কোম্পানির এক্সপানসন, রোল-আউট চলার সময় যে মানুষগুলোকে খাটিয়ে আজকের অবস্থায় এসেছে গ্রামীণ ফোনের নেটওয়ার্ক, নেটওয়ার্ক পরিণত অবস্থায়এখন তারাই এই কর্পোরেট কোম্পানির কাছে "অপ্রয়োজনীয়" হয়ে গেছে, ফলে এখন চলছে ছাটাই। এবং ছাটাই চলছে এমন একটা সময়ে যখন Grameenphone Profit Climbs 76% to 18.9 Billion Taka আর মোবাইল কোম্পানির বিজ্ঞাপন পেয়ে মুখ বুজে আছে কর্পোরেট মিডিয়াগুলো। এরই মধ্যে বণিক বার্তায় এক ফাকে খবরটি এসেছে, যদিও লাইসেন্স ফি/ভ্যাট ইত্যাদির চাপেই গ্রামীণ ফোন বাধ্য হচ্ছে ছাটাই করতে এরকম একটি সুর সংবাদটিতে আছে, যা ভীষণ আপত্তিকর: ব্যয় কমাতে কর্মী ছাঁটাই করছে গ্রামীণফোন
"ছয় সেলফোন অপারেটরের মধ্যে লাভের মুখ দেখেছে একমাত্র গ্রামীণফোন লিমিটেড। যাত্রার ১৫ বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। গত দেড় দশকে প্রতিষ্ঠানের আয় যেমন বেড়েছে, বেড়েছে ব্যয়ও।
তাই ব্যয়সংকোচনের নীতি নিয়েছে গ্রামীণফোন, যার প্রথম ধাক্কাটি পড়ছে প্রতিষ্ঠানের জনবলের ওপর।
গ্রামীণফোন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। এ জনবল অর্ধেকে নামিয়ে আনতে চায় গ্রামীণফোন। ব্যয় কমাতেই প্রতিষ্ঠানটি এ সিদ্ধান্ত নেয় বলে গ্রামীণফোনের বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ করে জানা গেছে।
জনবল কমানোর প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ বলে মনে করেন গ্রামীণফোনের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা (সিসিও) কাজী মনিরুল কবির।
তিনি বলেন, ‘গ্রামীণফোন এখন দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেশকিছু বিভাগে অতিরিক্ত জনবল রয়েছে বলে প্রতিষ্ঠান মনে করছে। এ কারণে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই অতিরিক্ত এ জনবল কমিয়ে আনা হচ্ছে। সারা পৃথিবীতেই বড় বড় প্রতিষ্ঠানের বাড়তি জনবল কমানোর নজির আছে।
’
গ্রামীণফোন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে একটি পরামর্শক (কনসাল্টিং) প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের খরচ কমাতে বেশকিছু পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ দেয়। এর মধ্যে জনবল ছাঁটাইয়ের বিষয়টিও রয়েছে।
গ্রামীণফোনের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৯ সালে বেতন-ভাতা বাবদ প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় হয়েছে ৪৪৯ কোটি ১ লাখ ৮৬ হাজার ৫১০ টাকা। ২০১০ সালে এ খাতে খরচ হয় ৬২৭ কোটি ১৯ লাখ ৩৫ হাজার ৪৪০ টাকা। ২০১১ সালে তা বেড়ে হয় ৬৯১ কোটি ১০ লাখ ৬৩ হাজার ২৫২ টাকা।
অর্থাত্ ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানের জনবলের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় আগের বছরের চেয়ে ১৭৮ কোটি ১৭ লাখ ৪৮ হাজার ৯৩০ টাকা বেড়েছে। ২০১০ সালের তুলনায় গত বছর এ ব্যয় বেড়েছে ৬৩ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার ৮১২ টাকা।
সামগ্রিকভাবে সাধারণ ও প্রশাসনিক ব্যয় বাড়ছে গ্রামীণফোনের। ২০০৯ সালে এ খাতে ব্যয় ছিল ১ হাজার ১৭৪ কোটি ৬৭ লাখ ২১ হাজার ৫৬৮ টাকা। ২০১০ সালে ছিল ১ হাজার ৮৫৮ কোটি ৩১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৩৩ এবং ২০১১ সালে ১ হাজার ৮৩১ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার ২৯০ টাকা।
গত বছরের মাঝামাঝি থেকে বাড়তি ব্যয় কমিয়ে আনার দিকে নজর দেয়ায় ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ ও প্রশাসনিক ব্যয় আগের বছরের চেয়ে কিছুটা কমে আসে। ব্যয়সংকোচনের অংশ হিসেবে শুরু হয়েছে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের আকার ছোট করা। একই সঙ্গে কোনো কোনো বিভাগের একত্রীকরণও করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
জানা গেছে, চলতি বছর গ্রামীণফোন পরিচালন ব্যয় ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এর অংশ হিসেবে জনবল কমিয়ে বিভিন্ন বিভাগের আকার ছোট করা হবে। প্রতিষ্ঠানের ব্যয় সংকোচনের ধারাবাহিকতায় গত বছর থেকে বেশকিছু বিভাগে শুরু হয় বিদ্যমান কর্মীদের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া। মূল্যায়নশেষে কম নম্বরপ্রাপ্তদের ছাঁটাইয়ের তালিকায় রাখছে গ্রামীণফোন। এ ক্ষেত্রে তাদের নিম্নতর কোনো পদে নিয়োগ বা অন্য বিভাগে বদলির সুযোগের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে বলা হচ্ছে, যার কোনোটিই সম্মানজনক না হওয়ায় অনেকেই শেষ পর্যন্ত চাকরি ছেড়ে দেন।
সরাসরি ছাঁটাইয়ের কারণে উদ্ভুত জটিলতা এড়াতে এ ধরনের সুযোগ রাখা হচ্ছে বলে প্রতিষ্ঠানটির সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে ২০০৯ সালে একসঙ্গে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কর্মী ছাঁটাই করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে গ্রামীণফোন। ছাঁটাই হওয়া এসব কর্মীর প্রতিবাদ-আন্দোলনের মুখে তাদের পুনর্নিয়োগের ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। জানা গেছে, বর্তমানে চলতে থাকা ছাঁটাই প্রক্রিয়ায় আবারও এ ধরনের দাবি-দাওয়া এড়াতে চাইছে গ্রামীণফোন।
সম্প্রতি গ্রামীণফোনের বিলুপ্ত হওয়া একটি বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিষ্ঠানের আইনি কাঠামোর আওতায় নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ছাঁটাই করা হচ্ছে। মানবিক দিক বিবেচনায় এটি অবশ্যই অনৈতিক।
ছাঁটাই হওয়ার কারণে অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ পেতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের।
প্রসঙ্গত, গত বছর টুজি (দ্বিতীয় প্রজন্ম) লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে গ্রামীণফোনের। লাইসেন্স নবায়ন বাবদ প্রতিষ্ঠানটির দিতে হবে ৩ হাজার ২৪১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর ৪৯ শতাংশ এরই মধ্যে পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বাকি টাকাও দিতে হবে চলতি বছরই।
এদিকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) করা এক অডিটের ভিত্তিতে গত বছরের ৩ অক্টোবর গ্রামীণফোনের কাছে ৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকা দাবি করে। এ নিয়ে আদালতে যায় গ্রামীণফোন। বিষয়টি বর্তমানে বিচারাধীন।
দেশে থ্রিজি প্রযুক্তির সেবা দিতে এরই মধ্যে খসড়া নীতিমালা করেছে বিটিআরসি। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা এ নীতিমালা অনুযায়ী চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
থ্রিজিসেবা দিতে ন্যূনতম ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিতে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে। খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, লাইসেন্স নবায়ন, থ্রিজিতে বিনিয়োগ, রাজস্ব বোর্ডের দাবি পূরণসহ নানা খাতে বড় অঙ্কের খরচ অপেক্ষা করছে প্রতিষ্ঠানটির। তাই সম্ভাব্য ব্যয় মেটাতে প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব খরচ কমানো শুরু করেছে। "
----------------------------------------------------
শ্রমিক/কর্মচারি/কর্মকতা ছাটাই হলে আন্দোলন হওয়াই স্বাভাবিক, কিন্তু মোবাইল কোম্পানিতে কর্মরতদের কি সংগঠন আছে? মোবাইল কোম্পানিগুলো পরস্পরের প্রতিযোগী হলেও তাদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠনিক কাঠামো আছে কিন্তু মোবাইল কোম্পানির কর্মরত শ্রমিক-কর্মকর্তা-প্রকৌশলীরা তো পরস্পরের প্রতিযোগী নয় বরং বন্ধু? তাদের কোন সংগঠন কেন নেই যেখান থেকে কর্পোরেট মালিকদের ছাটাইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে উঠতে পারে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।