আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাবলিক কনফারেন্স

পাখি এক্সপ্রেস -স্যার, একটা জঘণ্যতম আইন হয়েছে। ফালতু স্যার, চরম ফালতু আইন। আইন বলতেছে এখন থেকে কোন রাজনৈতিক দল হরতাল ডাকতে পারবে না। হরতাল ডাকবে কেবল সাধারণ জনগণ। জেনারেল পাবলিকে স্যার! বলেন স্যার, এটা ফালতু আইন নয়? -তোমার সাথে একমত।

এটা ফালতু আইন। চরম ফালতু আইন। এরকম আইন পৃথিবীর কোথাও নাই। আমরা এ আইনের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকবো। -কিন্তু স্যার, আমরাতো রাজনৈতিক দল।

রাজনৈতিক দল হরতাল ডাকতে পারবে না। -হুমম...। -কেবল জনগণ ডাকতে পারবে। -হুমম...। -স্যার আমরা কি জনগণ হয়ে যাবো? না হলেতো হরতাল ডাকা যাবে না।

-আচ্ছা, দেশে কী পরিমাণ জনগণ আছে? -আছে স্যার! খারাপ না, ভালোই আছে। আমার সাথে প্রায়ই জনগণের সাথে দেখা হয়। গতকালও চারজন জনগণকে মতিঝিল পানির পাম্পের দিকে যেতে দেখেছি। -বেশ! তাহলে আজ কালের মধ্যে কয়েকজন জনগণকে ধরে নিয়ে আসবে। তাদের সাথে আমার জরুরী আলাপ আছে।

-একটা পাবলিক কনফারেন্স করবেন, তাই না স্যার? আর আজ কালের মধ্যে? কী যে বলেন না স্যার! সন্ধ্যার মধ্যেই আপনার সামনে এনে জনগণকে হাজির করতেছি। আপনি খালি দোয়া করে দেন। এই যে স্যার এখানে, মাথার তুলির উপ্রে খালি যায়গাটাতে একটা ফু দিয়া দেন...। স্যারের নিজস্ব কর্মচারী জনগণ খুঁজতে বেরিয়ে গেলেন। খুব কাজের লোক।

ঠিকই কয়েকজন প্রমাণ সাইজের জনগণ ধরে নিয়ে আসবেন। তারপর জনগণ যদি হরতাল ডাকতে রাজি হয়, তাহলে স্যারের টেনশন কমবে। জনগণ যতক্ষণ আসবেন না, স্যার ততক্ষণ টেনশন করবেন। টেনশন করতে করতে স্যার পায়চারি করবেন এবং সিগারেট টানবেন। (২) সারাদিন পানির পাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে তেরো জন জনগণ পাওয়া গেছে।

কিন্তু মাত্র তেরো জনকে নিয়ে স্যারের নিজস্ব কর্মচারী সংশয়ে পড়ে গেলেন। স্যারকে ফোন দিলে স্যার বললেন "তেরো জনেই চলবে। তাড়াতাড়ি নিয়ে আসো। " জনগণ পাওয়া গেছে শুনে স্যারের পায়চারি কমেছে। টেনশনও কিছুটা কমেছে।

বসে বসে জনগণের সাথে আলোচনার এজেন্ডা ঠিক করছেন। সবকিছু খাতায় টুকে নিচ্ছেন। ওইদিকে তেরো জনগণকে নিয়ে স্যারের বাসার পথে আছেন তাঁর নিজস্ব কর্মচারী। সবকিছু বুঝিয়ে দিচ্ছেন সবাইকে। -স্যার খুব ভালো মানুষ।

মা মাটি ও দেশের জন্য তাঁর অনেক টান। তিনি সব সময় মা মাটি ও দেশের কথা বলেন। তাঁর ঘরে নিজের ছবিওয়ালা বড় বড় পোস্টার আছে। সেখানেও তিনি এ কথা লিখেছেন। তিনি হচ্ছেন মা মাটি ও দেশের নেতা।

তোমরা আজ সারা রাত স্যারের বাসায় থাকবে। তোমাদের সাথে স্যার এক বিশেষ কনফারেন্সে মিলিত হবেন। এটাকে পাবলিক কনফারেন্স বলে। স্যার যখন তোমাদেরকে কথা বলতে বলবেন, তোমরা বিনয় দেখাবে। কথা বলবে না।

চেহারাটা লাজুক লাজুক করে স্যারকেই কথা বলে যেতে বলবে। স্যার যা যা প্রস্তাব করবেন, তাতে রাজি হয়ে যাবে। বিনিময়ে তোমাদেরকে স্যার উপহার দেবেন। স্যারের নিজস্ব কর্মচারীর কথা শুনে সবাই মাথাটা বামপাশে কাত করে সম্মতি জানালো। এতক্ষণে স্যারের টুকাটুকিও শেষ।

আরাম করে একটা সিগারেট ধরালেন। জনগণের প্রতি স্যারের আস্থা আছে। জনগণ মানেই বিনয়ী। এই যে জনগণের এতো বিনয়, এটা স্যার খুব পছন্দ করেন। এ জন্যই স্যার জনগণকে খুব ভালোবাসেন।

রাতের শুরুতে স্যারের বাড়ি বেশ গরম হয়ে উঠলো। নিজস্ব কর্মচারী, আবাসিক কর্মচারী, বাবুর্চি ও জনগণ মিলিয়ে মোট বিশ জন মানুষ। তেরো জন জনগণকে তাদের বিশ্রামকক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবে। তারপর রাতের খাবার খেয়ে ঠিক বারোটা বাজলে কনফারেন্স শুরু হবে।

(৩) ফ্রেশ হওয়া শেষ করে জনগণ এখন টিভি দেখছে। টিভিতে মা মাটি ও দেশের অনুষ্ঠান দেখাচ্ছে। কী সুন্দর মা মাটি ও দেশ! অনেক সুন্দর। সবার চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। এই যদি হয় এতো সুন্দর, তাহলে যিনি মা মাটি ও দেশের নেতা, তিনি জানি কতো সুন্দর! তাঁর কথা জানি কত সুন্দর? নিশ্চয় অনেক সুন্দর।

নইলে স্যারের দালাল কেন বললো স্যারের সাথে বিনয় দেখিয়ে স্যারকে কথা বলে যেতে অনুরোধ করতে! দূর থেকে ঠোঁটে খাড়া আঙ্গুল ঠেকিয়ে স্যারের নিজস্ব কর্মচারী ফিসফিস করে বললেন, "আঁ হা... দালাল নয়, নিজস্ব কর্মচারী। আমি হইলাম স্যারের নিজস্ব কর্মচারী। " সাথে সাথে তেরো জনগণ জিহ্বায় কামড় দিয়ে ভুল স্বীকার করে নিলেন। স্যারের নিজস্ব কর্মচারী মৃদু হেসে জনগণকে স্বাগত জানালেন। (৪) স্যার বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন।

বারোটা বাজার আর সামান্য বাকি আছে। বিচলিত, উৎকন্ঠিত মনে একটা সিগারেট ধরালেন। এখন স্যার কিছু ভাবছেন না। তিনি কেবল সিগারেট টানছেন। -স্যার আমি এখানে।

-ওদেরকে নিয়ে এসো। আবার সিগারেট টেনে যাচ্ছেন। আগের মতো এখনো কোন কিছু ভাবছেন না। কেবল সিগারেট টানছেন। -তুমি একা কেন? জনগণ কোথায়? -স্যার, জনগণ চা খাচ্ছে।

-বলো কী! জনগণ চা খায়! আশর্য! -জ্বি স্যার, চায়ের সাথে বিস্কুটও খায়। -অবাক কান্ড! আচ্ছা ঠিক আছে। শোনো, হরতাল করে একদম ফাটিয়ে দিতে হবে। মা মাটি ও দেশের অধিকার রক্ষা করতেই হবে। জনগণকে এসব বলেছো? -জ্বি স্যার বলেছি।

কোন সমস্যা হবে না স্যার। এরা বেশ ভালো জনগণ। বিনয়ী ও অনেস্ট। আগের সিগারেট শেষ। স্যার আবার সিগারেট ধরালেন।

এবার কিছু কিছু জিনিস ভাবছেন। কারণ ইতোমধ্যে স্যারের সাড়ে বারোটা বেজে গেছে। -কই, জনগণ কই? -স্যার, জনগণ ব্যস্ত আছে। এখন আসতে পারবে না। -ব্যস্ত আছে মানে কী? -স্যার, জনগণ নাকের লোম পরিষ্কার করছে।

-জনগণের নাকে লোমও গজায়? -জ্বী স্যার, বেশ মোটা ও ঘনকালো লোম। ওরা সব লোম এক যায়গায় জমাচ্ছে। -আজব ব্যাপার! আচ্ছা ঠিক আছে। শোন, হরতাল করে কিন্তু একদম ফাটিয়ে দিতে হবে। মা মাটি ও দেশের অবস্থা ভালো না।

একটা পরিবর্তন দরকার। -জ্বি স্যার, জনগণই সব পরিবর্তন করে দেবে। কী কী পরিবর্তন করতে হবে, তার একটা লিস্ট করেন। লিস্টি ধরে ধরে সবকিছু পরিবর্ত করে ফেলবে। স্যার এখন পায়চারি করবেন।

টেনশন বাড়লে স্যার পায়চারি করেন। শুধু এ স্যার নয়, যেকোন স্যারই টেনশনে পায়চারি করেন। এটাকে স্যার কালচার বলে। -ওরা আসতেছে? লাইন ধরে একজন একজন করে আসবে? -স্যার, আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। -তুমি অযথা আমাকে উত্তেজিত করো না।

তুমি বলেছো ভালো জনগণ ধরে এনেছো। কিন্তু এ বিষয়ে ঘোরতর সন্দেহ হচ্ছে। ভালো জনগণ আমি চিনি, ভালো জনগণ এরকম হয় না। -না স্যার, ওরা বলেছে ওরা ভালো জনগণ। এর উপর আর কোন কথা হতে পারে না।

আমি যাচ্ছি স্যার, দেখি ওরা ফ্রি হয়েছে কিনা! রাত দুইটা বেজে গেছে ইতোমধ্যে। এখনো কনফারেন্সের কোন কুল কিনারা হলো না। স্যারের মাথার তালুয় ঘাম জমেছে। স্যার সেখানে হাত বুলাচ্ছেন। ঘর্মাক্ত তালুতে হাত বুলালে টেনশনের দরজা খোলে।

-হা হা, আসো আসো। এবার নিশ্চয় সবাই এসে পড়েছে। -না স্যার। জনগণ ব্যস্ত আছে। -তাদের কিসের এতো ব্যস্ততা? -জনগণ মুতিতেছে স্যার! -সবাই? -না স্যার, কয়েকজন।

-তাহলে যারা মুতিতেছে না, তাদেরকে ডাকো। -তারা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। -ওফ!! এভাবে রাজনীতি হয় না। -জ্বি স্যার, আমি দেখতেছি। ভোর হতে আর বেশি দেরি নাই।

আজকের মধ্যে আন্দোলনের একটা রূপরেখা দাঁড় করানো না গেলে পলিটিক্যাল ক্রাইসিস সৃষ্টি হবে। এমনকি দলে ভাঙনও দেখা যেতে পারে। স্যার অতিরিক্ত টেনশনে জমাট বেঁধে গেছেন। কনফারেন্স রুমের বড় চেয়ারটায় স্থির হয়ে বসে আছেন। -জনগণের মুত্রকর্ম শেষ হয়েছে? -জ্বি স্যার।

-তাহলে ওরা আসেনি যে! -জনগণ ঘুমিয়ে পড়েছে। -এমনতো কথা ছিলো না! -জ্বি স্যার ছিলো না। ... স্যার, আমি কি ঘুমোতে যাবো? স্যার কোন জবাব দিলেন না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে স্যারের নিজস্ব কর্মচারী চলে গেলেন। স্যার বসে রইলেন।

স্যারের টেনশন বেড়ে গেলো। এতোদিন তিনি মা মাটি ও দেশের রাজনীতি করেছেন। এখন থেকে তাঁকে মা মাটি দেশ ও জনগণের রাজনীতি করতে হবে। এক ব্যক্তির পক্ষে এতো দায়িত্ব পালন করা কী সম্ভব! রাতের শেষ সিগারেটটা ধরালেন স্যার। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.