অনলাইন সিকিউরিটি কনসালট্যান্ট ও সফটওয়ার অ্যানালিস্ট । অপেক্ষায় আছি কখন সময় থমকে যায়.... সূর্যের গায়ে এক প্রান্তে কালো একটা বিন্দু। স্থির নয়। ধীরে ধীরে যেন হেঁটে চলেছে অন্য প্রান্তের দিকে।
বিন্দুটি হল শুক্রগ্রহ, যা কিনা শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা বলেও পরিচিত।
আগামিকাল, বুধবার ভোর থেকে কয়েক ঘণ্টা ধরে সূর্যের বুকে তার ‘চলনের’ (ট্রানজিট অফ ভেনাস ওভার দ্য সান) ওই বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য অবলোকনের সুযোগ মিলবে। এমনটা ফের ঘটবে ২১১৭-র ১১ ডিসেম্বর, অর্থাৎ সাড়ে ১০৫ বছর বাদে। শেষ বার হ পৃথিবী আর শুক্রের কক্ষপথ ঠিক একই তলে নয়। শুক্রগ্রহের কক্ষপথ পৃথিবীর সাপেক্ষে প্রায় ৩ ডিগ্রি বাঁকা। তাই প্রতিবছরই সূর্য, শুক্র আর পৃথিবী
এক সরলরেখায় আসেনা ।
সূর্য-শুক্র-পৃথিবী প্রায় এক সরলরেখায় অবস্থান করার দরুণ ঘটনাটি ঘটবে। যেমন ভাবে সূর্য-চাঁদ-পৃথিবী প্রায় এক সরলরেখায় এলে সূর্যগ্রহণ হয়, সূর্য ঢাকা পড়ে যায় চাঁদের আড়ালে। অন্তত মানুষের চোখে তেমনই মনে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে চাঁদের বদলে শুক্রগ্রহ থাকলেও সূর্যগ্রহণ হবে না।
এই জ্যামিতি একটা মজার নিয়ম মেনে চলে।
৮ বছর পর পর দুইটি ট্রানজিট পর পর হয়। পরবর্তী জোড়া ট্রানজিট ঘটে শতাধিক বছরের দুরত্বে। সর্বশেষ এরকম জোড়া ঘটেছিলো ১৮৭৪/১৮৮২ সালে। আমরা অপেক্ষা করছি ২০০৪/২০১২ সালের জোড়ার জন্য। পরের জোড়া আসবে ২১১৭/২১২৫ সালে! পারমাণবিক যুদ্ধ কিংবা পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে যদি বিলুপ্ত না হয়ে যাই, তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের সভ্যতা ওই ঘটনা পর্যবেক্ষন করবে।
শেষবার আমরা শুক্রের ট্রানজিট দেখেছিলাম ২০০৪-এর ৮ জুন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবী থেকে শুক্রের দূরত্ব চাঁদের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় ভূপৃষ্ঠ থেকে শুকতারা বা সন্ধ্যাতারাকে চাঁদের তুলনায় অনেক ছোট দেখায়। আর তাই সূর্যের উপরে ‘চলনের’ সময়ে বিন্দুবৎ শুক্র সূর্যের ব্যাসের মাত্র ১/৩২ ভাগ ঢাকতে পারে, পুরোটা নয়। ফলে সূর্যগ্রহণও হয় না।
কাল কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে ভোর ৪টে ৫২ মিনিট থেকে সকাল ১০টা ২১ মিনিট পর্যন্ত দৃশ্যটি দেখা যাবে।
উত্তরবঙ্গে ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোয় আরও আগে থেকে, কারণ সেখানে সূর্যোদয় হবে আগে। তবে বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারিও দিচ্ছেন, খালি চোখে তো নয়ই, এক্স-রে প্লেট কিংবা সাধারণ ঘষা কাচের ভিতর দিয়েও সূর্যের দিকে তাকাবেন না। চোখের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। শুক্রের চলন দেখতে হলে ১৪ নম্বর শেডের ওয়েল্ডিং গ্লাস, অ্যালুমিনাইজড মাইলার ফিল্টার অথবা পলিমার কোটেড লেন্স ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
পজিশনাল অ্যাস্ট্রনমি সেন্টার-সহ কয়েকটি সংস্থা আমজনতাকে দৃশ্যটি দেখাতে উদ্যোগী হয়েছে।
সঞ্জীববাবু জানান, বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে সংস্থার সেক্টর ফাইভের অফিসের ছাদে টেলিস্কোপের মাধ্যমে শুক্রের চলন দেখানো হবে। বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়াম (বিআইটিএম)-এর টেকনিক্যাল অফিসার গৌতম শীল বলেন, কাল সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে তাঁরা এটি দেখাবেন। টেলিস্কোপের পাশাপাশি অডিটোরিয়ামেও আলাদা ব্যবস্থা থাকছে। কসবা রাজডাঙার জগদীশ বোস ন্যাশনাল সায়েন্স ট্যালেন্ট সার্চের ছাদে প্রদর্শনের আয়োজন করেছে স্কাই ওয়াচার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লবকুমার দে জানান, তাঁদের টেলিস্কোপ সকাল ছ’টা থেকে দশটা পর্যন্ত তৈরি থাকবে।
সাধারণ মানুষ যাতে বিরল মহাজাগতিক ঘটনাটির সাক্ষী হতে পারেন, পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চও তার বন্দোবস্ত করেছে।
উত্তরবঙ্গ যেহেতু ইদানিং সময়ে মহাজাগতিক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠছে তাই সেখানকার মানুষের চাহিদাটাও একটু বেশি। সেইজন্য পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের তরফে উত্তরবঙ্গেই দুইদিন আয়োজন করা হলো বিশেষ কর্মশালার। চোখে সৌর চশমা দিয়ে কী করে সাধারণ মানুষেরা ৬ই জুনের শুক্রের সরণ দেখবেন তা নিয়েই বিজ্ঞান মনস্কদের দিন দুই মালদহে প্রশিক্ষণ দিয়ে গেলেন বিজ্ঞান মঞ্চের বিশিষ্ট জনেরা। তবে উত্তরবঙ্গেই নয় কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গেও একইভাবে শুক্রগ্রহের সরণ নিয়ে নানান কর্মশালা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞান মঞ্চের সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী।
বিজ্ঞান মঞ্চের সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী জানান, আগত ৬ই জুনের জন্য সারা বিশ্বের মানুষ অপেক্ষা করছে। ঐদিন সূর্য উদয় হবে ভোর ৪টা ৫৩মিনিটে। সূর্যোদয়ের কিছু আগে থেকে শুরু হবে মহাজাগতিক পরিক্রমণ বা ট্রানজিট। তবে সূর্যের ঐ খণ্ড গ্রহণ দেখতে হলে অবশ্যই সৌর চশমা পড়তে হবে। পরিক্রমণ চলবে বেলা ৯টা ৫২মিনিট পর্যন্ত।
অন্যান্য সূর্যগ্রহণের মতো এবারেও বিজ্ঞান মঞ্চ সৌর চশমা তৈরি করবে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য কোষাধ্যক্ষ অরুণাভ মিশ্র।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের মালদহ জেলা সম্পাদক সুনীল দাস জানিয়েছেন, সারা রাজ্যের মানুষ, বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীরা যাতে শুক্রের সরণ পর্যবেক্ষণ করতে পারে তারজন্য সংগঠনের তরফে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়ে গেছে। ২৪ এবং ২৫শে মার্চ জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা কার্যালয়ে রাজ্য কমিটির উদ্যোগে উত্তরবঙ্গের ৬টি জেলার বিজ্ঞান কর্মীদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হয়। প্রশিক্ষক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শঙ্কর চক্রবর্তী, অধ্যাপক গৌতম বিশ্বাস, অধ্যাপক অরুণাভ মিশ্রসহ অন্যান্যরা। মালদহ জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের উদ্যোগে আয়োজিত মালদহ শহরের অতুল মার্কেটে সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে দুদিনের কর্মশালায় ৫১জন বিজ্ঞানী অংশগ্রহণ করেছেন।
আগামী ৬ জুন সূর্যের উপর শুক্রগ্রহের সরণ দেখাতে নানা কর্মসূচি নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের দার্জিলিং জেলা শাখা। ওই দিন শিলিগুড়ি ও তার লাগোয়া এলাকা জুড়ে বিজ্ঞান মঞ্চের উদ্যোগে একতিয়াশাল স্কুল লাগোয়া ময়দান, ফুলবাড়ি ব্যারাজ, পোড়াঝাড়, ভুটকি, সুকনা, বাগডোগরা, নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ি, তিনধারিয়া, কার্শিয়াং, - প্রভৃতি স্থানে ঐ বিরলদৃশ্য পর্যবেক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।