বিন্গানের অনেক কিছু আবিস্কারের পর আমরা এখন জানি যে,মহাবিশ্বর চারপাশের অসংখ্য জ্যেতিস্ক থেকে নানা রকম বিকিরন ছড়িয়ে পরছে। যাদের তরংগ দৈর্ঘ্য কয়েক কিঃমিঃ থেকে শুরু করে এক সেঃমিঃ এর হাজার কোটি ভাগের চেয়ে ও ছোট হতে পারে। এই বিরাট বিস্তারের মাঝখনে যেটুকু বিকিরনের দৈর্ঘ্য 0.4 থেকে 0.7 মাইক্রন মাপের মধ্যে (1micron=1/1000mm)। অনেক জ্যেতিস্ক আছে যার থেকে নির্গত দৃশ্য আলো আমাদের কাছে অতি ক্ষীন ভাবে পৌছায়।
বিন্গানের নতুন নতুন যন্ত্রপাতি আবিস্কারের ফলে বর্তমানে এগুলোর মাপ সম্ভব।
এর ফলে এদের প্রকৃতিতে এত অভিনবত্ব ধরা পরেছে যে কল্পনাকে ও হার মানায়। মহাবিশ্বের সব জ্যেতিস্ক গুলিকে দুরত্বের ভিক্তিতে তিন শ্রেনীতে ভাগ করা যায়।
এর মধ্যে কাছের হলো আমাদের সৌরজগতের গ্রহ,উপগ্রহ,গ্রহানু ইত্যাদি। জ্যের্তিবিদ্যায় এদের দুরত্বের মাপ কে একক বলা হয়। (এটিহলো প্রায় 10 কোটি কিঃমিঃ,),সুর্য থেকে বৃহস্পতির দুরত্ব 5 একক,শনির 9একক,প্লুটোর প্রায় 38 একক।
এর পরে সবচেয়ে কাছের জ্যেতিস্ক হচ্ছে নক্ষএ, জ্যের্তিবিদ্যায় এদের দুরত্বের মাপকাটি হচ্ছে পারসেক এককের চেয়ে 2 লক্ষ গুন বড়। এগুলো হলো মাঝারী দুরত্বের জ্যেতিস্ক। একটি বিরাট ঘূর্নাবর্তের আকারে এদের অবস্হান নিয়ন্ত্রিত। রাতের আকাশে আমরা যে মিলকিওয়ে ছায়াপথ দেখতে পাই তা হলো এই ঘূর্নাবর্তের একটি পার্শ্বাচিএ,মাঝারী দুরত্বের জ্যেতিস্ক গুলো ছায়াপথের মধ্যেই সীমাবদ্ব নয়।
আমাদের ছায়াপথের মধ্যে যে সব কার্যকলাপ লক্ষ্য করা যায় তা অন্যসব ছায়াপথে ও লক্ষ্য করা যায়।
এই ছায়াপথ গুলি এত দুরে যে বর্তমানের বৃহৎ দুরবীন দিয়ে ও এগুলোকে আবছা আলোর মত দেখা যায়। মাপের সাধারন একক হলো পারসেক যা 10 লক্ষ পারসেকের সমান,একে বলা হয় হাবল দুরত্ব (Hubble distant)। এটি প্রায় 5 হাজার মেগা পারসেকের মত।
জ্যের্তিবিজ্ঞানীরা এই তিন শ্রেনীর জ্যেতিস্কের মধ্যে বেশ কয়েক টি অদ্ভুত বস্তু আবিস্কার করেছেন,এর মধ্যে একটি হলো "কোয়েসার" (Quasar) উপরোক্ত তিন শ্রেনীর জ্যেতিস্কের মধ্যে প্রথমে জ্যের্তিবিজ্ঞানকে নাড়া দিয়ে যে জ্যেতিস্কগুলো দেখা গিয়ে ছিল তা বর্তমানে কোয়েসার নামে পরিচিত। বহুদুরের তারাজগত থেকে বেতার তরংগের স্রোত আসছিল বেশ জোরে কিন্ত আলো প্রায় নাই বললেই চলে।
কিন্ত আমাদের জানা নক্ষএ গুলো এর উল্টো যেমন সূর্য এর আলোর ত্রীবতা খুব বেশী কিন্ত সে তুলনায় বেতার তনংগ খুব ক্ষীন, যেটুকু তরংগের বিকিরন আসছে তা সূর্যের ছটা মন্ডলের ইলেকট্রন চাচলের জন্য।
কিন্ত কোয়াসার গুলো হচ্ছে এক একটি উচ্চ শক্তির বেতার ট্রান্সমিটারের মত। জ্যের্তিবিদরা এর নাম দিয়েছেন নক্ষত্রের মত বেতার উৎস (Quasi stiller radio sources) সংক্ষেপে কোয়েসার। 50 এর দশকের শেষের দিকে অন্য আর দশটা রেডিও তরংগের উৎসের মত এদেরও ক্যামব্রিজ ক্যাটালগ অনুযায়ী তালিকাভূক্ত করা হয়েছিল যেমন-3C48,3C273 ইত্যাদি নামে। যদিও এদের থেকে উদ্ভূত বর্ণালী রেখাগুলিকে তখনো ঠিকভাবে সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
1963 সালে বেতার তরংগের মাপে প্রথম কোয়াসার আবিস্কার হয়। এর কিছুকাল পরে পালোমোরের 200" দুরবীনের সাহায্যে মার্টিন স্মিথ এদের আকৃতি বুঝবার জন্য এদের আলোর বর্নালীপি সংগ্রহ করলেন। কিন্ত এক্সপোজারের পর এতে কয়েকটি অপরিচিত রেখা দেখা গেল, জ্যোতির্বিদরা তখন বিবেচনা করে স্হির করলেন যে এই রেখাগুলির তরংগ দৈর্ঘ্য যদি সমান ভাবে কমিয়ে দেয়া হয়, তাহলে সেঘুলি বহু পরিচিত হাইড্রোজেনের লাইমান (Layman) রেখা শ্রেনীর ও জানা অন্যান্য কয়েকটি পর্দাথের রেখার সংগে একেবারে মিলে যায়। এই রেখাগুলির স্হান সুদুর আলট্রাভায়োলেট অঞ্চলে এর মানে হলো কোয়েসারের ক্ষেত্রে অকল্পনীয় লাল সরন ঘটে।
লাল সরনঃ শব্দ তরংগের হ্রাস বদ্ধির জন্যই তীক্ষতার তারতম্য ঘটে (একে বলা হয় ডপলার এফেক্ট)।
চলমান উৎস থেকে নিঃসৃত যে কোন তরংগ গতি- তা শব্দই হোক বা আলোক তরংগই হোক অভিমুখ অথবা বিপরীত নিরিখে গ্রাহকের কাছে আসলে তরংগ দৈর্ঘ্য থেকে পরিবর্তিত দৈর্ঘ্যে দেখা দেবে। এটি হলো তরংগ গতির একটা মোল র্ধম।
ডপলার প্রভাবে বহুদুরের আলো অপসৃত হয়, কিন্ত এতখানি অপসারন এর আগে কখনো দেখা যায়নি। যা কোয়েসারের বেলায় দেখা গেছে।
1929 সালে বিখ্যাত জ্যেতির্বিদ এডুইন হাবল পর্যবেক্ষন এবং পরীক্ষা করে দেখতে পান যে প্রথিবী থেকে দেখা গ্যালাক্সী গুলোর সবারই বর্ণালী অনুক্রমে লাল সরন বিরাজমান।
এই লাল সরন ক্যালসিয়াম পরমানু থেকে বিচ্ছুরিত H এবং K লাইনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সরন মাপা হয়।
এর থেকে দেখা যায় যে আমাদের ছায়াপথ থেকে যে ছায়াপথ যত দূরে তার লাল সরন তত বেশী। অর্থাৎ দূরত্ব যত বেশী তার সরে যাওয়ার গতি বেগ তত বেশী। এর থেকে হাবল মনে করেন এই মহাবিশ সস্টির আগে এর সমস্ত ভর বস্তু এক জায়গায় একটি পিন্ডের আকারে জড়ো হয়ে ছিল। এবং কোন এক সময় একটি মহাবিস্ফোরন ঘটে,এই বিস্ফোরনে সেই বিশাল জড়পিন্ড পরবর্তীকালে ছায়াপথের সৃস্টি করে।
সেই আদিম বিস্ফোরনের ভর বেগই বর্তমানে এই মহাবিসকে ক্রমাগত সম্প্রসারন করে চলছে। আমাদের পথিবী থেকে যে গ্যালাক্সি যত দূরে থাকবে সেই গ্যালাক্সীর সরে যাওয়ার বেগ তত বেশী হবে এবং এই কারনে সেই গ্যালাক্সীর লাল সরনের পরিমান বেশী হবে।
যেমন-বুটিস গ্যালাক্সী পুঞ্জ 1360, হাইড্রা পুঞ্জ 210, করোনা পুঞ্জ 74, মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। বর্তমানে দূরবীন দিয়ে এই গ্যালাক্সী পুঞ্জকে যেখানে দেখা যাচ্ছে,আসলে এগুলো আর সেখানে নেই। এগুলো যথাক্রমে 74,136 এবং 210 কোটি বছরে এরা সেকেন্ডে 15,000 25,000 এবং 45,000 মাইল বেগে সরে গিয়ে আরো অনেক অনেক দূরে অবস্থান করছে।
কোয়েসারের লাল সরনঃ অপসারন বেগ এবং দূরত্বের পরিমাপক যদি লাল সরনই হয় তবে কোয়েসারের বেলায় এই ব্যাপারটি অকল্পনীয়। যেমন-3C273 কোয়েসারটি আলোর গতির প্রায় দুই দশমাংশ গতিতে আমাদের কাছ থেকে সরে যাচ্ছে (এটি প্রতি সেকেন্ডে 30,000 মাইল বা 48,000 কিঃমিঃ বেগে দূরে সরে যাচ্ছে)। এবং হাবল বিধি অনুযায়ী এর অর্থ হচ্ছে যে উক্ত খ-বস্তুটি 160 কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
কোয়েসার 3C9 এর সরে যাওয়ার গতিবেগ আলোকের গতিবেগের শতকরা 80 ভাগ।
কোয়েসারের সংখ্যাঃ এখন পর্যন্ত প্রায় 14 মিলিয়ন কোয়েসারের সন্ধান পাওয়া গেছে।
দেখা যায় যে লাল সরনের মাত্রা বাড়তে থাকলে কোয়েসারের সংখ্যাও বাড়তে থাকে আবার আপাতঃ লাল সরন 2.5 এর পর এদের সংখ্যা কমতে থাকে। 2.5 মাত্রার লাল সরনের কোয়েসারের দূরত্ব পৃথিবী থেকে 8.5 বিলিয়ন আলোকবর্ষ। মহাবিস্ফোরনের তত্ত্ব অনুযায়ী মহাবিশ্বের বয়স 10 বিলিয়ন বছর,অর্থাৎ মহাবিস্ফোরনের দেড় মিলিয়ন বছরের মধ্যেই কোয়েসারের উদ্ভভ ঘটছে। এই 14 মিলিয়ন কোয়েসারের মধ্যে 12 মিলিয়ন কোয়েসারেরই লাল সরন 1.58-2.5, এর থেকে বোঝা যায় এদের বেশীর ভাগই মহাবিশ্বের একবারে শেষ সীমানায় অবস্থান করছে।
চলবে.........
ছবি গুগল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।