আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গন্তব্য হার্ভার্ড

কিছু কিছু নামের পরিচয় দেওয়ার দরকার হয় না। হার্ভার্ডের পরিচয় যেন হার্ভার্ড নিজেই। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রাচীন এবং বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠগুলোর অন্যতম হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। বিজ্ঞান কিংবা সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের যেকোনো বিষয়েই হার্ভার্ডের র‌্যাংকিং শীর্ষছোঁয়া। হার্ভার্ডের যাত্রা শুরু সেই ১৬৩৬ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের কেমব্রিজে।

সব মিলিয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২১ হাজার। গর্বের কথা হলো, আমাদের অনেক বাংলাদেশি বন্ধু পড়ছেন সেখানে। স্বপ্ন নিয়ে যাঁদের সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যোগাযোগ করতে পেরেছে, তাঁদের স্বপ্নগাথাই এ সংখ্যায় তুলে ধরা হয়েছে। সারাহ ফৌজিয়া: সারাহ পড়ছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। সারাহ স্কলাসটিকা থেকে ও-লেভেল এবং মাস্টারমাইন্ড থেকে এ-লেভেল দিয়ে হার্ভার্ডে শুরু করেছেন তাঁর শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

হার্ভার্ডের সবকিছুই যেন অসাধারণ। অবসর পেলেই সারাহ ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়েন ছবি তোলার জন্য। বাংলাদেশের যে সব বন্ধু এখন হার্ভার্ডে পড়ার স্বপ্ন দেখেন, তাদের জন্য সারাহ জানান, ‘আমি তো এ স্বপ্নকে অসম্ভব বলব না। স্যাট-স্কোর এবং ভর্তির জন্য যে রচনাগুলো লিখতে হয় সেগুলো বিচক্ষণতার সঙ্গে করতে পারলে হার্ভাডে পড়াটা খুব কঠিন কিছু নয়। ’ সারাহ শতভাগ স্কলারশিপে পড়ছেন হার্ভার্ডে।

স্কলারশিপের খবরপাওয়া যাবে Click This Link মাহমুদ হোসেন: মাহমুদের শিক্ষাজীবন মোটেও ধরাবাধা পড়ার নিয়মে কাটেনি। এ লেভেল দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএতে ভর্তির সুযোগ মিলল। বছর গড়াতে না গড়াতে মনে হলো ‘ব্যবসায় প্রশাসন’ তাঁর দ্বারা পড়া হবে না। ২০০১ সালে ভর্তি হলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে। তারপর আবারও লক্ষ্যের পরিবর্তন।

সুযোগ এল নিউইয়র্কের ব্রাড কলেজে সম্পূর্ণ বৃত্তিতে পড়ার সুযোগ। শুরু করেছিলেন পদার্থবিজ্ঞান আর গণিত নিয়ে, শেষ করলেন জৈব রসায়ন দিয়ে। জিপিএ এল ৪.০-এর ৪.০। মাস্টার্স ছাড়াই ‘ইউনিভার্সিটি অব পেনিসিলভানিয়া’ থেকে পিএইচডি করেন জৈব রসায়নে ২০১০ সালে, ২৮ বছর বয়সে। ২০১১ সালে তিনি অধ্যাপক স্টুয়ার্ড স্রেইবেরের সঙ্গে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ‘বোর্ড ইনস্টিটিউট অব হার্ভার্ড অ্যান্ড এমআইটি’তে গবেষণা-উত্তর সহযোগী হিসেবে যোগ দেন।

স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশে নিজের একটি গবেষণাগার তৈরি করার। ফাহমিনা রহমান: ফাহমিনা ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার’ কোর্স নিয়ে পড়ছেন হার্ভার্ড ল স্কুলে। সানিডেলে ও-লেভেল এবং এ-লেভেলের পাঠ চুকিয়ে যুক্তরাজ্যের ‘লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স’ থেকে গণিত এবং অর্থনীতিতে ২০০৯ সালে আন্ডারগ্রাড শেষ করে দেশে ফিরে আসেন ফাহমিনা। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতাকেই বোস্টনের টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য ফ্লেচার স্কুলের নির্ধারিত রচনাগুলোতে উল্লেখ করেন গুরুত্বের সঙ্গে।

দ্য ফ্লেচার স্কুলের সঙ্গে হার্ভার্ড বেশ কিছু প্রোগ্রাম শেয়ার করায় ফাহমিনার সুযোগ আসে হার্ভার্ডে মানবাধিকার-বিষয়ক কোর্সটি করার। আয়েশা সানিয়া: লক্ষ্মীপুর থেকে আয়েশার স্বপ্ন দেখা শুরু। সেখানেই কেটেছে স্কুলজীবন। তিনি এখন হার্ভার্ডে এপিডেমিওলজি বিভাগে পিএইচডি করেছেন। হার্ভার্ডের জন্য আবেদন করার প্রস্তুতির কথা জানান, ‘হার্ভার্ডের বিভিন্ন স্কুলে আবেদনের সর্বশেষ সময়সমীমা ভিন্ন ভিন্ন।

তবে বেশির ভাগই জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে। অনলাইনে আবেদনপত্র পেতে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। বছরখানের আগেই অ্যাকাউন্ট খোলা ভালো। জিআরই ও জিম্যাটের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত কয়েক বছর সময় হাতে নিয়ে। আইসিডিডিআর,বি এবং ল্যানসেটে সম্পাদকীয় পরামর্শদাতা হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা, গবেষণা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ব্র্র্যাকের এমপিএইচ ডিগ্রি—সব মিলিয়েই হার্ভার্ডের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি।

হার্ভার্ডের তহবিল থেকেই পিএইচডিসহ অন্যান্য আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন। তারিক আদনান: ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের ৫১তম আসরে তারিক আদনান জিতেছিলেন ব্রোঞ্জপদক আর ৫০তম আসরে অর্জন করেন ‘অনারেবল মেনশন’। এরপর গণিতকেই বন্ধু বানিয়ে তারিক গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে পড়ছেন হার্ভার্ডে। সুযোগ পেয়েছিলেন অনেকগুলো বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে। শেষ পর্যন্ত বেছে নেন হার্ভার্ড।

‘জীবনটা অনেক ব্যস্ত এখানে। গণিতের সবচেয়ে কঠিন একটা কোর্স নিয়েছি এবার ম্যাথ-ফিফটি ফাইফ। মজার ব্যাপার হলো, এই ক্লাসভর্তি শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক ও যুক্তরাষ্ট্রের অলিম্পিয়াড বিজয়ী। তাই খুব জমে ওঠে ক্লাসগুলো। ’ বলছিলেন তারিক আদনান।

তারিকের ভালো লাগে বিচিত্র মানুষে ভরা হার্ভার্ডের ক্যাম্পাস। একটা ‘ক্যাপেলা’ গ্রুপের সঙ্গে মাঝেমধ্যে গানও গান তারিক। মোহাম্মদ লুৎফর রহমান: লুৎফর চলতি বছর আগস্টে হার্ভার্ডে ডক্টর অব পাবলিক হেলথ (ডিপিএইচ) করতে যাচ্ছেন। ঢাকার আইডিয়াল স্কুল এবং নটর ডেম কলেজ পাস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করেন ২০০৩ সালে। ২০০৮ সালে ‘টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটি থেকে এমপিএইচ করেন এনভায়নমেন্টাল অ্যান্ড অকুপেশনাল হেলথে।

২০১১ সালে হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে ডিপিএইচ করার সুযোগ আসে সম্পূর্ণ স্কলারশিপে। এইচএসপিএইচ গ্রান্ট আর জীবনযাত্রার অন্যান্য হাতখরচের আলাদা ভাতা বরাদ্দ দিচ্ছে হার্ভার্ড। লুৎফর রহমান মনে করেন, হার্ভার্ডে সফলভাবে ডিপিএইচ করার সুযোগ পাওয়ার পেছনে অনেকগুলো বিষয় কাজে লেগেছে—তাঁর প্রথম জীবনে এনজিওতে কাজের অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে অনেকটা সময় গবেষণার অভিজ্ঞতা, এমপিএইচে তাঁর গ্রেড ৪-এর মধ্যে ৪ পাওয়া এবং শিক্ষকের সুপারিশ চিঠিগুলো। জিআরই একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক কিন্তু জিআরই-ই সবটা নয়। ডরিস তাবাসসুম চৌধুরী: ডরিসের স্বপ্ন নিজেকে দক্ষ করে তুলবেন ‘ক্যানসার বায়োলজি প্রোগ্রামে’।

হার্ভার্ড মেডিকেল কলেজে পড়ছেন ‘বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড বায়োমেডিকেল সায়েন্স প্রোগ্রাম’। ধানমন্ডি টিউটোরিয়াল থেকে ও-লেভেল এবং এ-লেভেল দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন এবং আণবিক জীববিদ্যা বিভাগে এক বছর পড়েছিলেন। ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীন এবং নারীদের কলেজ মাউন্ট হলিয়ক কলেজ থেকে বিএ শেষ করেন প্রাণরসায়নে। পিএইচডির জন্য বেছে নেন হার্ভার্ডকে। ডরিস বললেন, ‘হার্ভার্ডে যাত্রা শুরু করার জন্য নিজেদের শিক্ষাক্ষেত্রে প্রচুর গবেষণার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে ছাত্রজীবন থেকেই।

গ্রেড পয়েন্ট, জিআরই কিংবা জিম্যাটের ভালো স্কোর নিশ্চিত করতে হবে। সুপারিশ চিঠিগুলো যাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। ’ আরাফাত রাজ্জাক: আরাফাত বড় হয়েছেন বাংলাদেশ ও সৌদি আরবে। ঢাকার ম্যাপল লিপ ইন্টারন্যাশনাল থেকে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে সাহিত্য, দর্শনশাস্ত্র ও ইতিহাসে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তারপর চট্টগ্রামে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের সঙ্গে কিছুদিন কাজ করেছিলেন।

ফিরে গিয়ে থিওলজিতে মাস্টার্সে পড়ছেন হার্ভার্ডে। সেখানে পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য জানিয়েছেন আরাফাত রাজ্জাক, ‘সত্যিকার অর্থে যে বিষয়ে তোমার সবচেয়ে বেশি আগ্রহ রয়েছে, যেসব ক্ষেত্রে তুমি একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করবে, সে ক্ষেত্রটাই বেছে নাও। কারণ, সেখানেই তুমি তোমার সবচেয়ে সেরা প্রচেষ্টা বিনিয়োগ করবে। সারাহ শেহবুদ্দীন সরকারব্যবস্থায় ওপর পিএইচডি করছেন হার্ভার্ড থেকে। রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের তুলনামূলক রাজনীতির ওপর তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

গবেষণার কাজে বাংলাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোয় ঘুরে বেড়িয়েছেন সারাহ। ‘হার্ভার্ডের সবচেয়ে আসাধারণ দিক হচ্ছে পৃথিবীর নানা দেশের নানা পেশার মানুষের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ, তাদের জানার সুযোগ। ’ পিএচইডি শেষে সারাহ অবশ্যই বাংলাদেশে ফিরে যাবেন নানা প্রতিকূল পরিবেশে সংগ্রামরত নারীদের পাশে গিয়ে কাজ করার জন্য। রিজওয়ানা ইসলাম: নতুনদের জন্য হার্ভার্ডের প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেন রিজওয়ানা ইসলাম ‘হার্ভার্ডে স্কলারশিপ ছাড়া পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বছরে প্রায় ৬০ হাজার মার্কিন ডলার লেগে যায়। এখানে জীবনযাত্রাও অনেক ব্যয়বহুল।

কিন্তু স্কলারশিপ পাওয়ার অসংখ্য সুযোগও আছে হার্ভার্ড ক্যাম্পাসে। তাই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে অনেক দিন আগে থেকে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স বা পিএইচডিতে আবেদন করলে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পড়াশোনায় ভালো গ্রেড পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকতে হবে। জার্নালে লেখা ছাপাতে হবে আর থাকতে হবে পরিশ্রম এবং ইচ্ছাশক্তি।

’ রিজওয়ানা তাঁর পিএইচডি করেছেন আণবিক ও সেলুলার জীববিজ্ঞানে। তাঁর গবেষণা ছিল স্মৃতি গঠনের আণবিক কৌশল। Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।