আমি কাক নই, আমি মানুষ...
বিংশ শতাব্দি যদি যুক্তরাষ্ট্রের হয়, একবিংশ শতাব্দি কার? এই প্রশ্নের জবাবে বিশ্বের পন্ডিত ব্যক্তিবর্গ যুক্তিতর্কের জাল যতই বিস্তার করুন না কেন, সবার চোখ কিন্তু এশিয়ার একটি দেশের প্রতি। দেশটি হলো চীন। বিশ্বের সবগুলো পরাশক্তিই চীনের এই উত্থানে শংকিত। দেশটির অর্থনৈতিক আগ্রাসন এই শঙ্কার প্রধান কারণ। অথচ চীন নিজেই শঙ্কিত তার ভবিষ্যৎ নিয়ে।
যুগের পর যুগ দেশটিতে নারীদের প্রতি উপেক্ষা ও কন্যা শিশুর স্বল্পতায় বেইজিংয়ের এই শঙ্কা আজ। পরাশক্তি হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে সমাজ কাঠামোর এই অবিচ্ছেদ্য অংশটির দিকে নজর দেয়া হয়ে উঠেনি কমিউনিজমের কঠিন অনুশাসনে পরিচালিত দেশটির ক্ষমতাসীনদের। ফলে সামাজিক ভারসাম্যহিনতার মতো বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে চলেছে দেশটি। প্রকৃতিক নিয়মের বাইরে গিয়ে সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার ভয়াবহতা অনুধাবন করতে শুরু করেছে সেখানকার মানুষ। নারী-পুরুষের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার কাজটি দেরী হয়ে গিয়েছে কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
চীনের যে কোন কিন্ডারগার্টেনে গেলে এই সমস্যা প্রকটরূপে ধরা দেবে চোখে। ছাত্রদের ভীড়ে ছাত্রীদের খুঁজে পাওয়া ভার। অথচ দেশটিতে শিক্ষা ব্যবস্থা অবৈতনিক এবং প্রতিটি বাবা-মাকে শাস্তি পেতে হয় সন্তানকে স্কুলে না পাঠানোর জন্য। তাহলে কেন এই দৃশ্য? প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হওয়ার মতো মেয়ে শিশু সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে আসা এর কারণ। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে কিন্ডারগার্টেনগুলোতে যেন কেবল ছেলেরাই ভর্তি হচ্ছে।
জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ঠৈকাতে ১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে চীনে চালু হয় এক সন্তান নীতি। দেখা যায়, অধিকাংশ দম্পতি ছেলে সন্তান পছন্দ করছে। ফলে এক সন্তান নীতিতে জনসংখ্যা সীমিত রাখা সম্ভব হলেও সেই সঙ্গে মেয়ে শিশু সংখ্যা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।
জিনহু শহরের হুই কাং নামের এক কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষিকা স¤প্রতি বিবিসি’র সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বলেন, সত্যিই এই নীতির বিরূপ প্রভাব গুরুতর। তিনি জানান, তার কাসগুলোতে প্রতি ৪ জন ছাত্রের বিপরীতে একজন ছাত্রী।
ফলে মেয়েরাও ছেলেদের অনুকরণ করার চেষ্টা করে এবং মানসিকভাবে মেয়েরা আগ্রাসি হয়ে উঠছে।
টিফিন টাইমে এসব স্কুলের ছাত্রীরা একাকিত্বের শিকার হয়। ছাত্রদের হাতে অহরহ নির্যাতিত হয় তারা। এখনই যদি অবস্থা এই, তাহলে ২০ বছর পর এসব ছাত্র যখন পরিণত বয়সে প্রবেশ করবে এবং চাইবে দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করতে তখন সামাজিক অবস্থা কি দাড়াবে তা কি কল্পনা করা যায়? চীন সরকারের হিসাব মতে, ২০২০ সাল নাগাদ দেশটিতে বিয়ের বয়সী অন্তত ৩ কোটি মানুষ উপযুক্ত পাত্রীর খোঁজ পাবে না।
নারী-পুরুষের এই বৈষম্যের কারণ অনেকগুলোই।
তবে মেয়ে ভ্রুণ হত্যা এর জন্য সবচেয়ে বেশী দায়ী বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষ বৃদ্ধ বয়সে ভরনপোষনের ভার নিতে পারবে এই আশায় ছেলে সন্তান গ্রহণে অধিক আগ্রহী।
চীনের হাইনান দ্বীপে গেলে দেশটির অবিবাহিত পুরুষের আধিক্য সমস্যা ভালোভাবে অনুধাবন করা যায়। দ্বীপটির কোন গ্রামে মেয়েদের দেখা যাবে কপালগুনে। স্ত্রীর অভাবে পুরুষদেরই চাষাবাদ থেকে গৃহস্থলির কাজ করতে হচ্ছে।
এখানে বিয়ে হয়নি অথচ বয়স ৩০ পেরিয়ে গেছে এমন বহু যুবকের সাক্ষাত পাওয়া যাবে। অনেক পরিবারে এমন অবিবাহিত একাধিক ভাইও রয়েছে। এদের সবার জন্ম এক-সন্তান নীতি চালুর আগে। কিন্তু সরকারের এই নীতি বাধা হয়ে দাড়িয়েছে তাদের বংশধর রক্ষার পথে। কাজের সন্ধানে তাদের গ্রামের মেয়েরা অনেক আগেই পাড়ি জমিয়েছে বাইরে।
এশিয়ার সামাজিক ঐতিহ্য, মেয়েরা গৃহস্থলির কাজ করে। কিন্তু নিজেদের তা করতে হওয়ায় হচ্ছে এখন, তাই নিদারুন মর্মপীড়ায় ভুগছে হাইনান দ্বীপের পুরুষরা।
হাইনানের যুবকদের অনেকের চেহারাই আকর্ষণীয়। কিন্তু মুগ্ধ করার মতো কোন মেয়ের সাক্ষাত তারা পায়নাÑএটাই তাদের আফসোস। দ্বীপের একটি গ্রামে ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী এমন শতাধিক যুবক রয়েছে যারা আজো বিয়ের কনে খুঁজে ফিরছে।
অর্ধাঙ্গিনীর খোঁজ কোথায় পাওয়া যাবে তা জানে না কেউ। তারা এখন নিজেদের শপে দিয়েছেন ভাগ্যের হাতে।
হাইনান দ্বীপের গ্রাম্য হাটে দেখা যাবে দলবেধে তরুণ-যুবকদের আড্ডা দিতে। অনেকের চোখ থাকে দ্বীপের মধ্য দিয়ে যাওয়া মহাসড়কের দিকেÑযদিবা কোন তরুণীর দেখা মেলে। কিন্তু হায়! সড়কটি খালি থাকে অধিকাংশ সময়।
তাই চীনের পরাশক্তি হওয়ার সম্ভাবনা পুরুষ আধিক্য সমাজের কাছে পরাভুত হবেÑএই আশঙ্কা সবার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।