আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল ফোন কেনার বিপত্তি এবং কেনার সময় করণীয়

আজকাল অনেকেই সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কিনেন। অনেক দামী সেট ইচ্ছা থাকা সত্তেও সাধ্যের বাইরে থাকায় কিনতে পারেন না। আর তাই তারা বাধ্য হন সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কিনতে। আজকাল সেকেন্ড মোবাইল ও অন্যান্য ইলেকট্রনিকস জিনিসপত্র কেনা বেচার অন্যতম মাধ্যম হল অনলাইন বাজার সেলবাজার এবং বিক্রয়ডটকম . প্রায় সকল ধরনের ব্র্যান্ডের ও মডেলের মোবাইল পাওয়া যায় এইসব অনলাইন বাজারে। অনলাইন এইসব বাজারে পাওয়া এইসব মোবাইল কেনার বিপত্তিও কম না।

নিচে দুইটি ঘটনার অবতারণা করছি। ঘটনা ১: আমি আমার এক কলিগের বন্ধুর কাহিনী শুনলাম। তার বন্ধু আজিমপুর থাকেন। তিনি একটি সেকেন্ড হ্যান্ড স্মার্টফোন টাইপ মোবাইল কিনবেন। এইজন্য তিনি bikroy.com সাইটে খুজলেন।

বেশ কিছুদিন খোজ়ার পর তিনি তার মনের মত একটি সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইলটি কিনলেন। এইবার ঘটনার গভীরে যাওয়া যাক। যেই মোবাইলটি তিনি কিনেছেন এই মোবাইলটি হল খাঙ্গারী খাওয়া (ছিনতাই করা) সেট। সেট টি ছিনতাই করা হইছে একজন টেলিভিশ সাংবাদিকের কাছ থেকে। যে বা যারা নিয়েছেন তাদের চক্রই এই মোবাইলটির বিজ্ঞাপন বিক্রয় ডট কমে দেয়।

এবং তাদের থেকেই কিনেন আমার কলিগের সেই বন্ধু। এদিকে সাংবাদিক ডিবি পুলিশের নিকট তার মোবাইলে IMEI (International Mobile Equipment Identity) নম্বর দেন এবং তারা মোবাইল ক্রয়কারীকে ধরেন। মোবাইল ক্রেতা আমার কলিগের সেই বন্ধু বলেন আমি তো এই মোবাইলের ইতিহাস জানিনা। বিক্রয় ডট কমের বিজ্ঞাপন দেখেই আমি কিনি। এতে তাকে এই ঝামেলা থেকে বেরিয়ে আসতে বেশ বেগ পেতে হয়।

ঘটনা ২: আমাদের এলাকার এক সেলুন কর্মচারী মোবাইল কিনবে। তো Cellbazar এর তার আরাধ্য একটি মোবাইলের বিজ্ঞাপন দেখে। ঠিক করে এই মোবাইলটি সে কিনবে যেহেতু মোবাইলটির মূল্য তার হাতের নাগালে আছে। সেলবাজার থেকে নাম্বার নিয়ে ঐ সেলুন কর্মচারী মোবাইল বিক্রেতা কে ফোন দেয়। মোবাইলক্রেতা তাকে গুলিস্তান আসতে বলে।

ছেলেটি সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কিনার জন্য গুলিস্তান যায়। কিন্তু হায় যারা তাকে আসতে বলেছিল তারা একটি ছিনতাই চক্র। এই চক্রটি ছেলেটির থেকে তার মোবাইল এবং যাবতীয় অর্থ নিয়ে তাকে মারধোর করে ছেড়ে দেয়। ছেলেটি কাদতে কাদতে বাসায় ফিরে। ঘটনা গুলো থেকে বুঝা গেল সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার বিপত্তি কম নয়।

আসলে আমাদের চেস্টা করা উচিত সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল যতদূর সম্ভব না কেনা। তারপরে যদি আমাদের কেনার প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা তা কিনব পরিচিত কারোর থেকে অথবা যেই মোবাইল ফোনটির ইতিহাস আমরা জানি। সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার জন্য যা করণীয়ঃ ১. যার থেকে সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কিনবেন তাকে আপনার এলাকায় আসতে বলুন বা তাতে না রাজি হলে তাকে নিরপেক্ষ কোনও জায়গায় আসতে বলুন। ২. একা একা কখনও এইসব সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কিনতে যাবেন না। অন্তঃত সাথে দুজন সংগী নিন।

৩. যার থেকে মোবাইলটি কিনবেন তার এক কপি জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি নিজের কাছে সংরক্ষণ রাখুন। ৪. মোবাইল বিক্রেতার নিকট মোবাইলটির ক্রয় রশীদ চেয়ে নিন এবং নিশ্চিত হোন যে এই রশীদটি ভূয়া নয়। ৫. তাকে জিজ্ঞাসা করুন কেন সে এই মোবাইলটি বিক্রয় করছে। ৬. অনেক সময় মোবাইল সেটে যিনি প্রকৃত মালিক তারা বাবা-মা-ভাই-বোন বা আত্নীয় স্বজনের নম্বর থাকে তাদের কে কল করুন এবং সিউর হয়ে নিন এই মোবাইলট যথাযথ ভাবে বিক্রয় করা হয়েছে কিনা নাকি সেটি হারিয়ে গিয়েছিল অথবা ছিনতাই করা হয়েছে। ৭. সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইলটি ভালো আছে কিনা বা ব্যবহার উপযোগী কিনা তা আগেই যাচাই বাছাই করে নিন।

অনেক সময়ই এই মোবাইলগুলো ত্রুটিপূর্ণ থাকে যা মোবাইল বিক্রেতা লুকানোর চেস্টা করেন। কিভাবে বুঝবেন মোবাইলটি ভালো বা ব্যবহার উপযোগীঃ ১. মোবাইলট হাতে নিন এবং বন্ধ করুন আবার চালু করুন। যদি সমস্যা থাকে তাহলে বন্ধ এবং খোলার সময় সমস্যা দেখা দিবে। মোবাইল ফোনে সিম পরিবর্তন করে দেখুন কোন সমস্যা হয় কিনা। ২. মোবাইলে সব বাটন টিপে দেখুন।

মোবাইল স্ক্রিনে উঠে কিনা এবং তা সঠিকভাবে কাজ করে কিনা। কল এবং কল রিজেক্ট বাটন টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় জয়স্টিক বাটন টি ঠিকমত কাজ করে না। দেখে নিন এই গুরুত্বপূর্ন বাটনটি কাজ করছে কিনা। ৩. কাউকে কল করুন এবং কথা বলে দেখুন ভলিউম এবং লাউড স্পিকারে তা কাজ করছে কিনা।

৪. মোবাইলটি বন্ধ করে ব্যাটারী খুলে আবার লাগিয়ে মোবাইলটি ওপেন করুন ... দেখেন ঠিকমত কাজ করছে কিনা। ৫. মোবাইলে মেমোরী কার্ড সংযোগ পাচ্ছে কিনা। প্রয়োজনে মেমরী কার্ড খুলে আবার লাগান দেখুন কোন ঝামেলা হয় কিনা। ৬. মোবাইলের চার্যার লাগিয়ে পরীক্ষা করে নিন। মোবাইল চার্য হয় কিনা।

৭. টাচ স্ক্রিন মোবাইলের ক্ষেত্রে দেখে নিন টাচ ঠিকমত কাজ করছে কিনা। ৮. মোবাইলে গান চালিয়ে সাউন্ড পরীক্ষা করে নিন। ৯. ক্যামেরার স্বয়াংক্রিয়তা ভালো করে পরীক্ষা করে নিন। ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে তার কোয়ালিটি যাচাই করুন। ১০. মোবাইল ফোনটি ঠিকমত লক এবং আনলক হয় কিনা দেখে নিন।

১১. অনেক সময় দেখা যায় মোবাইলটির সব কিছুই ভালো কিন্তু নেটওয়ার্ক ঠিকমত রিসিভ করতে পারে না তাই অন্য সবকিছু সাথে সাথে নেটওয়ার্ক চিহ্নটিও খেয়াল করুন। ১২. মোবাইলটির বাহ্যিক চেহারা দেখলেই বুঝতে পারবেন যে মোবাইলটি কতদিন ব্যবহার করা হয়েছে এবং ভালো করে দেখে নিন অন্য কোন ডেমেজ আছে কিনা। ওয়ারেন্টি কার্ড থাকলে চেয়ে নিন। সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার ঝামেলা কম নয়। বিপত্তিও হতে পারে যখন তখন।

তাই খুব প্রয়োজন না হলে বিরত থাকুন সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনা থেকে। আর যদি একান্তই প্রয়োজন হয় তাহলে তা শুধুমাত্র কিনুন পরিচিত লোকজন থেকে। অন্যথায় এইসব ঝামেলাকে এড়িয়ে চলুন। বিপদ থেকে দূরে থাকুন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।