‘বলুন। ’
‘কী বলব?’
‘যেটা বলতে চাইছিলেন। ’
‘ও হ্যাঁ। আপনি শুনবেন তো?’
‘শুনবো বলেই তো বসে আছি। ’
‘আমাদের বাড়িটার কথা, বুঝলেন।
কতদিন সেখানে যাওয়া হয় না। ’
‘যাওয়া হয় না কেন?’
‘আমার বড় বোন মারা গেল ওই বাড়িতে। তখন আমার বয়স ছয়। তবু বেশ পরিষ্কার মনে আছে, বাড়িটা আমাকে বলল, “পারবি না, বাঁচাতে পারবি না...”’
‘বাড়িটা বলল আপনাকে?’
‘হ্যাঁ, বাড়িটা কথা বলত। সবাই শুনতে পেত না।
আমি পেতাম। ’
‘আর কী শুনেছেন বাড়িটার কাছে?’
‘যখন আমার বড়ভাই শহরে গেল, বাড়িটা মানা করেছিল। ভাই মারা গেল দু’মাস পর। ’
‘উনি তো অ্যাকসিডেন্ট করেন, তাই না?’
‘হ্যাঁ। শহরে দু’মাস থাকার পর।
আমার খালার বিয়ের সময় বাড়িটার দক্ষিণের দেয়ালটা ভেঙ্গে পড়ল। বিয়ের রাতেই খালাকে খুন করে স্বামী উধাও। ’
‘কী বলছেন!’
‘হু। বাবা তারপর আমাদের নিয়ে শহরে এলেন। অনেক বছর পর জমি বিক্রি করতে গ্রামে গেলেন।
আর ফিরলেন না। একটা চিঠিতে বাবা বলেছিলেন তাঁর ভাল লাগছে না ওখানে। কয়েকদিন পর আমরা জানতে পারি সাপের কামড়ে তিনি মারা গেছেন। ’
‘ওই বাড়িতেই?’
‘হ্যাঁ। ’
‘আপনার পরিবারের আর কে কে বেঁচে আছেন এখনো?’
‘শুধু আমি।
’
‘আপনি এই শহরে পড়ে আছেন কেন?’
‘যাওয়ার আর কোন জায়গা নেই তো। ’
‘বাড়িতে ফিরে গেলেই পারেন। ’
‘বাড়িটা আর নেই। ’
‘কী হয়েছে বাড়িটার?’
‘ভেঙ্গে গেছে। ’
‘আপনার কি মনে হয় আপনি বিকারগ্রস্ত?’
‘মনে হয়।
’
‘ডাক্তার দেখিয়েছেন?’
‘হ্যাঁ। ’
‘ওনারা কী বলেন?’
‘একই কথা। ’
‘চিকিৎসা করিয়েছেন?’
‘কোন লাভ হয়নি। ’
‘ও আচ্ছা। ’
‘আজ তাহলে উঠি?’
‘উঠবেন?’
‘আমি আবার আসব।
’
‘ভাল থাকবেন। ’
‘আপনিও ভাল থাকবেন। ’
সন্ধ্যা হয়-হয় করছে। ঘোলাটে আলোতে দেখা গেল দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে বসা এক লোক উঠে দাঁড়িয়ে ধীর পায়ে হেঁটে চলল রাস্তার দিকে। দেয়ালটার মুখে অন্ধকার জানালাগুলো চোখ মেলে তাকালো।
ভিতরে আলো জ্বেলেছে কেউ।
‘বাবুকে বাসায় রেখে যাবে?’
‘আমরা তো বেশিক্ষণ থাকব না। এই চলে আসবো। ’
‘আচ্ছা ঠিক আছে চলো যাই। ’
‘হ্যাঁ দেরি হয়ে যাচ্ছে।
’
বাসাটা চিৎকার করে বলল, ‘না না তোমরা যেও না। এক্ষুণি ভীষণ বিপদ হবে তোমাদের। ওই লোকটার কথাও কি তোমরা এতক্ষণ শোন নি?’
বাসাটা যখন খালি, দূর থেকে শুধু যার ঝাপ্সা চোখের মত জানালাগুলো চোখে পড়ে, তখন ঘুমন্ত শিশুটির বিছানার উপর চলন্ত বৈদ্যুতিক পাখাটা খুলে পড়ল। দেয়ালটা তখনও তারস্বরে চিৎকার করে যাচ্ছে। কিন্তু কুয়াশার নগরে রক্তমাংসের সব মানুষ তো ইট-পাথরের দেয়ালের কথা শুনতে পায় না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।