১.
গত কয়েকদিন ধরে টুটুল খুব উত্তেজিত
। কারণ সে জানতে পেরেছে তার
একটা বোন হবে । কেউ কেউ বলছে তার
নাকি ভাই হবে । তবে টুটুল চায় যে তার
একটা বোন হোক । ফুলের মত সুন্দর
একটা বোন ।
তার আম্মু এখন
হাসপাতালে ।
মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে আম্মুকে এই
জিনিসটা জিজ্ঞাসা করতে যে তার ভাই
হবে না বোন হবে কিন্তু পারেনা । তার
বোন হলে কি নাম রাখবে আর ভাই
হলে কি নাম রাখবে তাই নিয়ে টুটুল
ইদানিং বেশ গবেষণা করছে । তাই
সে তার ফুপুর বাসা থেকে 'সোনামনিদের
সুন্দর নাম' নামের
বইটা লুকিয়ে নিয়ে এসেছে । গত কয়েক
ঘন্টা ধরে বইয়ের
সামনে বসে আছে কিন্তু কোন নামই
পছন্দ হচ্ছে না ।
সব কেমন যেন পুরোন
আমলের নাম । আরেকটু
গবেষণা করা লাগবে ।
মা-বাবার একমাত্র ছেলে টুটুল , অবশ্য
তার ভাই অথবা বোন হওয়ার আগ
পর্যন্ত । ক্লাস সিক্সে পড়ে ।
মোটামুটি ভাল ছাত্র বলা যায় ।
রোল ৩
। সারাদিন ছোটাছুটি , দুষ্টামি , গেমস
খেলে সময় কাটে । কয়েকদিন
আগে বৃত্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে ।
কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত সে ট্যালেন্টপুল
পাইনি । সাধারণ কোটায় তার নাম
প্রথমে এসেছে ।
তবে তাতে টুটুলের কিছু
যায় আসে নি কিন্তু আম্মু আব্বু র
যথেষ্ঠ যায় এসেছিল । তাদের মন খারাপ
হয়ে গেছিল । তাদের বিশ্বাস টুটুলের
পরিবর্তে টুটুলের আম্মু অথবা আব্বু
যদি পরীক্ষা দিত তাহলে তারাই
ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পেয়ে যেত । টুটুলদের
বাড়ি বাংলাদেশের
দক্ষীণে একটা মফস্বল শহরে । নিজস্ব
বাড়ি ।
চারিদিকে গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা । বাড়ির
পরিবেশটা খুব সুন্দর । টুটুলের আম্মু
একজন গৃহিনী কিন্তু খুবই আধুনিক
মনের একজন মহিলা । টুটুলের আব্বুর
একটা মাঝারি আকারের ডিলার শপ
আছে , ব্যবসা মোটামুটি ভাল । সব
মিলে ৩ জনের একটা ছোট সুখি পরিবার
।
আম্মু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার
পরে টুটুল প্রত্যেকদিন স্কুল
শেষে আম্মুর সাথে দেখা করতে যায় ।
তার আম্মু তাকে বলে দেয় বাসায়
যেয়ে সে কি করবে । আম্মু যতই উপদেশ
দিক না কেন টুটুলের রুটিন আলাদা ।
সে বাড়ি যাবে তারপর বিটিভির বিকালের
কার্টুন দেখতে দেখতে খাবে । কার্টুন
হয়ে গেলে সে মাঠে খেলা করতে যাবে ।
সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে এসে গল্পের বই
পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়বে । পরদিন
সকালে স্যারের
বাড়িতে কোচিং পড়তে যেয়ে কান
ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে । টুটুলদের বাসায়
তার চাচাতো বোন গ্রাম
থেকে এসেছে তাকে দেখাশোনা করার
জন্য । তার চাচাতো বোন কয়েকবারের
চেষ্টায় এস এস সি পাশ
করে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে । টুটুলদের
বাড়িতে সে খুব মনোযোগ
সহকারে টিভি দেখার সুযোগ
পাচ্ছে দেখে সে মাঝে মাঝে আল্লাহর
কাছে সুক্রিয়া আদায় করছে ।
২.
টুটুলের মায়ের অপারেশন কাল । অর্থাত্
তার ভাই অথবা বোনের জন্মদিন কাল ।
চাপা উত্তেজনায় সে কান ধরে স্যারের
সামনে দাঁড়িয়ে আছে কারণ
পড়া পারেনি । কারণ গতকাল
রাতে বিদ্যুত্ ছিল না , চার্জার লাইট
কিংবা হারিকেন খুঁজে পাওয়া যায় নি ।
মোমবাতিও না ।
তারপরও স্যার
তাকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন
কারণ স্যার তার যুক্তি গুলো বিশ্বাস
করেন নি ।
স্যারের কাছে পড়া শেষ করে আজ আর
স্কুলে গেল না । মাথা ব্যাথার নাম
করে বাসায় এসে শুয়ে শুয়ে কমিকস
পড়া শুরু করল । কিছুক্ষণ পরে আব্বু
বাসায় ফিরলেন ।
-কিরে আজ স্কুলে যাস নি ? আব্বু
সহাস্যে জিজ্ঞাসা করলেন ।
-ভাল লাগে না ।
-আম্মুর দেখতে যাবি ?
টুটুল লাফিয়ে উঠে বলল -
যাআআআআআআব ।
-রেডি হ তাহলে ।
-এক্ষুণি হচ্ছি , আব্বু ।
কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল টুটুল তার
আব্বুর সাথে হেলে দুলে রিকশায়
চড়ে তার আম্মুর
সাথে দেখা করতে যাচ্ছে হাতে তার
একটা ম্যাংগো জুস ।
৩.
আজ টুটুলের আম্মুর অপারেশন । তাই
সে সকাল সকাল ঘুম
থেকে উঠে একটা বড় টোস্ট বিস্কিট
চা এর সাথে বেশ আয়েশ করে খেয়ে তার
চাচাতো বোনের
সাথে হাসপাতালে এসেছে । এসে দেখে তার
নানা, মামা রা এসেছেন । তার ফুপুও
এসেছে সেই সাথে তার ফুপাতো বোনেরাও
। আর আব্বু তো গতকাল রাত থেকেই
ব্যস্ত ।
কখনো ইনজেকশন-স্যালাইন
কথনো ওষুধ কেনার জন্য । অপারেশনের
আগে সে আম্মুর সাথে দেখা করার জন্য
এখন ভিতরে । কিন্তু আম্মু
তাকে অনেক মন খারাপ
করা কথা শুনিয়েছে ।
-টুটুল
-উ
-ধর , অপারেশনের সময় আমার কিছু
হয়ে গেল ? তখন তুই কি করবি ?
-ধুর তোমার কিছু হবে না ।
-টুটুল আগে আমার প্রশ্নের জবাব দে ।
কি করবি তখন ?
-তখন ডাক্তারের মাথা ইট দিয়ে ফাটাব
।
আম্মুর মুখে সামান্য হাসি ফুটল ।
তারপর আম্মু সিরিয়াস হয়ে গেলেন ।
-শোন আমার যদি কিছু হয়ে যায়
তাহলে কোন মন খারাপ করবি না ।
-এই রকম কথা বলো কেন ? টুটুল কাঁদ
কাঁদ হয়ে জিজ্ঞেস করল ।
-আমার কথা শেষ করতে দে । তারপর
তুই খুব মনোযোগ সহকারে পড়বি । আর
তোর স্বপ্ন তো নাসার
বিজ্ঞানী হওয়া ?
-হু
-আমি মন থেকে দোআ করলাম তুই
হবি ইনশাল্লাহ । আর তুই অবশ্যই সবার
সাথে ভাল ব্যবহার করবি । তোর
আব্বুর দিকে খেয়াল রাখবি ।
আর......
আম্মু কথা শেষ করতে পারলেন না । তার
আগেই আব্বু ঘরে ঢুকলেন ।
-শায়লা , কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো ।
তোমার এখন নিয়ে যাওয়া হবে ।
-হু , আমি ঠিক আছি ।
তারপর বাইরে থেকে কতগুলো নার্স
এসে আম্মু
কে একটা স্ট্রেচারে করে অপারেশন
থিয়েটারে নিয়ে গেল । আব্বুও
সাথে সাথে গেলেন । যাওয়ার
আগে টুটুলকে জড়িয়ে ধরে আম্মু
বললেন ," ভাল থাকিস বাবা । " টুটুলের
কান্না পাচ্ছে । আম্মুর জন্য ।
কিন্তু টুটুল জানত না আম্মুর চোখেও
পানি ।
৪.
" টুটুল তোর বোনের কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে " ফুপুর আনন্দের চিত্কার । টুটুল জায়গায় স্তব্ধ । সে ঠিক শুনছে তো ? তার বোন হয়েছে । সে যেন পারলে একটা লাফ দেয় ।
মুখে হাসি ফুটে ওঠে । নানা , মামা , কাজিন যারা আছে তারা সবাই খুশি ।
টুটুল আস্তে আস্তে অপারেশন থিয়েটারের দরজার সামনে গেল । সেখানে তার আব্বু দাঁড়িয়ে আছে । আব্বুর পাশে গিয়ে দাঁড়াল ।
আব্বু টুটুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল.
একটু পরেই তোর বোন কে তুই দেখতে পাবি ।
ডাঃ আজিজুর রহমান আব্বুকে বললেন , কংগ্রাচুলেচশন । তোমার মেয়ে হয়েছে .
Click This Link
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।