আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবিস্মরনীয় অধ্যায় -নরম্যান্ডি ল্যান্ডিং

মিত্রবাহিনীর সুপ্রীম কমান্ডার জেনারেল আইসেনহাওয়ার নরম্যান্ডি ল্যান্ডিং (Normandy Landing), ২য় বিশ্বযুদ্ধের এক অবিস্মরনীয় অধ্যায় যা যুদ্ধের মোর অনেক খানিই পাল্টে দেয়। আজ সেটা সম্পর্কে দুএকটা তথ্য শুনুন। ২য় বিশ্বযুদ্ধ তখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। একদিকে হিটলারের জার্মানী,রাজা ভিত্তোরিও ইমানুয়েল-৩ এবং প্রধানমন্ত্রী পিয়েত্রো বাদোগলিও এর ইতালি আর সম্রাট হিরোহিতোর জাপান। এদের মিলিত নাম অক্ষশক্তি বা Axis Force ।

আর বিপরিত দিকে ছিল রুজভেল্ট থেকে ট্রুম্যানের আমেরিকা,স্যার উইনস্টন চার্চিলের বৃটেন, জেনারেল দ্যা'গলের ফ্রান্স, স্টালিনের রাশিয়া আর কানাডা সহ প্রায় সারা দুনিয়া। স্যার উইনস্টন চার্চিল আফ্রিকা, রাশিয়া বার্মা (মায়ানমার) এসব জায়গাতে অক্ষশক্তি বেশ মার খেয়ে কাবু হয়ে ছিল। তাদের রসদ সমরাস্ত্র শেষ হয়ে আসছিল। ইতালির জেনারেল বাগদোলিও (পরে প্রধানমন্ত্রী) হিটলার ও মুসোলিনী সালটা ১৯৪৪। সেই সময় মিত্রবাহিনীর হাই কমান্ড সিদ্ধান্ত নিল ফ্রান্স উপকুল দিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে ফ্রান্স আক্রমন করে জার্মানীকে ধ্বংশ করে হারাতে হবে।

নরম্যান্ডি জায়গাটা ফ্রান্সের উপকুলে বৃটেনের উল্টোদিকে ইংলিশ চ্যানেলের অপর পারে অবস্হিত। সেই আমলে সমুদ্রপথে বিশাল একটা বহিনীকে নিয়ে আক্রমন করা খুব সহজ ছিলনা, মনে রাখতে হবে সেটা আজ থেকে প্রায় ৬৮ বছর আগের ঘটনা। আক্রমনটার (ল্যান্ডিং) নাম দেয়া হয় অপারেশন নেপচুন (Operation Neptune) অবশ্য মূল অপারেশনের নাম ছিল অপারেশন ওভারলর্ড, নেপচুন ছিল ল্যান্ডিং অংশটার নাম। এই অপারেশন ওভারলর্ড এর সুপ্রীম কমান্ডার ছিলেনন জেনারেল আইসেন হাওয়ার যিনি পরে আমেরিকার ৩৪তম প্রেসিডেন্ট হন। এছাড়া ল্যান্ডিং করার জন্য ২১তম আর্মী গ্রুপের (কয়েকটা ডিভিশন মিলে একটা কোর আর কয়েকটা কোর মিলে একটা আর্মী গ্রুপ হয়) অধিনায়ক ছিলেন জেনারেল মন্টগোমারি (১৮৮৭-১৯৭৬)।

তার ছবি নীচে: এতে আমেরিকা, বৃটেন, কানাডা আর ফ্রান্সের ২৪৫০০ আকাশে চলা সৈন্য (Airborne Troops) এবং ছত্রিসেনা অংশ নেয়। এটা ছিল উভচর অপারেশন (Amphibious Operation) এর ইতিহাসে সবচাইতে বড় অপারেশন। পুরো অপারেশনের পরিকল্পনা করেন জেনারেল ফ্রেডারিক মরগান-- নীচে ছবি: এতে প্রায় ১,৬০,০০০ সৈন্য অংশ নেয় যারা একধরনের ছোট বোটে করে সমুদ্রকুলে অবতরণ করে। পরে অবশ্য আরো সৈন্য এদের সাথে যোগ দেয়। সেইরকম বোট একটা নীচে: এগুলি দিয়ে জীপ সহ সৈন্য কূলে অবতরন করতে পারত।

আবহাওয়া, বাতাস, চাদের অবস্হান, সমুদ্রের অবস্হা এইসব বিবেচনা করে প্রথমে ৫ ই জুন ১৯৪৪ এটা অপারেশন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেই মোতাবেক প্রস্তুতি নেয়া হয়ে যায়। কিন্ত আবহাওয়া বিরূপ হয়ে পড়ল। ৪ঠা জুন ১৯৪৪--আবহাওয়া ভীষন খারাপ হয়ে গেল। অথচ এই প্রস্তুতি আবার নিতে আরো একমাস অপেক্ষা করতে হবে কারন চাদের অবস্হান, জোয়ার ভাটা সমুদ্রের অবস্হা এসব আবার সেই অবস্হায় অনুকুলে পাওয়া রীতিমত কঠিন ছিল।

অথচ এই প্রস্তুত বাহিনীকে ফেরৎ নেয়া একটা বিশাল অপচয় আর বিপুল ক্ষতির ব্যাপার ছিল। তখন জেনারেল আসেনহাওয়ারের আবহাওয়া উপদেষ্টা গ্রুপ ক্যাপ্টেন জেমস এম স্ট্যাগ (Group Capt J M Stagg : 1892- 1944) বললেন ৬ ই জুন আবহাওয়া ভাল হবে আর সেটা হবে আক্রমনের উপযুক্ত সময়। তার ছবি দেখুন: তার কথার সাথে একমত পোষন করলেন মিত্রবাহিনীর বিমান বাহিনীর সর্বাধিনায়ক এয়ার চীফ মার্শাল লেই ম্যালরি (Air Chief Marshall Leigh Mallory: 1883- 1945) আর মিত্রবাহিনীর নৌবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এডমিরাল বারট্রাম রামসে(Admiral Bertram Ramsay: 1883-1945) প্রথমে আমতা আমতা করলেও পরে সম্মত হন। মিত্র বাহিনীর বিমান সর্বাধিনায়ক এয়ার চীফ মার্শাল লেই ম্যালোরি মিত্র বাহিনীর নৌ সর্বাধিনায়ক এডমিরাল বার্ট্রান্ড রামসে অবশেষে সবদিক বিবেচনা করে এলাইড সুপ্রীম কমান্ডার জেনারেল আইসেনহাওয়ার ৬ ই জুন ১৯৪৪ ভোর ৬:৩০ টায় নরমান্ডির পুব পশ্চিমে ৫০ মাইল বিস্তৃত উপকূল ধরে আক্রমনের সিদ্ধান্ত নিলেন। উপকুলকে ৫টা ভাগে ভাগ করা হয় আর সেই সাথে দুটো নকল আক্রমন চালানো হয় জার্মান বাহিনীকে ধোকা দেয়ার জন্য।

'ডি' ডে তে আক্রমনের ধারা দেখুন নীচে: ওদিকে ঐসময় ঐপথে মিত্রবাহিনী আক্রমন করতে পারে তা জার্মানরা ভাবতেই পারেনি। সাগর ছিল উত্তাল, ইংলিশ চ্যানেল পার হওয়া অত্যন্ত কঠিন ছিল ইত্যাদি। এমনকি বিখ্যাত জার্মান ফিল্ড মার্শাল আরভিন রোমেল গেছিলেন তার স্ত্রীর জন্মদিন ছুটিতে, এছাড়া অন্যান্য অনেক জার্মান সমর নায়করাও ছুটিতে গেছিলেন। নীচে ফিল্ড মার্শাল আরভিন রোমেল (পরে আত্মহত্যা করেন): মিত্রবাহিনীর সাত হাজারের মত জাহাজ ব্যাবহৃত হয়। এছাড়া বিমান এমনকি বেলুনও ব্যাবহৃত হয়।

সকাল ৬-৩০ টায় শুরু হয়ে ৮:০০ টার মধ্যেই শেষ হয় কূলে নামা। যুদ্ধ চলে ২০শে জুন ১৯৪৪ পর্যন্ত। আগস্ট ১৯৪৪ এর মধ্যেই প‌্যারিস মুক্ত হয় আর ১৯৪৪ এর শীতকালের মধ্যে মিত্রবাহিনী জার্মানীর বার্লিনের দুয়ারে। হিটলার তখন ফুয়েরার'স বাংকারে বসে হুংকার দিচ্ছেন। জার্মান ফিল্ড মার্শাল গার্ড ফন রানস্টেড যুদ্ধ চলাকালিন মিত্রবাহিনীর সমরনায়কদের মধ্যে মাঝে মাঝে কিন্চিত মত পার্থক্য থাকলেও সবদিক থেকে তারা একতাবদ্ধই ছিলেন।

অন্যদিকে হিটলার অনেক দুরে বসেও যুদ্ধ পরিচালনা করতে গিয়ে অনেক গুলি মারাত্নক ভুল করেন। এমনকি ফিল্ড মার্শাল রানস্টেড একবার হিটলারের ভুল সিদ্ধান্তের সাথে দ্বিমত পোষন করে তাদের সর্বাধিনায়ক ফিল্ড মার্শাল কাইটেলকে গালাগালি করে যুদ্ধ শুরুর কয়েকদিন পরেই পদচ্যুত হন। ফিল্ড মার্শাল রোমেল নিজেও এটাকে 'পরাজয় নিশ্চিত যুদ্ধ' হিসেবে পরে বর্ণনা করেছেন। ফিল্ড মার্শাল কাইটেল কেন হারল জার্মানরা? অনেক লম্বা সে কাহিনী-- তবে সংক্ষেপে বলা যায় গোয়েন্দাদের ব্যার্থতা, প্রস্তুতির অভাব, শত্রুকে অবমূল্যায়ন, রনকৌশলে ভুল, হিটলারের অহেতুক মাতবরি, রসদের অভাব, জনবলের অভাব তো ছিলই। এছাড়া অনেক বেশী ফ্রন্টে নিজেদের মোতায়েন এবং নিয়োজিত রাখা, রাশিয়াতে নিয়োজিত সৈন্যরা পরিস্হিতি না বুঝে নরমান্ডিতে রিইনফোর্সমেন্টে না আসার সিদ্ধান্ত নেয়া, মিত্র বাহিনীর দুর্বার জয় করার ইচ্ছা আর সেই সাথে উচু মনোবল, যুক্তরাস্ট্রের সীমাহীন রণসম্ভার ইত্যাদি কারনে জার্মানরা এখানে পরাজয় বরণ করে যা অবশেষে কয়েক মাস পর তাদের চুড়ান্ত পরাজয় নিয়ে আসে।

তবে সুপ্রিয় পাঠক মনে রাখবেন হিটলারের দেশপ্রেমের কোন ঘাটতি কখনোই ছিলনা। বি:দ্র:: খুব সংক্ষেপিত সুত্র: নেট ও অন্যান্য  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.