একটু ভাবতে হবে.......... জাতীয় সংসদ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সভা। জাতীয় সংসদ বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক। দেশের ১৬ কোটি মানুষ তাদের মূল্যবান গণরায়ের ক্ষমতাবলে সংসদ সদস্যদের তাদের প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় সংসদে প্রেরণ করেন, তাদের অধিকার রক্ষার জন্য,তাদের দাবি সমূহ তুলে ধরার জন্য, তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা বলার জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য কথা বলার জন্য। জাতীয় সংসদ গণ মানুষের অধিকার ও মানবতার শুভ্র পবিত্র স্তান , আমাদের সমস্ত আশা আকাঙ্কা ও দাবি দাওয়ার পরম কাঙ্ক্ষিত একটি মাধ্যম । যারা সংসদের প্রতিনিধত্ব করে সেইসব সাংসদ কি ভুলে যাই তারা দেশের মানুষের কাছে ওয়াদাবদ্ধ হয়ে তাদের পবিত্র আমানত ভোটের ক্ষমতাবলে ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধত্ব করে ।
গতকালের সংসদের পরিবেশ দেখে এই সব প্রজ্ঞাহীন ভাঁড়দের নৈতিক দায়িত্ববোধ আর নুন্যতম শিষ্টাচারের অভাব একটি জিনিষকে ভাবিয়ে তুলছে তা হল ভবিষ্যতে শফত পাঠের পাশাপাশি শালীনতা ও মার্জিত ব্যবহারের উপর এইসব মূর্খদের বাধ্যতামূলক শিক্ষাদান করা উচিত। যখন সংসদের ন্যায় পবিত্র ও জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসে নিজেদের ব্যক্তিগত আর রাজনৈতিক গৌ-লেজুটবিত্তি গুলো এত নোংরা ভাবে প্রকাশ করে তখন তা স্বাভাবিক ভাবে তাদের রাজনৈতিক দর্শন ও দৃষ্টতার বহিঃপ্রকাশ বলে মেনে নিতে হয় ।
একটি হিসেবে দেখা যায় সংসদ অধিবেশন চলাকালীন সময় প্রতি মিনিটে প্রায় ৩৫,০০০ টাকা খরচ হয় পরিমানটা একবার বাৎসরিক হিসেবে চিন্তা করে দেখুন আঁতড়ে উটবেন । টাকা গুলো এইসব সাংসদের বাপের হোটেলের না, আমরা সাধারন জনসাধারনের টাকায় চালিত সংসদ উনারা মাতিয়ে রাখে ব্যক্তিগত আক্রমন ,অশালীন ভাষার গালাগালি ও হাতাহাতিতে । গতকাল এইসব মূর্খ ভাঁড়কিং গুলো একে অন্যকে “চুপকর কর চুপ ” জাতীয় তির্যক ব্যাখ্য ব্যবহার করে প্রায় হাতাহাতির উপক্রম হয় ।
অন্যজন বলেন “ মইন-ফখরুদ্দীনের কোলে বসে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেছেন । শুধু কোলে নয় আর কোথায় কোথায় বসেছেন কে জানে!!” এইহল আমাদের সংসদ সদস্যদের ভাষা । ঠিক এই ভাবে অনেক সময় নিজেদের ব্যক্তিগত আক্রমের বলির শিকার হন আমাদের জাতীয় নেতা ও ওনাদের দলের পিতামহগণ । অবশ্য এর জন্য এইসব সংসদ সদস্যদের একতরফা দোষ দিব না কারন আমরা জানি মানুষের ব্যক্তিগত আচরনের অনেকটা তার নিজ পরিবেশের উপর নির্ভর করে আর আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই । আমাদের মহান দুই নেত্রী দেশ ও দেশের ইতিহাসকে নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছেন ।
আর এই সম্পত্তিকে নিজ আয়ত্তে নিতে যতটা সম্ভব নিচে নেমে একে উন্যের প্রতি তির্যক ব্যাখ্য ছুড়তে ওনাদের বিবেকে বাঁধে না । এই যে সেইদিন একটি সভায় আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলে বসেন “জিয়া নাকি ঘটনাচক্রে মুক্তিযোদ্ধা আর খালেদার জন্ম ভারতে। ’’ হয়ত কিছুদিন পর দেখব বিরোধী দলের নেত্রী আরো উৎকৃষ্ট কিছু প্রকাশ করবে। যখন নিজেদের আদর্শিক নেত্রী মহোদ্বয় এইরূপ দৃষ্টতাপূর্ণ ব্যাক্তি আক্রমনে মজেছেন তখন এইসব সাংসদরা কেন তেলষমাদির এই সুযোগ হাতছাড়া করে আশালীন বাগবিতন্ডতায় জড়াবে না!! আর এর চূড়ান্ত পরিণতি সরূপ কিছুদিন পর হয়ত সংসদে শক্তি প্রদর্শনের প্রাচীন রেওয়াজ সরূপ কুস্তি খেলার মহড়া বসবে।
উনারা কি একবার ও ভেবে দেখেন না ওনাদের এইরূপ কুরুচিপূর্ন রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা নিজেদের ব্যাক্তিগত ইমেজের পাশাপাশি দল ও দেশের কত ঠুকু সম্মান হানি করতেছে ।
যদি এতটাই দেশপ্রেমের লাভা জ্বলে তবে দেশের স্বার্থে কেন এই হীন গণ্ডি পেরিয়ে হাতে হাত রেখে দেশ গড়ায় আত্বনিবেদন করতেছেন না । কেন এই ভাবে আপনারা দুটি দল ১৬ কোটি মানুষকে দ্বিধা ভিবক্ত করে রেখেছেন । স্বাধীনতার পরে কম বেশি আপনারাই তো ক্ষমতায় ছিলেন । কই এখনো তো দেখি ডাষ্টবিনে কুকুরের সাথে বালকের খাবার ভাগাভাগির দৃশ্য , এখনো দেখি অবাল বৃদ্ধ বনিতার ভিক্ষা বৃত্তির অপমান। একবারো কি ভেবে দেখেন তরুনরা আপনাদের কাজ থেকে কি রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, নৈতিকথা আর দায়িত্বজ্ঞান শিখবে? নির্বাচনের আগে আপনারা দুই দলেই সংসদীয় গণতন্ত মেনে চলে সংসদ কেন্দ্রিক সমস্ত কার্যকলাপ করার প্র্ত্তয় ব্যক্ত করেন ।
কিন্তু প্রতিবারেই যারা ক্ষমতাই যান তারা সংসদকে নিজেদের বাসার অন্দর মহল বানিয়ে আয়াশী গল্প গুজব আর বিরোধী পক্ষকে হেয় করার জন্য উটেপড়ে লাগেন । আর বিরোধী পক্ষ কথায় কথায় ওয়ার্কআউটের দোহায় দিয়ে একটানা সংসদ বর্জন করে। সংসদের ২৮৪ কার্যদিবসে বিএনপি মুলতবি প্রস্তাব দিয়েছে ৭১৬টি । কিন্তু সংসদে উপস্থিত থেকেছে মাত্র ৫৪ দিন । অধিকাংশ দিন অনুপস্তিত থাকায় বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি , শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি , গুপ্ত হত্যাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু চাপা পড়ে গেছে ।
সরকার ও সংসদে জবাবদিহিতা থেকে বেঁছে গেছে । এটাকে কোন ভাবে সংসদীয় গনতন্থের চর্চা বলা যায় না ।
ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ- টিআইবি পরিচালিত অন্য একটি রিপোর্টে দেখা যায় জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে কোরাম সংকটের কারণে ২৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট অপচয় হয়েছে। সংসদ পরিচালনা করতে গড়ে প্রতি মিনিটে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এ হিসেবে মোট অপচয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, সংসদে অনির্ধারিত অলোচনা হয়েছে প্রায় ৫ ঘণ্টা ২০ মিনিট। এ সময় সরকারি দল বিরোধী দলের সমালোচনা করেছে অন্তত ৩০০ বার। আর বিরোধী দল সরকারি দলের সমালোচনা করেছে ৪২ বার। আলোচনা সভায় উপস্থিত ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী বলেন, সংসদ সদস্যরা সময়মতো সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত হননা, যদিও তাঁরা (সংসদ সদস্যরা) ভালো করেই জানেন যে, অধিবেশনে দেরিতে আসা ভাল নয়। সংসদ সদস্যদের দেরিতে আসায় কোরাম সঙ্কট হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পরিশেষে বলব নিজেদেরকে পরিবর্তনের এখুনি সময় । এইসব নোংরা লেজুটভিত্তিক হীন রাজনৈতিক চর্চা বন্ধ করে দেশ গড়ায় আত্বপ্রকাশ করেন । অনেক দিন তো ইতিহাস আর মুক্তিযুদ্ধের ব্যানারে রাজনৈতিক ব্যবস্যা করেছেন। এইবার দেশের মানুষকে সত্যি কারের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়ে সাম্য ও সততার স্বদেশ গড়ুন। যদি না সুধরান তবে শুনে রাখুন সময়ের সতর্ক বাণী একদিন আপনাদের প্রজন্মেই আপনাদের এই ব্যার্থ অর্জন ছুড়ে মেরে জনকাঠগোঁড়ায় দাঁড় করাবে, সেইদিন আপনাদের কৃত কর্মের হিসেব ১৬ কোটি মানুষকে পুঙ্কানু পুঙ্খ ভাবে জবাবদিহি করতে হবে ।
মনে রাখবেন সত্যের ভোর হবেই । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।