একজন নির্বোধের বয়ান আর যাব না আমেরিকা থুক্কু ঢাকা, পেলাম যখন তোমার দেখা, তোমার বাড়ির পাশে বাড়ি ভাড়া করে থেকে যাব...। বাংলা সিনেমার এই গানটির মুখ বেশ কয়েকবার কানের কাছে বেসুরে গলায় গেয়ে চলল আমার দীর্ঘদিনের সহোচর নির্বোধ মিয়া। যার সাথে ইতিপূর্বে পাঠকের পরিচয় হয়েছে। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে জোরে ধমক লাগাতে বাধ্য হলাম। গলায় সুর নেই তবুও গান গাওয়া কেন? এতই যখন ইচ্ছা তখন ক্লোজ আপ ওয়ানে গিয়ে হাত তালি নাও আর জ্ঞানগর্ভ আর্শীবাদ শুনে আসো।
তবুও এমন হেরে গলায় কানের কাছে ঘেউ ঘেউ করোনা নির্বোধ মিয়া। আমার দীর্ঘ বয়ান শুনে নির্বোধ মিয়া গান গাওয়ার হেতু বর্ণনা করতে শুরু করে দিল। ভাইজান, ‘আপনিতো কিছু জানেন না, আর জানবেনই না কিরাম করে। আপনিতো এই কয়দিন জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকিছেন। দেশে যে কতকিছু ঘইটে গেছে, তা যদি আপনি শুনতেন।
’ ‘সে সব শুনে আমার কাজ নেই। তুমি শুধু বল একই গান বারবার গাচ্ছিলে কেন?’ ওকে অল্প কথায় থামানোর জন্য বলা। ‘১২ তারিখ তো দেশে মহাপ্রলয় ঘটতি যাচ্ছে। আমাগে বিএনপি ঢাকা শহরে মহাসমাবেশ ডাকিছে বইলে সরকার ১২ তারিখের আগে পরে ঢাকায় অপিরিচিত লোক পালি, তাগে ধইরে চৌদ্দ শিকের মধ্যে চালান কইরে দেবে। তারপর ঢাকায় যাগে থাহার জায়গা নেই, তাগে কোন হোটেলেও থাকতি দেবে না, কোন ভাত টাতও খাতি দেবে না কোন হোটেলে বইসে।
তালি পরে আমরাও কীরাম কইরে ঢাকা যাবানি? আমাগে কী হবেনে ভাইজান?’ ‘কী আর হবে? ঢাকা যাওয়া হবে না। ’ উদাস ভঙ্গিতে বললাম। ‘আপনার অফিসের ছুটি তো শেষ। তারপর জ্বরে পড়ে ছুটি বাড়ালেন। অহন যদি এই সপ্তাহেও ঢাকায় যাতি না পারেন, কী হবেনে?’ ‘নির্বোধ মিয়া তোমাকে এতকিছু ভাবতে হবে না।
ঢাকা আমরা যাবই। ঢাকা যাওয়া আমাদের অধিকার। আমাদের কোন ভয়-ভীতি আটকাতে পারবে না। তারপর ঢাকা গিয়ে যদি কোন নির্যাতনের শিকার হই তাহলে তার সম্পূর্ণ দায়ভার সরকারের উপর পরবে। বিশ্ববাসীর কাছে দেশের নীরিহ জনগনকে বেকায়দায় ফেলার জন্য লজ্জিত হতে হবে।
’ ‘তারপরও ভাইজান আমার কিরাম জানি ভয় ভয় করতিছে। ’ নির্বোধ মিয়া সত্যি সত্যি ভয় ধরা কন্ঠে বলল।
ভয়কে জয় করে নির্বোধ মিয়া ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। ট্রেন থেকে নামল কম্প কম্প দুটি পা নিয়ে। কমলাপুর রেলস্টেশনে ৪টি ভারী ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
চারপাশটা একবার চোখ বুলিয়ে নিল। এবার দুটি ব্যাগ দুই ঘাড়ে ঝুঁলিয়ে নিল। বাকি দুটি ব্যাগ দুই হাতে তুলতে গিয়ে বাধার সম্মুখিন হল। নিচু মাথা উপরে তুলতেই দেখল কয়েকজন কালা মামুরা দাঁড়িয়ে আছে। ‘উপরে আছে রব নিচে আছে র্যাব।
’ কথাটা মনে মনে বলল নির্বোধ মিয়া। ‘ব্যাগে কি আছে বল!’ কালো সানগ্লাস পরিহিত এক র্যাব সদস্য প্রশ্ন করল। প্রশ্ন শুনে আঁতে ঘা লাগল নির্বোধ মিয়া। তাকে কি বাচ্চা পেয়েছে যে তুই করে বলবে। এরপর যে দৃশ্যের শুটিং হল তার জন্য স্বয়ং পরিচালক উপস্থিত ছিলেন না।
নির্বোধ মিয়া ওই র্যাব সদস্যের গালে ঠাস্ ঠ্ াকরে একবার একবার করে দুইবার কষে চড় মেরে বসল।
পরের দৃশ্যে র্যাবের গাড়িতে পা নাচাতে নাচাতে বাসার উদ্দেশ্যে চলেছে নির্বোধ মিয়া। কী কপাল তার! কিছুদূর যাওয়ার পরে ৪/৫ জন পুলিশ মামু র্যাবের গাড়ির গতিরোধ করল ট্রাফিক পুলিশের মত করে। উদ্দেশ্য নির্বোধ মিয়া ঢাকায় নতুন কিনা তা জিজ্ঞেস করা। কিন্তু নির্বোধ মিয়া কষে এক চিৎকার করে পুলিশদের সরে যেতে বলল।
আবার র্যাবের গাড়ি সম্মুখভাগে ছুটতে শুরু করল। মাঝপথে সরকারি দলের মিছিলের কারণে গাড়ির গতি আবারো কমাতে হল। নির্বোধ মিয়ার মেজাজের কাটা শতকের ঘর পেরিয়ে হাজারের ঘরে গিয়ে পড়ল। র্যাবের কাছ থেকে একটি ভারী অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে মিছিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। চড়া গলায় বলতে শুরু করল, ‘ফাজলামি পাইছ মিয়া (ঢাকায় এলে ঢাকাইয়া হয়ে যায় সে)’ বিরোধী দল হরতাল করলে কও হরতাল ক্ষতিকর, আবার তোমরাই সেই হরতালের সুবিধা নিয়া মিছিল বাইর করো।
অহন আবার বিরোধী দলের মহাসমাবেশ বানচাল করার জন্য উল্টা মহাসমাবেশ ডাকছো। রাস্তা ক্লিয়ার কর কইলাম, নইলে তোগো সবাইরে ঠাস্ ঠাস্...।
অনেক সময় ধরে ট্রেনের চেয়ারে ঘুমোচ্ছে নির্বোধ মিয়া। হঠাৎ চিৎকার করে উঠল। চোখ মেলে চারপাশে চাইল।
‘কি হয়েছে নির্বোধ মিয়া?’ জানতে চাইলে জানায়, ‘ভাইজান ঘুমের ঘরে স্বপ্ন দেখতিলাম। ’
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।