অনেক কোয়েসারে মাত্র 700 সেকেন্ডের মত অতি অল্প সময়েও এক্স-রে বিকিরনে বিষমতা দেখা যায়। এর কারন শুধু কোয়েসারের উৎসের ক্ষুদ্র আয়তনই নয়,এর তেজ উৎপাদনের উচ্চ ক্ষমতাও বটে।
এক মাত্র রেডিও তরংগের সাহায্যেই কোয়েসারের কেন্দ্রকনা বিশ্লেষন করা যায়। এর মাধ্যমে 3C-345 কোয়েসারের কেন্দ্রস্থলের 0.0004 সেকেন্ডের চাইতেও অল্প পরিমান জায়গা নিরীক্ষন করা সম্ভব হয়ছে। আবার অনেকগুলি কোয়েসারের কেন্দ্রস্থলকে 0.0006 সেকেন্ডের চেয়েও সূক্ষভাবে বিশ্লেষন করা হয়েছে।
কোয়েসারের উজ্জলতার এই ধরনের হ্রাস বৃদ্ধি থেকে এই সিন্ধান্তে আসা যায়,যে কোয়েসারের যে অংশ থেকে তেজ-শক্তি নিঃসৃ্ত হচ্ছে তার আয়তন তুলনা মূলক ভাবে ছোট।
যেমন- কোয়েসার 3C-273 কে বেলায় হিসেব করে দেখা গেছে যে এর ব্যাস 13 আলোকবর্ষ। যেখানে একটি সাধারন উজ্জল গ্যালাক্সীর ব্যাস 50,000 আলোকবর্ষ। কাজেই বলা যায় গ্যালাক্সীর তুলনায় কোয়েসার বেশ ছোট আয়তনের বস্তু। এখন এক কথায় বলা যায় যে কোয়েসারের বৈশিস্ট্য হচ্ছে,বিকিরন কেন্দ্রের অতি ক্ষুদ্র ব্যাস,এক্স-রে উৎপাদন ও বিকীর্ন তেজের উল্লেখযোগ্য বিষমতা।
কোয়েসারেরে শক্তির উৎসঃ একটি নক্ষত্র নিউক্লিয় পদ্ধতিতে তেজ-শক্তি উৎপন্ন করে। কিন্তু কোয়েসারের বেলায় এই প্রক্রিয়া ভিন্নতর।
কোয়েসারের শক্তির উৎস নিয়ে বেশ কিছু মতবাদ প্রচলিত আছে। কেউ কেউ মনে করে কোয়েসার হলো 10 লক্ষ সৌর ভরের একটা অদ্ভুত নক্ষত্র মাত্র; আর এর তেজের উৎস হচ্ছে নক্ষত্রটির কেন্দ্রকনীয় বিক্রিয়া এবং তার মহাকর্ষীয় ধংস।
এই ধরনের ভরের নক্ষত্রের মহাকর্ষের মাধ্যমে কোয়েসারে দেখা লোহিত অপসারনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
এই ধরনের নক্ষত্র থেকে বিকীর্ন আলোক কনাকে প্রচন্ড মহাকর্ষ শক্তিকে মোকাবেলা করে আসতে হয়। এর ফলে নির্গত তেজের বিরাট একটি অংশ হারিয়ে যায়,এই ভাবে যত বেশী তেজ বিনস্ট হবে আলোক তরংগ তত বেশী দীর্ঘায়িত হবে,আর আলোও তত বেশী লাল বর্ন ধারন করবে।
এই মতবাদে কোয়েসারের অতি ক্ষুদ্র আয়তন,বিপুল পরিমানের বিকীর্ন তেজ এবং লোহিত অপসারনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
কিন্ত এই মতবাদের প্রধান সমস্যা হলো এই বিশাল ভর বিশিস্ট নক্ষত্র। 60 সৌরভরের অধিক ভর বিশিস্ট নক্ষত্র এত বিপুল পরিমানে তেজ বিকিরন করে যে,এর ফলে ঐ সমস্ত নক্ষত্র ভেংগে খন্ড খন্ড হয়ে যায়।
এবং এর ফলে প্রতিটি খন্ডের ভর সন্ধি ভরের কম হয়।
এ ছাড়াও এই সব অতি ভর বিশিস্ট নক্ষত্রের বর্নালী,কোয়েসারের বর্নালী থকে সম্পূর্ন পৃথক হয়। এই কারনে অধিকাংশ জ্যোতির্বিদ এই মতবাদ প্রত্যাখ্যান করছেন।
বর্তমানে প্রায় সর্বজন- গ্রাহ্য মতবাদের প্রচলন করেন লিনডেন বেল। তাঁর মতে কোয়েসারের প্রচন্ড শক্তির উৎস হচ্ছে কৃন্ষ গহ্ববর ।
একটা অদৃশ্য ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত প্রচন্ড ভর বিশিস্ট কৃন্ষ গহ্ববর মধ্যাকর্ষনজনিত টানে এর পার্শ্ববর্তী ধূলি ও গ্যাস প্রচন্ড বেগে এর ভিতরে পতিত হচ্ছে। আর এর ফলে উৎপন্ন হচ্ছে বিপুল তেজ-শক্তি। এই মতবাদে কোয়েসারের প্রধান প্রধান বৈশিস্ট্য সমূহের মোটামুটি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
অনেকে মনে করেন কোয়েসারের মাঝে 100 মিলিয়ন সৌরভরের সমান আবর্তনশীল কৃন্ষ গহ্ববর এর মাঝে অশান্তি ঘটাচ্ছে। মহাবিশ্বে একমাত্র কোয়েসারই অশান্ত নয়।
সাইফার্ট গ্যালাক্সী গুলোও যথেস্ট অশান্ত,ধারনা করা হয় এই ধরনের প্রচন্ড তেজ-শক্তি বিকিরনকারী গ্যালাক্সী গুলোতেও কৃন্ষ গহ্ববর আছে।
জ্যোতির্বিদ হিল এই মতবাদ আরো বিস্তৃত করেন। তিনি বলেন যে কৃন্ষ গহ্ববর প্রকৃত পক্ষে কয়েক কোটি সৌর ভর বিশিস্ট একটি নক্ষত্র থেকে উদ্ভুত এবং একটি ঘন তারা স্তবকের কেন্দ্রে অবস্থিত। যখন কোন নক্ষত্র এই গহ্ববরের পাশ দিয়ে যায় তখন সেই নক্ষত্রটির যে পাশ কৃন্ষ গহ্ববরের দিকে থাকে,তখন সেই পাশে আকর্ষন,নক্ষত্রটির নিজস্ব মহাকর্ষ থেকে অনেক বেশী হয়। এর ফলে একটা জোয়ার প্রক্রিয়ার সৃস্টি হয়।
এই জোয়ার ব্যাসার্ধের ভিতরে কোন নক্ষত্র এসে পড়লে,তখন সেটি ঘূর্ণায়মান ধূলি ও গ্যাসের মেঘের ভিতরে পতিত হয়। এবং নক্ষত্রটি ছিন্ন বিচ্ছিন হয়ে পরে এবং সেই বিচ্ছিন অংশ সমূহ ঘুরতে ঘুরতে কৃন্ষ গহ্ববরের ভিতরে গিয়ে পড়ে। একট নক্ষত্র যতক্ষন জোয়ার ব্যাসার্ধের বাইরে থাকে তখন তার কোন পরিবর্তন হয় না। কিন্ত জোয়ার ব্যাসার্ধের ভিতরে এসে পড়লে তখন নক্ষত্রটি ঘটনা দিগন্তের দিকে এগোতে থাকে এই অবস্থায় নক্ষত্রটি তখন ছিন্ন ভিন্ন হয়ে কৃন্ষ গহ্ববরের ভিতরে গিয়ে পড়ে।
একটা 10 কোটি সৌর-ভরের কৃন্ষ গহ্ববরের ঘটনা দিগন্তের ব্যাস প্রায় ভূ-কক্ষের ব্যাসের সমান।
এর থেকেই, কোয়েসারের তেজের উৎসের অতি ক্ষুদ্র আয়তনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। অনুরুপ ভাবে এক্স-রে এবং দুইটি কোয়েসারের ভিতরে সংযোগের ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়। M ভর বিশিস্ট কোন নক্ষত্র কৃন্ষ গহ্ববরের ভিতরে পতিত হলে,সেই নক্ষত্রটির ভরের শতকরা 43 ভাগ পর্যন্ত তেজে রুপান্তরিত হতে পারে।
কেমব্রিজের জ্যোতিঃপদার্থবিদ হকিনস এটা ছাড়াও আর এক ধরনের কৃন্ষ গহ্ববর কথা উল্লেখ করেছেন । তার মতে এরা অস্তিতিশীল এবং তুলনামুলকভাবে ছোট কৃন্ষ গহ্ববর।
এগুলোর উৎপত্তি ঘটেছিল মহাবিস্ফোরনের শুরুতে। এগুলোর অবলুপ্তি ঘটে প্রচন্ড বিস্ফোরনের মাধ্যমে বিপুল পরিমান তেজ-শক্তির উৎপত্তি ঘটিয়ে।
ধারনা মতে কোয়েসার মহাবিশ্বের জম্নের 1 বিলিয়ন বছরের মধ্যকার ঘটনা। যদি তাই হয় তবে কোয়েসারে এ ধরনের অসংখ্য অস্থিতিশীল কৃন্ষ গহ্ববর থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্ত এখানে কিছু প্রশ্ন থেকে যায়।
তা হলো কোয়েসারের কেন্দ্রস্থলে কৃন্ষ গহ্ববর আবির্ভাব হল কি ভাবে? এবং সবকিছু গ্রাস করতে করতে শেষ পর্যন্ত কোয়েসার ও কৃন্ষ গহ্ববরের পরিনতি কি হবে?
একটি ঘন তারা স্তবকের কেন্দ্রে যে ভাবে কোয়েসারের সম্ভাব্য অস্তিত স্বীকার করে নেয়া হয়েছে,তাতে সেখানে অত্যধিক ভর বিশিস্ট নক্ষত্র গঠনের সম্ভাবনা যথেস্ট। 50 সৌর ভরের মত ভর বিশিস্ট একটি নক্ষত্রের জীবন যথেস্ট কম কিন্ত দর্শনীয়। হয়তো সুপার নোভা বিস্ফোরনের পরে কৃন্ষ গহ্ববরের সৃস্টি হয়,অথবা 10 সৌর ভরের নক্ষত্রে পরিনত হয়। ধারনা করা হয় এই কৃন্ষ গহ্ববরই কোয়েসারের “বীজ”।
কোয়েসারের গঠনঃ হয়েল ফাউলারের মতে।
কোয়েসারের কেন্দ্রে রয়েছে 1 থেকে 10 মিলিয়ন সৌর ভরের একটি কৃন্ষ গহ্ববর অথবা অতিভারী একটি নক্ষত্র। এই নক্ষত্রটির ব্যাস হবে প্রায় 1 আলোকবর্ষ। এই অবস্থায় ভরবস্তুর তাপমাত্রা হবে (10 এর পড়ে 5 টি শূন্য) ডিগ্রির মত। এ রকম একটি ভর বস্তুকে ধরে রাখার মত যথেস্ট বিকিরন শক্তির অনুপস্থিতিতে নক্ষত্রটি মধ্যাকর্ষনের চাপে সংকুচিত হয়ে সূর্যের সমান ব্যাসে পৌছাবে। তখন এর তাপমাত্রা দাঁড়াবে প্রায় 70 মিলিয়ন ডিগ্রি কেলভিনে।
এই প্রচন্ড তাপে কেন্দ্রীয় বস্তুতে নিউক্লিয়ার গলন প্রক্রিয়ায় প্রচন্ড তেজ-শক্তির সৃস্টি করবে এবং এর ফলে শুরু হবে সম্প্রসারন। এই সম্প্রসারন ততক্ষন পর্যন্ত চলতে থাকবে যতক্ষন এর ব্যাস (10 এর পড়ে 17 টি শূন্য) সেঃমিঃ এ পৌছাবে।
এর পরে আবার শুরু হবে সংকোচন। ফাউলারের এই তথ্যের একটি অসুবিধা হলো, এই প্রক্রিয়ায় কোয়েসারের শেষ পরিনতি হবে একটি বিশাল কৃন্ষ গহ্ববর এবং এটা ঘটবে খুব কম সময়ে। এর মানে বর্তমানে মহাবিশ্বের প্রান্ত সীমায় অসংখ্য বিশাল আকারের কৃন্ষ গহ্ববর বিরাজমান।
এই পদ্ধতিতে কোয়েসার থেকে সাধারন গ্যালাক্সীতে বিবর্তনের পথের সুস্পস্ট নির্দেশনা নেই।
কিন্ত এই সব মতবাদে সবাই বিশ্বসী নয়,অনেকের মতে এগুলো অনেক কাছের জ্যেতিস্ক,এবং দুরত্বের বিচারে এগুলো তৃতীয় শ্রেনীর জ্যেতিস্ক। এদের বর্নলিপির যে লাল অভিমুখি অপসারন তা মহাবিশ্বের প্রসারনের জন্য নয় অন্য কোন কারনে। এখন পর্যন্ত জ্যের্তিবিদরা এর আকৃতি এবং প্রকৃতি সমপর্কে পুরাপুরি ধানা লাভ করতে পারেনি। কোয়েসার সম্পর্কে গবেষনার কাজ এখনো চলছে।
তবে এখনো এদের প্রচন্ড শক্তির উতসের ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এমনও হতে পারে যে পদার্থবিদ্যার সাধারন নিয়মগুলো কোয়েসারের অভ্যন্তরস্থ প্রক্রিয়ার বেলায় খাটে না। বর্তমানে অতি মহাকর্ষ ভস্ম,সুপার নোভা বিস্ফোরন, অতি ঘন বস্তুর আবর্তন এই সব প্রক্রিয়ার একত্রীভূত করে একটা মতবাদে উপনীত হওয়ার চেস্টা চলছে। আগমীতে হয়তো এই রহস্যর সমাধান হবে আশাকরি।
পৃথিবী থেকে সবচেয়ে কাছের কোয়াসারের নাম হলো 3C-273 এর থেকে আলো আসতে সময় লাগে 150,00,00,000, বছর এটি কন্যা Virgo মন্ডলে অবস্হিত ।
এটা সবচেয়ে উজ্জল কোয়েসার। এটি 4 মিটার দূরবীন দিয়ে দেখা যায়।
Right Ascension 12 : 29.1 (h:m)
Declination +02 : 03.1 (deg:m)।
Visual brightness 12.8 var (mag)।
ছবি গুগল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।