অবিনশ্বর প্রেমের জন্য প্রার্থনা “তুই একবার গিয়ে বর্ষাকে দেখে আয়”
“না”
“ও অসুস্থ”
“ও”
“ভয়ানক অসুস্থ”
“ও”
“কিরে, খালি ও ও করছিস কেন?”
“হুম”
“কেন যাবি না? তুই মেয়েটাকে আর কতো কষ্ট দিবি ?”
“আমি ওকে কষ্ট দেই নি। ও নিজেই কষ্ট পেয়েছে। যারা কষ্ট পায় নিজের দোষেই পায়। ”
“আল্লাহর দোহাই, ওর অবস্থা খুব খারাপ। মরেও যেতে পারে।
”
“আচ্ছা। ”
“তোর সাথে কথা বলে লাভ নেই। মনে রাখিস তুই জীবনে এর জন্য পস্তাবি। ”
“কিভাবে??”
“তুইও একদিন প্রচণ্ড কষ্ট পাবি। ”
উৎসাহ সহকারে হাসলাম ।
প্রচণ্ড কি কষ্ট পাব সেটা দেখতে ইচ্ছা করছে। মানুষ কিভাবে প্রচণ্ড কষ্ট পায় সে ব্যাপারটা অনেক বছর যাবত দেখিনা। যারা কষ্ট পায় তাদের কাছ থেকে দূরে থাকি। মানুষ যখন কষ্ট পায় তখন সৃষ্টিকর্তার কাছে আকুলভাবে প্রার্থনা করে। কিন্তু কষ্ট কেটে গেলে আবার সব ভুলে যায়।
জীবন নতুন করে সাজাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। আমি জানি বর্ষাও কোনও একদিন সব ভুলে যাবে। বিয়ে করে বাচ্চাকাচ্চা সামলাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়বে। তখন মনেই পড়বেনা যে সে আমাকে ভালোবাসতো। তখন যদি আমি সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করি,
“এই বর্ষা।
”
“আমাকে বলছেন?”
“হ্যা, তুমি কেমন আছো?”
“আপনাকে তো চিনতে পারলাম না। ”
ও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে। একটা অচেনা লোক তাকে চিনল কিন্তু সে চিনতে পারছে না। অথবা ও আমাকে চিনবে কিন্তু না চেনার ভান করবে। মানুষের জীবনে এটাই বেশি হয়।
সবাই ভান করে। কেউ না চেনার, কেউ সুখী থাকার। আমি ভান করি না। আমি আসলেই সুখী। কেউ আমাকে না চিনলেও আমি সুখী থাকবো।
বর্ষার সাথে আমার কিছু নেই। না প্রেম , না মোহ। তবে মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে। হয়তো ভালবাসে সত্যিই। আমি অবশ্য বিশ্বাস করিনা।
ভালোবাসা এমনই। তীব্র আবেগ আর মোহের ঝড়ো হাওয়া দিয়ে শুরু হয়ে ঝড় আর ধ্বংসের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। আমি তাই মেয়েটার থেকে দূরে থাকি। কি ভেবে মেয়েটা আমাকে ভালবেসেছে তা অবশ্য আমি নিশ্চিত নই। তবে একটা কারন হতে পারে সে আমাকে অসহায় ভেবেছে।
মেয়েরা অসহায় পথচ্যুত ছেলেকে ভালবাসতে ভালবাসে। তারপর তার বান্ধবীদের কাছে গর্ব করে বলে,
“জানিস আমি না, ওকে একদম ভালো করে দিয়েছি। ইসস, আমি না থাকলে যে ওর কি হতো !!!”
বর্ষা হয়তো এমন ভেবেছে। আমি তাই ওর কাছ থেকে দূরে থাকি। কিন্তু মেয়েদের আরেক অভ্যাস হচ্ছে যা পাচ্ছে না, তাকে পাবার চেষ্টা করা।
মনে মনে ভাবে যে,
“আমার পেছনে কতো সুন্দর সুন্দর ছেলে ঘুরে, আর তুই আমাকে পাত্তা দিস না ! দাঁড়া, তোকে একবার প্রেমে ফেলে নেই, তারপর দেখাব মজা”
বেসিরভাব সময় সেই মজা দেখান শেষ হয় কান্না দিয়ে। ছেলেও কাঁদে, আর মেয়েও কান্নার অভিনয় করে। আর বলে,
“ইস, তুমি যদি আমার জীবনে ওর আগে আসতে তাহলে আমি তোমাকেই ভালবাসতাম” তারপর নাকিকান্না জুড়ে দেয়। ছেলেরা আর জিজ্ঞাসা করেনা “আরেকটা ছেলে থাকতে তুমি আমার সাথে প্রেম করলে কেন ???”
তাদের মাথা তখন ঠিক থাকেনা। হন্যে হয়ে তারা বটগাছ খুঁজতে থাকে।
বটগাছ পেলে সেখানে গিয়ে বসে থাকে আর নিজেকে দেবদাস ভাবে। নিজেকে প্রতারিত অসহায় ভাবতে অনেক মানুষ পছন্দ করে।
এখন আর আমি এসব পাত্তা দেই না। বয়স তো কম হলনা। জীবনে এসব দেখতে দেখতে ক্লান্ত।
তবে আমার সব বন্ধু বর্ষার ব্যাপারে আমার উপর ক্ষিপ্ত। ইদানীং আরও খেপেছে বর্ষা অসুস্থ হবার পর। আমাকে জানানোর পরও আমি দেখতে যাই নি।
তীব্র রোদেলা দুপুরে আমি রাস্তায় বের হলাম। এসময় হাঁটতে মজা আছে।
চৈতি একটু আগে ফোন দিয়েছিল। বলেছে যে বর্ষার অবস্থা খুব খারাপ। আমি চাইলে শেষবারের মতো দেখতে পারি। আমি রেখে দিয়েছি। কিছু বলিনি।
যাবো না আসলে। কাউকে সুখী করার কিংবা কারো কথা শোনার ইচ্ছা আমার নেই। প্রখর এই দুপুরে রাস্তায় কেউ নেই। শুধু আমি আর কয়েকটা কুকুর। এই মুহূর্তে বাতাস থেমে গেছে।
মনে হয় বৃষ্টি আসতে পারে। বাহ ! চমৎকার হতো বৃষ্টি নামলে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম বৃষ্টি নামলে হাসপাতালে গিয়ে বর্ষাকে দেখে আসবো। বৃষ্টির মাঝে বর্ষাকে দেখা। খুবই রোমান্টিক হবে ওর জন্য।
সে নিশ্চয়ই আমাকে দেখে কেঁদে ফেলবে। তারপর মারা যাবে। আমি বৃষ্টির দিনে কাঁদতে কাঁদতে কাউকে মরতে দেখিনি। এবার নিশ্চয়ই এমন অভিজ্ঞতা হবে। বেশ খুশি লাগছে এখন।
কিন্তু বর্ষা যদি না মারা যায় ? তখন তো আমি বিপদে পড়বো। মাঝখান দিয়ে আমার দিনটা মাটি হবে। এর চেয়ে ভালো রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ভিজি।
বৃষ্টি অবশেষে নেমেছে। তবে বৃষ্টি না শুধু।
বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগের মতে বজ্রসহ বৃষ্টি নেমেছে। এখন যদি কাঁদতে পারতাম তাহলে বৃষ্টির পানি আমার কান্না ধুয়ে নিতে পারতো। চমৎকার একটা কাব্যিক বাক্য হয়ে যেত। কিন্তু অজ্ঞাত কারনবসত আমার কান্না পাচ্ছেনা। কারন আমার কোনও কষ্ট নেই।
মানুষ কিভাবে প্রচণ্ড কষ্ট পায় সে ব্যাপারটা অনেক বছর যাবত দেখিনা। যারা কষ্ট পায় তাদের কাছ থেকে দূরে থাকি। মানুষ যখন কষ্ট পায় তখন সৃষ্টিকর্তার কাছে আকুলভাবে প্রার্থনা করে। কিন্তু কষ্ট কেটে গেলে আবার সব ভুলে যায়। আমিও সব ভুলে গেছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।