সাধারন মানুষ আমি খুবই শান্তশিষ্ট টাইপ কিন্তু কারও অভিমতের সাথে মত না মিললে আর্গু করে মজা পাই। ফেসবুকে আমার কিছু গুরুজন আছেন যাদের সাথে আর্গু করে বেশি মজা পাই কারন কিছু শিখতে পারি।
আজ এক আপু বললেন জর্মানী বা ইতালী সহ সকল পশ্চিমা দেশগুলোর সাম্প্রতিক আর্থিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার তুলনায় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আর্থিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলি কিছুই নয়। বাংলাদেশ যে সমস্যাগুলোর সম্মুখিন হয় সেগুলো হল - শতকরা জিডিপি প্রবৃদ্ধি বিতর্ক, মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির হার এবং ঘাটতি বাজেটের পরিমান নিয়ে বিতর্ক। আর পশ্চিমা বিশ্বের অধুনা সমস্যা হচ্ছে তাদের সরকারগুলোর, এমনকি ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির দেউলিয়া হবার সম্ভাবনায়, যার সাথে জড়িয়ে আছে তাদের জরুরী জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলির টিকে থাকার প্রশ্ন।
এমতাবস্হায় আপুর কথা হলো বাংলাদেশ এ বিষয়ে অনেক সৌভাগ্যবান কারন তুচ্ছ কিছু ক্ষুদ্র ও বৃহৎ অর্থনীতির বিষয়ে বিতর্ক ছাড়া পশ্চিমাদের মত আমাদের বড় কোন সমস্যা এখন নেই।
জীবিকার প্রয়োজনে ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় কাটানো সাম্প্রতিক বৎসরগুলোতে আমার চর্মচক্ষুতে দেখা ইউরোপীয়ানদের বিলাস ব্যসন এর সাথে আমার দেশের মানুষের অবস্হা তুলনা করে আমি একমত হতে পারলাম না। বললাম বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমা বিশ্বের জীবন যাত্রার মানে এত ফারাক যে এদের মধ্যে কোন তুলনাই চলেনা। এবং আরো বললাম যে আমার মনে হ্য় না সাম্প্রতিক এইসব সমস্যায় ইউরোপীয়ানদের খুব বেশি কিছু হারাবার আছে বা তাদেরকে খুব শীঘ্রই তাদের পানশালা কেন্দ্রিক আয়েস ত্যাগ করতে হবে।
আপু আমার মন্তব্যে ''লাইক''দিলেন।
কিন্তু তিনি আমার কথা মানতে রাজি নন। বললেন যে তিনি জীবন যাত্রার মান নিয়ে বলছেন না, বলছেন পশ্চিমা বিশ্বের সাম্প্রতিক সমস্যাগুলো নিয়ে। আরো বললেন যে "মুদ্রিত টাকা"(প্রিন্টিং মানি) নিয়ে টিকে থাকা ইউরোপের কিছু দেশের চাইতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদের শিকড় অনেক গভীরে রোপিত।
এবং আপু নিজের এই কথাগুলি "লাইক" করলেন।
আমি ভাবলাম, ইশ্!! কবে যে পুরো ইউরোপের চেয়ে সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ।
কিন্তু একটি দেশের জীবন যাত্রার মান অনেক নিচে থাকার মানেতো সেটাই সে দেশের প্রধান ও গুরুতর আর্থিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা যার সাথে ধনী ও কৌশলী পশ্চিমাদের শিরনাম স্বর্বস্ব আর্থিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার কোন তুলনাই চলেনা। তাই মানতে না পেরে বললাম -
বেশ, যদি প্রশ্ন পশ্চিমাদের সাম্প্রতিক সমস্যা এবং অর্থনৈতিক বুনিয়াদ নিয়ে হ্য়, তাহলেও সেই নতুন বোতলে পুরান মদের তুলনাই দিতে হবে, কারন জীবন যাত্রার মান অথবা অর্থনৈতিক সমস্যার কোনই তুলনাই বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমা দেশগুলির হয় না কারন বাংলাদেশের সমস্যা অনেক অনেক গুণ বেশী, যা পশ্চিমারা বেশ কয়েকটি শতাব্দী পূর্বেই সমাধান করে এসেছে। আমরা সামর্থ্য না থাকায় আমাদের সেই সব সমস্যার ও সমাধানের কথা না ভেবে যদি পশ্চিমাদের বর্তমান সমস্যাগুলি আমাদের নেই বলে আত্মতৃপ্তি পেতে চাই, তা হবে পা নেই বলে জুতোরও প্রয়োজন নেই বলে আত্মতৃপ্তি পাবার সমান। তাই কি হয়। পা না থাকার জ্বালা যে বহুগুণ বেশি।
তাই পা ও জুতো ছাড়া মানুষের সাথে পা ওয়ালা জুতোহীনের জুতো না থাকার সমস্যার কোন তুলনা হতে পারে না। আমাদের অবস্হান যে তৃতীয় বিশ্বের দেশ, যে দেশগুলোকে বলতে হয় করুণ দেশ, সে তো অর্থনীতির উপর নির্ভর করেই নিরুপন করা। সৌভাগ্যক্রমে এর চেয়ে নীচে অর্থনৈতিক অবস্হান হতে পারেনা বলে তৃপ্তি পাওয়া যেন "ল্যাংটার নেই বাটপারের ভয়'' -এর মত উলঙ্গর কিছু হারাবার নেই বলে তৃপ্তি পাওয়া।
এই কথাগুলিতে আপু বা কেউ "লাইক" দ্যান নি।
পরবর্তীতে আপুর এক বন্ধু মন্তব্য করেন যে, যেহেতু বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলির কাতারে রয়েছে তাই স্বল্পোন্নত দেশের সাথেই কোন তুলনাতে যাওয়া শ্রেয়।
আর এই কাতার থেকে বেরিয়ে আসার জন্য উন্নয়ন প্রয়োজন বলে মতপ্রকাশ করেন তিনি।
মন্তব্যটিতে আমি "লাইক" দিয়েছি।
আপুর আরও এক বন্ধু পশ্চিমাদের সাথে তুলনায় যেতে আমাদের হাজার বছর লাগবে বললেন। বললেন আমরা আসলে দুটি আলাদা জগৎে বাস করি। কোন বর্বর জাতির পক্ষে একটি শিক্ষিত জাতির অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যাওয়া কখনও সম্ভব নয় বললেন তিনি।
তার মন্তব্যেও "লাইক" দিতে হল।
এবারে আপু বললেন - দয়া করে উন্নত দেশগুলির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করার জন্য। অর্থনৈতিক বুনিয়াদগুলি সকল দেশের জন্য সমান বললেন তিনি। উনি আবারো বললেন যে বাংলাদেশের মানুষের জীবন যাত্রার মানের সাথে উনি সেগুলোর তুলনা করছেন না। আপু ভারতের দক্ষিন ও পূর্ব অংশ এবং চীনের শহরগুলি ও শিল্পান্চলগুলিতে গিয়ে দেখতে বললেন কিভাবে উন্নয়ন হয় ও হচ্ছে।
মাত্র কয়েকটি দশকের ব্যবধানে এসব স্হানের পরিবর্তনের কথা বললেন উনি। পরিশেষে,অবশ্যই, ঐ দেশগুলির দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রাজনৈতিক নেতাগণ, যারা ছিলেন এবং আছেন, তাদের কথা উল্লেখ করলেন এবং আমাদের এ ব্যাপারে কমতি আছে বলেও মন্তব্য করলেন আপু।
আমি ভাবলাম- কবি এখানেই নীরব। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।