আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অদেখা স্বপ্ন

শীলাবৃষ্টি ফাইনাল পরীক্ষার কয়েকদিন আগে ইভার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো, বড় আপা আর আম্মু দিল্লি-আগ্রা ভ্রমণে যাচ্ছেন। পরীক্ষার জন্য সে যেতে পারছে না। অথচ ইভার ভ্রমণে খুব আগ্রহ। পরীক্ষার কারণে এ রকম একটি সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় খুব কান্না পাচ্ছিল ইভার। এমনিতেই তার ওপর দিয়ে পরীক্ষার পড়ার চাপ যাচ্ছে।

গত বছর ক্লাসে ফার্স্ট হতে না পারায় দুদিন ধরে ইভার সে কি কান্না। আম্মু-আব্বু কতো বুঝিয়েছে, সেকেন্ড হয়েছো তো কান্নাকাটির কি হলো? ভালো করে লেখাপড়া কর আগামী বছর যেন ফার্স্ট হতে পারো, এ বছর তাই ইভা ক্লাসের অন্য মেয়েদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পড়াশুনা করছে। ফার্স্ট গার্ল মুন্নিকে প্রায় সবগুলো ক্লাস টেস্টে হারিয়ে দিয়েছে। সেকেন্ড টার্ম পরীক্ষায় মুন্নির চেয়ে পাক্কা ১০ নম্বর বেশি পেয়ে ফার্স্ট হয়েছে। মনে মনে বেশ খুশি হয়েছে ইভা মুন্নিকে হারাতে পেরে।

সেই ক্লাস সেভেন থেকে এইটে উঠেও দুজনের মধ্যে ক্লাসে প্রথম হবার প্রতিযোগিতা থেকেই যায়। দু’জনের মধ্যে কথা হয় খুব কম। ক্লাসের অন্য মেয়েরা এ বিষয়টি নিয়ে খুব হাসাহাসি করে। তারা সুযোগ পেলে মুন্নিকে বলে, ইভা বলেছে সে এবার ফার্স্ট হবে। একদিন টিফিনের সময় দোতলার সিঁড়িতে ইভা-মুন্নির মুখোমুখি দেখা, মুন্নি বললো, কিরে ইভা তুই নাকি এবার ফার্স্ট হবি ? সঙ্গে সঙ্গে ইভা উত্তর দেয়া হ্যাঁ তাতো হবোই।

মুন্নি পাল্টা জবাব দেয়, যা ফাইনালে দেখা যাবে কে ফার্স্ট হয়। ঘণ্টা পড়ে যায়। তাদের ঝগড়া এগোতে পারে না বাসা থেকে ইভার আম্মু বলেছে, এবার ফার্স্ট হতে পারলে তাকে দিল্লি আগ্রা ঘুরিয়ে তাজমহল দেখিয়ে আনবে, নিচের ক্লাসে সে তাজমহলের গল্প পড়েছে, এক সময়ে ভারত বর্ষের সম্রাট ছিলেন শাহজাহান। তিনি তার স্ত্রী মমতাজের মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন এবং স্ত্রীর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি এই সুদৃশ্য মূল্যবান পাথরের ইমারত নির্মাণ করেন। তাজমহলের প্রধান একটি কক্ষে রয়েছে মমতাজ আর শাহজাহানের কবর।

পৃথিবীর নানা দেশ থেকে প্রতিদিন পর্যটকরা তাজমহল দেখেতে আসেন। ইভার দীর্ঘদিনের ইচ্ছে তাজমহল দেখতে যাওয়া, শেষ পর্যন্ত পরীক্ষার ঠিক আগে এ রকম একটি সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় কান্না পাচ্ছিল খুব। একবার ভেবেছিল আম্মুর কাছে বায়না ধরবে, তাজমহল দেখেতে না নিয়ে গেলে পরীক্ষা দেবে না। কিন্তু তাহলে মুন্নি সুযোগ পেয়ে ফার্স্ট হয়ে যাবে। তাই আর বায়না তোলেনি।

ইভার পরীক্ষা শুরু হবার ঠিক পাঁচদিন আগে সন্ধ্যার ফ্লাইটে আম্মি তার বড় আপা দিল্লি চলে গেলেন। ইভা এয়ারপোর্ট থেকে বিদায় দিয়ে এসে মন ভার করে অনেকক্ষন বসে রইল। ইভা এয়ারপোর্ট থেকে বিদায় দিয়ে এসে মন ভার করে অনেকক্ষণ বসে রইলো। রাতের খাওয়া হলো না ভালোমতো, মন খারাপ থাকলে কোনো কিছু থেকে ইচ্ছে করে না ওর। রাত দশটার দিকে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে পড়তে বসে সে, প্রায় দুঘণ্টা পড়ে বাংলাদেশ বনজ সম্পদ, রচনাটি শেষ করে, হাত মুখ পরিষ্কার করে চুলে বেনী করে ঘুমোতে যায় ইভা।

তখনো তার মনে রচনাটির কয়েক লাইন গুণ গুণ করছিল, সুন্দরবন আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই বনে রয়েছে আমাদের জাতীয় পশু বিশ্ববিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের নাম মনে আসতেই ইভার বিড়ালের কথা মনে পড়ে যায়। ওর বিড়াল আছে, নাম মিনি, বিড়াল খুব প্রিয়, ছোটবেলায় সে শুনেছে বিড়ালকে বাঘের মাসি বলা হয়। ইভার ধারণা বিড়াল আর বাঘের চেহারার আকৃতির মধ্যে মিল আছে।

এজন্য মাসি বলা হয়। এসব ভাবতে ভাবতেই ইভা ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে। চারদিকে গা থম থমে রাতের নির্জনতা। দূর থেকে হঠাৎ হঠাৎ বেজে ওঠা ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ ভূতুড়ে রহস্যময়তা তৈরি করেছে যেন। অন্য দিন ইভার সঙ্গে তার আপা থাকতো।

আজ নেই। ইভা হারিয়ে যায় স্বপ্নের গভীর দেশে। মিট মিট করে জ্বলে থাকা অসংখ্য নক্ষত্র ভরা আলো-আঁধারী এক রাত। যমুনা নদীর বাঁকের মাথায় ঝলমলে এক প্রাসাদ তাজমহল। চারদিকে চারটি চমৎকার মিনার প্লাটফর্মের মতো মেঝেতে ঘেরা সেই মিনার, ইভা ঘুরে ঘুরে বিস্ময় নিয়ে যেন তাজমহলটি দেখছে।

সে আগে কখনো এতো সুন্দর ইমারত দেখেনি। তাজমহলের শরীর ঠিকরে বেরুনো আলোর দ্যুতি যেন চারদিকে রঙিন করে রেখেছে। রাতের অন্ধকারে হীরা, মুক্তা শোভিত তাজমহলের আলো ছাড়া খেলা করে যমুনা নদীর কালো জ্বলে। অনেক দূর থেকে তা চোখে পড়ে। ইভা ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে এসময় তাজমহলের চারপাশের মঞ্চ আকৃতির ব্যালকুনিতে উঠে পড়ে।

তাকিয়ে দেখে কোথাও কেউ নেই, সে একা দাঁড়িয়ে আছে এই বিশাল তাজমহলের ওপর। রাতের অন্ধকারে উদভ্রান্তের মতো তাড়াতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে তাজমহলের ভেতরে। কবরের মধ্যে নেমে যায় সেখানে অন্ধাকার যেন জমাট বাঁধা কালির মতো ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। ইভা ফিরতে গিয়েও পারে না। অজানা ভয়ঙ্কর এক আকর্ষণ তাকে যেন টানছে ভেতরে।

ভীতির জোরেই সে সিঁড়ি বেয়ে নিচে যায়। সিঁড়ির শেষ ধাপে পা রাখতেই সামনে চোখে পড়ে হালকা হলুদ রঙের দ্বিগুণ জ্বলজ্বলে দুটি বড় চোখ শিকারের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কখনো মনে হয় বাঘের, কখনো মনে হয় বিড়ালের। ইভার প্রথম স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। তার চোখ বন্ধ হয় ভয়ঙ্কর ক্ষুধার্ত সেই চোখ দুটি নড়ছে।

তার দিকে এগিয়ে আসছে। মাথার কাছাকাছি ঝুলে থাকা বেড সুইচে হঠাৎ হাত পড়তেই ঘরে আলো জ্বলে ওঠে। ঘুম ভেঙে যায় ওর। উঠে বসে সদ্য দেখা স্বপ্নের ঘটনা মনে করতেই ওর খুব পানির তৃষ্ণা পায়। পানি খেয়ে শুয়ে পড়ে আবার ভাবতে চেষ্টা করে কিছুই স্বপ্ন দেখেনি।

বেড সুইচ অফ করতেই ইভার পায়ের দিকে আলমারির ওপর জ্বলজ্বলে দুটি চোখ দেখতে পায় মুহূর্তেই মিনি লাফ দিয়ে বিছানার ওপর পড়ে। ইভা এবার সত্যি সত্যিই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আবুল কাসেম রতন ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।