আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাকাশের খোশ খবর, বাস্তব রূপকথা

.......অতঃপর মৃত্যুর প্রতীক্ষা

[লেখার উপাত্ত গুলো ৮-১০ বছর আগের পুরনো স্মৃতির উপর ভর করে লিখা, ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে। ] রোগটা ধরেছিল জুনিয়র স্কুলে, একটা টেলিস্কোপ চাই। বাংলাদেশ এস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশনের মহাকাশ বার্তার একটা কপি হাতে পাবার আগেই নেশাটা ভয়ংকর ভাবে ধরেছিল, রাশিয়ান লেখক ইয়া পেরেলমানের লেখা ও বাংলায় অনুদিত "জ্যোর্তিবিদ্যার খোশখবর" বইটি পড়ে। পরিচিত মহাকাশের মানচিত্রটি শ্বাস রুদ্ধ কর বর্ণনা আর গাণিতিক ব্যাখ্যা দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে ৭০ এর দশকের শেষে লেখা বইটিতে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য "জ্যোর্তিবিদ্যা-এস্ট্রোনমি" আর "জ্যোতিষবিদ্যা-এস্ট্রোলজি" র মাঝে তফাতটা এর আগা জানা থাকা চাই।

প্রথমটি বিজ্ঞান আর দ্বিতীয়টি অপবিজ্ঞান বলে সংজ্ঞায়িত করে স্বস্তি পাই। গল্পের শুরুটা চমকপ্রদ। শুক্লপক্ষ আর কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ দেখে বুঝবেন কিভাবে? সহজ ব্যাখ্য, শু লিখতে শ এর আকার ৩ এর মত হয়ে যায়, তাই চাদ টি বাংলা ৩ বা ইংরেজি উল্টো সি এর মত দেখা গেলে ওটা শুক্লপক্ষের চাঁদ। আবার কৃষ্ণপক্ষের ক লিখতে সোজা ইংরেজি সি এর মত বাক দিতে হয়, তাই সি এর মত দেখতে যে চাঁদ, ওটা কৃষ্ণপক্ষের। ভয়ংকর ব্যাপার হল এই তত্ব উত্তর গোলার্ধের জন্য প্রযোজ্য।

দক্ষিণ গোলার্ধবাসীদের জন্য ঠিক উল্টো নিয়ম। আকাশের মান চিত্র পাঠ শুরু উত্তরগোলার্ধ থেকে দেখা যাওয়া উজ্জ্বলতম তারা লুধ্বক (৮ আলোকবর্ষ) এবং অসম্ভব সুন্দর নক্ষত্র মন্ডলী "কালপুরুষ" দিয়ে। কালপুরুষের ডান কাধে রাইজেল নক্ষত্রটি ৯০০ আলোক বর্ষ দূরে এবং নীলাভ বর্ণের দানব। বিশালতার তুলনা দেয়া হয়েছিল, যদি সূর্যের স্থলে একে বসানো হয় তবে তা পৃথিবীকে গ্রাস করে মঙ্গল গ্রহ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে দেখতে পাওয়া উজ্জলতম নক্ষত্রটি আবার ৯৮ আলোকবর্ষ দূরে।

ওটি এতটাই উজ্জ্বল যে লুধ্বকের (৮ আলোক বর্ষ) সমান দূরত্বে আনলে পৃথিবীকে পঞ্চমী চাদের সমান আলো দিত! সৌরজগতের আকার বুঝানোর জন্য একটা তুলনামূলক কাঠামো দাড় করানো হয়েছিল বইটিতে। ধরুন সূর্যকে একটা ফুটবলের আকৃতি দেয়া হল, তার তিন কিলোমিটার দূরে মার্বলে আকৃতির একটি পৃথিবী বসান এভাবে কাঠামোটি দাড় করাতে থাকলে নিকটতম নক্ষত্রটি আলফা সেন্টুরাই (৪.৫ আলোকবর্ষ) বসবে সৌর জগতের ঠিক বাইরে। বিশালতার উপলব্ধির চেষ্টাটা সত্যি রোমাঞ্চকর। ধ্রুব তারা নিয়ে আলোচনা। পৃথিবীর অক্ষ রেখা বরাবর থাকায় বার্ষিক গতির কারণেও ধ্রুব তারা সব সময় আকাশের একই স্থানে দেখা যায়।

বলা হয়েছে, আজ থেকে ১০ হাজার বছর পরে অভিজিৎ বা ভেগা (৩৫ আলোকবর্ষ দূরে) নক্ষত্রটি ধ্রুব তারার স্থান নিবে। কারণ বহু দূরে থাকলেও প্রতিটি নক্ষত্র, নিহারিকা প্রবল গতিতে সঞ্চারণশীল। বাটি+হাতল আকৃতির যে সপ্তর্ষি দেখে আমরা মুগ্ধ হই দক্ষিণ-পুব আকাশে ওটা ৫০ হাজার বছর আগে উদ্ভট চেহারার ছিল। আরো ৫০ হাজার বছর পরে প্রায় সরল রেখার মত হয় তার বর্তমান সৌন্দর্য হারাবে। সাতটি নক্ষত্রের আলাদা নামও আছে, কয়েকটি নক্ষত্রে আপেক্ষিক ভরের হিসেব ছিল ভয়াবহ।

এ চামচ পদার্থ আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেয়া জাহাজের সমান ভরের! ক্যাসিওপিয়া নক্ষত্র মন্ডলীতেও এমন কিছু নক্ষত্র আছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার পছন্দ বৃশ্চিক রাশির জ্যোষ্ঠা (আনটারেস) নক্ষত্রটি (৪০০ আলোকবর্ষ)। টকটকে লাল বর্ণের তারাটি দেখলে মনে হবে প‌্যাচানো বৃশ্চিকের বুকে লাল ক্ষত! এটি মূলত লাল দানব, যৌবনের জ্বালানি শেষ করে ফুলে ফেপে বিশালাকার পেয়েছে। মঙ্গল গ্রহের সাথে সাদৃশ্য থাকায় একে মঙ্গলের ভগ্নী বলা হয়। পৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে এটি অক্টোবরে মধ্য দুপুর মাঝ আকাশে আসে।

রাতের আকাশে দেখার জন্য আমাকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বাইনোকুলার দিয়ে রাত দেড়টার দিকে দেখতে পাই উত্তর পুব আকাশে সেই জ্যোষ্ঠা নক্ষত্রটি, আগে থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী। উহ্, সে কী রোমাঞ্চ! সবচেয়ে বড় নক্ষত্র মন্ডলী হল হাইড্রা। সিংহ, ধনু, মিথুন, বৃশ্চিক খুব পরিষ্কার দেখা গেলেও শহরে লোড শেডিং না হলে রাতের আকাশ দেখাটা দুঃসাধ্য। ১৯৯৮ সালের দিকে দেখি প্রথম ধুমকেতু "হেলবপ", টমাস হেল, মাইকেল বপের নাম অনুসারে এর নামকরণ।

নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল যখন শুনি আবারও হেলবপ পৃথিবীবাসীদের দেখা দিবে ৪৫০০ বছর পরে! এমনি তার কক্ষপথ! ১৯২৯ সালের শেষে এবং ১৯৩০ সালের শুরুতে প্লুটো গ্রহ আবিষ্কারের ইতিহাস পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। লোয়েল মানমন্দিরে জ্যোর্তিবিজ্ঞানী ক্লাউড টমবয় । নেপচুনের পর নতুন গ্রহের সন্ধান চলছিল। উনি প্রতিদিনকার মান মন্দিরের দূরবীন থেকে প্রাপ্ত ছবি গুলো মিলিয়ে দেখলেন একটি সাদা ফোটা অন্যান্য তারার তুলনায় অস্বাভাবিক গতিতে স্থান বদল করছে, যেটা গ্রহের বৈশিষ্ট্য! ২৪৮ বছর লাগে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে। অনেকের ধারণা প্লুটোতে একদম সূর্যের আলো পড়েনা।

একেবারে গণিত কষে দেখিয়ে দিল যে ওতে সূর্যের যে আলো পড়ে তা আমাদের দশমীর চাদের সমান উজ্জল! সিংহ রাশিতে যে মঘা নক্ষত্র টি আছে (মাঘ মাসে দেখা যায় বলে এমন নামকরণ) ১৩০০ আলোকবর্ষ দূরে থেকেও যথেষ্ঠ উজ্জ্বল দেখায়! খালি চোখে দেখা যাওয়া দূরতম জগত হল এন্ড্রোমিডা ছায়াপথ যেটি ২০ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে! খালি চোখে বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। মনে পড়ে ১৯৯৪ সালে ধূমকেতুর খন্ড বৃহস্পতির বুকে আছড়ে পড়ার দৃশ্য! ওতে করে যেসব গর্ত তৈরি হয়েছিল তা এক একটি পৃথিবীর সমান, যা সারতে ১০০ বছর লেগে যাবে! নিজ অক্ষে ১০ ঘন্টায় একবার ঘুরে বিশাল এ বৃহস্পতি! গ্যালিলিও মহাকাশ যান নামানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা হয়েছে যখন কয়েক লক্ষ কিলোমিটার নেমেও কোন শক্ত তলের দেখা পাওয়া যায়নি! ভয়েজার মহাকাশযান কে যেভাবে সব গুলো গ্রহে ঘুরানো হয়েছে, সেটা বিস্ময়কর। মঙ্গলে ঘূর্ণনরত অবস্থায় হিসেব করে দেখা হল ঔমুক দিনে এত গতিতে কেন্দ্র বিমুখী বলে ছিটকে যেতে পারলে ৮ বছর পরে ঠিক ঔমুক জায়গায় সেটা বৃহস্পতির কক্ষপথ ধরতে পারবে! এভাবে ১৯৮৮ সালে নেপচুনের ছবি পাঠায়, মনে আছে ইত্তেফাকে সেরকম একটি ছবিও ছাপানো হয়েছিল মিথেনে ভরা নীলাভ নেপচুনের। তারপরেও সেটা চলে যায় সৌরজগতের সীমানা পেরিয়ে অসীম শূণ্যে, বেশ কিছু বছর আগেও সেটি কিছু তরঙ্গ পাঠিয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মুগ্ধ করে। ওটি এখন এলিয়েন ধরার মিশনে আছে, বছর ব্যবধানে "আমি বেচে আছি" জাতীয় তরঙ্গ পাঠায় অসীম থেকে! বলা হয় আজ থেকে ৩ লক্ষ বছর পরে ওটি সবচেয়ে নিকটতম নক্ষত্র আলফ সেন্টুরির গ্রহ জগতে প্রবেশ করবে! শেষে মজার কথা, সব গ্রহে সূর্য পূর্ব দিকে উঠলেও ইউরেনাসে সূর্য ওটে পশ্চিম দিকে, কারন তার ঘুর্নন টা উল্টো!


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.