আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গুলশান মহাখালী অবরোধ: কড়াইল বস্তিবাসীর দাবী

আপডেট: আন্দোলনকারীরা সরকারের পক্ষ থেকে আর কোন ঘর ভাঙা হবে না মর্মে আশ্বাস পেয়ে আপাতত অবরোধ প্রত্যাহার করেছে। গুলশান লেকপাড় থেকে ২০ ফুটের মতো জায়গা দখল মুক্ত করার অযুহাত দিয়ে গতকাল ৪ এপ্রিল কড়াইল বস্তি এলাকা থেকে শত শত ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করা হয়েছে, ভেঙে দেয়া হয়েছে গোডাউন বস্তি, এরশাদ নগর বস্তির একটা বড় অংশ। বিনা নোটিশে এই বস্তি উচ্ছেদের সময় গার্মেন্টস শ্রমিক, হকার, কাজের বুয়া, রিকশা চালক সহ কর্মজীবী নারী-পুরুষের অনুপস্থিতেই তাদের ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি ঘরে তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকা দুটি শিশুকে বুলডোজার দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে হত্যা করার অভিযোগ করেছেন গুলশান-মহাখালী লিংক রোড অবরোধ করে রাখা ক্ষুব্ধ বস্তিবাসী। আশ্রয়হীন হয়ে তারা খোলা আকাশের নীচে রাত যাপন করেছেন, কেউ কেউ টিএনটি কলোনির মাঠে এসে উঠেছেন।

তাদের একটাই দাবী পুর্নবাসন ছাড়া যেন তাদেরকে উচ্ছেদ করা না হয়। ছবি: মহাখালী ফ্লাইওভারের নীচে আমতলী অবরোধ ছবি: প্রধানমন্ত্রীকে তার কোন এক সময় দেয়া "প্রতিশ্রুতি" স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে এক বিক্ষোভকারী ছবি: মহাখালী ওয়্যারলেস এলাকায় বৈশাখী টেলিভিশনের সামনে মিডিয়ার কাভারেজের দাবী জানাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা ছবি: মহাখালী ওয়ারলেস এলাকা অবরোধ পুজিবাদি অর্থনীতির থাবায় ক্ষত-বিক্ষত গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতি থেকে উচ্ছেদকৃত ভূমিহীন-কর্মহীন মানুষেরা ক্রমাগত জড় হয় মেট্রোপলিটন ঢাকায়- কোন রকমে জীবন ধারণের আশায়। কপাল ভালো হলে এদের কেউ কেউ ঢুকে যেতে পারে কলকারখানার ন্যূনতম মজুরীর জীবনে আর বেশির ভাগই উপচে পড়ে ভেসে যায় নানান আনুষ্টানিক খাতের অনিশ্চিত স্রোতে- কেউ রিকশা-ভ্যান চালায়, কেউ ফুটপাতে হকারি করে, কেউবা নির্মাণ শ্রমিক, কুলি, মজুর, সবজি-বিক্রেতা, ফেরীওয়ালা, বস্তির মাদক বিক্রেতা, বাসাবাড়ির কাজের লোক-বুয়া-দারোয়ান, পতিতা-পতিতার দালাল কিংবা ভিক্ষুকে পরিণত হয়। এই নিম্ন আয়ের মানুষরা থাকবে কোথায়? বস্তির এক দেড় হাজার টাকার ঘর ভাড়া ছাড়া আর কোথায় তাদের মাথা গোজার ঠাই হতে পারে? বস্তিতে তো এরা রাজার হালে থাকে না, শখ করেও থাকে না। গুলশান বনানী বারিধারাকে সার্ভিস দিতে হলে, হকারী, মজুরী করে জীবন যাপন করতে হলে আর কোথায়ই বা থাকবে তারা? তাই এরা হলো কসমোপলিটান ঢাকার নেসেসারি ইভিল, গুলশান-বনানি-বাড়িধারার নান্দনিক ইমেজের ব্যাকগ্রাউন্ড ।

আবার এরা সময় সময় মুনাফার ওলা ওঠার কালে শাসক শ্রেণী বেমালুম ভুলে যায় নেসেসারি ইভিলদের নেসেসারি বা প্রয়োজনীয় অংশটুকুর কথা, ভুলে যায় কোন পরিস্থিতিতে পুজিবাদের অর্থনৈতিক উদ্বাস্তু এই মানুষগুলো মানবেতর বস্তি জীবন যাপন করে। কড়াইল বস্তি এলাকার ১২০ একর জমিতে ৩ লক্ষাধিক বস্তিবাসীর কোন রকম মাথা গুজে থাকার চেয়ে মাল্টিষ্টোরিড বিল্ডিং, শপিং কমপ্লেক্স কিংবা অন্য যে কোন কিছু্ই বেশি গুরুত্বপূর্ণ! ফলে লেকের সৌন্দর্য বর্ধন, মাদক নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাস দমন ইত্যাদি নানান অযুহাতে এখন কড়াইল বস্তি উচ্ছেদ জরুরী হয়ে পড়েছে। আমরা কড়াইল বস্তিবাসীর আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে পুনর্বসান ছাড়াই বস্তি উচ্ছেদের বিরোধীতা করছি, দাবী করছি রাষ্ট্রীয় ব্যাবস্থাপনায় এই খেটে খাওয়া মানুষগুলোর আবাসনের ব্যাবস্থা করা হউক। বস্তিবাসীদের পক্ষ থেকে প্রচারিত একটি লিফলেট এর বক্তব্য এখানে তুলে ধরা হলো: কড়াইল বস্তিবাসীর দাবী ১) কড়াইল বস্তিবাসীর দাবী “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য” পূর্নবাসন ছাড়া বস্তি উচ্ছেদ চলবে না। ২)মহামান্য হাইকোর্টের লেকপার বস্তি উচ্ছেদ রায়কে সন্মানের সহিত শ্রদ্ধার সাথে সন্মান জ্ঞাপন করতেছি।

৩) ১৫-০১-০৯ তারিখে মহামান্য হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী পূর্নবাসন ছাড়া কড়াইল বস্তি উচ্ছেদ চলবে না। ৪) কড়াইল বস্তিবাসী বসবাসরত (তিন লক্ষ মানুষ) সকলের প্রাণের দাবী পূর্নবাসন করে বস্তি উচ্ছেদ করুন। ৫) কড়াইল বস্তিতে আমরা প্রায় তিন লক্ষ লোক ত্রিশ বছর যাবৎ বসবাস করিয়া আসেতিছি। ৬) বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইস্তেহার অনুযায়ী পূর্নবাসন ছাড়া বস্তি উচ্ছেদ চলবে না। নিবেদক, কড়াইল বস্তিবাসী সর্বস্তরের জনগণ ছবি: বিক্ষোভকারীদের দাবী নামা ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।