আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জাতি ও জনগণ এক হও, প্রতিরোধ গড়ে তোল!

শ্রমিক, মজদুর, কৃষক, ক্ষুদে ব্যবসায়ী, কর্মচারী, ছাত্র, শিক্ষক, পেশাজীবী, দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি, ধর্মীয়-জাতিগত-ভাষাগত সংখ্যালঘু, নারী, যুবসহ সকল কমিউনিস্ট বিপ্লবী, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও দেশপ্রেমিক ব্যক্তি ও সংগঠনের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জাতি ও জনগণ এক হও, প্রতিরোধ গড়ে তোল! সংসদ নির্বাচন ও ক্ষমতার রদবদলকে ঘিরে শাসক শ্রেণীর রাজনীতি গত বছর থেকেই পুরোপুরি ঘনীভূত হতে শুরু করে। নির্বাচনকে ঘিরে শাসক শ্রেণীর দুই বড় জোট, তৃতীয় শক্তি এবং তাদের সহযোগীদের মেরুকরণ ঘটতে দেখা যায়। স্ব স্ব বক্তব্য ও কর্মসূচি নিয়ে তারা মাঠে নামে। শক্তির প্রদর্শনী করে। প্রকাশ্য তৎপরতার আড়ালে চলতে থাকে দেশি-বিদেশী শাসক শ্রেণীর নানা হিসাব-নিকাশ, গোপন সমঝোতা ও সমীকরণ।

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আওয়ামী মহাজোট যুদ্ধাপরাধীর বিচারের ইস্যুকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের হাতিয়ারে পরিণত করে। এ নিয়ে তাদের কর্মসূচী ছিল পরিকল্পিত ও বেপরোয়া। সরকার, তার গণবিরোধী তৎপরতা আড়াল করা, বিরোধীদের কোনঠাসা করা, জনগণের সংগ্রামে দমন-পীড়ন করা এবং নির্বাচনী কুটকৌশল প্রয়োগ করার হাতিয়ার হিসাবে এ ইস্যুকে ব্যবহার করে। ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার’ হয়ে ওঠে ফ্যাসিবাদী বুলি। গত বছরের শুরু থেকে আওয়ামীলীগ ও তাদের লেজুড় বামপন্থীরা নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার উদ্দেশ্যে এই ইস্যুকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে বহুমুখী উদ্যোগ নেয়।

যুদ্ধাপরাধ বিরোধী কনভেনশন, প্রচার-গণসমাবেশ, সরকার সমর্থিত হরতাল ইত্যাদির মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীর বিচার ইস্যুকে ব্যবহার করে। জনগণকে নিজেদের পেছনে টানার চেষ্টা চালায়। কিন্তু, জনগণ স্বাভাবিকভাবেই এ গণবিরোধী শাসক শ্রেণীর ডাকে সাড়া দেয় নি। অপরদিকে কয়েক বছর ধরেই ইন্টারনেটে আওয়ামী ব্লগাররা জামাত বিরোধীতা, যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, প্রচার চালায়। উল্লেখ্য মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ‘রিজিম চেঞ্জ’ করার প্রয়োজনে ‘অহিংস অমান্যতার আন্দোলন’ সৃষ্টির এক কৌশল প্রয়োগ করছে।

ব্লগিং-এ কৌশলের একটি অংশ। এ উদ্দেশ্যে মার্কিন সামরিক থিঙ্ক ট্যাংক ও কতগুলো আন্তর্জাতিক এনজিও বিভিন্ন দেশে তরুণদের মধ্যে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে যুব সংগঠন ও নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে। সম্প্রতি বাংলাদেশেও এমন বহুমাত্রিক তৎপরতা বিকাশমান। ইমরান এইচ সরকারের ‘ইয়ুথ ফর পীস এন্ড ডেভেলপমেন্ট’- এ ধরণেরই এক যুব সংগঠন। এভাবে আওয়ামীলীগ যুদ্ধাপরাধ ইস্যুকে তার রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলায় মোক্ষম অস্ত্র হিসাবে বিকশিত করে এবং কার্যকরভাবে কাজে লাগায়।

সম্প্রতি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির ইস্যুকে আশ্রয় করে শাসক শ্রেণীর আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংঘাত জটিল ও বিপজ্জনক আকার ধারণ করে। উপরিতলে বা প্রকাশের দিক থেকে ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’-এর প্রশ্ন বিবাদের বিষয়বস্তু। কিন্তু দ্বন্দ্বের সারবস্তু তা নয়। ‘মসনদের পরবর্তী অধিকার’ নিয়েই দু’পক্ষের মূল বিবাদ। এটাই দ্বন্দ্বের সারবস্তু।

একটা আপস রফা হয়ত হতে পারত, কিন্তু নির্বাচন যত ঘনিয়ে এসেছে, সে সম্ভাবনা তত কমেছে। সেটা প্রকাশ্য রক্তাক্ত সংঘাতে রূপ নিয়েছে। আগামী নির্বাচনে ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে আওয়ামীলীগের ডানপন্থী অংশ জামাতের সাথে সমঝোতা করার পক্ষে ছিল। এ জন্য তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে রাজনৈতিক দরকষাকষির পুঁজি হিসাবে গ্রহণ করে। ১৮ দলীয় জোটে ভাঙ্গণ, প্রয়োজনে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে জামাতের অংশগ্রহণ ইত্যাদি নানা সমীকরণ নিয়ে তারা মাঠে নামে।

তারা আশা করছিল এভাবে মার্কিনসহ সাম্রাজ্যবাদ ও পাক-সৌদি সমর্থন ধরে রাখতে পারবে। বিশেষত সরকারের দুঃশাসনের কারণে দেশী-বিদেশী শাসক শ্রেণীর সমর্থন হারিয়ে আওয়ামী লীগের পুনঃনির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা ফিকে হয়ে পড়ে। এ পেক্ষাপটে তারা সমঝোতায় আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। এ আপোসের সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটে ‘মিরপুরের কসাই’ কাদের মোল্লার লঘু শাস্তির ঘটনায়। কিছু দিন আগেও বিএনপি-ভারত এবং লীগ-জামাতের গোপন সমঝোতা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল।

আওয়ামীলীগ থেকে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ ক্রমশ দুরে সরে যাচ্ছে, ভারতীয় সম্প্রসারণবাদও বিকল্প খুঁজছে-এমনটাই প্রকাশ পেয়েছিল। কিন্তু কাদের মোল্লার রায়ের পর ফাঁসির দাবীতে গড়ে ওঠা শাহবাগ আন্দোলন পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লার রায়ে লীগ-জামাত আঁতাত প্রকাশ্যে চলে আসে। আওয়ামী লীগের মধ্যকার কট্টর জামাতবিরোধী অংশ এবং সহযোগী বাম সংগঠনগুলো জামাত-লীগ আঁতাতে নিজেদের বিপদ দেখতে পায়। আওয়ামীপন্থী ব্লগারদের উদ্যোগে শুরু হয় শাহবাগ আন্দোলন।

অবিলম্বে ঐ আওয়ামীলীগার ও বামপন্থীরা আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করে। তারা শাহবাগ আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ ও নেতৃত্ব দখল করে। আওয়ামী লীগের গা বাঁচিয়ে কেবল জামাতকে টার্গেট করে আন্দোলন পরিচালনা করে। এতে তারা ভারতেরও সমর্থন লাভ করে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা সত্ত্বেও সমাজে এক ভাঙ্গণ চলমান।

শাসক শ্রেণীর রাজনৈতিক সংকট একের পর এক ধাক্কা দিচ্ছে। শাসক শ্রেণী গণধিকৃত হয়ে পড়েছে। ইতিপূবেই সংবেদনশীল মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত যুব সমাজের চেতনায় এ ভাঙ্গণের প্রতিফলন সবচেয়ে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল। কাদের মোল্লার রায় ছিল এক যথার্থ উপলক্ষ। তাই একে উপলক্ষ করে সমাজের এ ভাঙ্গণ ও চাঞ্চল্যের ঘনীভূত প্রকাশ ঘটে।

আর তা প্রকাশিত হয় শাহবাগে স্বতস্ফূর্ত বিক্ষোভে। ন্যায় বিচার থেকে বহু বছরের বঞ্চনা ছিল। অন্যদিকে আঁতাত ও বিশ্বাসঘাতকতার কারণে জনমনে ছিল ব্যাপক ক্ষোভ। গণমাধ্যমগুলোর ব্যাপক প্রচারণা একে শাহবাগে সংহত করতে সাহায্য করেছে। এভাবে এ আন্দোলন শহুরে মধ্যবিত্ত ও তরুণদের মধ্যে বিরাট সাড়া সৃষ্টি করে।

নতুন পরিস্থিতি শাসক শ্রেণীর বিভিন্ন অংশকে নতুন সমীকরণের দিকে ঠেলে দেয়। এ আন্দোলনের কারণে ১৮ দলীয় জোটের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে আন্দোলন স্থবির হয়ে পড়ে। এ প্রশ্নে গ্রহণযোগ্য ও প্রভাব বিস্তারে সক্ষম কোন রাজনৈতিক অবস্থান নেয়া তাদের পক্ষে দুরূহ হয়ে পড়ে। আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামীলীগার ও বামপন্থীরা সরকার-জামাত আঁতাতকে টার্গেট করে নি। তারা আন্দোলনের লক্ষ্য, দাবী-কর্মসূচি ও স্লোগানকে এমনভাবে হাজির করেছে, যাতে কোনক্রমেই তা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে না যায়।

তারা ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ’কে সুকৌশলে গৌরবান্বিত করেছে। ফলে এ আন্দোলন আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও মতাদর্শের পক্ষে হেজিমনি সৃষ্টি করে। সেই সাথে, আন্দোলনের কারণে আওয়ামীলীগের সকল দুষ্কর্ম আড়ালে চলে যায়। উল্লেখ্য, গত বছরের মাঝামাঝিতে প্রকাশিত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আওয়ামীলীগের জনসমর্থন মারাত্মকভাবে কমে গেছে, পরবর্তীতে তাদের ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা কম। কিন্তু শাহবাগ আন্দোলন কেবল বিএনপি জোটের সুবিধাজনক অবস্থাকে মাটি চাপা দিয়েছে-তাই নয়, আওয়ামী লীগের পায়ের নীচ থেকে সরে যাওয়া মাটি নতুন করে যোগান দিয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তি তাদের হিসাব নতুন করে কষতে শুরু করে। ভারত আওয়ামীলীগের উপরই বাজি ধরার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ ভারতের স্বার্থে আওয়ামী লীগের পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়া একান্ত দরকার। এটা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতির কারণে। বর্তমান সা¤্রাজ্যবাদী দুনিয়ায় চীন ও রুশ সা¤্রাজ্যবাদের উত্থান মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে।

ফলে বিশ্বের অন্যান্য সংঘাতময় অঞ্চলের মত দক্ষিণ এশিয়াতেও আন্তঃসা¤্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব তীব্রতর হচ্ছে। প্রশান্ত মহাসাগরের কর্তৃত্ব নিয়ে সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে। ‘স্ট্রীং অব পার্ল'সহ চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ তার ৬০ ভাগ সামরিক শক্তি এ অঞ্চলে নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। এ কারণে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র বন্দর ও মার্কিন সপ্তম নৌবহরের জন্য ঘাঁটি চায়। কিন্তু হাসিনা সরকার ভারতের স্বার্থ দেখতে গিয়ে মার্কিনের এসব স্বার্থ যথাযথভাবে রক্ষা করেনি।

এ কারণে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ পদ্মা সেতু দুর্নীতি, ইউনুস ইস্যু, শ্রম পরিস্থিতির অজুহাতে জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহারসহ নানা অজুহাতে প্রকারন্তরে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এ দ্বন্দ্বে হাসিনা সরকার তাই চীন ও রুশ সাম্রাজ্যবাদের কাছেও আশ্রয় খুঁজছে। অপরদিকে মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক মনে করছে আফগানিস্তান হতে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পর এ অঞ্চলে পাক-ভারত দ্বন্দ্ব এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করতে পারে। এভাবে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক ভারসাম্যের স্বার্থে বাংলাদেশে আগামী সরকারে কে থাকবে- তা ভারতের জন্য এক রণনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। তাই তারা বিশ্বস্ত ভারতপন্থীদের সরকারে দেখতে চায়।

মার্কিনের জন্যও তা সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একই কারণে পাক-সৌদি অক্ষও এ অবস্থাকে মোকাবেলায় শক্ত অবস্থান নেয়। এভাবে শাহবাগ আন্দোলনের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় শাসক শ্রেণীর দ্বন্দ্বকে আরও ঘণীভূত করে তোলে। এ পর্যায়ে জামাত-লীগ আঁতাত ভেঙ্গে পড়ে। সাঈদীর ফাঁসির আদেশে তার প্রকাশ ঘটে।

আ.লীগের জামাতবিরোধী অংশের রাজনৈতিক যুদ্ধাভিযান মোকাবেলায় পাক-সৌদি সমর্থিত জামাত ও তার সহযোগীরা ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে। এভাবে রাজনৈতিক প্রতি-আক্রমণ পরিচালনা করে। ব্লগার রাজীব হত্যার পর তার ধর্মবিদ্বেষী লেখাকে পুঁজি করে প্রপাগান্ডা চালানো হয়। এভাবে মুসলিম জনসাধারণের ধর্মীয় ভাবাবেগকে ব্যবহার করে জামাতীরা সারা দেশে বড় ধরণের সংঘাতের জন্ম দেয়। বিরোধী মতাবলম্বী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আক্রমণ করে।

হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। এভাবে তারা ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটায়। অপরদিকে শাহবাগ আন্দোলন জনগণের যুদ্ধাপরাদের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত ক্ষোভকে পুঁজি করে সরকার তরফ থেকে রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ বিকাশের শর্ত তৈরী করে দেয়। উগ্র বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, ‘আওয়ামী মুক্তিযুদ্ধ’, ‘হয় আমাদের পক্ষে-নয় আমাদের বিপক্ষে’ ইত্যাদি প্রতিক্রিয়াশীল ধারণার প্রচার এবং জামাতিদের সন্ত্রাস ও সংগঠনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে মোকাবেলার ন্যায্যতা তৈরী করে-এ ফ্যাসিবাদের জন্ম দেয়া হয়। ফলে জামাতি সংঘাত-সন্ত্রাসের জবাবে রাষ্ট্রীয় পুলিশ নির্বিচার গুলি বর্ষণ করে শতাধিক মানুষকে হত্যা করে।

এ পরিস্থিতি শাসক শ্রেণীর চলমান দ্বন্দ্বকে আরো তীক্ষ্ম করে তোলে। এ পরিস্থিতিতে আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়াদের দুই অংশ সংকট মোকাবেলার একমাত্র পথ হিসাবে ফ্যাসিবাদকে গ্রহণ করে। এ ফ্যাসিবাদের লক্ষ্য হল জাতি ও জনগণের মৌল সমস্যা আড়াল করা। এ জন্য সারহীন ইস্যুকে কেন্দ্র করে জনগণের মধ্যে উন্মাদনা সৃষ্টি করা। তাদের লড়াইয়ের ক্ষেত্র হল জনগণ।

একদিকে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ ‘নাস্তিকতা’-কে টার্গেট করেছে। অন্যদিকে আওয়ামী-রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ আপাত দৃষ্টিতে জামাতকে টার্গেট করছে। কিন্তু উভয় রূপের ফ্যাসিবাদ শেষ পর্যন্ত কমিউনিস্ট ও গণতান্ত্রিক শক্তিসহ জনসাধারণকেই আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। এটা করা হচ্ছে ‘নাস্তিক’ এবং ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী’, ‘চীনা বাম’ ইত্যাদি উগ্রমতাদর্শ ও কুৎসা ছড়িয়ে। এভাবে তারা আওয়ামী মতাদর্শ, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সোচ্চার কণ্ঠকে ফ্যাসিবাদী কায়দায় দমন করতে চায়।

এ ফ্যাসিবাদী রক্তাক্ত সংঘাত ভারত-বিএনপি সমঝোতারও কবর রচনা করে। বিএনপি-জামাত একাট্টা হয়। তাদের পেছনে পাক-সৌদি মদদও জোরদার হয়। ভারত-লীগ সম্পর্কের দোদুল্যমানতার অবসান ঘটে। মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ আগে বিএনপি-র দিকে ঝুঁকে ছিল।

তবে ভারতের আকাক্সক্ষাকে বিবেচনায় নিয়ে আপাতত নিরপেক্ষ ভূমিকা নিচ্ছে। এ পর্যন্ত তৃতীয় শক্তি হিসাবে পরিচিত এবং সুশীল সমাজ সমর্থিত জাতীয় সরকারপন্থীরা ছিল কমবেশি নীরব। তারা তাদের অবস্থান নির্ধারণ করতে পারছিল না। বর্তমান সংঘাতময় পরিস্থিতিতে তারা জরুরী অবস্থা ও জাতীয় সরকার গঠনের এজেন্ডা সামনে আনছে। কিন্তু, তারা এখনও হালে পানি পায় নি।

বরং, শাসক শ্রেণীর এ সংঘাতে বামপন্থী সংগঠনগুলো পরিষ্কার অবস্থান নিতে সক্ষম হয়। বামপন্থী সংগঠনগুলোর মধ্যে আওয়ামী জোটভূক্তরা বহু আগেই আওয়ামীলীগের কোলে আশ্রয় নেয়। সিপিবি-বাসদ জোট আওয়ামীলীগ ও তৃতীয় শক্তির মধ্যে দোদুল্যমান ছিল। এ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে তারা আরও ঘনিষ্ঠভাবে আওয়ামীলীগের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এ আন্দোলনে বামমোর্চা কিছু দোদুল্যমানতার প্রকাশ ঘটিয়ে শেষপর্যন্ত আওয়ামী বলয়ে আত্মসমর্পণ করেছে।

সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হল এসব বামপন্থী সংগঠন কেবল এক মঞ্চে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তা-ই নয়, আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে তাদের রাজনীতি, লক্ষ্য, দাবী-কর্মসূচিকে সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করে নিয়েছে। ‘মৌলবাদ ঠেকাতে হবে’, ‘অঙ্ক পরীক্ষার সময় কেবল অঙ্ক পরীক্ষা দিতে হয়’, ‘জনগণের সাথে থাকতে হবে’, ‘একটা পক্ষ নিতে হবে’, ‘মাঠে থাকতে হবে’ -এসব সুবিধাবাদী তত্ত্বের আড়ালে তারা নিজেদের শাসক শ্রেণীর একাংশের সাথে একাকার করেছে; লেজুড়ে পরিণত হয়েছে। আঁতাতের প্রশ্ন হাজির না করা, কেবল ফাঁসির দাবী ও জামাতকে টার্গেট করা, আওয়ামীলীগ ও ভারতাশ্রয়ী ‘মুক্তিযুদ্ধ’-এর স্মারক ‘জয় বাংলা’, ‘বাঙ্গালী, বাঙ্গালী’ শ্লোগান, ৭ মার্চের ভাষণ ইত্যাদি গ্রহণ করে নেয়া এবং বড় বুর্জোয়াদের আর্থিক সহায়তা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ঘেরাটোপে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের তৈরী ‘অহিংস আন্দোলনের মডেল’ গ্রহণ করে নিয়ে তারা তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব ও আত্মসমর্পনকে মহিমান্বিত করেছে। জনগণকে করেছে বিপথগামী। নৈরাজ্যবাদী ও উত্তরাধুনিক মতবাদের উকিলরা শাহবাগ আন্দোলনের মডেলকে তাদের মতবাদের প্রকৃষ্ট প্রয়োগ হিসাবে জাহির করেছেন।

এসব মতবাদ যে নিষ্ফলা এবং শেষপর্যন্ত শাসক শ্রেণীর অনুকূলে জনগণকে বিভ্রান্ত ও পরিচালিত করে-শাহবাগ আন্দোলন তা আবারো উন্মোচন করে দিয়েছে। অপরদিকে রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ বিরোধীতার নামে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদকে ‘মজলুমের সংগ্রাম’ আখ্যা দিয়ে যারা শাসক শ্রেণীর অপরাংশের পতাকা তুলে ধরেছে- তারাও উন্মোচিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বামপন্থী দলগুলোর মত ক্ষুদে বুর্জোয়া মধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিজীবীরা মোল্লাতন্ত্রের বিভীষিকা দেখে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের আত্মশক্তির দুর্বলতা এবং অপরদিকে ভরসা করার মত বিপ্লবী শক্তি না থাকায় তারা আত্মরক্ষার উপায় হিসাবে আওয়ামীলীগকেই উদ্ধারকর্তা মানছে। তবে গ্রামীণ সামন্ত ও পুরনো ধাঁচের ধনী পরিবারগুলো ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের পক্ষ নিয়েছে।

শ্রমিক-কৃষকের মধ্যেও তাদের সামান্য প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে। এ ফ্যাসিবাদী সংঘাতের নির্মম ও নিরাপরাধ বলী হচ্ছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু; প্রধানত হিন্দুরা। সরকার দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে বা নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করছে না। বিএনপি-জামাত ধর্মীয় ফ্যাসিস্টরা এবং আওয়ামীলীগ ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ এ থেকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের ধান্দায় রয়েছে। আজ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর এ নিপীড়ন প্রতিহত করা ছাড়া, শাসক শ্রেণীর ফ্যাসিবাদকে মোকাবেলার কথা বলা অসার।

তবে ইতিমধ্যে ‘শাহবাগ আন্দোলন’ এবং ‘নাস্তিক বিরোধী’ আন্দোলনের প্রাথমিক চমক অপসারিত হয়েছে। মোড়ক উন্মোচিত হয়ে গিয়ে শাসক শ্রেণীর স্বার্থান্ধ দগদগে দ্বন্দ্বটা উন্মোচিত হয়ে পড়ছে। ফলে জনগণ ইতিমধ্যেই এসব আন্দোলন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। শঠ নেতাদের ধিক্কার দিচ্ছে। ব্যাপক শ্রমিক-কৃষক ও শ্রমজীবী জনগণ এ প্রতিক্রিয়াশীল আন্দোলন ও সংঘাতে আগ্রহী নয়।

এ সংঘাতে ইতিপূর্বে পুড়তে থাকা জন-জীবন অঙ্গার হতে চলেছে। ফলে জনগণ এ সংঘাতের অবসান চান। জনগণ যুদ্ধাপরাধের বিচার চায়। কিন্তু এ নিয়ে নির্বাচনী রাজনীতি দেখতে চায় না। জনগণ ধর্মবিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক অত্যাচার এবং ধর্ম নিয়ে রাজনীতি দেখতে চায় না।

তারা শান্তি ও সৌহার্দ্য চায়। এ হানাহানির আগে থেকেই শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, শিক্ষক, নারী, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ন্যায্য দাবী নিয়ে সংগ্রাম ছিল চলমান। প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক দলসমূহ সাম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদের দালাল শাসক শ্রেণীর তাঁবেদারী ও ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছেন। কিন্তু আজ ফ্যাসিবাদী সংঘাত জনগণের সংগ্রামকে অবদমিত করছে। তারা ভুয়ো ইস্যু তৈরী করে জনগণের উপর আধিপত্য বিস্তারে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছে।

আজ জনগণ তার গণতান্ত্রিক সংগ্রামের বিকাশ চায়। আপদমস্তক সংকটে নিমজ্জিত শাসক শ্রেণী শ্রেণীগতভাবেই যুদ্ধাপরাধীর বিচারসহ ন্যায় বিচার করতে অক্ষম। তারা জনগণের ধর্ম পালনের ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষায়ও অক্ষম। এ শাসক শ্রেণী যুদ্ধাপরাধীর বিচার, ধর্ম ইত্যাদি নিয়ে যা করতে পারে তা হলো প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতা, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে এর ব্যবহার। ইতিহাস তার প্রমাণ।

এবারও তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে পারে কেবল জনগণের একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, বিপ্লবী শক্তির ক্ষমতা। জনগণের অবাধ ধর্ম পালনের অধিকার কেবল ঐ বিপ্লবী ক্ষমতাই নিশ্চিত করতে পারবে। তাই আজ সকল মোহ ও বিভ্রান্তি ঝেড়ে ফেলে জনগণের সংগ্রামকে শাসক শ্রেণীর ফ্যাসিবাদী সংঘাতের রাজনীতি মোকাবেলা করার পথে এগিয়ে নিতে হবে; একে বিপ্লবী বলপ্রয়োগে ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে পরিচালিত করতে হবে। মার্কিনসহ সা¤্রাজ্যবাদের পক্ষ থেকে বর্তমানে উভয় পক্ষের সংলাপ-সমঝোতার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।

মুখে সংলাপের কথা বললেও সংঘাত অব্যহত রয়েছে। লক্ষণীয় হল সংঘাতময় এ পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রনের জন্য সরকারের কোন পূর্ব প্রস্তুতিই দেখা যায় না। রাজনৈতিক গ্রেফতারের ঘটনা ঘটলেও এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে তৎপরতা চোখে পড়ে না। বরং সর্বশেষ, সরকার অত্যাশ্চর্য গতিতে ‘ধর্ম অবমাননা’ ঠেকানোর নামে আইন প্রণয়ন, সাইবার ক্রাইম ট্রাইবুনাল গঠন এবং ব্লগারদের গ্রেফতার শুরু করেছে। এভাবে হাসিনা সরকার রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের সাথে সাথে রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ জোরদার করছে।

অস্থির পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সরকার জরুরী অবস্থা দিতে পারে-এমন সম্ভাবনার কথা নানা মহল থেকে শোনা যাচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে আরও বিচারের রায় প্রকাশ করার কথা রয়েছে। এছাড়া ‘জামাত নিষিদ্ধের নাটক’ মঞ্চস্থ হওয়ারও সম্ভাবনা থেকে গেছে। এ অবস্থায় সংঘাত বৃদ্ধির আশঙ্কাই বেশি। এ সংঘাত অব্যহত থাকলে সা¤্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও তাদের দালাল আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া ও সামন্তবাদ সমাধানের পথ হিসাবে ফ্যাসিবাদকেই বেছে নেবে।

সুতরাং তারা চলমান সংকট উত্তরণ, রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়াশীল সংস্কার ও সার্বিক নীলনকশা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শাসক শ্রেণী রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদকে আরো জোরদার করার পথেই অগ্রসর হতে পারে। সুতরাং সা¤্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও তাদের দালাল শাসক শ্রেণীকে উৎখাত করে শ্রমিক-কৃষক জনগণের একটি প্রগতিশীল, স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বর্তমান ফ্যাসিবাদী শাসন ও সংঘাতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই আজকের কর্তব্য। এ কর্তব্যকে সামনে রেখে শ্রমিক, মজদুর, কৃষক, ক্ষুদে ব্যবসায়ী, কর্মচারী, ছাত্র, শিক্ষক, পেশাজীবী, দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি, ধর্মীয়-জাতিগত-ভাষাগত সংখ্যালঘু, নারী, যুবসহ সকল কমিউনিস্ট বিপ্লবী, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও দেশপ্রেমিক ব্যক্তি ও সংগঠনসহ সমগ্র জাতি ও জনগণের সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলা আজ সময়ের দাবী। আমরা সংবেদনশীল প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক ব্যক্তিদের, বিশেষত তরুণদের আহ্বান জানাই, দেশের এ সংকটময় পরিস্থিতিতে বিপ্লবী রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় হোন। ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ’ জাতি ও জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে সেই আন্তরিক রাজনৈতিক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে, এ প্রয়াসে আপনিও সাথী হোন।

আহ্বান উগ্রজাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ ও সংঘাতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন! শাসক শ্রেণীর উপদলীয় ফ্যাসিবাদী সংঘাত ও দলাদলির বিপরীতে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে জাতি ও জনগণের গণতান্ত্রিক ঐক্য গড়ে তুলুন! রাজনীতিতে সা¤্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ, আঞ্চলিক শক্তির হস্তক্ষেপ প্রতিহত করুন! বিএনপি-জামাত জোট ও সরকারের প্রতিক্রিয়াশীল সহিংসতা রুখে দাঁড়ান! শাসক শ্রেণীর মতাদর্শ হিসাবে উগ্র বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মোন্মাদনা, ধর্ম-বিদ্বেষ, পিতৃতন্ত্র প্রত্যাখ্যান করুন! ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর চলমান নিপীড়নের বিরুদ্ধে অবিলম্বে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন! শাসক শ্রেণীর লেজুড় ‘বামপন্থী’দের বিশ্বাসঘাতক রাজনীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তুলুন! এনজিও, সিভিল সোসাইটি, যুব আন্দোলনের নামে জনগণের আন্দোলনে সা¤্রাজ্যবাদী চক্রান্ত সম্পর্কে সতর্ক হোন, তাদের প্রতিহত করুন! শাসক শ্রেণীর নির্বাচন, সংস্কার ও সংঘাতের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করুন! শাসক শ্রেণীর ক্ষমতার রদবদলে মুক্তি নাই, জনগণের ক্ষমতা দখলে অগ্রসর হোন! ‘বলপ্রয়োগে জনগণের ক্ষমতা দখল’-এর বিপ্লবী রাজনীতি আঁকড়ে ধরুন! মার্কিনসহ সাম্রাজ্যবাদ, ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ ও দালাল শাসক শ্রেণীকে উৎখাত করে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রাম বেগবান করুন! এবং দাবী তুলুন: ১। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে নির্বাচনী রাজনীতি বন্ধ করতে হবে পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদেরসহ সকল যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে হবে ২। একাত্তর পরবর্তী মুক্তিকামী বিপ্লবীদের হত্যা, ক্রসফায়ারসহ সকল হত্যা, নির্যাতনের বিচার করতে হবে ৩। ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দুদের মন্দির, ঘরবাড়িতে হামলা-লুণ্ঠনের অবিলম্বে তদন্ত ও বিচার করতে হবে। ৪।

প্রতিক্রিয়াশীল সংঘাতে হতাহত ও জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতির জন্য দায়ীদের বিচার ও শাস্তি দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ৫। শাসক শ্রেণীর সংবিধানের সাম্প্রদায়িক-উগ্র বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী-ফ্যাসিবাদী ‘পঞ্চদশ সংশোধনী’ বাতিল করতে হবে! ৬। তাজরিন ও স্মার্ট গার্মেন্টে শ্রমিক হত্যার বিচার, শ্রমিকের মজুরি, কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম, ছাত্রদের গণতান্ত্রিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ধর্মীয়-জাতিগত-ভাষাগত সংখ্যালঘু, নারী এবং শিক্ষকদের সকল ন্যায্য দাবী মেনে নিতে হবে ৭। জ্বালানীসহ দ্রব্যমূল্য কমাতে হবে।

সার, পানি, বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে নৈরাজ্য ও বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করতে হবে ৮। পদ্মাসেতু, শেয়ার বাজার, ভূমি দস্যুতা, হলমার্ক, নকল এ ভিটামিন, খাদ্যে বিষ, নিয়োগ বাণিজ্যসহ সকল দুর্নীতির বিচার করতে হবে ৯। ভারতকে করিডোর ও বন্দর প্রদান, ঋণচুক্তি বাতিল করতে হবে। সীমান্তে হত্যাকান্ড বন্ধ করতে হবে।

নদীর পানিসহ সকল অমীমাংসিত প্রশ্নে ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হবে ১০। সমুদ্রে গ্যাসব্লক বরাদ্দ, ফুলবাড়ি উন্মুক্ত কয়লা খনি, রূপপুর পামানবিক কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সকল পরিবেশ ও গণ বিরোধী প্রকল্প বাতিল করতে হবে ১১। হাসিনা-মনমোহন চুক্তি, হিলারি-দীপু চুক্তি, নৌঘাঁটিসহ মার্কিন সামরিক উপস্থিতি, রাশিয়ার সাথে অস্ত্র চুক্তিসহ সকল সামরিক-বেসামরিক সাম্রাজ্যবাদী, সম্প্রসারণবাদী দাসত্বমূলক চুক্তি প্রকাশ ও বাতিল করতে হবে জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ ৮৪/ক/এ, সাদেক খান রোড, রায়েরবাজার, ঢাকা-১২০৯। ০১৭১২৬৭০১০৯ E-Mail: ,www.facebook.com/gonomancha প্রকাশ কাল: ২ এপ্রিল ২০১৩ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.