আগামী 6 ই জুন ভোরে কালো বিন্দুর মত প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘন্টা ধরে সূর্যের বুকে হাঁটতে হাঁটতে শুক্র মিলিয়ে যাবে। যারা বিরল এই মহাজাগতিক ঘটনাটি না দেখবেন তারা অবশ্যই আফসোস করবেন। কারন এই ঘটনার পুনরাবৃক্তি হবে আবার 2117 সালের 11 ই ডিসেম্বর। ঠিক 105 বছর পরে। শুক্রের এই হাঁটাকে জ্যোতির্বিদ্যার ভাষায় বলে সংক্রমন (Transit)।
এই সংক্রমনের একটা হিসাব আছে। যেমন-প্রথমে 8 বছর,এর পরে 121 বছর 6 মাস,তার পরে আবার 8 বছর,তার পরে আবার 105 বছর 6 মাস,তার পরে আবার 121 বছর 6 মাস এই ভাবে পর্যায়ক্রমে শুক্র গ্রহের সংক্রমন ঘটে। কাজেই এটা একটি দূর্লভ দৃশ্য। যারা 7 ই জুন 2004 সালে এই সংক্রমন দেখেছেন তাদের জন্য পুনরায় এই সুযোগ এলো।
সৌ্রজগতে শুধু শুক্র ও বুধ গ্রহের এই রকম সংক্রমন ঘটে।
কারন এই দুটি গ্রহের কক্ষপথ পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। সূর্যের উপর বুধের এই রকম সংক্রমন প্রথম দেখেন ফরাসি জ্যোতির্বিদ পিয়ের জ্যাসেন্ডি 1631 সালে। আর শুক্রের সংক্রমন প্রথম দেখেন দুই ব্রিটিশ জ্যোতির্বিদ জেরেমিয়া হর্ক ও উইলিয়াম ক্র্যাবট্রি 1639 সালে।
গ্রহের সংক্রমন (Transit): মাঝে মাঝে সৌর চাকতির উপর দিয়ে নিম্নতর গ্রহদের কালো বিন্দুর মত চলে যেতে দেখা যায়,একে বলা হয় গ্রহদের সংক্রমন (Transit)। এটি একটি বিরল ঘটনা, 2004 সালে শুক্র গ্রহের এই রকম একটি সংক্রমন দেখা গিয়েছিল।
আর এটি তখনই ঘটে, যখন নিম্নতর গ্রহগুলি পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে একই সরলরেখায় থাকে। কিন্ত গ্রহদের কক্ষপথের তল ও পৃথিবীর কক্ষপথের তল সামান্য কোন করে থাকে,সুতারং পাত বিন্দু দুটি ছাড়া কখনোই একটি গ্রহ সূর্য ও পৃথিবীর একই সরল রেখায় থাকে না। আবার গ্রহটি পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এলেই এ ঘটনা ঘটবে না,শুধুমাএ গ্রহটি নিম্নতর সংযোগ এবং পাত বিন্দুতে থাকলেই এই ঘটনা ঘটবে।
এই ধরনের ঘটনা ঘটে ঠিকই কিন্তু তা বেশী বার নয়। কক্ষপথের পাত বিন্দুর সংযোগকারী রেখার অবস্থানের জন্য শুক্রের সংক্রমন যে বছরে হয় সেটি সেই বছরের জুন কিংবা ডিসেম্বরের শুরুর দিকে।
যেমন-8 ই ডিসেম্বর 1874 ও 6 ই ডিসেম্বর 1882 সালে শুক্রের সংক্রমন হয়েছিল।
জ্যোতির্বিদদের কাছে শুক্রের এই সংক্রমনের ব্যাপারটা খুবই মূল্যবান। এই সময় তাঁরা সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যেকার দূরত্ত খুব ভালো ভাবে পরিমাপ করতে পারে। এই পরিমাপ করার জন্য পথিবী পৃস্টের উপরের দুটি স্থান থেকে (এই স্থান দুটি একটি অপরটি থেকে বেশ দূরে অবস্থিত)একই সময় শুক্রের সংক্রমন লক্ষ্য করা হয়।
এরপর এই দুটি স্থানের মধ্যেকার কৌণিক দূরত্ত থেকে সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যেকার দূরত্ত মাপা হয়।
শুক্রের সংক্রমনের সময় শুক্রের আবহাওয়া মন্ডলের অনেক তথ্য পাওয়া যায়। যখন শুক্র পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে আসে তখন শুক্রের আবহাওয়া মন্ডল দিয়ে কিছু সূর্যরশ্নি বেরিয়ে আসে।
সেই সময় শুক্রের এই আবহাওয়া মন্ডলকে অল্পালোকিত বলয়ের মত দেখায়। এই সুক্ষ ও চমকপ্রদ দৃশ্যটি তৈরী হয় ঠিক সেইভাবে যেভাবে গোধূলীর সৃস্টি হয়। এই বলয়টির বিস্তার বা উজ্জলতা সব সময় এক থাকে না।
সংক্রমনকালে শুক্র যখন নিম্নতর সংযোগ অথবা ঐ জায়গার খুব কাছাকাছি থাকে তখন শুক্রের গোধূলী বলয়ের বিস্তার ও উজ্জলতা শুক্রের চারিপাশে সমানভাবে দেখা যায়।
এই অবস্থা থেকে শুক্র যত সরে যেতে থাকবে ততই চঁন্দ্রকলার মত শুক্রের দৃশ্যমান অংশ কমবে। এইভাবে যখন শুক্র অর্ধচন্দ্রের রুপ নেবে তখন এই বলয়ের বিস্তার খুব সরু এবং সুচালো হবে।
সংক্রমন কবে কখন ঘটবেঃ 6 ই জুন বাংলাদেশ সময় রাত 4.00 টার সময় শুক্র সূর্যের সামনে আসবে। কিন্ত তখন দেখা যাবে না,কারন তখন সূর্যোদয় হবে না।
এই সংক্রমন শুরু হবার প্রায় ঘন্টা খানেক সময় পরে (ভোর 5.15 মিনিটে) আমরা এই সংক্রমন দেখতে পাব। এবং এটি চলবে 11.00 টা পর্যন্ত। সূর্যের বুকে শুক্রেরের চাকতির ব্যাস হবে 58 আর্ক সেকেন্ড।
এই মহাজাগতিক দৃশ্যটি দূরবীন বা বাইনোকুলার ছাড়াই খালি চোখে যাবে। তবে সাবধান খালি চোখে সূর্যের দিকে ভুলেও তাকাবেন না।
সরাসরি সূর্যের দিকে তাকালে চোখের মারাক্তক ক্ষতি হতে পারে। দেখার জন্য এক্স রে ফিল্মের একদম কালো অংশ অথবা সোলার ফিল্টার,অথবা ওয়েলডিং গ্লাস দিয়ে দেখবেন। আর যারা দূরবীন অথবা বাইনোকুলার দিয়ে দেখতে চান তারা অবশ্যই সোলার ফিল্টার ব্যাবহার করবেন।
যা দেখতে পাবেন তা হলো গোলাকার কালো একটি চাকতির আকারে শুক্র গ্রহ সূর্যের একপাশ দিয়ে অন্য পাশে চলে যাবে। কাজেই তৈরী হয়ে যান বিরল এই মহাজাগতিক দৃশ্য দেখার জন্য।
2004 সালে শুক্রের সংক্রমন হয়েছিল সূর্যের নিচের অংশ দিয়ে,এবারের সংক্রমনে শুক্র সূর্যের উপরের অংশ (সূর্যের পূর্ব-উওর কোন)দিয়ে যাবে।
যারা ছবি তুলতে চান তারা 6,7,8,10,14, ইঞ্চির অটো গাইডেড দূরবীনের সাথে ক্যাননের EOS সিরিজের বা অন্য যে কোন ভাল মানের ডি এস এল আর ক্যামেরা সংযোগ করে Exposure 1/2000 second @ f/6.3 ISO- 1600 এই সেট আপে ছবি তুলতে পারেন ভালো ছবি পাবেন।
শুক্রের এই সংক্রমনের ছবিটি 2004 সালে তোলা।
এই লিংক খুলুন শুক্রের সংক্রমনের ভিডিও কিভাবে করবেন তার নোট দেয়া আছে।
Click This Link
প্রথম ম্যাপটি লক্ষ্য করুন এ্যানিমেশন করা টাইম জোন দেয়া আছে।
ম্যাপ গুগল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।