আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নৌকা মার্কায় ও গিয়াস ভাইকে দিলে ভোট শান্তি পাবে দেশের লোক।

গনজাগরনের মাধ্যেমে পরিবর্তন সম্ভব....মানুষের চিন্তার পরিবর্তন করাটা জরুরি ....বুদ্ধিবৃত্তিক পুনরজাগরনে বিশ্বাসী এমপি সাবের ব্যবহার খুব খারাপ। মানুষকে বকাঝকা করেন, গুলি করেন। ’এই বক্তব্য গফরগাঁও উপজেলার উস্থি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নুরুল হক মণ্ডলের। কান্দিপাড়া বাজার বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বাশার বলেন, ‘উনি কথায় কথায় বলেন, “আমি এমপি। আমি যা বলব, তা-ই হবে।

যে যা-ই বলুক, আমার বিকল্প নেই। ”’কান্দিপাড়া বাজারেই গত শুক্রবার জনরোষের মুখে পড়েন গফরগাঁওয়ের সরকারদলীয় সাংসদ গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ। এলাকার লোকজন তাঁর গাড়িতে হামলা করে। একপর্যায়ে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি চালান তিনি। এমনকি গাড়ি থেকে নেমে অস্ত্র হাতে ধাওয়া করেন জনতাকে।

কান্দিপাড়া বাজার বাদ দিয়ে অন্য এলাকায় থানা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করায় প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে সেখানকার মানুষ। সাংসদ গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘জীবন রক্ষায় আমি ফাঁকা গুলি ছুড়েছি। এটা আমার অধিকার। যারা হামলা করেছে তারা সন্ত্রাসী। কোন্দলের জের ধরেও আমার ওপর হামলা হতে পারে।

’ গতকাল শনিবার কান্দিপাড়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, হাটবার হওয়া সত্ত্বেও অনেক দোকানপাট বন্ধ। স্বাভাবিক লোকসমাগমও নেই। বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শুক্রবারের ঘটনায় রাতেই কান্দিপাড়া বাজারের দুই দোকানদার ও এক ছাত্রকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় বাজার বণিক সমিতি গতকাল বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল করে।

আটক ব্যবসায়ীদের মুক্তির দাবিতে এবং সাংসদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় মিছিলকারীরা। অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করার পরদিন গতকাল সন্ধ্যার আগে সাংসদের গাড়ির সামনে-পেছনে মোটরসাইকেল বহরের মহড়া দিতে দেখা যায়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তাঁর গাড়ি কান্দিপাড়া বাজার পাশ কাটিয়ে মাইজবাড়ি হয়ে পাগলা এলাকার দিকে চলে যায়। গফরগাঁও থেকে পাগলা প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে। শুক্রবার রাতেও সাংসদের লোকজন কান্দিপাড়া বাজার এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দেয় বলে এলাকার লোকজন জানায়।

রাতে ২০-৩০টা মোটরসাইকেল, একটি মাইক্রোবাস ও দুটি পিকআপ ভ্যানে করে মহড়া দেওয়া হয়। উস্থি ইউনিয়নের শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রফিকুল ইসলাম বলেন, গফরগাঁওয়ের রাজনীতি আওয়ামী লীগের তিন ও বিএনপি—এই চার ভাগে বিভক্ত। এ জন্য এলাকার কোনো উন্নয়ন হয় না। সাংসদ গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘লোকজনের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের বিষয়টি ঠিক না। অনিয়ম-দুর্নীতি কিংবা নিয়োগ-বাণিজ্য করি না, বরং ব্যবসায় প্রচুর আয় করে সরকারকে বছরে ২০ লাখ টাকা কর দেই।

এসব টিআর-কাবিখা নিয়ে ছেঁচড়ামি করার সময় আমার নেই। ’ সাংসদের ওপর হামলার কারণ: প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গফরগাঁওয়ে নতুন একটি থানা স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এই থানার স্থান নির্বাচন নিয়েই মূলত সাংসদকে আক্রমণ করে এলাকাবাসী। সাংসদও নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে গুলি ছুড়ে স্থান ত্যাগ করেন। জানা গেছে, গফরগাঁওয়ের দক্ষিণাংশের আটটি ইউনিয়ন নিয়ে দত্তের বাজার ইউনিয়নের পাগলা বাজারে গত জানুয়ারি মাসে এই থানা করার ঘোষণা আসে।

কিন্তু উস্থি রংগাইল, মশাখালী, পাঁচভাগ এমনকি দত্তের বাজারেরও একটা অংশ চেয়েছিল কান্দিপাড়া বাজারে থানা করতে। সাংসদ তাদের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। গফরগাঁওয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাগলা এলাকায় থানা করার ঘোষণা হওয়ার পর থেকে কান্দিপাড়া বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় সভা-মিছিল ও মানববন্ধন হয়। এর পর থেকে সাংসদ ওই এলাকা এড়িয়ে চলতেন। কিন্তু শুক্রবার সাংসদ কান্দিপাড়া বাজার হয়ে যাওয়ার পথে সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া মানুষের রোষানলে পড়ে তিনি।

এরপর্যায়ে জনতা উত্তেজিত হয়ে সাংসদের গাড়ি ভাঙচুর করে। সাংসদও গুলি ছোড়েন। স্থানীয় লোকজন জানান, দলীয় কোন্দল, সাংসদের আচরণ ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সাংসদের জনপ্রিয়তা অনেক কমেছে। এর সঙ্গে থানার জায়গা নির্বাচন নিয়ে অসন্তোষের কারণেই শুক্রবারের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাংসদের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) খাইরুল ইসলাম গতকাল গফরগাঁও থানায় মামলা করেন।

মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়। মামলার আসামি ও গফরগাঁও উপজেলার প্রজন্ম ৭১-এর সভাপতি খোকন মণ্ডল বলেন, মাস দুয়েক আগে অবরুদ্ধ হয়ে সাংসদ এখানে থানা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। শুক্রবার এটা মনে করিয়ে দিলে সাংসদ বলেন, অন্দোলন করে লাভ নেই। থানার স্থান চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এর পরও স্থানীয়রা হইচই শুরু করলে সাংসদ বলেন, ‘আমি এমপি, চাইলে তোমাদের বিরুদ্ধে অনেক কিছু করতে পারি।

’ এটা বলেই তিনি পিস্তল বের করেন। তখন মানুষ উত্তেজিত হয়ে ইট ছুড়ে মারে। এ সময় সাংসদ গাড়ি থেকে নেমে পিস্তল উঁচিয়ে এলাকাবাসীকে ধাওয়া দেন এবং গুলি করেন। সাংসদের সঙ্গী ও উস্থি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিনের দাবি, গাছের গুঁড়ি ফেলে পথরোধ করে স্থানীয় মানুষ। এরপর সবাই নেমে এগুলো অপসারণ করার সময় পেছন থেকে গাড়িতে হামলা করা হয়।

সাংসদ তখন ফাঁকা গুলি করেন। তিনি কাউকে গালিগালাজ করেননি। শুধু বলেছেন, ‘তোরা কোথায়, সাহস থাকলে সামনে আয়। দাও নিয়ে ঘোরস, এখন কই গেছস?’ অজনপ্রিয় হওয়ার যত কারণ: ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭০ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে সাংসদ নির্বাচিত হন গিয়াস উদ্দিন। সাংসদ হওয়ার পরই শিক্ষক মারধর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য, সরকারি জমি দখল, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে অনিয়মসহ নানা কারণে এলাকায় বিতর্কিত হন তিনি।

২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সাংসদকে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে আওয়ামী লীগের লোকজন। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, গফরগাঁও আওয়ামী এখন তিন ভাগে বিভক্ত। সাংসদ ছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান ফাহমী গোলন্দাজ (বাবেল), পৌর মেয়র কায়সার আহাম্মেদ নিজ নিজ গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন। ফাহমী গোলন্দাজ ও সাংসদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব একেবারে প্রকাশ্য। এঁদের অনুসারীদের মধ্যে কয়েকবার সংঘর্ষও হয়েছে।

গফরগাঁওয়ের ১৫টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে গিয়াস উদ্দিন ও ফাহমী গোলন্দাজের আলাদা কার্যালয় আছে। কর্মসূচিও পালন করা হয় আলাদাভাবে। এ বিষয়ে সাংসদ বলেন, ‘দল আমার সঙ্গে আছে। যারা আমার কাজে ঈর্ষান্বিত, তারাই বিরুদ্ধে বলে। ’ দখল: বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গফরগাঁও সদরে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) প্রায় ৪১ শতাংশ জমি দখল করে আওয়ামী লীগের কার্যালয় করেন সাংসদ গিয়াসের লোকজন।

সওজের একটি আধাপাকা ভবন থাকলেও তা ব্যবহার করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। আওয়ামী লীগের কার্যালয় করা জমিটি অবৈধ দখলমুক্ত করতে ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার ও গফরগাঁও থানাকে চারটি চিঠি দিয়েছে সওজ। সাংসদ হওয়ার পরই নিজের নামে ক্যাপ্টেন (অব.) গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ কলেজ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৫৫ শতাংশ জমি স্থায়ী বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন গিয়াস উদ্দিন। বিধিসম্মত নয় বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড এখনো সে জমি বরাদ্দ দেয়নি। এখন কলেজের ক্লাস চলছে সাইদুর রহমান উচ্চবিদ্যালয়ে।

সেখানকার ছয়টি কক্ষে অনেকটা জোর করে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.