এই ছোট্ট সময়ে নিজেকেই চেনা যায় না... তাই বলে আমি বসে থাকতে শিখিনি...... কান একদম ঝালা-পালা হইয়া গেল। চোখ খুইল্যা দেহি আরাকটা জ্যাম লাগছে। শান্তি মত কুনখানেই থাকন যায় না। এদিকে খিদাও লাগছে। কি যে করমু? কই যে যামু খোদা তালাই জানেন।
আমার পাওডা যদি অন্য ভাল মানুষগো মত হইত তইলে কুনো কথাই আছিল না। ক্যান যে আল্লায় আমার পাওডা নিয়া গেল? পুরাডা নিলেও কুনো কথা আছিল না। সারা জীবন ভিক্ষা কইরা খাইতাম। নিল তো নিল পায়ের পাতার আধখান নিল। যাই বাড়ি যাই।
কাইল কী যে হইল মায়ের লগে রাগ না করলেও পারতাম। কাইল রাইতে মা আর বইন্ ডার লাইগা খাওন নিতে পারি নাই। এইটা নিয়া মায়ে চিল্লা-চিল্লি করল। মাথা গরম কইরা আমিও ঘর থাইক্কা বাইরাইয়া আইলাম। রাতে এই যাত্রি-ছাউনিতেই আছিলাম।
দেখি কী করন যায় আইজকা। কাম-টাম জুটব না মনে হয় আইজকাও।
মা টাও অসুস্থ। মাইনষের বাড়িত কাম করত। একদিন ঘর মুছতে যাইয়া কী যেন ভাইঙ্গা ফালাইছিল।
তাই দেইখা মেম সাব আর হের মাইয়্যা মিল্লা মাইর দিল। তখন থাইক্যাই কোমরে জুত পায় না। কোমরে নাকি লাত্থি মারছিল ওরা । মানুষ মনে করে না আমাগরে ওরা। জানোয়ারের বাচ্চা ! সামনে পাইলে কিছু কথা জিগাইতে মনে চায়।
পরথমে যামু মহাজনের কাছে। হতে পায়ে ধইরা মাফ চামু। দেহি যদি কুনো কাম হয়। ঐ দিন ত মহাজন আমার কথা শুনলই না।
ঐ দিন মাথায় যে কি উঠলো,এক যাত্রী গেটে ঝুলতাছিল।
আমিও ভাড়া কাটতাছি। ঐ লোকে দুই হাত দিয়াই ঝুইল্যা আছিল। আমি হঠাৎ পকেটে হাত দিয়া বইলাম। ধরাও খাইয়া গেলাম। আমি হাত দিতাম না।
সকালে বইনডায় কইল হের নাকি একটা লাল জামা লাগব, সাথে একটা পুতুল। হাত একদম ফাঁকা । আর ওগুলার দামও মেলা টেকা। এদিকে বইনের আবদার! না পাইরা হুট কইরা হাত দিয়া বইছিলাম। কিনতু টের পাইয়া গেল।
ডেরাইভার সাব না থাকলে তো আমারে মাইর দিইয়া মাইরাই ফালাইত। অস্তাদ থাকনে জানে বাইচ্চা গেলাম। কিনতু নালিশ গেল মহাজনের কাছে। মহাজন কিছুই না সুইন্যা লাত্থি দিয়া বাইর কইরা দিল গ্যারেজ থাইক্যা। আইজ ১৭ দিন কুনো কাম-কাজ নাই।
রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাছি। ঐ দিন বিদেশী এক আফায় ১০০ টেকা দিছিল। আরেক দিন এক মেম সাব ২০ টেকা , এমনে কইরা দিন কাটতাছিল। আমি ওগো কাছে চাইনাই একবারও। ওরা রাস্তার ধারে কি যেন খাইতাছিল।
আমি তাকাইয়া ছিলাম। আমার পাওডা কাটা আর বয়সও কম দেইখ্যা মায়া কইরা দিয়া গেছে। আমার মায়ে কয় আমি নাকি পিচ্চি পুলা। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় আমি ১০০ বছরের বুইরা। মা-বইন গো কামাই কইরা খাওয়াই হের লাইগ্যা।
নাহঃ আর হঁটতে পারতাছি না। পাওডা কেমুন যানি ব্যাথা ব্যাথা করতাছে। মাঝে-মইধ্যে ভালই যিন্ত্রনা দেয় এই পাওডা। আর ভাল্লাগে না এই জীবন। আমাগো দিনগুলা এমুন আছিল না।
আমরা থাকতাম কমলাপুর এর বস্তিতে। বাজানে কাম করত স্টেশনের বড় কুলিগো লগে। বাজানে লাল শার্ট পইরা ট্রেনের লাইগ্যা অপেক্ষা করত। লাল শার্টের পকেটে নীল সুতা দিয়া নাম লেহা “বদর আলী মিয়া”। কী যে সুন্দর লাগত কইয়া বুঝান যাইব না।
আমিও গিয়া বাজানের পাশে দাঁড়াইতাম। দুই টেকার লোভে। বাজানে জিগাইত “কী রে ঘুর ঘুর করস কেন? ও বুঝছি!” এই কথা কইয়া দুইটাকার নোট বাইর কইরা দিত। লইয় এক দৌড় আইস্ক্রিমের দোকানে। নাহঃ আর এসব দিন আইব না।
এক দিন কুলিগো মধ্যে কি লইয়া যানি মারামারি লাগল। বাপজানে মাথায় বস্তা লইয়া ট্রেনে উঠতাছে এমন টাইমে সালাম কুলিয়ে মারল ভিতোর থাইক্কা ধাক্কা। বাপজানে বস্তা নিয়া প্লাটফর্মে পইরা গেল। হাসপাতালে নিতে নিতে বাপজানের দম ফুরাইয়া গেল। মইরা গেল বাপজান।
তেমন কুন ব্যাথা পায়নাই বাপজান। আমি দেখছিলাম , কান দিয়া একটুখানি রক্ত বাইরাইছিল। “কান দিয়া রক্ত বাইরাইলে কী মাইনষে মইরা যায় !” আল্লাহ মাবুদ ই ভাল জানেন।
আমি আর আমার মায় কই যামু কী করমু বুঝতাছিলাম না। ঘরে খাওন নাই।
আমি তখন অন্য পোলাপান গো লগে বোতল টুকাইতাম। বোতলের কেজি ১৪ টাকা দরে ভঙাড়ি দোকানে বেচি। দিনে দেড়-দুই কেজি বেচি। হেই টেকা দিয়া দিন চলে কুনমতে। একদিন রেল লিইনে ধারে বোতল টুকাইতাছি।
রেল লাইনের ধারে একটা বোতল পইড়া আছিল, দেইখ্যা মনে হইল পানির বোতল। নিয়া আমি পানি মনে কইরা ভিতোরের পানি ফালাইয়া দিতাছিলাম, ফালাইতে গিয়া ডাইন পাওডার উপর পরল, পাওডা লগে লগে জইলা উঠল মনে হইল কেডা জানি পায়ে আগুন ধরাইয়া দিছে। চিক্কুর দিলাম। সবায় আইসা ডাক্তেরের কাছে নিল। ডাক্তার সাব কইলেন ঐ ডা পানি না এসিড আছিল।
ডাইন পাওয়ে নখ গুলা বেশি পুড়ছিল। কিছুদিন ওষুধ খাইছিলাম। পরে পাওডায় পচন ধরল। ডাক্তার সাব কইলেন কাইট্যা ফালাও ঝামেলা থাকবো না। পরে পায়ের আর্ধেক কাইট্যা ফালাইলো।
খুব কানছিলাম ঐ দিন। সবাই আমারে ল্যাংড়া কয়াইবো এই মনে কইরা কানছিলাম।
সকাল হইতে না-হইতেই দুপুর হইয়া গেল। বাড়িযামু আগে। মায়ের লগে কথা কয়া দেখি আগে।
মায়ে কী কয়। যদি মহাজনের কাছে যাইতে কয় তাইলে বিকালে মহাজনের কাছে যামুনে।
ঘরে ঢুকতে না ঢুকতে মায় কইলো
-আইছস বাজান?
-হ মা।
-খাওন আনছস?
-না মা !
-রেকের উপর দেখ কয়ডা মুড়ি আছে, তোর করিমন খালায় দিয়া গেছে সকালে।
মায়ের লগে কথা কইতাছি এমুন সময় বইনডা আইসা হাজির।
ভাইজান আমার জিনিস গুলা আনছ ? আমি কইলাম না রে বইন। সুইন্যাই ঠোট ফুলাইয়া কানতে ধরল । কি কজরমু চিন্তা করতে করতে মনে পড়ল পকেটে একটা ম্যাংগো ক্যান্ডি আছে। দোকানের পাশে কালকে বইসা ছিলাম। এক পুলায় সিগারেট নিতাছিল।
দোকানদার এক ট্যাকা ভাংতি না দিতে পাইরা ম্যাংগো ক্যান্ডি দিছিল। ঐ পুলায় পকেটে ঢুকাইতে গিয়া পইড়া গেছিল মাটিতে। টের পায় নাই। পরে আমি নিয়া আমার পকেটে রাখছিলাম। যাউক বাচা গেল।
বইনডা চকলেট টা পাইয়া কান্না থামাইছে।
চলবে.........
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।