আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজনৈতিক গণকঠাকুর ও গ্যালপের জরিপের বাস্তবতা

খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... জনগনের দৃষ্টিতে সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব¯হান শীর্ষ ৭ এ । দেশের ৭৭ শতাংশ মানুষ মনে করে শেখ হাসিনা পারফেক্ট রাষ্ট্রনায়ক । যুক্তরাষ্ট্রের গবেষনা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গ্যালপ তাদের এশিয়ানভিত্তিক জরিপে এ ফলাফল ঘোষনা করেছে। গেল বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ১০০০ লোকের উপর জরিপ করে তারা দেখেছে দেশের মানুষের আ¯হা এখনো শেখ হাসিনার অনুকুলে। গ্যালপের জরিপের প্রতিক্রিয়ায় বিরোধীদলীয় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেছেন সরকারের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে।

আর এরকম শেষ মুহুর্তে সরকার টাকা পয়সা খরচা করে নামকরা জরিপ সং¯হা দিয়ে নিজেদের অনুকুলে জরিপ করিয়ে নেয়। যাতে সামনের নির্বাচনে জনগনের কাছে নিজেদেরকে মেলে ধরতে পারে বা জনগনের সহানুভুতি আদায়ে এটা একটা কৌশলমাত্র। এশিয়ার ২১টি দেশের রাষ্ট্রনায়কদের উপর জনগনের সন্তুষ্টি নিয়ে করা এ জরিপে সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর ৭৭ % মানুষের সন্তুষ্টি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষনা এ প্রতিষ্ঠান তাদের জরিপে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউজিল্যান্ডের রাষ্ট্রনায়ক জন কি‘কে পিছনে ফেলে দিয়েছেন। জন কি‘র প্রতি সেদেশের ৭২ শতাংশ মানুষের সমর্থন রয়েছে।

মালেশিয়া প্রধানমন্ত্রী মাত্র ১ শতাংশ বেশি সমর্থন নিয়ে তালিকার ৬ষ্ঠ অব¯হানে রয়েছে। ৯৭ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে লাওসের প্রেসিডেন্ট চৌমালি সায়াগনাসন তালিকার শীর্ষে রয়েছেন। এরপর কম্বোডিয়ার হুনসেন, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকশে, সিঙ্গাপুরের লি হুয়েন লুং, ফিলিপাইন ও মালেশিয়ার রাষ্ট্রনায়কের জনসমর্থন শেখ হাসিনার চেয়ে বেশি । কিন্তু আসলেই কি ৭৭ শতাংশ মানুষ মনে করে এ সরকার এখন পর্যন্ত যা করেছে তা সন্তোষজনক? এমন প্রশ্নে দ্বিধার সৃষ্টির হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে এখন পর্যন্ত সরকার কিছু কিছু গুরুত্বপুর্ন বিষয়ে খুব সফলতার সহিত পদক্ষেপ গ্রহন করেছে।

যা দেশকে অনেক দুর নিয়ে যাবে নি:সন্ধেহে। যদিও অর্থনৈতিক টালমাটালের মধ্য দিয়ে দেশ চলছে। শেয়ার বাজার কেলেংকারী, দলীয় অঙ্গ সংগঠনগুলোর পেশি শক্তির তান্ডব জনগনের মাঝে হতাশার জন্ম দিয়েছে। তারপরও যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু করা এবং চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেফতার ও ট্রাইবুনালের মুখোমুখি করা সরকারের ইমেজকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। ক্ষমতাপ্রাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিডিআর বিদ্রোহ সরকারকে বেশ চাপে ফেলে দেয়।

অত্যন্ত সফলতার সহিত শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বিডিআর বিদ্রোহের বিচারও শেষ পর্যায়ে। প্রবীনদের মন্ত্রীত্বে ঠাই না দেয়া। কিছু কিছু মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অব্যাহত সুশীল সমাজের আপত্তি। প্রবীণ রাজনৈতিক ও রেলমন্ত্রীর সহকর্মীর ঘুষ কেলেংকারী, সাংবাদিক দম্পতি হত্যা, আভ্যন্তরীন আইন শৃঙ্খলা নিয়ে প্রতিদিনের কৈফিয়ত ইত্যাদি বিষয়ে সরকারের ভিতরও অস্বস্তি বিরাজমান । তার উপর বিরোধীদলের আন্দোলনতো রয়েছেই।

তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে সরকারের ভিতরও অস্বস্তি স্পষ্ট। এ কথা অনস্বীকার্য যে দেশের জনগন আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে স্বস্তিবোধ করে কারন এ দলটির রাজনৈতিক কমিটমেন্ট দেশের জনগনের মাঝে আশা সঞ্চার করে। ক্ষমতার পালাবদলে বড় দুটি রাজনৈতিক দলের উখান পতনে জনগনই গনতন্ত্রের শেষ কথা। তবে গ্যালপের জরিপ যাইই বলুক দেশের বৃহদ মানুষের আ¯হা এই মুহুর্তে আওয়ামীলীগের উপর আছে কিনা তা প্রশ্নবোধক। কারন নানান ইস্যুতে জনগনের মাঝে অসন্তোষ রয়েছে।

বিশেষ করে বিদ্যুত নিয়ে তেলেসমাতি জনগনকে খুব ভোগাচ্ছে। সরকার আন্তরিক হলেও এসেক্টরের চেহারার খুব একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি। স্বয়ং অর্থমন্ত্রীও স্বীকার করলেন বিদ্যুত নিয়ে সরকারের হিসেবে ভুল রয়েছে। যাই হোক, গ্যালপের জরিপে আওয়ামীলীগের খুব খুশি হওয়ার কিছু নেই। কারন এখনো অনেকটা পথ বাকি।

কুসুমাস্তীর্ন পথ আওয়ামীলীগকে পারি দিতে হবে। আর রাজনীতির সব হিসেব নিকেশ জনগনের হাতে, তাই অবশিষ্ট যেসময়টুকু আছে তা আওয়ামীলীগকে কাজে লাগাতে হবে। যাতে পাচ বছর পর সাফল্যের পাল্লাই ভারী হয় তার হিসেবও কষতে হবে ভবিষ্যত রাজনীতির কথা মাথায় রেখে। কে কি বললো তা বিবেচ্য বিষয় নয় সরকার কি করছে তা সরকারের কাছেই হিসেব আছে। তাই নিজ হিসেবকে মাথায় রেখেই ভবিষ্যতে নৌকার পালে হাওয়া তুলতে হবে।

অন্যথায় বিপর্যয় রোধ করা যাবেনা। এবার ফিরি অন্য প্রসঙ্গে, আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রী গাজিপুরের জনসভায় কতো নিশ্চিন্তে মনে বলে ফেললেন এবার আওয়ামীলীগ ক্ষমতা থেকে গেলে আগামি ৪২ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবেনা। দাম্ভিকতার সহিত বিরোধীদলীয় নেত্রী ৭৫‘র পরবর্তী রাজনৈতিক হিসেব নিকেষে এও বললেন এ দলটি ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসেছে রাস্তা ঘাটে কান্না কাটি করে। আওয়ামীলীগতো কান্না কাটি করেছে জনগনের কাছে। শুধু আওয়ামীলীগ কেন ছোট বড় সব দলকেই তো দেখি নির্বাচনের সময় কান্নাকাটি করতে।

তাহলে কেন আওয়ামীলীগের কান্নাকাটি নিয়ে প্রশ্ন উঠে? খুব জানতে ইচ্ছে করে বিরোধীদলীয় নেতার কি এধরনের কথা বলা শোভা পায় ? আওয়ামীলীগ ৪২ বছর ক্ষমতায় না আসা মানে এই না যে বিএনপিকে ৪২ বছর ক্ষমতায় বসিয়ে রাখা। ৭৫‘র ট্রাজেডির পর দীর্ঘ ১৬ বছর নানান কৌশলে স্বৈরতন্ত্রের অধীনে দেশ শাসিত হয়েছে। আর স্বৈরাচার মুক্ত করতে বৃহদ দুটি দলকে একযোগে আন্দোলন করতে হয়েছে দিনের পর দিন মাসের পর মাস। গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যে ত্যাগ তীতিক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছিল দেশের মানুষকে তা কি দুই নেত্রী ভুলে গেছেন? সর্বশেষ ২০০৭ সালের ১/১১ নাটকেও দুই নেত্রীকে মাশুল দিতে হয়েছে। তাহলে কেন স্বৈরতান্ত্রিক কথাবার্তা রাজনৈতিক নেতারা বলেন বা বলবেন তা বোধগম্য নয়।

কারণ যদি নির্বাচন ব্যতীত আওয়ামীলীগ বা বিএনপি ৪২ বছর কেন এক বছরও ক্ষমতার বাইরে থাকে তাহলে কি দেশে গনতন্ত্র বিদ্যমান থাকবে? যদি আওয়ামীলীগ সামনের নির্বাচনে গনতান্ত্রিক পহ্নায় ক্ষমতা হস্তান্তর না করে অন্যকোন উপায় অবলম্বন করে তাহলে কি আমরা গনতান্ত্রিক হবো! নিশ্চয় নয়। আমরা গনতন্ত্রে বিশ্বাস করি। বিশ্বাস করি আমাদের বড় দুটি দল গনতান্ত্রিক চর্চায়ই ক্ষমতায় যেতে চায় অন্যকোন উপায়ে নয়। তাই আমরা নেতা নেত্রীদের কাছে অপালাপ প্রত্যাশা করিনা। সদালাপের রাজনৈতিক কালচার শুরু হোক।

আর কতো দেরি, গনতন্ত্রেরতো দুই যুগ হতে চললো। এবার নিশ্চয়ই পরিবর্তনের সময় এসেছে। আর সে পরিবর্তনটা গনতন্ত্রকে বজায় রেখেই দলগুলোর ভিতর থেকেই আসুক এমন প্রত্যাশাই খেটে খাওয়া মানুষদের। হাসান কামরুল: কলামিস্ট। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.