আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঙ্গালী জাতি'র অভিবাবক বাংলাদেশ'কে রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়াতেই হবে!!!

অভিলাসী মন চন্দ্রে না পাক, জোছনায় পাক সামান্য ঠাই জাতিসংঘে'র ভাষ্যমতে, রোহিঙ্গারা পৃথিবীর সর্বোচ্চ নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠি। যাদের কোথাও কোন ঠিকানা নেই। নেই নাগরিকত্ব, বিয়ে বা সন্তান জন্মদানের মত মৌলিক মানবাধিকার!!! মায়ানমারে ১৯৮২ সাল থেকে এদেরকে "বিদেশি বাঙ্গালী" চিন্হিত করে নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু সত্য হলো, রোহিঙ্গাদের সেদেশে বসবাসের ইতিহাস বহু পুরানো। বার্মা'র উগ্র জাতিয়তাবাদীরা রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতা দৃঢ় করতে নিয়মিত গরিব রোহিঙ্গাদের "বলির বকরি" বানিয়ে আসছে।

সিস্টেম্যাটিক্যালি এদের উপর ভয়াবহ অত্যাচার করা হয়। "এথনিক ক্লেনজিংয়ের" মত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে এই গোষ্ঠিটার বিরুদ্ধে। তাদের হত্যা করার জন্য বার্মা'র বৌদ্ধ বিহারগুলো থেকেও আহ্বান উঠে! আজো এদের ধরে ধরে বার্মায় সরকারী প্রজেক্টে বাধ্যতামূলক কাজ করানো হয়। তাদের কোন ভোটাধিকার নাই। তাদের "কালার" বলে চিন্হিত করা হয়।

রোহিঙ্গাদের বিয়ে করতে অনুমুতি লাগে এবং প্রায়ই আবেদন খারিজ করা হয়। এবং অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলো রোহিঙ্গারা ২ সন্তানের বেশি নিতে পারে না! শুধুমাত্র ধর্ম এবং বর্ণের পার্থক্যের কারনে তাদের মায়ানমার থেকে বিতারিত করার সরকারী প্রোগ্রাম পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে প্রণোয়ন করছে বার্মিজ সরকার। থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশে কয়েক লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরনার্থী মানবেতর জীবন যাপন করছে। ( এই দরিদ্রমানুষগুলোকে দেখলেই তো বাঙ্গালীদের দায়বদ্ধতা মনে হওয়ার কথা) ৭৮ এবং ৯২ সালে ২ টা সামরিক অপারেশনের মাধ্যমে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গাদের বার্মা থেকে তাড়ায়ে দেয়া হইছে। বাংলাদেশে ৩ লক্ষ রোহিঙ্গা রিফিউজি থাকলেও মাত্র ২৮ হাজার রিফিউজি রেজেস্টার্ড!!! এবং কোন দেশ থেকেই এদের নাগরিকত্ব দেয়া হচ্ছে না! রোহিঙ্গাদের প্রায়ই পাওয়া যায় বিভিন্ন দেশের উপকুল ভাসমান নৌকায়! থাইল্যান্ডের নৌবাহিনী নৌকায় করে তাদের সমুদ্রে ছেড়ে দিয়ে এসেছে, তার প্রমান পাওয়া গেছে।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি'র এই মানুষগুলো মায়ানমারে সকল মানবাধিকার বঞ্চিত হচ্ছে শুধুমাত্র তাদের বাঙ্গালী কানেকশন এবং মুসলিম পরিচয়ের জন্য। তাদের গায়ের চামড়া'র রঙের কারনেও বর্ণবাদী বার্মিজ জাতীয়তাবাদীদের আক্রমনের শিকার হয় রোহিঙ্গারা। মায়ানমারে'র রাখাইন প্রদেশে এদের যেই ভয়াবহভাবে হত্যা করা হলো, এবং ঘরবাড়ি পুরিয়ে দেয়া হলো সেটা দেখে একজন বাংলাদেশী হিসেবে খুবই লজ্জা এবং দুঃখ পেলাম, সেই সাথে ক্রুদ্ধ হলাম। এই গরিব মানুষগুলো আমাদের বাঙ্গালী জাতিগত পরিচয়ের কারনে বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত হয়ে থাকবে এটা মেনে নেয়া যায় না। আমাদের জাতিগত পরিচয় বহনের দায়ে ওরা প্রাণ দিবে এটা সহ্য করা যায় না! বিশ্বে'র বুকে আজক স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র আছে।

যেটা জনসংখ্যায় বিশ্বের ৭ম বৃহত্তম দেশ। এই দেশ সারা পৃথিবীর বুকে বাঙ্গালী জাতি ও বাংলা ভাষার প্রতিনিধি এবং অভিবাবক। হতে পারি আমরা গরিব রাষ্ট্র কিন্তু আমরা মানুষ হিসেবে তো দূর্বল নই। আমাদের আত্মা আছে, বিবেক আছে। কোনদিন কারো দেশ দখল করার ইতিহাস আমাদের নাই, কোনদিন কোন জনগোষ্ঠি'কে নির্যাতনের ইতিহাস আমাদের নাই, আমাদের মত বৃহত এবং শান্তিকামী জাতি এই পৃথিবীর বুকে আরেকটা খুঁজে বের করা যাবে না।

( লোকাল অস্ত্রহাতে টহল দিচ্ছে এক রাখাইন, ওরা এভাবেই জ্বালিয়ে দিচ্ছে ঘরবাড়ি) আধুনিক বিশ্ব রাজনীতির প্যাঁচে এবং কৃত্তিম সীমান্তভিত্তিক রাজনীতির ফাঁদে পড়ে আজকে অনেক বাঙ্গালীই বাংলাদেশের বাইরে বসতি করেছে। আসাম, ত্রিপুরা ও মায়ানমার আছে বহু বাঙ্গালী, কিন্তু খুবই দুঃখের কথা যে, আসাম-ত্রিপুরা এবং বার্মায় বসবাসরত প্রায় সব বাঙ্গালীরাই নিয়মিত অত্যাচার, নির্যাতন ও সরকারী-বেসরকারী আঘাত আক্রমনের শিকার। সেসব দেশে বিভিন্ন বাঙ্গালী মুসলিম বিরোধী সংগঠন রয়েছে যারা সরাসরি ও নিয়মিত ধ্বাংসাত্মক তৎপরতা চালায়। গরিব, অসহায় এই জাতিগত ভাই-বোনদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। ১৭ কোটি মানুষের এই মহান বাংলাদেশটা আজ দুনিয়ার সব বাঙ্গালীর অভিবাবক।

বাঙ্গালী জাতি'র নিরাপত্তা ও মানবাধিকার রক্ষনের দায় আমরা কোনভাবেই এড়াতে পারি না। জাতিসংঘসহ প্রায় সকল আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো'তে সুস্পষ্ট আইন রয়েছে মাইনরিটি রাইটসের বিষয়ে। প্রতিটা দেশের মাইনরিটি প্রোটেকশনের জন্য আইন আছে। ওগুলার লঙ্ঘন হলে অন্যান্য এবং মূলত প্রতিবেশী দেশের দায়িত্ব তা সবার সামনে তুলে ধরা। বাংলাদেশের সরকার আসাম, ত্রিপুরা এবং বার্মা'র রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চলা ঐ দেশগুলোর সরকারী-বেসরকারী হামলার বিরুদ্ধে কখনো মুখ খুলেছে বলে দেখি নাই।

কিন্তু ঐ নির্যাতিত মানুষগুলার আমরা ছাড়া কেউ নাই! আমাদের সরকারের উচিত ছিল আসাম-ত্রিপুরা এবং বার্মা'র মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো জাতিসংঘে তুলে ধরা। আমাদের সুশীল সমাজের উচিত ছিল ওদের পাশে দাড়ানো। আমাদের তরুনদের উচিত ছিল ঢাকা শহরে মিছিল করে তাদের সাহস জোগানো! কিন্তু আশ্চর্য্যের ব্যাপার আমরা এই বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে কাপুরুষোচিত আচরন করছি। বাংলাদেশী হবার অভিযোগে আসাম, ত্রিপুরা এবং রাখাইন প্রদেশের বাঙ্গালী মুসলমানরা নিয়মিত মার খায় আর আমরা একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের মালিক হয়েও তাদের জান-মাল রক্ষায় নুন্যতম সরকারী উদ্যোগ তো দুরে, গতকাল আমাদের সমুদ্রে ছোট নৌকায় করে ভেসে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বিজিবি গ্রেপ্তার করে আবার পুশইন করেছে!!! (এই অগ্নিকুন্ডে'র মাঝে তাদের কিভাবে ফেরত পাঠাচ্ছে আমাদের সরকার? ) বাংলাদেশে আজ আর সরকারের কাছে কিছু দাবী করা'র মানে হয় না। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের হাতেই সব।

আমরাই পারি একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের বাইরে বসবাসরত কিন্তু আমাদের সাথে কানেক্টেড জনগোষ্ঠির বিপদে পাশে দাড়াতে। রোহিঙ্গাদের সমস্যাগুলো বিশ্বের সামনে তুলে ধরে মায়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকারের মাধ্যমে তাদের মানবাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে। যেই মানুষগুলো আপনার-আমার জাতিগত ভাই-বোন পরিচয়ের কারনে তাদের নিজ দেশে নির্যাতিত হচ্ছে এই সময়ে তাদের পাশে না দাড়ালে আমাদের বাংলাদেশী হবার দায় সম্ভবত শোধ হবে না!!! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.