আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি।

দৃষ্টি সম্প্রসারিত করুন। কারো অজান্তে এমন একটা কাজ আপনি করছেন যা আপনার বাবা-মা সমর্থন করেনা। কিংবা আপনি বাবা-মা হলে আপনার সন্তানের ক্ষেত্রে যে কাজ আপনি আশা করেন না তা আপনি করবেন না। ছোট একটা গল্প দিয়ে শুরু করবো। এক গরীব কৃষক একদিন জমিতে চাষ করতে গিয়ে শক্ত একটা ধাতব টুকরা পেলেন।

কৌতুহল হয়ে হাতে নিয়ে দেখলেন বেশ ভারী মনে হয়। ভাবলেন একটু ধুয়ে দেখি-কী জিনিস। পাশেই এক পুকুর ছিল। পুকুরের পানিতে একটু ধুতে গিয়েই দেখলেন উজ্জল-চকচকে সোনালী রং। একটু পরই তিনি নিশ্চিত হলেন এটা একটা সোনার টুকরা।

কৃষকের খুশি আর ধরেনা। ভাবলেন বাড়ীতে গিয়ে বৌয়ের কাছে কীভাবে উপস্থাপন করা যায়। বৌকে আরেকটু বেশী চমকে দিতে কৃষক সোনার টুকরাটি খুব জোরে জোরে ঘষা দিতে শুরু করলেন। যেন এটা সবচেয়ে বেশি চকচকে আর সুন্দর হওয়া চাই। মাটির নিচে পড়ে থাকা একটা সোনা তার জন্য যথষ্টে তা যাই হোকনা কেন তা তিনি বেমালুম ভুলে গেলেন।

হঠাৎ.............................. হাত ফসকে সোনার টুকরাটি পানিতে পড়ে যায়। বিষন্ন-বিমর্ষ কৃষক অনেক্ষণ পুকুর পাড়ে বসে থাকলেন মন খারাপ করে। আর একটাই কথা ভাবতে লাগলেন। "কী দরকার ছিল অতটা চকচকে করার"। পাওয়ার চেয়ে না পাওয়া ভালো ছিল।

শুধু শুধু মনটা খারাপ আর কষ্ট। সেদিন আর কাজ না করে বিমর্ষ কৃষক বাড়ী ফিরে আসলো। কৃষকের চেহারা দেখেই বৌ ধরে ফেলেছে-তার স্বামীর কিছু একটা হয়েছে। মাযাভরা কন্ঠে জিজ্ঞাসা করতেই কৃষক সব ঘটনা খুলে বললো। আবার বৌয়ের একই উক্তি "না শুনলেই ভালো ছিল"।

আজ এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের দিনে আমার ছিলাম সেই কৃষক। সোনার টুকরা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট। ২ টা ৩০ মিনিটে ফলাফলের ঘোষনা দিয়েই সাত খুন মাফ। ২ টা ১৫ থেকেই আমার মত অনেকে ঢুকতে পারেনি সদ্য প্রস্ফুটিত ডিজিটাল বাংলাদেশের শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে। ঘন্টাখানেক চেষ্টার পরেও যখন মাত্র একটা ফল নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়, তখন আমার অবস্থা কৃষকের মতই হয়েছিল।

আজ হয়তো লিখতে বসেছি কিন্তু এটা নতুন নয়। প্রতিবছর রেজাল্টের দিন শিক্ষা বোর্ডের সাইট গন্ডারের চামড়া পড়ে শুয়ে থাকে। গুতা দেওয়ার দিনকয়েক পর টের পায়। আমরা যারা ডায়াল-আপ মডেম এর ধীরগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করি তাদের কাছে পরীক্ষার সাথে সাথে ফল পাওয়া আকাশ কুসুম। কয়েকদিন ব্লগে চেঁচামেচি করি।

তারপর আবার ঠান্ডা। একবছর পর আবার ভোগান্তি। অনলাইনে বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা আর মোবাইলে টাকা পাঠানোর পদ্ধতি জুড়ে দিলেই "ডিজিটাল বাংলাদেশ" হওয়া যায়না। আমাদের মত ভুক্তভোগীরা বুঝলেও বুঝেনা বেচারা শিক্ষা বোর্ড। একদিনে এত গুতা খেতে খেতে হয়তো সেও বলে "ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি"।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।