আমার কথা একটু বলি। আমার ছোটোবেলা কেটেছে সীতাকুণ্ডে।আমি ছোটোবেলায় সীতাকুণ্ডে পড়াশোনা করলেও ক্লাস ৫ হতে চট্টগ্রাম(পতেঙ্গা) চলে আসি।অনেকেই আছে যারা ছোটোবেলা থেকেই প্রযুক্তির মাঝে বড় হয়েছে।আমার ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটেনি। আমি প্রথম কম্পিউটার দেখি ক্লাস ৯ এ,স্ক "লেখাটা বিবেকের কাছে দায় বোধ থেকে, শুধু আমি না- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব শিক্ষক এবং শতকরা ৯৯ভাগ ছাত্র-ছাত্রীদের ও অনুভূতি একই ৷ আমরা শিক্ষকরা ক্লাস, কাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে নিতে চাই৷ ছাত্র-ছাতীরাও তাদের একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে নিতে চায় ৷ কিন্তু উদ্ভুদ এক প্রশাসনিক জটিলতায় আজ সুদীর্ঘ ২মাস ৩দিন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) অচল প্রায় ৷ দেশের প্রকৌশল ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উত্কর্ষতা সাধন ও প্রকৌশল শিক্ষায় উচ্চতর গবেষনা এবং দেশের প্রকৌশলীদের চাহিদা পূরণের অভিপ্রায়ে ১৯৬৮ সালে পূর্বতন চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নামে প্রকৌশল শিক্ষার মহীরুহ এই বিদ্যাপীটের যাত্রা শুরু ৷ বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা থেকে উত্তরণ এবং যুগের ও বহি: বিশ্বের সাথে এগিয়ে যাওয়ার মানসে ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ পরবর্তীতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজী (বিআইটি) এবং সর্বশেষ ২০০৩ সাল থেকে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) নামে এই প্রকৌশল বিদ্যাপীট বাংলাদেশ ও বহি: বিশ্বে অত্যান্ত সুনামের সাথে তার দায়িত্ব পালন করে আসছে ৷ প্রকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি চট্টগ্রামের 'চট্টগ্রাম-কাপ্তাই' মহাসড়কের উত্তর পার্শ্বে চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২৫ কি.মি দূরে ১৬১একর জমির উপর অবস্থিত ৷ দেশের সর্ববৃহত্ সমুদ্র বন্দর, জল-বিদ্যুৎ কেন্দ্র, তেল শোধানাগার ও ইপিজেড সহ অন্যান্য অনেক সম্ভাবনাময় শিল্প-কারখানা এর সন্নিকটে অবস্থিত ৷ এ প্রতিষ্ঠান হতে ডিগ্রি প্রাপ্ত অনেক প্রকৌশলী এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত থেকে নিরলস শ্রম ও নিবেদিত প্রয়াসের মাধ্যমে যেমন - দেশকে প্রযুক্তি উত্কর্ষতায় নিয়ে যাচ্ছেন তেমনি বহি:বিশ্বের প্রায় সম পরিমাণ প্রকৌশলী (যারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট) বিভিন্ন দেশে তাদের কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশের নাম উজ্জল করে যাচ্ছেন ৷ যাদের মধ্যে অনেকেই আবার বিদেশের নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, গবেষকও আছেন ৷ যা এই স্বল্প পরিসরে শেষ করা যাবে না ৷ এই প্রতিষ্ঠানের বিশেষত্ব হচ্ছে এখানে শিক্ষকদের মাঝে কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই৷ এখানে অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মত লাল- নীল ও সাদা দল নেই ৷ এই প্রতিষ্ঠানে হরতালের মধ্যে ও ক্লাস হয় এবং প্রতিটা বিভাগের প্রতিটা শিক্ষক অন্যায় ও ভূল, ভ্রান্তি দেখলে তা মত প্রকাশ করতে পারে ৷ এতসব ভাল গুন নিয়ে যে প্রতিষ্ঠানটি 'প্রগতিশীল' তা হঠাত্ করে সম্পূর্ণ স্থবির ৷ নিয়মতান্ত্রিকভাবে গত জানুয়ারী মাসের ২৮ তারিখ বর্তমান ভিসি মহোদয়ের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় ৷ এরপর থেকে আজ ৩১শে মার্চ (প্রায় ২মাস ৩দিন) পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ভিসি শূণ্য ৷ যেহেতু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি পদে ও কেউ নেই এবং প্রাক্তন ভিসি মহোদয়কে তার কাজ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা ও প্রদান করা হয়নি ৷ তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা ক্ষেত্রে চরম হতাশা এবং চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে ৷ যেহেতু সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সভাগুলো ভিসি মহোদয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় ৷ তাই ভিসি শূণ্য থাকায় গত ২ মাস এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়নি এবং কোন ডিগ্রি ও প্রদান করা হয়নি ৷ এরই মাঝে বর্তমানে আটকে আছে ২০১১ ইং. শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত ১ম বর্ষের ক্লাস ৷ এই পর্যন্ত ক্লাস শুরুর তারিখ ৩ বার পেছানো হয় এবং খুব সম্ভবত: ভিসি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ১ম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়ত: হবে না ৷ অথচ ১ম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীরা এতদিন ১ম সেমিষ্টার ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতিতে থাকত ৷ যার ফলশ্রুতিতে সম্পূর্ণ সেশনজট বিহীন এই প্রতিষ্ঠান বর্তমানে সেশনজটের কালো থাবার কবলে ঢুকে যাচ্ছে ৷ কারণ ১লা এপ্রিল থেকে তাদের পরবর্তী ব্যাচ (এইচ এস সি-২০১২) উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে৷ এছাড়াও ভিসি না থাকায় ক্লাস বর্জনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোন কার্যক্রম বা কর্মসূচী নেওয়া যাচ্ছে না ৷ আটকে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সকল উন্নয়ন কার্যক্রম ৷ হুমকির মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ-শিক্ষার মান উন্নয়ন প্রকল্পে প্রতিযোগীতামূলক ভাবে পাওয়া হেকেপ এর প্রজেক্টগুলো ৷ তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত যেসব বৈজ্ঞানিক সেমিনার গুলো হতো তা আজ দুই মাস ধরে আয়োজন করা যাচ্ছে না ৷ এক কথায় বলা যায় ভিসি নির্ভর এই প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রমে বিরাজ করছে প্রচন্ড হতাশা ৷ আমরা শিক্ষকরা এই অবস্থায় মর্মাহত ৷ আমরা শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীরা প্রাণের মত ভালবাসি এই চুয়েট-কে৷ এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতি শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে (মৌন মিছিল/অবস্থান ধর্মঘট/কর্মবিরতি সহ) মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করে যাচ্ছেন ৷ আমরা জানিনা কেন আজ সুদীর্ঘ ২মাস ৩দিনেও এই প্রতিশ্রুতিশীল বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি বিহীন৷ এমনি আমাদের দেশ বিভিন্ন কারণে বিশেষ করে দীর্ঘায়িত প্রশাসনিক সিদ্বান্তহীনতায় পিছিয়ে যায় ৷ এই অবস্থায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর দীর্ঘ ২মাস ৩দিন (যা প্রায় ৫০৪কর্মঘন্টা) বন্ধ ৷ তার ক্ষতি কি আমরা আমাদের প্রিয় দেশকে ফিরিয়ে দিতে পরব? এই বন্ধ হয়ে যাওয়া কার্যক্রম পূর্নদ্দোমে কবে চালু হবে তা আমদের প্রশ্ন ! তাই মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রী মহোদয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশনের নিকট বিনীত আবেদন যে, অতীব জরুরী বিবেচনায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(চুয়েট)-এ ভিসি নিয়োগ করত: প্রতিষ্ঠানের প্রাণ প্রাচুর্য্য আবার ফিরিয়ে আনুন ৷ তবে এ ব্যাপারে আমাদের প্রত্যাশা- চুয়েটের ভিসি পদে যেন চুয়েটের অভ্যান্তরীণ গ্রহণযোগ্য ও নিষ্টাবান একজন প্রকৌশল ব্যক্তিত্ব-কে যেন ভিসি হিসাবে দেওয়া হয় ৷ যিনি চুয়েটের অব্যাহত অগ্রযাত্রাকে আরও অগ্রগামী করবেন৷ কারণ বাহিরের কেউ ভিসি পদে আসলে চুয়েটের প্রতি মায়া ও মমতা ঠিকমত কাজ করবেনা এবং প্রতিষ্ঠানকে বুঝে উঠতে অহেতুক কালক্ষেপন হবে ৷ সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহ যেমন প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, প্রক্টর ইত্যাদি পদসমূহ জরুরী ভিত্তিতে পূরন করে বিশ্ববিদ্যালয় যাতে ভবিষ্যতে এই অবস্থায় আর পতিত না হয় তা খেয়াল রাখতে হবে ৷ পরিশেষে একটা অনুভূতির মাধ্যমে লেখা শেষ করব ৷ একদিন ভোরে বিভাগের সামনের রাস্তায় একজন সিনিয়র অধ্যাপকের সাথে গল্প করছিলাম ৷ বিভাগের সামনের রাস্তা সামান্য ঢালু হওয়ায় অনেকদূর একসাথে দেখা যায়, তখন ক্লাস শুরুর সময় ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসমুখী সমবেত শ্রোত দেখে শ্রদ্ধেয় স্যার বললেন - সায়েম, দেখ কি সুন্দর লাগছে! অর্থাত্ স্যার বুঝাতে চেয়েছিলেন ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসমুখী সমবেত যাত্রা একটা সুন্দর দৃশ্য তৈরী করেছিল ৷ তখন স্যারের কথা ঠিক ধরতে পারিনি ৷ আজ ছাত্ররা ক্লাসে নেই ৷ আমরা শিক্ষকরা প্রতিদিন বিভাগে যাই কিন্তু, আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের দেখিনা ৷ উপলব্ধি করি স্যারের কথা ! আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণ-চাঞ্চল্য ও প্রাচুর্য্য হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা আর আমরা শিক্ষকরা বেঁচে থাকি ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে , ক্লাস না নিতে পারলে আমাদের যে ভাল লাগে না ৷ আশা করব দ্রুত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) তার স্বকীয় পরিবেশে ছাত্র/ছাত্রীদের প্রাণ-চাঞ্চল্যে ও প্রাচুর্য্যে খুব শীঘ্রই ফিরে যাবে৷ আমরাও মেতে উঠব জ্ঞানের উত্কর্ষে সাধনে এই প্রত্যাশায় ৷ লেখক: আবু সাদাত মুহাম্মদ সায়েম সহকারী অধ্যাপক, যন্ত্রকৌশল বিভাগ চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)। ই-মেইল: " মূল লেখাঃ Click This Link
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।