কিছু মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে। কিছু মানুষ স্বপ্নটা সত্যি করার জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠে। জীবন আপনার কাছে সেভাবেই ধরা দিবে আপনি যেরকম থাকবেন।
(নক্ষত্রের গল্পটা যাকে নিয়ে লেখা তার সাথে ব্যাক্তিগত সম্পর্ক না থাকার কারনে ইন্টারনেট এবং বইয়ের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। নিজের মত বর্ননা করার চেস্টা করেছি)
তার জন্মের পর তার বাবা মা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন।
কথাই যে বলেনা তাদের ছেলে। বয়স এক দুই তিন পেরিয়ে যখন চার হল তাকে একদিন স্যুপ খেতে দেওয়া হল। সেদিন প্রথম কথা বের হল তার মুখ দিয়ে। “স্যুপটা গরম ছিল”। তার এই নরম কথায় সবাই চমকে গেল।
কিরে বাপ!! এতদিন কথা বলনাই কেন? তার সোজা সাপটা জবাব, কথা বলার প্রয়োজন হয়নি, তাই বলা হয়নি। সব ব্যাপারে তার অতিরিক্ত ঢিলা ঢালা ভাব বয়স্কদের বেশ বিরক্ত করত। কারো মনেই সে তেমন দাগ কাটতে পারত না।
তার পিতা ছিলেন ব্যবসায়ী। শেক্সপিয়ার যত ভাল ডাক্তার ছিলেন তার বাবা সেরকম ভাল ব্যবসায়ী ছিলেন।
কখনই কোন কিছুতে লাভ করতে পারতেননা। সেই ব্যবসায়ীর পুত্র জন্মের পর থেকেই অন্তরমুখী। নীরব, স্বাপ্নিক প্রকৃতির বালক। প্রথম স্কুলের বিরক্তিকর শৃংঙ্খলা সহ্য না হওয়ায় স্কুল পরিবর্তন। সেখানেও একই অবস্থা।
বার বছর বয়সে কোথেকে একটি জ্যামিতি বই পেলেন। সে বইয়ের উপপাদ্যের যুক্তিগুলা তখন থেকেই তার সাথে। বাকি জীবন সেই যুক্তি থেকে আর বের হন নাই।
যেহেতু তার ব্যবসায়ী বাবার ব্যাবসা সব সময় অসফল হওয়াই লাগবে তাই তার বয়স যখন ১৫ তখন তাদের দেশ ছেড়েই অন্য জায়গায় যাওয়া লাগল। আরও একটা কারন ছিল তার স্কুলের শিক্ষকরা বলল তাকে দিয়ে কিছুই হবেনা।
সে খালি স্কুলের ঝামেলাই করছে। নতুন জায়গা তার খুব পছন্দ হল। নতুন জায়গায় তার বাবা ব্যবসার কোন হেরফের হল না। হবেও না জানা কথা। তিনি ফেডেরাল টেকনোলোজি কলেজ এ ভর্তি হতে গিয়েও পারল না।
কিভাবে পারবে? জিমনেসিয়াম এর ডিপ্লোমা কোর্স নাই। আর আমাদের সবার মত ভর্তি পরীক্ষায় টিকার মত সে না (!)। টিকল ও না। তাকে আরেকটা স্কুল এ ভর্তি করা হল।
সেইখানে সব কিছুই গনিত আর পদার্থবিজ্ঞান এর বিষয় তাই ধারনা করা হয়েছিল এখানে সে ভাল করবে কিন্তু গনিতের এত শাখা দেখে সে বুঝেই উঠতে পারলনা কোনটা তার লাগবে কোনটা লাগবেনা।
শুধু মাত্র পদার্থবিজ্ঞান এই তার তেমন সমস্যা হল না। কিন্তু ডিসিপ্লিন জিনিসটা সহ্য করার মত লোক সে না। বাসায় বসে এক বন্ধুর নোট নিয়ে পড়ালেখা করেই পরীক্ষায় পাস করতেন।
স্নাতক পাস করলেন কিন্তু এরকম অযোগ্য লোককে কেউ চাকরিতে রাখলনা। কোনরকমে পেটেন্ট অফিসে পেটেন্ট-পরীক্ষক তৃতীয় শ্রেণি চাকরি পাওয়া গেল সোজা কথায় কেরানির চাকরি।
তারপর ১৯০৫ সালে বের করলেন তিনটি প্রবন্ধ। এর যে কোন একটার জন্যই সে আসলে আমর হয়ে যেত।
প্রথম, প্ল্যাঙ্কের শক্তির কোয়ান্টান ধারনাটা আরেকটু এগিয়ে দিলেন। আলোক-কনার ধারনা সৃষ্টি করলেন। ফটো ইলেক্ট্রিক ক্রিয়া এর ব্যাখ্যা করা সম্ভব হল।
দ্বিতীয়, ব্রাউনীয় গতির উপর অনুর বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়ে প্রবাহীর মধ্যে ভাসমান বস্তুকনার গতি থেকে অনুর আকৃতি সম্পর্কে ধারনা।
তৃতীয়, আপেক্ষিকতা। সময় আর অবস্থান সম্পর্কে আমাদের ধারনা পালটে দেওয়ার জ্ঞান।
২৬ বছর বয়সে তার এইসব আবিষ্কার ধারনা জগতে তোলপাড় এনে দিল। মজার ব্যাপার এটাই এইগুলা একজন কেরানীর কাজ।
পদার্থবিজ্ঞানের প্রচলিত গবেষনা জগতের সাথে তার কোন সম্পর্কই নাই বলা যায়। ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত সে কোন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী কে নাকি চোখেই দেখেনি। (আমি দেখেছি, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ ঢাবি তে নতুন খুলেছে। আমার কয়েকজন বন্ধুবান্ধব পড়ে, মাস্টার্স কোর্স অবশ্য। জোক করলাম আর কি।
)
তাকে নোবেল দেওয়া হবে কি হবেনা সেটা নিয়ে দশ বছর ধরে খালি আলোচনাই হয়। দুইজন সরাসরি বিরোধতা করে। তারপর ব্রিলোয়ার নামক একজন বলেন, “ আজ থেকে ৫০ বছর পর যখন লোকে শুনবে তাকে নোবেল দেওয়া হয় নায় তখন সবাই কিন মনে করবে?” কথা সেটাই। আমিও যে তাকে নিয়ে লিখতে বসলাম তার নোবেলটা যে খুবি দরকার। এবং সেটা তাকে দেওয়া হল।
তবে আপেক্ষিকতার জন্য নয়। সেটা যে অনেকেই বোঝেনা। সেটর পরীক্ষালব্ধ কোন প্রমান যে নেই। তিনি অবশ্য ভাল একটা উদাহরন দিয়েছেন যাতে আমরা অন্তত পক্ষে কিছুটা বুঝিব। এক মিনিট এক কাপ গরম চা ধরে রাখলে মনে হবে অনন্তকাল সময়।
১ ঘন্টা কোন সুন্দরী মেয়ের হাত ধরে রাখলে মনে হবে ১ মিনিট ও হয়নি। এটাই আপেক্ষিকতা।
নিজের বাসার ফোন নম্বরটা অবশ্য তিনি মনে রাখতেন না। যে জিনিস ডায়েরিতে লেখা যায় সেটা মনে রাখার দরকার টাই বা কি!! সারাজীবন শান্তির জন্য তিনি সংগ্রাম করেছেন। জার্মানীর উগ্রতাবাদ পছন্দ ছিলনা তাই পরে সুইস এবং আমেরিকার নাগরিক হয়েছেন।
জার্মানি এর নাতসি-রা তাকে অনেক খুঁজেছে পরে বেলজিয়াম এ পালিয়ে ছিলেন। ইশ্বর এ তিনি বিশ্বাস করতেন কিন্তু ইশ্বর সকলকে শাস্তি দেওয়ার জন্য কোথাও বসে আছেন এ ব্যাপারে তার আস্থা ছিলনা।
তিনি মারা যাওয়ার পর এক খবরের কাগজে একটা দারুন ছবি ছাপা হয়। মহাকাশের ছবি। মহাকাশ ভরা তারা আর গ্রহ নক্ষত্র।
তার মধ্যে একটি নক্ষত্রের গায়ে লেখা “এলবার্ট আইন্সটাইন”। তিনি সেখানেই বাস করতেন।
সাধারন মানুষের কাছে তার নাম যে শ্রদ্ধামিশ্রিত সম্মানবোধ জাগ্রত করে যার কোনই তুলনা হয় না। তাকে দিয়েই অনন্ত মহাবিশ্বে এই পৃথিবীর পরিচয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।