১৮ বছর বয়সে স্বামী সাখাওয়াৎ হোসেনের সঙ্গে রোকেয়া; মাজেদা সাবেরের সৌজন্যে পাওয়া ছবি
“বোন, এই ইংরেজি ভাষাটা যদি শিখে নিতে পারিস, তবে পৃথিবীর এক রত্নভান্ডারের দ্বার তোর কাছে খুলে যাবে। –পরম আদরের বালিকা ভগ্নির সম্মুখে একখানা বড় ছবিওয়ালা ইংরেজি বই খুলিয়া ধরিয়া এই কথা কয়টি উচ্চারণ করিয়াছিলেন, আজি হইতে প্রায় পঞ্চাশ বৎসর আগে এক কিশোর যুবক। কি ছিল কথাগুলির মধ্যে জানি না, কিন্তু এক যাদুমন্ত্রের প্রভাবে বালিকার হৃদয় মুগ্ধ হইল। সেদিন সেই মুহূর্তে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার কাছে জ্ঞান সাধনার যে মন্ত্রে তিনি দীক্ষিত হইলেন, তাহাই হইয়াছিল তাঁহার জীবনের মূলমন্ত্র। ’ (রোকেয়া জীবনী)।
শৈশবে শিশু রোকেয়া খেলার সময়টি আর পাননি। অবরোধের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকতে হয়েছে বলেই তিনি স্বাধীনচেতা হবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কেন অবরোধে থাকতে হবে? যেখানে বড় ভাইরা লেখাপড়া শিখে উচ্চ শিক্ষিত, সেখানে তিনি কেন বঞ্চিত, অবহেলিত থাকবেন। রোকেয়ার জ্ঞানের আগ্রহ ও বুদ্ধিমত্তা দেখে বড় ভাই ইব্রাহিম সাবের ছুটিতে বাড়ি এসে গভীর রাতে, বাড়ির সকলে ঘুমিয়ে গেলে, মোমবাতির আলোয় ছোটবোন আদরের রকুকে লেখাপড়া শেখাতেন। এ যেন রূপকথার এক রাজকন্যা—যিনি জ্ঞানের চর্চায় ব্রতী, যিনি নারীর স্বাধীনতা অর্জনে সংগ্রামী এক সেনাপতি, যিনি পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার মূলোচ্ছেদ করতে এক সাহসী প্রতিবাদি, যিনি ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে ক্ষুরধার লেখনী চালিয়ে সমাজকে জাগার বাণী শুনিয়েছেন-সর্বশেষে যিনি নারীকে জজ-ম্যাজিস্ট্রেট-ব্যারিস্টার-শাসকের আসনে দেখতে চেয়েছেন এবং নারীর ক্ষমতায়ন চেয়েছেন।
আমরা দেখি, রোকেয়ার এই স্বপ্ন সফল হয়েছে, রোকেয়ার এই সংগ্রাম শেষ হয়নি-আজও চলছে। আর এ সফলতার জন্য অবশ্যই আজকের নারীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রোকেয়া যে কাজ করেছেন অনেক সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে-আজকের নারী তো অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে, তাহলে কেন তারা বিচ্ছিন্ন দ্বন্দ্বে-ব্যক্তিস্বার্থে অস্থির?
রোকেয়ার জন্মের একাত্তর বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন রাসসুন্দরী দেবী (১৮০৯-১৯০০) পাবনা জেলার পোতাহিয়া গ্রামের মেয়ে ছিলেন। মাত্র বারো বছর বয়সে বিয়ে হয় ফরিদপুর জেলার রামদিয়া গ্রামে। তাঁর আত্মকথা ‘আমার জীবনে’ তিনি লিখেছেন,–‘আমার অদৃষ্টক্রমে তখন মেয়েছেলেতে লেখাপড়া শিখিত না।
তখনকার লোক বলিত, বুঝি কলিকাল উপস্থিত হইয়াছে দেখিতে পাই। এখন বুঝি, মেয়েছেলেতেও পুরুষের কাজ করিবেক। ’ (অন্তঃপুরের আত্মকথা)।
জ্ঞানের পিপাসা তাঁর মধ্যেও ছিল। “ … এমনকি যদি একখানি লেখা কাগজ দেখিতাম, তাহাও লোকের সম্মুখে তাকাইয়া দেখিতাম না, পাছে কেহ বলে যে লেখাপড়া শিখিবার জন্যই দেখিতেছে।
… এই পুস্তকের পাতা যদি আমার হাতে কেহ দেখে তাহা হইলে নিন্দার একশেষ হইবেক … ঐ তালপাতাটি একবার দেখি, আবার ঐ পুস্তকের পাতাটিও দেখি, আর আমার মনের অক্ষরের সঙ্গে যোগ করিয়া দেখি, আমার সকল লোকের কথার সঙ্গে যোগ করিয়া মিলাইয়া মিলাইয়া দেখি। … মেয়েছেলে বলিয়া কি এতই দুর্দশা। চোরের মতো যেন বন্দী হইয়াই থাকি, তাই বলিয়া কি বিদ্যা শিক্ষাতেও দোষ?” (অন্তপুরের আত্মকথা)।
রাসমনির সময়ে রানী ভিক্টোরিয়া ছিলেন শাসক। কলকাতা শহরে মেয়েদের স্কুল খুলে শিক্ষার উদ্যোগ নেয়া হলেও পুরুষদের তীব্র ও তীক্ষ্ম ব্যঙ্গোক্তি এবং সমালোচনা পড়লে আজকের নারীর কাছে হাস্যকর মনে হবে।
রাসমনি তো গ্রামের ঘরের বউ, ভাইদের মুখে শুনে শুনে অক্ষর শিখছেন, ছেলের লেখা তালপাতা চুরি করে অক্ষর লেখা শিখেছেন। সংসারের হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর গভীর রাতে নিজে নিজেই লেখাপড়া শিখতেন। একটা পুঁথি পড়ার জন্যও তাঁকে সংগ্রাম করতে হয়েছে।
এরপর আমরা দেখতে পাই ঠাকুরবাড়িতে মেয়েদের কী অবস্থা ছিল, “মনুর বিধান এবং মুসলমানী আবরু রক্ষার তাগিদ অনেকদিন থেকেই মেয়েদের একেবারে ঘরের আসবাবপত্রে পরিণত করেছিল। ঠাকুর বাড়িতেও এ নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেনি।
অন্দরমহলে নিঃসম্পর্কিত পুরুষ প্রবেশ করতেন না, বাইরে বেরোতে হলে মেয়েরা চাপতেন ঘেরাটোপ ঢাকা পালকি। … ঘেরাটোপের রঙ দেখে শুধু বোঝা যেত কোন বাড়ির পালকি যাচ্ছে। জোড়াসাঁকো-ঠাকুরবাড়ির পালকির ঘেরাটোপ ছিল টকটকে লাল আর পাড়টা ছিল গাঢ হলুদ। … যাক সে কথা, মেয়েরা পালকি তো চাপতেন কিন্তু যেতেন কোথায়? কালে ভদ্রে গঙ্গাস্নানে যাবার অনুমতি পেলে বেহারারা তো একেবারে পালকি শুদ্ধ জলে চুবিয়ে আনত। এঁটাই ছিল সেকেলে দস্তুর।
এছাড়া তারা মাঝে মাঝে যেতেন আত্মীয়-কুটুম্বের বাড়িতে বিয়ে-পৈতে-অন্নপ্রাশন-শ্রাদ্ধের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানে। তখন পালকি একেবারে উঠোনে গিয়ে দাঁড়াত। জোড়াসাঁকোর পাঁচ নম্বর এবং ছ’ নম্বর বাড়ির মধ্যে দুরত্ব আর কতটুকু, তবু সেখানেও এ বাড়ি-ও বাড়ি যেতে হলে মেয়েদের পালকি চাপতে হত। ” (ঠাকুর বাড়ির অন্দর মহল)
কলকাতার অভিজাত ঘর ঠাকুর বাড়ির অবস্থা ছিল একরকম। পরবর্তীতে এ অবরোধ ভেঙ্গে দেয় বাড়ির বউ ও মেয়েরা।
রোকেয়ার কথা তাঁর লেখায় পাই “সবে মাত্র পাঁচ বৎসর বয়স হইতে আমাকে স্ত্রীলোকদের হইতেও পর্দ্দা করিতে হইত। পুরুষদের অন্তঃপুরে প্রবেশ নিষেধ, সুতরাং তাহাদের অত্যাচার আমাকে সহিতে হয় নাই; কিন্তু মেয়ে মানুষের অবাধ গতি-অথচ তাহাদের দেখিতে না দেখিতে লুকাইতে হইবে। পাড়ার স্ত্রী লোকেরা হঠাৎ বেড়াইতে আসিত; অমনি বাড়ির কোন লোক চক্ষু ইশারা করিত, আমি যেন প্রাণ ভয়ে যত্র তত্র, কখনও রান্নাঘরের ঝাপের অন্তরালে, কখনও কোন চাকরাণীর গোল করিয়া জড়াইয়া রাখা পাটীর অভ্যন্তরে, কখনও তক্তপোষের নিচে লুকাইতাম। বাচ্চাওয়ালা মুরগী যেমন আকাশে চিল দেখিয়া ইঙ্গিত করিবামাত্র তাহার ছানাগুলি মায়ের পাখার নিচে লুকায়, আমাকেও সেইরূপ লুকাইতে হইত। … আমার খাওয়ার খোঁজ-খবর কেহ নিয়ম মত লইত না।
”( অবরোধবাসিনী)
শৈশব-কৈশোরের অভিজ্ঞতা থেকে একজন মানুষের আদর্শময় জীবন গড়ে ওঠে। তার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও লক্ষ্য গড়ে ওঠে। রোকেয়া বুদ্ধিমতি ছিলেন বলেই তাঁর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা অসাধারণ ছিল। অবরোধ, নারী-পুরুষের স্বাধীনতা এবং শিক্ষা-এই বিষয়গুলি, তাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। বড় ভাই ও বোনের কাছে সাধ্যমত শিক্ষা গ্রহণ করতে সমর্থ হন।
তারপর তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও আশেপাশে যারাই ছিল, বা যা কিছু দেখা ও শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল সবকিছু তিনি ধারণ করতে সমর্থ হন। বাঙালি নারীর মানবেতর জীবনযাপনের জন্য তাঁর হৃদয় ব্যথিত হয়েছে, কেঁদেছে-সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি সামনে এগিয়েছেন। তিনি নিজেকে প্রস্তুত করেছেন ভবিষ্যতের প্রতি দৃষ্টি রেখে।
মাত্র ষোলো বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। এই বিয়ে ঠিক করেছিলেন বড় ভাই ইব্রাহিম সাবের যিনি রোকেয়ার প্রতিভাকে সম্মান দিয়েছেন।
আমাদের সৌভাগ্য রোকেয়ার এমন ঘরে বিয়ে হয়নি, যেখানে রাঁধা আর বাড়ার মধ্যে তার জীবন অতিবাহিত হতে পারতো, স্বামী বা তার পরিবারের কঠোর নির্যাতনে নিষ্পেষিত হত তাঁর প্রতিভা। রোকেয়ার স্বামীর বয়স ৪০ বছর, বিপত্নীক, একটি কন্যা সন্তান ছিল। তিনি শিক্ষিত, চাকুরিজীবী, আদর্শবাদী, সৎ, মিতব্যায়ী এবং উদার মনোভাবাপন্ন ছিলেন। অভিজাত ও স্বচ্ছল ব্যক্তি ছিলেন। ভাগলপুরের একজন মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
রোকেয়ার বড় ভাই তার বন্ধু ছিলেন। সাখাওয়াৎ একজন বাঙালি মেয়ে বিয়ে করার আগ্রহ বন্ধু-বান্ধবদের কাছে প্রকাশ করলে তারা ইব্রাহিম সাবেরকে জানায়। তিনি আর কালবিলম্ব না করে রোকেয়ার সঙ্গে তার বিয়ে সম্পন্ন করেন। রোকেয়ার বুদ্ধিমত্তা, শিক্ষার আগ্রহ ও সংসারধর্ম কর্মে সাখাওয়াৎ মুগ্ধ হন। তিনি হয়ে ওঠেন রোকেয়ার প্রধান পৃষ্ঠপোষক, উৎসাহদাতা।
রোকেয়া সাহিত্য চর্চা ও স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন সফলে তিনি সবরকম সহযোগিতা করেছেন। রোকেয়া তাঁর কাছে যতখানি সম্ভব জ্ঞানের সাধনা ও তার কর্মের দীক্ষা নিতে সমর্থ হন। এখানে আমাদের দেখতে আগ্রহ হয়, রোকেয়া কী তার দাম্পত্য জীবনে সুখী ছিলেন ? তিনি নিজেই একটি চিঠিতে লিখেছেন–
“শৈশবে বাপের আদর পাইনি, বিবাহিত জীবনে কেবল স্বামীর রোগের সেবা করেছি। প্রত্যহ ইউরিন পরীক্ষা করেছি, পথ্য রেঁধেছি, ডাক্তারকে চিঠি লিখেছি। দু’বার মা হয়েছিলুম-তাদেরও প্রাণভরে কোলে নিতে পারিনি।
একজন ৫ মাস বয়সে, অপরটি ৪ মাস বয়সে চলে গেছে। আর এই ২২ বৎসর যাবৎ বৈধব্যের আগুনে পুড়ছি। … আমি আমার ব্যর্থ জীবন নিয়ে হেসে খেলে দিন গুনছি। ”( পত্র নং-৯)
কত স্পষ্ট করে নিজের মনের কথাটি তিনি প্রকাশ করছেন। এমন সত্য কথাটি সুন্দর করে একমাত্র রোকেয়াই বলতে পারেন।
আরও একটি পত্রে তিনি লিখেছেন,
“আপনি ঘুনাক্ষরেও ভাববেন না যে আমার শ্রদ্ধেয় স্বামীর স্মৃতি রক্ষার জন্যই আমি এ স্কুল আঁকড়ে পড়ে আছি। সরকারের সাথে স্কুল বিষয়ে লিখিত আমার চিঠিপত্রের কথা আপনি মনে করে দেখুন, গভর্ণমেন্ট এই স্কুলের নতুন নামকরণ ‘Government H. E. School for Muslim Girls’ অর্থাৎ মুসলিম বালিকা উচ্চ ইংরেজী সরকারী বিদ্যালয় করতে চেয়েছেন, তাতে আমি সেই মুহুর্তেই রাজী হয়েছি। মরহুম নওয়াব সৈয়দ নওয়াব আলী ও স্যার গজনবী তাদের ইচ্ছামতই নাম পরিবর্তনে আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আমি নামের কাঙাল নই। কারণ আমি জানি তাঁর সত্যিকার স্মৃতি আমার সাথে রয়েছে ও আমার সাথেই লুপ্ত হয়ে যাবে।
” (পত্র নং ১৯)
রোকেয়া যে কতবড় স্পষ্টবাদি এবং ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে উঠে যান তা এই চিঠির মধ্য দিয়েই খুঁজে পাওয়া যায়। স্কুলের খরচ চালানো তাঁর পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছিল, তিনি সাখাওয়াৎ স্কুলটি সরকারের হাতে তুলে দিতে রাজী হয়েছিলেন। সরকারী স্কুল হলে স্কুলের যেমন অর্থাভাব থাকবে না, তেমনি ছাত্রী ভর্তির দুশ্চিন্তাও থাকবে না। রোকেয়ার মৃত্যুর পর ১৯ ডিসেম্বর ১৯৩৫ সালে স্কুলটি সরকার গ্রহণ করেন এবং নাম ‘সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল সরকারি উচ্চা বালিকা বিদ্যালয়’ রাখা হয়েছে। কলকাতা শহরে উন্নতমানের স্কুলের মধ্যে এটি অন্যতম এবং এখানে ইংরেজি ও বাংলা মাধ্যম আছে, হিন্দু-মুসলমান মেয়েরা লেখাপড়া করে।
ছাত্রী সংখ্যা বর্তমানে ১৩০০। গত ১৬ই মার্চ ২০১০, স্কুলটি শতবর্ষ উদযাপন করে এগিয়ে চলেছে রোকেয়ার কীর্তি হিসেবে।
স্কুল প্রতিষ্ঠা ছিল রোকেয়ার একটি আন্দোলন। কেননা শিক্ষাকে তিনি নারীর শারীরিক ও মানসিক শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই শক্তি অর্জন করলে নারীর বিকাশ ঘটবে।
পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে তার ক্ষমতায়ন ঘটবে। তাই স্কুলটি গড়ে তোলা, অর্থ সংগ্রহ ও ছাত্রী সংগ্রহের জন্য তিনি তার জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। স্কুলটি ভালো করবার জন্য তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। মানুষের নিন্দা সহ্য করেছেন, কটুকথাও শুনেছেন শিক্ষিত মানুষের মুখে। তাঁর কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না বলে তিনি প্রধানশিক্ষিকা বা প্রশাসনিক পদে থাকতে চাননি সত্য, কিন্তু স্কুলের প্রতিটি কাজ তাঁর নির্দেশ ও পরামর্শে পরিচালিত হতো।
তিনি প্রেসে গিয়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিজে প্রুফ দেখে ছাপিয়ে এনেছেন, সরকারি অফিসে গিয়েছেন স্কুলের কাগজপত্র নিয়ে। এসব কাজ কারুর হাতে ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকেন নি। তিনি ছিলেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা—সুতরাং সর্বত্র তার যাতায়তে কোন বাধা ছিলো না। তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেবার প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। পরে ব্যস্ততা ও অসুস্থতায় হয়ে ওঠে নি।
তিনি পরিহাস করে বলতেন, ‘কেয়ামতের পর আমার ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেয়া হবে। ’
তিনি বিভিন্ন স্কুলের লেখাপড়া ও কার্যক্রম ঘুরে ঘুরে দেখে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। একবার আলীগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করতে গিয়েছিলেন রোকেয়া, পরে তিনি তার আত্মীয় মরিয়ম রশীদকে ৫ জানুয়ারী ১৯২৬ এক চিঠিতে লেখেন, “……… সেখানে কত মুসলমান গ্রাজুয়েট ও আন্ডার গ্রাজুয়েট মহিলা উপস্থিত ছিলেন। তাহাদের সম্মুখে কি আমি মুখ খুলিতে পারি? কেহ তামাসা করিয়া সংবাদপত্রে আমার বক্তৃতার কথা লিখিয়া থাকিবে। আমি শিক্ষিত মহিলাবৃন্দকে দেখিয়া পুণ্য অর্জন করিয়াছি।
আমার চক্ষু কর্ণ ধন্য হইয়াছে। … আলীগড়ের মেয়ে কলেজ শীঘ্রই দশ লক্ষ টাকা চাঁদা তুলিয়া নারী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করিবে। আর আমাদের বাংলাদেশ-আহারে! সে কথা না বলাই ভালো। আমি যদি কিছু টাকা পাইতাম (ধর, মাত্র দুই লক্ষ) তবে কিছু করিয়া দেখাইতে পারিতাম। কিন্তু খোদা আমাকে টাকা দেন নাই।
” (পত্র নং ৩)
চিঠির লেখায় প্রকাশিত হয়েছে রোকেয়ার হৃদয়ের কথা-বিনয়ের প্রকাশ এবং আদর্শ স্বপ্ন। সেই সঙ্গে তার অর্থাভাব। রোকেয়া নারী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। শুধুমাত্র স্কুল গড়ে তিনি সন্তুষ্ট হননি। আজ একুশ শতকে এসে আমরা রোকেয়ার নামে বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে পাই।
তাঁর স্বপ্ন আমরা আরও আগে সফল হতে দেখেছি - যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ছেলেমেয়েরা সমান তালে শিক্ষার্জন করতে সক্ষম হয়েছে এবং মেধা-মননে নারী তাঁর প্রতিভা বিকাশে সমর্থ হয়েছে।
চলবে.... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।