আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এবং আমাদের মহান জাতীয় সংসদের মর্দামি

সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!! বাংলাদেশে যে একটা সংসদ আর এতে কিছু মরদ সদস্য হিসেবে কার্যরত আছে তা বুঝা গেল জনৈক বুদ্ধিজীবী কর্তৃক তাদের নিয়ে কিছু কটু অথচ সত্য মন্তব্যের প্রেক্ষিতে। এতদিন জানতাম সাংসদ হিসাবে টিআর, কাবিখার টাকা লুটপাট, সন্ত্রাসী পালন, জমি, হাওড় দখলই এদের কার্যপরিধির আওতাধীন। সংসদে ভিতরে এদের কোন দায়িত্ব নেই। আবাল বিরোধী দলতো সংসদেই যায়না। আর সরকারি দল ২২০ এর উপরে সদস্য নিয়ে কোরাম পূরণ করতে পারেন না।

মন্ত্রী মহোদয়রা সংসদে উপস্থিত থাকেন না, থাকলেও বসে বসে ঝিমান। সেই ঝিমানো সংসদ হঠাৎ কালকে জেগে ওঠল। শুধু জেগে ওঠেনি, পুরা মরদ হয়ে জেগেছে। আর মর্দামি দেখাতে গিয়ে এলান করল যে বুদ্ধিজীবী তাদেরকে নীতিহীন বলে গর্হিত অপরাধ করছে তাকে অবশ্যই এ সত্য বলার জন্য সংসদ এসে ক্ষমা চাইতে হবে। বাহ! এই না হলে মরদ।

অবশ্য গত সাড়ে তিন বছরে এই সংসদ আর এর সদস্যদের মর্দামি আমরা অনেক দেখেছি। সংসদীয় ব্যবস্থায় সংসদের ক্ষমতা আর প্রশাসনের উপর প্রভাব বিস্তারের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হচ্ছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো। বেশি উদাহরণের প্রয়োজন নেই। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক যিনি নিজে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন তিনি নিজেই তাঁর মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির কোন বৈঠকে উপস্থিত থাকেন না। আজ পর্যন্ত আমাদের সংসদ সদস্যরা ঐ মহান মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাই এই দায়িত্বে অবহেলা আর গাফিলতির জন্য কোন ব্যবস্থা বা ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছেন কিনা জানা নেই।

অন্যান্য মন্ত্রণালয়গুলোর স্থায়ী কমিটিগুলো ক্ষমতা ও কার্যক্রমও মোটামুটি এই রকমের। আপনি যদি পরিসংখ্যান নেন তাহলে আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, স্থায়ী কমিটিগুলোর ৯৯% সুপারিশ/সিদ্ধান্তই মন্ত্রণালয়গুলো ধর্তব্যে নেয় না। আমাদের মরদ সংসদ বা এর সদস্যরা এসব অবহেলার বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নিয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমাদের মরদ সংসদ অবশ্য এর আগেও এই বুদ্ধিজীবীর মতো অনেককে ডেকে এনে তার মর্দামি দেখাতে চেয়েছিল। ‘ছাত্র ও শিক্ষক’ নিপীড়নের অভিযোগে ১/১১ এর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হর্তাকর্তাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বহুবার ডেকেছিলেন।

তারা কেউই উপস্থিত হননি। মরদ সংসদ তাকে এভাবে ইগনোর করার জন্য এ বেয়াদবদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেশে ও বিদেশের কোন সংস্থাকে বলেছে কিনা বা বললেও এটা কতটুকু কার্যকর হয়েছে তা আমার মতো আমজনতার জানা নেই। গণতন্ত্রে সার্বভৌমত্ব বা মর্দামি একমাত্র জনগণের ভোটে নির্বাচিত পার্লামেন্টেরই থাকা উচিত। বিচার বিভাগ তার আওতাধীন কাজ স্বাধীনভাবেই করবে। কিন্তু এই স্বাধীনতা দেখাতে গিয়ে এবং সংবিধানের ব্যাখ্যাকারী বা জনগণের মৌলিক অধিকারের ধুয়া তুলে সংসদের সার্বভৌমত্বে আঘাত করার ধৃষ্টতা বিচার বিভাগ রাখেনা।

এই পার্লামেন্টের সময়কালেই সুপ্রিমকোর্ট পার্লামেন্টের অনেক আইন বাতিল করে দিয়েছে। পার্লামেন্ট যদি মরদ হত তাহলে তাঁকে অবমাননার এই সুযোগ সে কখনই বিচার বিভাগকে দিতনা। পার্লামেন্ট নিজেই এ আইনগুলোতে পরিবর্তন আনতে পারত। সরকারের সে ক্ষমতা ও সুযোগ ছিল। কিন্তু তা না করে সুপ্রিমকোর্টের আজ্ঞাবহ হয়ে এ আইনগুলোতে পরিবর্তন এনে সরকার ও পার্লামেন্ট মুলত মর্দামিটা সুপ্রিমকোর্টের হাতেই অর্পণ করেছে।

যাক, বহুদিন পর তার কিছু সদস্যকে নীতিহীন বলার কারণে আমাদের ঘুমন্ত সংসদের মরদ হওয়ার ইচ্ছা জাগছে। জানিনা এই মর্দামিটা কতদুর প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে গত সাড়ে তিন বছরে এ সংসদের মর্দামির যে নমুনা পাইছি তাতে কোন মরদ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে বা ভায়াগ্রা জাতীয় কিছু সেবন করেই ময়দানে নামাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.