গত ২৭ তারিখ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা আন্দোলন চলছে। বর্ধিত বেতন ফি প্রত্যাহারের দাবিতে সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য, নীতি অনুসারে জনগণের টাকায় জনগণের জন্য এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বেতন নেয়া হয় তা অধিকাঙশের জন্য সহনীয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক এর সরাসরি প্রেসক্রিপশনে UGC এর মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ২০২৬ সালের মধ্যে প্রাইভেট করে ফেলা হবে।
কিভাবে?
বিশ্বব্যাংক আমাদের দেশের জন্য একটা ২০ বছর মেয়াদী কৌশলপত্র তৈরী করেছে।
যেটা অনুয়ায়ী, ২০২৬ সাল পর্যন্ত ধীরে ধীরে বেতন ফি বাড়িয়ে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ খরচ এর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় গুলো আরও কিছু বাণিজ্যিক কর্মকান্ড পরিচালনা করবে (ইদানীং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাণিজ্যিকভাবে সান্ধ্য কোর্স এবং অন্যান্য এ ধরণের পদক্ষেপ গুলোও সেজন্যেই নেয়া)। ফলে ঐ সময় যদি বছরে একলাখ টাকা এক জন শিক্ষার্থীর জন্য খরচ করতে হয় তাহলে সেই এক লাখ টাকা শিক্সার্থীরাই দেবে।
পাবলিক আর পাবলিক না থেকে হয়ে যাবে বিত্তশালীর বিশ্ববিদ্যালয়।
এই প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন অভাবনীয় মাত্রায় বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কিছু উদাহরণ দেখা যাক।
আগে যেখানে ইমপ্রুভ বা সাপ্লিমেন্টারী পরীক্ষার ফি একজন ছাত্রকে প্রতি ১০০ নম্বরের পরীক্ষার জন্য ১২৪ টাকা দিতে হতো, এখন সেটা হচ্ছে ৬০০-৯০০ টাকা। উল্লেখ্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭,০০০ ছাত্রের কমপক্ষে ৩০% প্রতি বছর ইমপ্রুভ সাপ্লি পরীক্ষা দেয়। আর নতুন ব্যাচ গুলোর অনেক বিভাগে এই হার ৯০% পর্যন্ত।
আগে নন/ডিস কলেজিয়েট ফি ছিলো ৬০০ টাকা, এখন সেটা হচ্ছে ৭০০০ টাকা পর্যন্ত।
প্রতি বছরে নতুন বর্য়ে ভর্তি ফি বৃদ্ধি পাচ্ছে ন্যুনতম ৬০% ।
যে পরিমাণ বাড়ানো চলছে তাতে এখনই বেশ কিছু সংখ্যক ছাত্রের পক্ষে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ২৭ তারিখ শুরু হওয়া আন্দোলনে সুজন কান্তি দে নামে এক শিক্ষার্থীকে প্রশাসন বহিষ্কার করে; যে কিনা এমনই একজন। সুজনের বাবা নেই; মা বোন গার্মেন্টসে চাকরি করে। সে নিজেও একটা চাকরি করতে প্রতিদিন ১২টায় ক্যাম্পাস থেকে শহরে আসে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হয়তো মুখে না বলে বুঝিয়ে দিতে চায় যে, টাকা নেই তো পড়তে আসারও দরকার নেই।
২৭ তারিখ থেকে এই আন্দোলন ভুক্তভোগী সাধারণ ছাত্রছাত্রীরাই শুরু করে। কিন্তু আমাদের কাছে প্রমাণ থাকা প্রশাসন ২৮ তারিখ থেকেই স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞপ্তি দেয় যে কোন বেতন ফি বাড়ানো হয়নি। নিজেদের অন্যায় ঢাকতে ও এ আন্দোলনকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য প্রশাসন শেষ পর্যন্ত সরাসরি সরাসরি মিথ্যাচার করে। আর এ মিথ্যার প্রতিবাদ যাতে না হয় তার জন্য স্থানীয় পত্রিকাগুলোয় আমাদের ভিসি-র রাজিনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এ আন্দোলনের পক্ষে কোন খবর ছাপা বন্ধ করা হয় বলে সাংবাদিক সূত্রে জানা যায়।
অন্যান্য মিডিয়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর আন্দোলনকে যথেষ্ট কাভারেজ দেয়া থেকে একই কারণে বিরত থাকে বলে আমরা জেনেছি।
৩০ তারিখ রাতে, অর্থাৎ সদ্যই জানলাম যে প্রশাসন ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অথচ, গত ক'দিনের আন্দোলনে কর্মরত 'বর্ধিত বেতন ফি বিরোধী সাধারণ ছাত্রছাত্রীবৃন্দ' এর ব্যানারে এই আন্দোলনে ছাত্ররা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ভাবে অংশ নেয়। একটা সুতোও কেউ ছেড়েনি। একটা মানুষের একটা চুলও কেউ ধরেনি।
আজ ৩১ তারিখ শনিবার আন্দোলন চলবার কথা। এখনো জানি না কতদূর কি হবে। আশা করবো সারা দেশের লোকজন বিশেষ করে মিডিয়া আমাদের ভাষ্য ফোকাসে আনবে; আমাদের পাশে থাকবে। এ আন্দোলন আর আরো সব আন্দোলন সফল হতে সাহায্য করে দেশের উচ্চশিক্ষাটা সাধারণের নাগালে থাকা নিশ্চিত করবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।