সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!! এক পরিচিতজনের কাছ থেকে মুন্নুজান সুফিয়ান সম্পর্কে গল্পটি শুনেছিলাম। প্রসঙ্গক্রমে আজ সেটা মনে পড়ে গেল। ওনার এলাকার কিছু যুবক কোন একটা কাজের জন্য তার মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিল। তিনি সচিব-কে ডেকে বললেন, ‘আমার এলাকার ছেলেরা এই কাজটা করতে চায়। দেখেনতো কি করা যায়।
’ বিস্তারিত জানার পর সচিব বললেন, ‘ম্যাডাম, রুলস অব বিজনেস অনুযায়ীতো আমরা এর অনুমতি দিতে পারিনা। ’ মুন্নুজান সুফিয়ান ইষৎ বিরক্ত হয়ে নাকি বলেছিলেন, ‘আরে আপনি কি যে কি বলেন! এরা কি বিজনেস করব নাকি? দেখেন কোন রকমে কাজটা করে দিতে পারেন কিনা। ’
এতোদিন গল্পটাকে স্রেফ মুখরোচক প্রচার বলেই মনে করতাম। তবে গতকালকে গুম হওয়া বিএনপি ক্যাডার ও সন্ত্রাসী ইলিয়াসের ব্যাপারে ওনার বক্তব্য শুনে মনে হয় এ ধরণের গল্পের যথাযথ স্রষ্টা হওয়ার মতো সর্বময় যোগ্যতা ওনার আছে।
যেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে অন্যান্য পর্যায়ের নেতারা সন্ত্রাসী ইলিয়াসকে জীবিত উদ্ধারের ব্যাপারে আশাবাদী, যেখানে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে তাকে উদ্ধারের জন্য, সেখানে বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান কীভাবে আগ বাড়িয়ে ইলিয়াসকে মৃত বলে ঘোষণা করেন তা আমার বোধগম্য নয়।
শুধু তাই নয়, আরেকটু আগ বাড়িয়ে তিনি ক্যাডার ইলিয়াসের পত্নীকে বিধবার খেতাব দিলেন। বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান কর্তৃক সন্ত্রাসী ইলিয়াসের পত্নীকে বিধবা খেতাবের ঘোষণায় প্রসঙ্গক্রমে এখানে এসপের একটি গল্প মনে পড়ে গেল। বনের ভিতরে ফাদে আটকে একবার এক শিয়াল কোনরকমে প্রাণে বাঁচলেও তার লেজটি কাটা পড়ে। লেজ ছাড়া তাকে খুবই কুৎসিত দেখাচ্ছিল। মনের কষ্ট ভুলতে সে বনের সব শেয়ালকে এক সভায় ডেকে লেজের নানা দোষের কথা বলে তা সবাইকে কেটে ফেলার পরামর্শ দিল।
বেশিরভাগ শেয়ালই তার কৌশলের কাছে হার মেনে লেজ অপসারণে সায় দিল। কিন্তু এক বৃদ্ধ ও জ্ঞানী শেয়াল বলল, “বন্ধু দুর্ঘটনাক্রমেই হোক আর যেভাবেই হোক তুমি তোমার লেজটি হারিয়েছ। লেজ ছাড়া তোমাকে খুবই কুৎসিত দেখাচ্ছে। সে কারণে অন্য সবাই যাতে অবিকল তোমার মতোই দেখায় তাই তুমি সবাইকে লেজ কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছ। ” বৃদ্ধ শেয়ালের এ উপস্থিত বুদ্ধির কারণে অন্য শেয়ালেরা সেদিন তাদের লেজ হারানো থেকে রক্ষা পায়।
গল্পটি এ কারণে প্রাসংগিক যে, বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান নিজেও একজন বিধবা। বৈধব্যের যন্ত্রণা যে কি তা ওনার চাইতে আর কেউ বেশি উপলদ্ধি করার কথা নয়। ঠিক সে কারণে অন্য নারীদেরও হয়তো তিনি বিধবা হিসেবে দেখতে চাচ্ছেন এবং তার সূত্র ধরে তিনি ইলিয়াসের স্ত্রীকে অগ্রিম বিধবার খেতাব দিচ্ছেন। ঠিক এ মুহুর্তে বেগম মুন্নুজান সুফিয়ানের আচরণের অন্য কোন যৌক্তিক ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই।
ব্যক্তি হিসেবে আমি মুন্নুজান সুফিয়ানকে শ্রদ্ধা করি।
প্রশাসনিক যোগ্যতা কতটুকুন আছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও আমার জানামতে এবং শুনামতে তিনি সৎ এবং এলাকার তথা শ্রমজীবী মানুষের প্রতি সহনশীল। তার প্রতি এ অপরিসীম শ্রদ্ধা থাকার পরেও উপরের কটু কথাগুলো বলার একমাত্র কারণ হচ্ছে তিনি যা বলেছেন তা বর্তমান পরিস্থিতি এবং তার ব্যক্তিত্বের সাথে সংঘাতপূর্ণ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।