চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আন্দোলন কর্মসূচি নির্ধারণে সমস্যায় পড়েছে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। দলের নেতা ইলিয়াস আলীর সন্ধানের দাবিতে গত মাসের শেষ দুই সপ্তাহে ৫ দিন হরতাল পালন করলেও পরবর্তীতে এর বিকল্প কর্মসূচি পালনের চিন্তাভাবনা করে তারা। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর দেখা দিয়েছে নতুন সংকট। একদিকে দলের শীর্ষ এই নেতাদের অনুপস্থিতিতে হরতালের বিকল্প ঘেরাওয়ের মতো কোন কর্মসূচি সফল করা সম্ভব নয়, অন্যদিকে তাদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তা নিষ্পত্তির জন্য আদালত সচল রাখতে হরতাল দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। তাই এ অবস্থায় দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি আপাতত হরতাল দেবে না বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত এই মামলা মোকাবিলায় করণীয় কী হতে পারে সে ব্যাপারে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও আইনজীবীদের সঙ্গে খালেদা জিয়া দুই দফা বৈঠক করেছেন। গত বুধবার দুপুরে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনে এবং সোমবার রাতে তার গুলশান কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পরবর্তী আইনি লড়াই কিভাবে চালানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়। তাছাড়া দলের পরবর্তী আন্দোলন কমসূচি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।
বৈঠকে অধিকাংশ আইনজীবী শীর্ষ নেতাদের আপাতত আত্মগোপনে থাকার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন। তবে কেউ কেউ আবার সব নেতাকে এক সঙ্গে আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিন নেয়ার ব্যাপারে অভিমত দিয়েছেন। আন্দোলনের রূপরেখা নির্ধারণের ব্যাপারেও দলের আইনজীবীদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন খালেদা জিয়া। কৌশলগত কারণে আপাতত হরতাল থেকে বিরত থাকতে খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দিয়েছেন আইনজীবীরা। এ ব্যাপারে তাদের অভিমত, হরতাল আহ্বান করলে মামলা আদালতে উপস্থাপন সম্ভব হবে না।
এ ব্যাপারে আদালত বিশেষ কোন ব্যবস্থাও করবে না, যার প্রমাণ মামলার প্রথমদিন অর্থাৎ ৩০ এপ্রিল বোঝা গেছে। সেক্ষেত্রে মামলা ঝুলে থাকবে, ফলে নেতাদের জামিনের বিষয়টিও পিছিয়ে যাবে।
গত ৩০ এপ্রিল হরতাল চলাকালে বিকেলে সচিবালয়ে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় শাহবাগ থানায় এবং তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে গাড়ি ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের ঘটনায় তেজগাঁও থানায় আরেকটি মামলা করে পুলিশ। উভয় মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির অর্ধশতাধিক নেতাকে আসামি করা হয়। এরপর থেকে আত্মগোপনে চলে যান বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
এর ফলে হঠাৎ করেই স্থবির হয়ে পড়েছে বিএনপির আন্দোলন। এই পরিস্থিতিতে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণে ৩০ এপ্রিল রাতে ১৮ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বসার কথা থাকলে অবশেষে তা পারেননি খালেদা জিয়া। গ্রেফতারের ভয়ে কেউই বৈঠকে আসতে রাজি হয়নি। এ ব্যাপারে খালেদা জিয়া ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলেও সূত্র জানায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য সংবাদমাধ্যম'কে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারকে মোকাবিলায় বিএনপি কৌশলে এগোবে।
তিনি বলেন, দলের শীর্ষ নেতাদের মামলা আমরা আদালতেই নিষ্পত্তি করতে চাই। সেক্ষেত্রে এখন হরতাল বা অন্য তেমন কোন কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে না। তবে এ মামলার ব্যাপারে সরকার আদালতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করলে সেক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। হরতাল ও ঘেরাওয়ের মতো কঠোর কর্মসূচির চিন্তাভাবনা বিএনপি আপাতত করছে না। কারণ কঠোর কর্মসূচি পালন করতে দলের সাংগঠনিক ভিত শক্ত না হলে লাভ হবে না।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের প্রায় সবাই বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতা। সুতরাং তাদের অনুপস্থিতিতে হরতালের বিকল্প হিসেবে কোন ঘেরাও কর্মসূচি সফল হবে না।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে গত বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে মওদুদ বলেন, ইলিয়াস আলীকে ফেরত না দিলে আগামীতে হরতালের চেয়েও কঠিন কর্মসূচি দেয়া হবে। হরতালের চেয়েও কঠিন কী কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এবং এই বিকল্প চিন্তার কারণ কী জানতে চাইলে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, এ ব্যাপারে এখন কিছু বলা যাবে না। সব মিলিয়ে বিএনপি এখন বিপাকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।