ধূমকেতু নিয়ে মানুষের কৌতুহল ও বিস্ময়বোধ প্রায় 5 হাজার বছরের পুরনো। প্রাচীনকালে ধূমকেতু নিয়ে মানুষের ধারনা ছিল,পৃথিবীর আকাশে ধূমকেতু দুর্ভিক্ষ,মহামারী,যুদ্ধবিগ্রহ ইত্যাদি সাথে করে নিয়ে উদয় হয়। সৌরজগতের এক বিচিএ বস্তু হল ধূমকেতু। মধ্যযুগ অবধি মানুষ বুঝতেই পারেনি ধূমকেতুর ব্যাপারটি আসলে কি?বর্তমানে আমরা প্রবেশ করেছি ধূমকেতু নিয়ে গবেষনার যুগে।
এই লেখায় ধূমকেতু সম্পর্কে বিষদ জানার চেস্টা করবো।
ইংরেজীতে ধূমকেতুকে বলে কমেট (Comet)। এই কথাটা এল কেমন করে?ঝাঁকরা চুলকে গ্রীক ভাষায় বলে "কমেটিজ",তার সন্গে এর রুপের সাদৃশ্য মিলিয়ে নামকরন করা হয়েছে "কমেট"। বাংলায় একে বলা যায় "ধোঁয়ার নিশান" আবার অনেকে একে "ঝাঁটা তারা" ও বলে।
খ্রীস্টীয় প্রথম শতকে রোমান দার্শনিক সেনকা প্রথম বললেন,ধূকেতুরা পৃথিবীর সম্পূর্ন বাইরের বস্তু এবং নির্দিস্ট পথে এরা গমনাগমন করে। এ্যারিস্টটল বললেন যে,পৃথিবীর মাটি থেকে বাস্পীভবনের ফলে ধূমকেতুর উৎপিও।
কেপলারের মতে,ধূমকেতু মহাকাশে সরলরেখায় চলাচলের সময় হঠাৎ করে সৌরজগতের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং পৃথিবীর কাছ দিয়ে চলে যাবার সময় একবার দেখা দিয়ে সেই যে চলে যায় আর কখনো ফিরে আসে না। গ্যালিলিও মনে করতেন,পৃথিবী থেকে বাস্প আকাশে উঠে সূর্যের আলোর প্রতিসরনের ফলে ধূমকেতুর উৎপত্তি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এই ধারনা পোষন করে গেছেন,এটা খুবই অদ্ভুত ব্যাপার ছিল। ফরাসী গনিতবিদ ল্যাপলেস এর মতে,ধূমকেতুর সৃস্টি হয়েছে বহু বছর আগে আন্তঃ নাক্ষত্রিক মেঘ থেকে।
ধূমকেতু সম্পর্কে গুরত্বপূর্ন তথ্য দিয়েছিলেন বিখ্যাত জ্যেতির্বিদ "টাইকো ব্রাহে"।
বাল্টিক সাগরের ভেন দ্বীপে তার একটি মান মন্দির ছিল,গনিতে তার তেমন দক্ষতা ছিল না,কিন্ত তার আকাশ পর্যবেক্ষনের দক্ষতা ছিল নিঁখুত ও নির্ভূল। তিনি এই মানমম্দির থেকে 20 বছর আকাশ পর্যবেক্ষন করেন এবং আকাশের নক্ষএদের মানচিএ ও গ্রহদের গতিবিধির তথ্য লিপিবদ্ধ করে যান
1577 খ্রীস্টাব্দে তিনি আকাশে একটি উজ্জল ধূমকেতুকে দেখে তার প্রতি আকৃস্ট হয়ে পড়েন, এবং রাতের পর রাত তিনি সেই ধূমকেতুর গতিবিধি পর্যবেক্ষন করতে লাগলেন। এবং এখান থেকেই তিনি প্রথম আবিস্কার বা ধারনা করেছিলেন, যে ধূমকেতুরাও সূর্যের চারদিকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহের মতো,এবং এরাও সৌরজগতের আদি বাসিন্দা। এই হলো ধূমকেতু সম্পর্কে প্রথম বিন্জান সন্মত ধারনা।
ধূমকেতুর কক্ষপথ: ধূমকেতু সৌরপরিবারের সদস্য হলেও আকাশ পথে এর চলাচল খুবই রহস্যময়।
গ্রহগুলো একটি উপবৃও (Ellipse) পথে সুনির্দিস্ট বেগে এবং শৃঙ্খলার মধ্যে সূর্যকে প্রদক্ষিন করছে। অন্যদিকে ধূমকেতুর চলার পথ এক একটি বিশাল লম্বা উপবৃও -অনেকটা পটলের
আকৃতির মতো। এই রকম লম্বা পথের কারনে এক একটি ধূমকেতুর সূর্যকে একবার প্রদক্ষিন করতে
কয়েক হাজার থেকে কয়েক লক্ষ বছর সময় লাগে। এমন অনেক ধূমকেতু আছে যাদের এখনো পর্যন্ত
একবারই দেখা গিয়েছে,তারপর মহাশূন্যে উধাও হয়ে গিয়েছে। যে সব ধূমকেতুর কক্ষপথ উপবৃওকার (Ellipse) তাকে ঠিক নির্দিস্ট সময় পরপর সৌরজগতে ফিরে আসতেই হবে,
এদেরকে বলে প্রত্যাবর্তনশীল (Periodic) ধূমকেতু,এইসব ধূমকেতুর গতিমাত্রা কেপলারের সুএ মেনে চলে।
আবার কোন কোন ধূমকেতুর কক্ষপথের উৎকেন্দ্রকতা বৃদ্ধি পেয়ে এমন একটি অবস্হায় পৌছাতে পারে,তখন এর কক্ষপথ বন্ধ না হয়ে মুক্ত হয়ে পড়ে,তখন একে বলা হয় অধিবৃও (Parabola) অথবা পরাবৃও (Hyperbola)। এরকম ধূমকেতুর বেলায় এ অবস্হার সৃস্টি হলে সেই ধূমকেতুকে হয়তো বা এখনো পর্যন্ত একবার দেখা গিয়েছে, সে আবার আদৌ আসবে কিনা সে সম্পর্কে নির্দিস্ট করে কিছুই বলা চলে না। এই রকম ধূমকেতুকে বলা হয় অপ্রত্যাবর্তনশীল (Non-periodic) ধূমকেতু। আজ পর্যন্ত যত ধূমকেতুর বৈন্গানিক গবেষনা হয়েছে,তাদের এই দুই শ্রেনীতে মাএ বিভক্ত করা যায়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে,ধূমকেতুর পরিক্রমন পথ ও পরিক্রমনকাল নির্নয় করা খুব কঠিন (একে নির্নয় করতে হলে একটা সময়ের ব্যাবধানে আকাশে ধূমকেতুটির অন্তত তিনটি অবস্হান নির্ভূলভাবে জানা খুবই জরুরী)।
এর মধ্যে প্রত্যাবর্তনশীল ধূমকেতুদের আবার তিন শ্রেনীতে ভাগ করা যায়- যেমন
1.স্বল্পমেয়াদী (Short-Period) ধূমকেতু-এরা 3.3 থেকে 20 বছরের মধ্যে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিন করে (এখানে একটা জিনিস খেয়াল করতে হবে,ধূমকেতু যখন সূর্যকে পরিক্রমন করে, তখন কিন্ত সূর্যকে ঠিক মাঝখানে রেখে ঘোরে না,সূর্য থাকে উপবৃত্তের একটু কোনের দিকে,যাকে বলা হয় থাকে উপবৃত্তের নাভি (Focus)।
এই সল্পমেয়াদী ধূমকেতুগুলো হল অনুজ্জল এবং এদের কোন লেজের উৎপক্তি হয় না। এই রকম একটি স্বল্পমেয়াদী ধূমকেতু হল "এন্কের ধূমকতু" এটি 1786 সালে আবিস্কার করা হয়েছিল। আজ পর্যন্ত যত ধূমকেতু আবিস্কৃত হয়েছে,তার মধ্যে এই ধূমকেতুটির পরিক্রমনকাল হল সবচেয়ে কম 3.3 বছর। এটি আবিস্কারের পর থেকে এ পর্যন্ত 50 বারেরও বেশী এটি পৃথিবীর আকাশে দেখা দিয়েছে।
এই সব ধূমকেতুর অপসূর (Aphelion) অবস্হান বৃহস্পতির কক্ষপথের বাইরে কখনো যায় না।
2.মধ্য মেয়াদী (Medium-period) ধূমকেতু: এদের কক্ষপথ আরও বিস্তৃত হয়ে থাকে এবং অপসূর (Aphelion) অবস্হান ইউরেনাস গ্রহের কক্ষপথের কাছাকাছি চলে যায়। এদের কক্ষপথ
পরিক্রমনকাল সাধারনত 20 বছর থেকে আরম্ভ করে প্রায় 70 বছর পর্যন্ত ধরা হয়। এরকম একটি ধূমকেতু হলো "ক্রমেলিন" (Crommelin) এর পরিক্রমন কাল 28 বছর।
3.দীর্ঘমেয়াদী (Long-Period) ধূমকেতু: এইসব ধূমকেতুর পরিক্রমনকাল 60 বছর থেকে আরম্ভ করে 164 বছর পর্যন্ত।
এই শ্রেনীর ধূমকেতুর মধ্যে "হ্যালীর" ধূমকেতু হলো সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যে। এটি নির্দিস্ট সময় পরপর ফিরে আসে 1986 সালে এটি শেষ সূর্যকে প্রদক্ষিন করে গেছে আবার দেখা যাবে 2061 সালে।
অপ্রত্যাবর্তনশীল ধূমকেতু: এই শ্রেনীতে আছে অনেক উজ্জল এবং অনুজ্জল ধূমকেতু। এই শ্রেনীর ধূমকেতুর মধ্যেও এমন অনেক ব্যাপার আছে, যার অধিবৃও বা পরাবৃও পথে পরিক্রমন না করে উপবৃওকার পথেই পরিক্রমন করছে,কিন্ত পরিক্রমনকাল কখনো কখনো কয়েক কোটি বছর পেরিয়ে
যায়,তাই এরকম ধূমকেতুকেও অপ্রত্যাবর্তনশীল শ্রেনীতেই ফেলা হয়। তার কারন এর পুনরাগমনের
পূর্বাভাস দেয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়,তাই এদের পরিক্রমনপথ ঠিক কি রকম তা বলা সহজসাধ্য হয়ে উঠে না।
এই রকম দুটি ধূমকেতু হলো 1973 সালে আবিস্কৃত কোহুতেক (Kohoutek) এটি সূর্যকে একবার পরিক্রমন করতে 75,000 হাজার বছর সময় নেয়। 1914 সালে দেখা গিয়েছিল ধূমকেতু ডেলাভ্যান (Delaven) কে এর পরিক্রমনকাল নির্নয় করে দেখা গেছে,এটি আবার 2 কোটি 40 লক্ষ বছর পরে আবার ফিরে আসবে। কাজেই এর সম্পর্কে এইটুকু বলা যায় যে বহু বহু বছর পর্যন্ত একে আর পৃথিবীর আকাশে দেখা যাবে না।
এমন দেখা গেছে যে কোন বৃহৎ গ্রহের টানে ধূমকেতুর অধিবৃওকার কক্ষপথ ছোট হয়ে গিয়ে উপবৃওকার হয়ে গিয়েছে। এই ব্যাপারে অগ্রনী ভূমিকা রাখে গ্রহরাজ বৃহস্পতি,সৌরজগতের সব গ্রহের সম্মিলিত ভরের চেয়ে বৃহস্পতির একার ভর প্রায় আড়াইগুন বেশী,আর পৃথিবীর ভরের 318 গুন বেশী।
এই গ্রহের টানে বেশ কয়েকটা ধূমকেতু এমন দশা প্রাপ্ত হয়েছে। প্রত্যাবর্তনশীল- সল্পমেয়াদী প্রায় 24 টিরও বেশী ধূমকেতু এই গ্রহ পরিবারের অন্তর্গত। এইসব ধূমকেতুর অপসূর অবস্হান কখনোই বৃহস্পতির কক্ষপথ পেরিয়ে যায় না-এদের বৃহস্পতি তার নিজের কক্ষের মধ্যে বন্দী করে রেখে দিয়েছে।
আবার এমনও হতে পারে বৃহৎ কোন গ্রহের টানে কোন ধূমকেতু একবারে ভেন্গে টুকরা টুকরা হয়ে
যায়,এই রকম একটি ধূমকেতু হলো (Biela`s),1845 সালে দেখা গেল ধূমকেতুটি ভেন্গে দুখন্ড হয়ে গিয়েছে।
মানব ইতিহাসের বিখ্যাত কিছু ধূমকেতু: 1680 সালের বিখ্যাত উজ্জ্বল ধূমকেতু এটি জার্মান জ্যেতির্বিদ গটফ্রায়েড কার্চ এটি আবিস্কার করেন।
এটি এতই উজ্জ্বল ছিল যে একে দিনের বেলায়ও দেখা গেছে,এবং এর লেজটি আকাশের অর্ধেক জায়গা জুড়ে ছিল।
1743 সালে ডি চেস্যু নামে একটি ধূমকেতু দেখা গিয়েছিল,এবং এটির ছয়টি আলাদা আলাদা লেজ
ছিল।
1811 সালে যে ধূমকেতুটি দেখা গিয়েছিল,সেটি আজ পর্যন্ত যত ধূমকেতু দেখা গেছে তাদের মধ্যে এর কোমার ব্যাস ছিল সবেয়ে বড় প্রায় 20 লক্ষ কিঃমিঃ। এর লেজের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় 15 কোটি কিঃ মিঃ,আর সেটি চওড়ায় ছিল প্রায় আড়াই কোটি কিঃমিঃ। এর পরিক্রমন কাল হল 3,000 বছর।
এটি আবিস্কার করেন Honoré Flaugergues।
1858 সালে ডোন্যাটি নামের আরও একটি উজ্জ্বল ধূমকেতু দেখা গিয়েছিল,এটি পৃথিবীর আকাশে তিন মাস দেখা গিয়েছিল এর লেজের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় 8 কোটি কিঃমিঃ। এর পরিক্রমকাল প্রায় 2,000 বছর এটি আবস্কার করেন গিয়্যামাটিস্টা ডোন্যাটি।
1910 সালে ট্রান্সভ্যালের হীরকখনির শ্রমিকেরা দিনের আলোতে একটি ধূমকেতু দেখতে পান,এই জন্য ধূমকেতুটির নাম দেয়া হয় দিবালোকের ধূমকেতু (Daylight comet)।
1965 সালে দেখা যায় ধূমকেতু ইকিয়া-সেকি,এর লেজের দৈর্ঘ্য এতই বড় ছিল যে তা আকাশের ছয় ভাগের এক ভাগ জায়গা দখল করে ছিল।
গত শতক এবং সাম্প্রতিক সময়ের কিছু উজ্জল ধূমকেতু হল-হেল-বপ C/1995 O1,হায়াকুতকা C/1996 B2,সবুজ ধূমকেতু লুলিন- C/2007 N3, C/2009 R1 (McNaught),Robert H. McNaught.ইনি 50টি ধূমকেতু আবিস্কার করেন। এর মধ্যে হেল-বপের দুটি লেজ ছিল একটি গ্যাস টেল অন্যটি ডাস্ট টেল।
ধূমকেতু আবিস্কার এবং নামকরন:যারা রাঁতের আকাশে ধূমকেতু খোঁজ করেন তাদেরকে কমেট হান্টার (Comet hunter) বলে। এদের দুটি উদ্দেশ্য থাকে - নতুন কোন ধূমকেতু আবিস্কার অথবা প্রত্যাবর্তনশীল কোন ধূমকেতুর পুনরাগমন হচ্ছে কিনা তা স্হির করা। ধূমকেতু খুজে বের করা খুব কঠিন কাজ এর জন্য প্রয়োজন অসীম ধৈর্য্য।
আকাশে ধূমকেতু খোজ করার ভাল সময় হল সূর্যাস্তের পরে সন্ধ্যাবেলায় এক ঘন্টা তখন পশ্চিম অথবা উওর-পশ্চিম আকাশে লক্ষ রাখতে হবে। আর সূর্যদয়ের আগে ভোররাত দুই ঘন্টা পূর্ব অথবা উওর-পূর্ব আকাশে লক্ষ রাখতেহবে। এই
কাজে আপনি 7x50,40x150,11x80 বাইনোকুলার ব্যাবহার করতে পারেন, বাইনোকুলারের ফিল্ড অফ ভিউ অনেক বড় এতে করে আপনি অনেকখানি জায়গা জুড়ে পর্যবেক্ষন করতে পারবেন। ধূমকেতু খোজার সময় আপনার বাইনোকুলারটিকে দিগন্তের কিছুটা উপরে যেকোন একটি তারাকে (মার্কার) লক্ষ্য করে বাইনোকুলারটিকে জিগজ্যাগ পদ্ধতিতে সামনে পিছনে নিয়ে খোজ করতে হবে। ধূনরাশির এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে কারন আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্র ওই দিকে,ওখানে প্রচুর তারামেঘ আছে যা পর্যবেক্ষনে বাধার সৃস্টি করবে।
সেই জন্য এই স্হানটি এড়িয়ে যেতে হবে। বর্তমানে দূরবীন দিয়ে ধূমকেতু খোজ করার সাথে সাথে, দুরবীনের সন্গে ক্যামেরা সংযুক্ত করে আকাশের ছবি তুলে সেই ছবি পরীক্ষা করে দেখা হয় যে, পরিচিত গ্রহ নক্ষত্রের মধ্যে নতুন কোন ধূমকেতুর অস্তিত আছে কিনা। এই পদ্ধতিটা বেশ জনপ্রিয় এবং কাজের,কারন ছবি তুললে একসাথে আকাশের বড় একটি এলাকা পর্যবেক্ষন করা যায়,তাছাড়া দৃস্টিকে অনেক সময় ফাকি দেয়া যায় কিন্ত ক্যামেরার চোখকে সম্ভব নয়। বলতে পারেন ধূমকেতু খুজে বের করে লাভ কি? লাভ হল এই যে আপনি যদি নতুন কোন ধূমকেতু আবিস্কার করেন তবে ধূমকেতুটির নাম তার নামে হবে। প্রতি বছরই নতুন নতুন ধূমকেতু আবিস্কার হয়,
আর আজ পর্যন্ত প্রায় 700টির উপরে ধূমকেতু আবিস্কার হয়েছে যার বেশিরভাগ আবিস্কার করেছে সৌখীন জ্যেতির্বিদরা।
তাই আন্তর্জাতিক আ্যস্ট্রনমিক্যাল ইউনিয়ন (IAU) ধূমকেতুর নাম রাখার জন্য একটি পদ্ধতি প্রবর্তন করেছে। যে ব্যাক্তি নতুন ধূমকেতু আবিস্কার করবেন তার নামে ধূমকেতুটির নামকরন করা হবে,তবে সর্বোচ্চ দুইজনের নামে (একটি নতুন ধূমকেতু যদি একইসাথে দুজন ব্যাক্তি আবিস্কার করে তা পৃথিবীর যে প্রান্তে বসেই করুক না কেন) নামকরন করা হয়। এর অধিক হলে তখন তার নামকরন করা হয় যেই বছরে ধূমকেতুটি আবিস্কার হয়েছে সেই বছর এবং তার সাথে এক একটি ইংরেজী অক্ষর যোগ করে যেমন-1976a,1976b মানে হল 1976 সালে আবিস্কৃত প্রথম ও দ্বিতীয় ধূমকেতু
এর পরে ধূমকেতুটির পরিক্রমনপথ ও অনূসর (Perihelion passage) অবস্হান যখন সঠিকভাবে নির্নয় করা হয়,তখন এদের নামকরন করা হয় সালের সাথে রোমান হরফ জুড়ে। আবার যে সব ধূমকেতু নির্দিস্ট সময় পরপর সূর্যের নিকটতম অবসহানে আসে,সেইসব প্রত্যাবর্তনশীল (Periodic) ধূমকেতুকে বোঝাবার জন্য ধূমকেতুটির নামের আগে P অক্ষরটি (Periodic) যুক্ত করা হয় যেমন-P/Halley।
তবে নামকরনের বেলায় এর ব্যাতিক্রম ও হয়েছে হ্যালীর ধূমকেতুর বেলায়,ঘটনাটি একটু খুলে বলি।
1682 সালে জার্মান জ্যেতির্বিদ জর্জ ডর্ফেল রাতের আকাশে একটি ধূমকেতু পর্যবেক্ষন করেন। এই ধূমকেতুটি ছিল অনেক বড় এবং উজ্জল সারা পৃথিবীর মানুষের সাথে বিখ্যাত জ্যেতির্বিদ এডমন্ড হ্যালিও একে লক্ষ করলেন তখন তার বয়স 26 বছর,তখন তিনি চিন্তা করলেন ধূমকেতুর চলাফেরার কি কোন নিয়ম আছে,যেমন আছে গ্রহদের বেলায় এই ভেবে তিনি সেই ধূমকেতুটির সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করলেন,এবং এইসব তথ্য নিয়ে বিখ্যাত বিন্গানী আইজ্যাক নিউটনের কাছে গেলেন,নিউটন ইতিমধ্যে মহাকর্ষের বিধি আবিস্কার করে ফেলেছেন। এবং নিউটনের সাহায্যে নিয়ে হ্যালি সেই ধূমকেতুটির পরিক্রমন পথ পরিক্রমনকাল ইত্যাদি সঠিকভাবে নির্নয় করতে সর্মথ হলেন। এবং তিনি গননায় দেখতে পেলেন এই ধূমকেতুটির সূর্যকে একবার পরিক্রমন করতে 75-76 বছর সময় লাগতে পারে। এরপর শুরু হলো অন্যরকম গবেষনা তিনি সেইসময় দেশ বিদেশের ইতিহাস খুজতে লাগলেন যে অতীতে এই রকম কোন বড় এবং উজ্জ্বল ধূমকেতু দেখা গিয়েছিল কিনা।
এবং তিনি খুজে পেলেন যে অতীতে 1531 ও 1607 সালে এমন দুটি উজ্জ্বল ধূমকেতুর আর্ভিবাবের বিবরন,যাদের সাথে 1682 সালের ধূমকেতুটির মিল আছে।
এরপরেই হ্যালি ঘোষনা করলেন তার গবেষনার চূরান্ত ফল। তিনি বললেন 1531 এবং 1607 সালে যে দুটি ধূমকেতু দেখা গিয়েছিল, তারা আলাদা কোন ধূমকেতু নয়,1682 সালে যে ধূমকেতু টি পৃথিবীর আকাশে দেখা গিয়েছিল তা নতুন কোন ধূমকেতু নয়, এটি 1531 এবং 1607 সালে দেখা যাওয়া ধূমকেতুটির পূর্নাআর্বিভাব। এবং হ্যালী তখন বলেলেন এই ধূমকেতুটিকে আবার 1758 সালে দেখা যাবে। এবং 1758 সালে বড়দিনের রাতে সেই ধূমকেতুটি আবার পৃথিবীর আকাশে দেখা দেয়,এবং হ্যালির গননা র্নিভূল প্রমান হয়।
কিন্ত হ্যালি এটা দেখে যেতে পারেনি তার আগেই 1742 সালে তিনি পরলোকগমন করেন। আর হ্যালির এই র্নিভূল গননার জন্য এই ধূমকেতুটির নামকরন করা হয়েছে তার নামে। ধূমকেতু যিনি আবিস্কার করেন তার নামেই ধূমকেতুর নাম রাখার প্রথা প্রচলিত। শুধুমাএ হ্যালির ধূমকেতুর বেলায় এর ব্যাতিক্রম হয়েছে। প্রত্যাবর্তনশীল ধূমকেতুর মধ্যে হ্যালি ব্যাতিক্রম এটি আবিস্কারের পর থেকে ঠিক নির্দিস্ট সময়ের পর পর পৃথিবীর আকাশে আসে।
এটি শেষ এসেছিল 1986 সালে,এবং আবার আসবে 2061।
আর এপর্যন্ত যত ধূমকেতু আবিস্কার করা হয়েছে তার বেশিরভাগই আবিস্কার করেছে সৌখিন জ্যেতির্বিদরা। অতএব ধূমকেতু খোজার কাজে নেমে পড়ুন যদি ভাগ্য সহায় হয়,এবং নতুন একটি ধূমকেতু যদি আবিস্কার করে ফেলেন তবে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে যাবেন।
নতুন একটি ধূমকেতু আবিস্কারের পড়ে প্রথম যে কাজ গুলো করতে হবে তা হলো-আপনি যদি একটি ধূমকেতু দেখতে পান তহলে প্রথমেই যে মন্ডল বা আকাশের যে স্হানে এটাকে দেখতে পেয়েছেন তার স্হানাংন্ক বিষুবাংশ ও বিষুবলম্ব (RA) (DEC) র্নিভূলভাবে নোট করুন। এরপর চার রাত বস্তুটিকে পর্যবেক্ষন করুন যদি এটি ধূমকেতু হয় তাহলে দেখতে পাবেন এটি তারার পটভূমিতে অবস্হান পরিবর্তন করছে।
তবে সবচেয়ে ভাল হয় অন্তত পরপর চার রাত ধূমকেতুটির ছবি তুলতে পারলে,কারন ছবি তুললে এটির গতি পরিবর্তন এবং
এর সর্ম্পকে আরো বিস্তারিত বুঝতে পারবেন। (যদি নতুন কোন ধূমকেতু আপনি আবিস্কার করেন সেক্ষেত্রে আপনাকে ছবি তুলতেই হবে)।
এরপরে যা যা করতে হবে-
1.আপনার নাম এবং ঠিকানা (ই-মেইল) এবং পর্যবক্ষনের স্হান।
2.পর্যবেক্ষনের তারিখ এবং সময়,(UT ইউনির্ভাসেল টাইম),এবং কোথা থেকে ছবি তুলেছেন সেই স্হানের নাম।
3.দূরবীনের সাইজ,সাথে ছবি তোলার বর্ননা যেমন- exposure length, time of exposure।
4. ধূমকেতুটির আকার, কোন প্রকার লেজ দেখা গিয়েছে কিনা,উজ্জলতা, এবং ধূমকেতুটি তারার পটভূমিতে গতি পরিবর্তন করছে কিনা সেই ছবি (আপনি পরপর চার রাত ধূমকেতুটির ছবি তুলেন এবং যদি এটি ধূমকেতু হয় তাহলে আপনি এর পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন)। এবং এই
গতি কোন দিকে তার দিন এবং ঘন্টা প্রতি হিসাব। মনে রাখবেন ধূমকেতু যখন সূর্য থেকে অনেক দুরে থাকে এর কোন লেজ থাকে না। এই সব তথ্য আপনাকে ই-মেইল করে পাঠাতে হবে আন্তর্জাতিক জ্যেতির্বিদ্যায় সংস্হায় (IAU) । আপনি এইসব তথ্য পাঠানোর আগে ভালভাবে যাচাই করে নিবেন এটি কি আসলেই নতুন কোন ধূমকেতু,না কোন গ্রহানু না অন্য কিছু আপনি এই ব্যাপারে জানতে পারবেন IAU থেকে প্রকাশিত ইয়ারলি কমেট হ্যান্ডবুক থেকে।
আপনার পাঠানো তথ্যর উপর নির্ভর করে IAU তিন থেকে চারটি মানমন্দির থেকে আপনার উল্লেখিত দিকে বড় বড় দূরবীন দিয়ে নতুন বস্তুটিকে পর্যবেক্ষন করবে, এবং তাদের চার্টের সাথে মিলিয়ে দেখবে এটি আবার সৌরজগতে ফিরে আসা কোন ধূমকেতু কিনা বা নতুন বা পুরাতন কোন
গ্রহানু কিনা এবং এইসব পরিক্ষার পর যদি দেখা যায় যে এটি নতুন একটি ধূমকেতু তখন তারা আনুস্ঠানিকভাবে ঘোষনা দিবে,এবং সাথে আপনার নাম যদি আপনি এটি আবিস্কার করেন।
ছবি তোলা: ছবি তুলতে হলে প্রথমেই আপনাকে একদম অন্ধকার স্হান খুজে নিতে হবে,যেখানে শহরের লাইটের আলো নেই। সাথে নিতে হবে একটি ট্রিপড ক্যামেরা আটকানোর জন্য,এবং কেবল রিলিজ দীর্ঘ সময় এক্সপোজ দেবার জন্য। আর ক্যামেরা হল ডিজিটাল এস এল আর ক্যামেরা (DSLR),বর্তমানে ফ্লিম SLR ক্যামেরার ব্যাবহার নেই বললেই চলে,আপনি Canon এর EOS সিরিজের 550D,450D,60D,10D,5D MrkII মডেলের ক্যামেরা ব্যাবহার করতে পারেন,এবং ফোক্যাল লেন্থ 28 মিঃমিঃ থেকে 200 মিঃমিঃ হলে ভাল হয়। ক্যামেরার আ্যপারচার নিম্নতম f নাম্বারে রাখতে হবে।
দীর্ঘ সময় এক্সপোজ দেবার জন্য ক্যামেরাটিকে B সেটিং এ রাখতে হবে। ছবি তোলার আগে ক্যামেরার লেন্সটিকে "ইনফেনিটি" দূরত্বে ফোকাস করে নিতে হবে। আর এক্সপোজার যদি 10 সেকেন্ড থেকে 10 মিনিট সময়ের মধ্যে হয় তাহলে মোটামুটি ভাল ছবি আসতে পারে। আর এক্সপোজ এক মিনিটের বেশী 2 মিনিট হলে তখন এ্যাপারচার f/2.8 রাখা উচিৎ। আর এক্সপোজ
যদি এর চেয়ে বেশী সময় হয় তখন আপনার প্রয়োজন হবে অটো ট্রাকার ট্রিপড,কারন পৃথিবীর আন্হিক গতির কারনে আকাশের খ-বস্তুর স্হান পরিবর্তন হয়,এর হার হলো ঘন্টায় 15 ডিগ্রী,
এই কারনে অটোট্রাকার ছাড়া বেশী সময় এক্সপোজ দিলে ছবি অস্পস্ট এবং ঝাপসা হবে,ট্রাকার থাকলে পৃথবীর এই গতির সাথে তাল মিলিয়ে ক্যামেরাও ঘুরবে যার ফলে আপনি ইচ্ছে মত এক্সপোজ দিতে পারবেন।
এছাড়াও আপনি দূরবীনের সাথে ক্যামেরা সংযুক্ত করে ছবি তুলতে পারেন,এই ব্যাপারে (আ্যস্ট্রোফটোগ্রাফি) উপর বিশদ আলোচনা করবো,তবে আমি এর ছবি দিয়ে দিলাম।
ধমকেতুর উৎপত্তি ও বির্পযয় :ধূমকেতুরা মহাকাশের কোথা থেকে আসে,এই তর্কের সঠিক উওর আজো পাওয়া যায়নি। তবে পৃথিবীতে যতগুলি তত্ত্ব চালু আছে তার মধ্যে জ্যেতির্বিদ জন ঊর্টের ত্বত্তটি মোটামুটি গ্রহনযোগ্য,তার মতে সৌরজগতের সীমানার বাইরে বস্তুর এক বিশাল এলাকা আছে যাকে ঊর্ট ক্লাউড (Ort cloud) বলে। দূরত্ব বেশী হবার কারনে এখানে সূর্যের আর্কষন খুবই কম
এর পাশ দিয়ে অন্য কোন গ্রহ বা নক্ষএ যাবার সময় তাদের মাধ্যার্কষন শক্তির টানে এখান থেকে বস্তু ছিটকে সৌরজগতের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং সূর্যের আর্কষনে আটকা পড়ে ধূমকেতু হিসাবে আর্বিভূত হয়।
ধূমকেতুকি পৃথিবীর জন্য কোন বিপদের কারন হতে?পারে ইতিহাস তাই বলে 1908 সালে 30শে
জুন রাশিয়ার সাইবেরিয়া অন্চলের টুন্গুনাশা জন্গলে প্রচন্ড শব্দ ও আলোর ঝলকানি দিয়ে একটি
বস্তু মাটিতে আছড়ে পরে এতে প্রায়, 32 কিঃমিঃ এলাকা জুড়ে সব বন জন্গল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এরপরে বিন্গনীরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলেন যে ঐ স্হানের ছয় কিঃমিঃ ওপরে একটি ছোট ধূমকেতুর সাথে পৃথিবীর সংর্ঘষ হয়েছিল। কাজেই বড় আকারের কোন ধূমকেতু পৃথিবীর বিপদের কারন হতে পারে যদি তা জনবহুল কোন এলাকায় পড়ে,তবে চিন্তার কারন নেই মানুষের হাতে যে প্রযুক্তি আছে তাই দিয়ে যে কোন ধূমকেতুকে পৃথিবীর কক্ষপত থেকে হটিয়ে দিতে পারবে।
ধমকেতুদের নিয়ে বিন্গানীদের আগ্রহ অনেক তাদের মতে এই ধূমকেতুতে চড়ে মহাকাশ থেকে পথিবীতে প্রানের বীজ এসেছিল, এবং এছাড়া ও ধূমকেতুতে এমন কিছু মৌলের সন্ধান পাওয়া
গেছে যা পৃথিবীতে নেই। এই জন্য ধূমকেতুর গঠন এবং এইসব সম্পর্কে ভালভাবে জানার জন্য 10/2/2006 সালে টেম্পল নামক ধূমকেতুতে ডিপ ইম্পপ্যাকট নামক একটি যানের সাহায্যে একটি বড় গোলাকার ধাতব বস্তু ছুড়ে মারা হয়েছিল এবং এতে যে বিস্ফোরনের ফলে পদার্থ ছিটকে
উঠেছিল তার থেকে বিন্গানীরা অনেক কিছু জানতে পেরেছে।
কাজেই ধূমকেতু পৃথিবীর জন্য যতই বিপদের কারন হোক না কেন এদেরকে অস্বীকার কোন উপায়,
নেই কারন এরাও সৌরজগতের আদি বাসিন্দা।
বিঃদ্রঃ:লেখাটি অনেক বড় হয়ে গেল,ছোট করে লিখতে পারতাম তাতে অনেক কিছু বাদ পড়ে যেত এখন ধূমকেতু সর্ম্পকে মোটামুটি একটা ধারনা পাওয়া গেল।
ছবি সৌজ্যন্যে গগুল: ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।