দেশের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির সঙ্গে দেখা করে ভারতে এমএলএম ব্যবসা সম্প্রসারণে একটি যুগোপযোগী আইনের প্রস্তাব দেন।
ভারত সরকার ডিরেক্ট সেলিং বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে বলে সূত্র জানায়।
এশিয়ার সর্ববৃহৎ এমএলএম মার্কেট হচ্ছে চীন। তবে শুরুর দিকে সে দেশে ডিরেক্ট সেলিং ব্যবসা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়। পরে ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের (ডবিস্নউটিএ) হস্তক্ষেপে ২০০৪ সালের ১১ ডিসেম্বর থেকে ডিরেক্ট সেলিং কোম্পানিগুলো ব্যবসা শুরু করে। বর্তমানে আইনের আওতায় বৈধভাবে ডিরেক্ট সেলিং প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা করছে চীনে।
এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইউরোপ ও আমেরিকার ৫০টিরও বেশি দেশে প্রত্যক্ষভাবে ডিরেক্ট সেলিং আইনের আওতায় চলছে। অন্যান্য দেশে সাধারণ আইনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে ডিরেক্ট সেলিংকে। তাছাড়া বাংলাদেশসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশে ডিরেক্ট সেলিং আইন নিয়ে কাজ চলছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ভোক্তার ওপর চাপ কমাতে বিশ্বের অনেক নামিদামি কোম্পানি এই এমএলএম পদ্ধতিতে তাদের পণ্য ও সেবা ভোক্তার কাছে পেঁৗছে দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে কোকাকোলা, জিলেট, কোলগেট, পামলিভ, এসিআই, স্পিন্ট, আইবিএম, জেনারেল মটরস ইত্যাদি।
বহুজাতিক কোম্পানি প্রাইমেরিকা ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস এমএলএম পদ্ধতিতে জীবন বীমা পলিসি বিপণন করে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করছে। এক্সেল কমিউনিকেশন্স ১৯৯৬ সালে নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিংয়ে (আইপিও) যায় এবং প্রথম দিনই তাদের ১৫ ডলার মূল্যের শেয়ার দর ২৯.৩৫ ডলারে উঠে যায়।
সূত্র জানায়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিলি্ল বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্টের ছাত্রদের জন্য ৬ মাসের একটি বাধ্যতামূলক কোর্স রয়েছে এমএলএমের ওপর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিয়নস বিশ্ববিদ্যালয়, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়, রোড আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএলএম পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে সর্বপ্রথম জিজিয়েন বাংলাদেশ এই এমএলএম পদ্ধতির সূচনা করে।
পরবর্তীতে ডেসটিনি-২০০০ লিঃ বাংলাদেশের জয়েন্ট স্টক কোম্পানি হতে ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখে অনুমোদন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। ডেসটিনি-২০০০ লিঃ এ দেশে সর্ববৃহৎ ডিরেক্ট সেলিং কোম্পানি। সূত্র জানায়, গত বারো বছরে প্রায় ৫০ লাখ ডিস্ট্রিবিউটর নিয়ে কাজ করছে যদিও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ডেসটিনির ওপর নির্ভরশীল প্রায় ১ কোটি মানুষ।
এ প্রসঙ্গে ডিরেক্ট সেলিং মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. জুলফিকার আলী দৈনিক ডেসটিনিকে বলেন, বিশ্বের সর্বত্রই ডিরেক্ট সেলিংয়ের ব্যাপকতা বেড়েই চলেছে। বিপণন বিশারদদের মতে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের মোট বিপণনের ৫০-৬০% এমএলএমের আওতায় এসে যাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশেও ডিরেক্ট সেলিং আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
তিনি বলেন, এ দেশে ডিরেক্ট সেলিং গবেষণা করে আমরা দেখেছি, ডেসটিনি-২০০০ লিঃসহ আরো প্রায় ৭০টি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তবে ডেসটিনি-২০০০ লিঃ ডিরেক্ট সেলিং ব্যবসায় অভূতপূর্ব সফলতা দেখিয়েছে_ যা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্বসেরা মার্কেটিং গুরু ফিলিপ কটলার স্বয়ং এ দেশে এসে ডেসটিনির কাজের প্রশংসা করেছেন। এটা অনেক বড় স্বীকৃতি।
ডিরেক্ট সেলিং আইন তৈরি করে এ দেশে ডিরেক্ট সেলিং ব্যবসাকে সম্প্রসারণ করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে ডিরেক্ট সেলিংয়ের ওপর মানুষের আস্থা বাড়বে ও এই ব্যবসায় কারো ক্ষতি হবে না বলে মনে করেন তিনি। তবে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই যারা ডিরেক্ট সেলিং বোঝেন তাদেরকে সম্পৃক্ত করা উচিত। অনভিজ্ঞদের দ্বারা ওই আইন তৈরি হলে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেন তিনি।
আলী বলেন, ডিরেক্ট সেলিং আইনে মালয়েশিয়ার আদলে অন্তত ৮০ ভাগ আইন সংযোজন করা যেতে পারে। বাকি ২০ ভাগ দেশের প্রেক্ষিতে করা যাবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
বিশ্ববিখ্যাত এমএলএম লেখক জন কেলেন্সের উদ্ধৃতি দিয়ে আলী বলেন, মাল্টিলেভেল মার্কেটিং হল_ 'বর্তমান বিশ্বে জীবনকে বদলে দেওয়ার শ্রেষ্ঠ সুযোগ। ' ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।