দক্ষিন এশিয়ার স্বাধীন একটি রাষ্ট্র হিসাবে বিবেচিত। বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী রাষ্ট্র তিনটি যথা ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিকটতম রাষ্ট্র হচ্ছে ভারত। তাই ভারতের সাথে সুসম্পর্ক রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার ভারতের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আসছে।
কিন্তু যেকোন জিনিসের একটি সীমা আছে। সীমা অতিরিক্ত কোন কাজই ভালো না। কিন্তু বর্তমান সরকারের ভারতের সাথে সম্পর্ক রাখাটা অতিরিক্ত পর্যায়ে পড়ে যাচ্ছে, যা আদৌও ঠিক নয়। অনেকের মনে প্রশ্ন রয়ে যেতে পারে কিভাবে অতিরিক্তের পর্যায়ে পড়ে যাচ্ছে? প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক রাখার মানে এই নয় যে, নিজের দেশের মানুষের স্বার্থকে ক্ষুন্ন করা সুসম্পর্ক এর পরিচয় হতে পারে না বরং এটা হলো হীনমন্যতার ও দুর্বলতার পরিচয়। সীমান্তে বি.এস.এফ কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিক নির্যাতন, হত্যা, বাংলাদেশের এখন একটি নিত্যনৈমেত্তিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
আওয়ামীলীগ নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন - সীমান্ত হত্যা নিয়ে সরকার খুব একটা চিন্তিত নয়। আসলে কথাটি খুব দুঃখ জনক আর ব্যাপারটা লজ্জাস্কর। বারবার বি.এস.এফ-বিজিবির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে দীর্ঘ সময়ের বৈঠক কোন আশানুরুপ ফলাফল এখনোও পর্যন্ত প্রদান করতে সক্ষম হয়নি। প্রকৃতপক্ষে ওগুলো কি বৈঠক ছিলো না রসালপ ছিলো প্রশ্ন রয়ে যায়! হয়তো, প্রশ্নের উওর আমাদের দেশের আমলা যত সহজভাবে প্রদান করবে আসলে বিষয়টা ততটা সহজ নয়। যে জীবনগুলো অঝরে ঝড়ে গেল সেই জীবনগুলো কে ফিরিয়ে দেবে? যাহোক, সরকার এদেশের স্বার্থকে ক্ষুন্ন করে যে সকল ট্রান্সশিপমেন্ট দিয়েছে তা সংক্ষিপ্তভাবে একটু আলোচনা করা যাক।
প্রথমে, টিপাইমুখ বাঁধ সম্পর্কে কিছু বলা যাক, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং এর বাংলাদেশ সফর ২০১১ সালের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল। বাংলাদেশের ১৬ কোটি স্বাধীনচেতা জনগন মনে করেছিল মনমোহন এর আগমনের ফলাফল হিসাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হবে। সেই বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে ছিলো - সিলেটে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মান অন্যতম। টিপাইমুখ বাঁধ নির্মান প্রসঙ্গে ড. মনমোহন সিংকে জিঞ্জাসা করা হলে, তিনি বললেন বাংলাদেশের ক্ষতি হবে এমন কোন কাজ ভারত করবে না কিন্তু পরক্ষণে যখন তিনি ভারতের মাটিতে পা দিলেন তখন তিনি ঘোষণা করলেন টিপাইমুখ বাঁধ অবশ্যই হবে। এটা কোন ধরনের আচরন, সেটা আমার বুঝে আসে না।
সম্ভবত মনুষত্ব্য এর বানান জানতে পারেন কিন্তু অর্থ জানেন না, যদি জানতো এমন ব্যবহার করতো না। তাহলে বলা যায় যে, ড. মনমোহন এর বাংলাদেশ সফর ছিলো মুল্যহীন। অথচ, মুল্যহীন এই সফরে বাংলাদেশের সরকার খরচ করেছে তেইশ কোটি টাকা এক গোপন পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে। মূল বিষয় ফিরে আসি যদি টিপাইমুখ বাঁধ নির্মান হয়, তাহলে পূর্বঞ্চালীয় অধিকাংশই জেলায় মহামারী আকার খরা দেখা যাবে কৃষিক্ষেত্রে। বাংলাদেশ যেখানে কৃষিপ্রধান দেশ সেখানে কৃষিকে ধ্বংস করে ভারতে কোন চুক্তি মেনে নেওয়া বাংলাদেশের আদৌও উচিত নয়।
কিন্তু বাংলাদেশের সরকার এখনো স্থির অবস্থায় বসে আছে। কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করেছে কিনা তা জনগণের অন্তরায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল টিপাইমুখ বাঁধ এর বিরোধিত করলেও ক্ষমতাসীন দলও এখনোও নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। তিতাস নদীর উপর দিয়ে রাস্তা তৈরী করা হয়েছে যে রাস্তা দিয়ে ভারতে গাড়ি চলাচল করছে। এখন কোন লেখক তার লেখনীর মধ্যে লিখতে পারবে না - তিতাস একটি নদীর নাম।
এছাড়াও আছে বিভিন্ন পার্বত্যে শান্তি চুক্তি যা বাংলাদেশের জন্য কখনো শুভকর নয়। এসবের মূল কারণ হচ্ছে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি। একটি দেশের পররাষ্ট্রনীতি যদি এমন হয় তাহলে উপরোক্ত ঘটনাগুলো ঘটা স্বাভাবিক, যদি না ঘটে তাহলে অস্বাভাবিক। কিন্তু আমরা যদি ২০০৯ সালের ৬ই জানুয়ারি হতে বর্তমান পর্যন্ত ভাল ভাবে যদি দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখতে পাব যে, পররাষ্ট্রনীতির এমন বেহাল দশা জনমনে প্রশ্ন রয়ে যায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি বিদেশে সমস্যা সমাধান করতে গিয়েছিলেন নাকি বিদেশের আকর্ষণীয় স্থানগুলো ও জিনিসগুলো দর্শনের জন্য গিয়েছিলেন এটাও প্রশ্ন রয়ে যায়।
তাই, পরিশেষে বর্তমান সরকারকে আহবান করতে চাই যে, নতজানু পররাষ্ট্রনীতিকে পরিহার করে, বলিষ্ঠ হাতে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করার জন্য। যদি ভারত দ্বারা বাংলাদেশের নদী দখল হয়, বি.এস.এফ কর্তৃক বাংলাদেশী নির্যাতন, হত্যা হয়, তাহলে কি প্রয়োজন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসাবে বিশ্বের বুকে পরিচিত করা?
যদি বর্তমান অবস্থা এই হয়, তাহলে ৩০ লক্ষ মানুষের জীবন দ্বারা অর্জিত এই স্বাধীনতার মূল্য কিভাবে থাকে প্রশ্ন রয়ে যায়। এই দুঃসময়ে লেখকের সেই ভাষায় বলতে হয়-
"স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে,
স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। "
শেষোক্ত কয়েকটি লাইনে বলতে চাই, সরকার যদি কোন আশানুরুপ ব্যবস্থা গ্রহন করে তাহলে আমরা দেশের স্বাধীনচেতা জনগণ আমাদের নৈতিক দায়িত্ব্য যেকোন উপায়ে ভারতের চাপিয়ে দেওয়া কার্যক্রম, অসংবিধানিক কার্যক্রম বলিষ্ঠভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে হবে। আমাদের সর্বদা মনে রাখতে হবে দেশটা সরকারের নয়, দেশটা জনসাধারনের।
তাই, সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে খেলা করতে পারে না। সুতরাং আসুন, যথা সম্ভব দ্রুত পারি প্রতিরোধ গড়ে তুলি।
ফেইসবুকে আমার এই লেখার লিংক:
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।