আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাগরিক সাবধান: প্রতারকের কাছ থেকে

অরুণালোক রাত্রি তখন দু’টো। চারিদিকে নিস্তব্ধ নিঝুম। কোন জনমানুষের জেগে থাকার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে নিশিজাগা পাখিরা প্রহর ঘোষণা করছে। পাখির শব্দ থেমে যেতেই আবারও পরিবেশটা ঝিম ধরে যাচ্ছে।

সরকারি চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত আবু তোরাব খান স্বপন তখন মাত্র হাতের বইটা বিছানার এককোণে নামিয়ে রেখে ঘুমের ইন্তেজাম করছেন। উনার রাত্রি জেগে বই পড়ার অভ্যাস আছে। এমনি সময় হঠাৎ মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো। চোখ থেকে নামিয়ে রাখা চশমাটা তিনি আবারও চোখে এটে নাম্বারটা শনাক্ত করতে চাইলেন। কিন্তু আননোন নাম্বার দেখে একটু কৌতুহলী হলেন।

তার ফোনগুলো সাধারণত রাত দশটার মধ্যেই সারা হয়ে যায়। এতো রাতে স্মরণ করার মতো কেউ কোথাও নেই তার। তবে কে ফোন করতে পারে? তাকে যে নাম্বারটি থেকে কল দেওয়া হয়েছে, সে নাম্বারটা হচ্ছে- ০১৭৬০৪৩৫৯৭৬। ভাবতে ভাবতেই কল রিসিভ করলেন- ‘হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম’। ওপাশ থেকে খুব ভারি কণ্ঠে উচ্চারিত হলো- ‘ওয়ালাইকুমুস সালাম’।

কেমন আছিস? -জী, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আপনি কে বলছেন? ঠিক চিনতে পারলাম না। # পারবি কেমনে? (ভাষাটা অকস্মাৎই আঞ্চলিকতার ছোঁয়া এসে গেলো) আমি তোরে চিনি। - জী, কিন্তু আমি তো আপনাকে চিনতে পারছি না। দয়া করে আপনার নামটি বলবেন? (একটু ইতস্তত করে-) মানে আপনার নাম্বারটি আমার সেভ করা নেই।

কিছু মনে করবেন না। # আমি ওলির দরবার থেইক্যা কইতাছি। - জী? কোন অলির দরবার? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। # তোর বুঝনের কাম নাই। যুদি ভাল চাস তো............ - (রেগে গিয়ে) থামুন আপনি! তুই তুই করে কথা বলছেন কেন? # এইটাই নিয়ম।

আমাগো কাউরে আপনে কওয়ার নিয়ম নাই। আমরা তুই তুই কইরাই কতা কই। -(রাগি কণ্ঠে) ফাজলামু করার জায়গা পান না, নাহ? এতো রাতে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছেন কেন? (রাগের চোটে মোবাইল রেখে দিলেন)। ভোরবেলা। সাড়ে পাঁচটা বাজে।

চারদিকে আলো ফোটেনি তখনও। উনার মোবাইলটা বেজে উঠলো। ঐ একই নাম্বার থেকে। অশালীন ভাষায় একই কণ্ঠ থেকে বললো- অই ব্যাটা, কাইল রাইতে ফোন রাইখা দিলি ক্যান? তোর লগে তো কতা শ্যাষ অয় নাই। এতো ভোরে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় উনি তিতি বিরক্ত হলেও ভদ্রভাষায় বলার চেষ্টা করলেন- ‘ভাই, কেন খামাখা বিরক্ত করছেন।

আমি তো আপনাকে চিনি না। অপর পাশ থেকে সেই কণ্ঠ বললো- ‘শোন, যা কই মন দিয়া শোন। আমি ওলির দরবার থেইকা কইতাছি। আমার কতা মাইনা চললে তোর ফায়দা অইবো। স্বপনের আর ধৈর্য হলো না।

উনিও চেঁচিয়ে বললেন, রাখেন আপনার ফায়দা! আপনি কোথায় ফোন করেছেন, জানেন? আপনার এই নাম্বার আমি র‌্যাবের কাছে দিয়ে দেবো। বাটপারি করার জায়গা পান না, নাহ্? ওপাশ থেকে কণ্ঠটি খিস্তি করে উঠলো-, ‘অই কুত্তার বাচ্চা, ..... পোলা, র‌্যাবরে আমার নম্বর দিবি? দে না, তোর র‌্যাব আমার ....ই ছিঁড়বো। তারপর বিনা নোটিশে মোবাইল অফ করে ফেললো। ঘটনাটি স্বপনের মনে দারুণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। যারা সাধারণত বিশ্রি কথা শুনে অভ্যস্ত নন, তারা ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন।

নাম্বারটি তিনি আমাকে দিয়েছেন গত সপ্তাহেই। আমি তারপর থেকে নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছি মোবাইলে ঐ লোকটার সাথে কথা বলার জন্য। কিন্তু পারছি না, নাম্বারটি এখনও বন্ধ। শুধু তাই না, গত মাস তিনেক আগে আমার এক পরিচিত লোকের সাথেও রাত প্রায় দু’টোর সময় একইভাবে মোবাইল কল এসেছে কিন্তু উনার সাথে কথাবার্তা বলার পর গতিক সুবিধের নয় দেখে পরে আর কল করে নি। কিছুদিন আগে এ ধরনের প্রতারকচক্র নির্দিষ্ট একটা মোবাইল কোম্পানীর লোক সেজে আমার পরিচিত ভদ্রলোকটিকে বলে, যদি ওই নাম্বারে (যে নাম্বার থেকে কলটি করা হয়েছে) বারো হাজার টাকা পাঠানো হয়, তবে কোম্পানি তাকে তিনলাখ টাকার উপহার পাঠাবে।

আমার পরিচিত ঐ ব্যক্তি ব্যাপারটি বুঝতে পেরে বলেছেন, “ঠিক আছে, যদি কোম্পানি আমাকে তিন লাখ টাকা দেন তো, টাকা পাওয়ার পর আমি আপনাকে আপনার চাহিদা মোতাবেক টাকা পাঠিয়ে দেবো। আগে আপনার কোম্পানির দেওয়া উপহার পাবো, পরে আমারটা পাঠাবো। কি, রাজী? এ ধরনের উত্তর শোনে পরে আর তার সাথে কোন যোগাযোগ করা হয় নি। বিভিন্ন পীরের দরবারের কথা বলে, অলি আউলিয়া সেজে, বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির লোক সেজে আমাদের দেশে এক শ্রেণির প্রতারক সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে চলেছে। এদের প্রতারণার স্বীকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে এমন অনেক খবর আমরা পত্রিকার পাতায় পড়েছি।

এ ধরনের কল যারা করে, তারা সাধারণত মোটা অঙ্কের টাকা চেয়ে বলে যে, যদি টাকা দেওয়া হয় তবে দিন সাতেকের মধ্যেই গুপ্তধন পাবে কিংবা অন্যকোন সুবিধা। যাদের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই ইতোমধ্যে প্রতারিত হয়েছেন। তাই বলছি, প্রিয় ভাইবোনেরা, মোবাইলে এ ধরনের কথা শুনে কেউ যেন টাকা পয়সা হাতছাড়া না করেন। এ প্রসঙ্গে আপনাদের জ্ঞাতার্থে বলছি- ১। যে নম্বর থেকে কল করেছে, সে নাম্বারটি কলের সময়, কথা বলার মোট সময় ইত্যাদি টুকে রাখুন ২।

সম্ভব হলে কলকারীর পরিচয়টি কৌশনে জেনে নিন। কোথা থেকে কল করেছে, জানার চেষ্টা করুন। ৩। ভাব দেখান যে, আপনি তার কথা বিশ্বাস করেছেন। তারপর তাকে আপনার পরিচিত কোন স্থানে দেখা করতে বলুন, যাতে আগে থেকেই আপনি একটা ব্যাকআপ টিম রেডি করে রাখতে পারেন।

ভুলেও কলকারির বর্ণিত স্থানে একা কখনোই দেখা করবেন না। ৪। যে নাম্বার থেকে কল করা হয়েছে, নাম্বারটি নিকটস্থ থানায় জানিয়ে দিন। পুলিশ সদস্যারা তখন কল ট্রাকিং করে অপরাধিকে ধরতে সক্ষম হবে। ৫।

এ ধরনের কলগুলো সাধারণত হারিয়ে যাওয়া, খোয়া যাওয়া বা চুরি যাওয়া মোবাইল, নিবন্ধনবিহীন মোবাইল নাম্বার থেকে করা হয়ে থাকে। তাই আপনার যদি কোন মোবাইল সেট সিম বা রিম কার্ডসহ হারিয়ে গিয়ে থাকে, কিংবা চুরি বা খোয়া গিয়ে থাকে, তবে আপনি যে কোম্পানির সিম ব্যবহার করছেন, তাদের জানিয়ে দিন। ৬। মনে রাখবেন, পুলিশ আমাদের সত্যিকারের বন্ধু, এ বন্ধুরাই বিপদের সময় আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। তাই ইতস্তত: না করে, আপনার মোবাইল সেট যদি কোন কারণে খোয়া/চুরি/হারিয়ে গিয়ে থাকে তবে থানা প্রশাসনকে জানান, কাজে লাগবে।

আপনার মোবাইল নম্বরটি যদি নিবন্ধন না করে থাকেন, তবে খুব শিঘ্রী নিবন্ধন করান। জানেন তো, নিবন্ধন করতে গেলে কী কী দরকার পড়ে! জেনে না থাকলে, যারা নিবন্ধন করিয়েছেন, বা কোম্পানির লোকজনের কাছ থেকে জেনে নিন। আশা করি, কোন প্রতারকের চাটুকারিতায়, লোভে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.